এই গর্তের সৃষ্টি হয়েছে মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে। ছবি সৌজন্যে: নাসার ‘এমআরও’ উপগ্রহ।
এ বার কি তা হলে দেখতে পাওয়া যাবে ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলের অন্তরে, অন্দরে বয়ে যাওয়া তরল জলের স্রোত? সেই কাজটা কি আমাদের সহজ করে দিয়েছে কোনও গ্রহাণু?
এমন জল্পনা শুরু হওয়ার কারণ, বরফে ঢাকা মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে হালে হদিশ মিলেছে বিশাল একটি গর্ত বা ক্রেটারের। বিজ্ঞানীদের ধারণা, মঙ্গলের জন্মের বহু বহু কোটি বছর পর কোনও একটি গ্রহাণু বা অ্যাস্টারয়েডের ধাক্কায় ওই সুবিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে লাল গ্রহের পিঠে। আর ব্রহ্মাণ্ডের সময়ের নিরিখে সেই ঘটনাটা ঘটেছে হালেই। খুব বেশি হলে, গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে।
দক্ষিণ মেরুতে এমন গর্তের হদিশ এই প্রথম
মঙ্গলের পিঠে বহু গ্রহাণুর আছড়ে পড়ার প্রমাণ এর আগে পাওয়া গেলেও, আমাদের প্রতিবেশী গ্রহের দক্ষিণ মেরুতে গ্রহাণুর ধাক্কা মারার ‘পদচিহ্ন’ মিলল এই প্রথম। নাসার উপগ্রহ ‘মার্স রিকনাইস্যান্স অরবিটার’ (এমআরও)-এর আলট্রা-হাইটেক ক্যামেরার চোখেই ধরা পড়েছে মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুর সেই গর্তটি। ওই ক্যামেরাটির নাম- ‘হাই- রেজোলিউশন ইমেজিং সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট’ (হাইরাইজ)।
পুরু বরফে ঢাকা মঙ্গলের দক্ষিণ মেরু
দক্ষিণ মেরুতেই বরফের তলায় বয়ে চলেছে নদী!
বিজ্ঞানীদের অনেক দিনের ধারণা, মঙ্গলে এখনও বয়ে চলেছে তরল জলের স্রোত। আর সেই বিশাল নদীটা লম্বায় অন্তত ২০ কিলোমিটার। তা রয়েছে দক্ষিণ মেরুর অত্যন্ত পুরু বরফের চাঙরের প্রায় দেড় কিলোমিটার তলায়।
কিন্তু লাল গ্রহের দক্ষিণ মেরুর সেই পুরু বরফের চাঙর ফুঁড়ে সেই নদীকে দেখার কোনও সুযোগই পাননি বিজ্ঞানীরা, এত দিন।
মঙ্গলের অন্দরে এখনও বইছে নদী। দেখুন নাসার ভিডিয়ো
‘‘এই গর্তের হদিশ মেলায় এ বার সেই সুযোগটা অন্তত এল’’, বলছেন নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে ‘পাথফাইন্ডার মিশন’-এর অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ। তিনি অবশ্য এও বলেছেন, ‘‘এখন দেখতে হবে সেই গর্ত বা ক্রেটারটার গভীরতা কতটা। দেখতে হবে সেই গর্তের নীচটার মুখ কতটা খোলা। ওই সব কিছু জানা সম্ভব হলে অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে ভবিষ্যতে হয়তো জানা যাবে, সত্যি-সত্যিই এখনও তরল জলের স্রোত বয়ে চলেছে কি না মঙ্গলের অন্তরে, অন্দরে।’’
আরও পড়ুন- মঙ্গল মুলুকে ১০ দিন অসহায়, নির্বান্ধব হবে ইসরো-নাসার ৬ যান
আরও পড়ুন- মঙ্গল গ্রহে বরফের নীচে আস্ত একটা লেক?
‘হাইরাইজ’ ক্যামেরার পাঠানো ছবি ও তথ্যাদি এও জানিয়েছে, মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে ওই গর্তটির সৃষ্টি হয়েছে খুব সম্প্রতি। গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
এক সময় নদী ছিল, তারই স্মৃতিচিহ্ন? মঙ্গলের উত্তর মেরু
গ্রহাণুটা বেশ বড় ছিল, ধাক্কাটাও ছিল জোরালো
তবে সেই গ্রহাণুটা চেহারায় বড়সড়ই ছিল বলে মনে করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। তাই তার ধাক্কাটাও হয়েছিল বেশ জোরালো।
সেটা কী ভাবে বোঝা গেল?
অমিতাভ বলছেন, ‘‘হাইরাইজ ক্যামেরার তোলা ছবি জানাচ্ছে, বেশ বড়সড় একটা গ্রহাণু জোরালো ধাক্কা মেরেছিল মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে। গ্রহাণুটি চেহারায় বড়সড় আর তার ধাক্কাটা জোরালো ছিল বলেই তার জেরে দক্ষিণ মেরুর অত্যন্ত পুরু বরফের চাঙরের তলায় থাকা বালির স্তরটি বেরিয়ে পড়েছে। আর সেটা ছিটকে সোজা উপরে উঠে এসেছে। আর সেই বালির স্তরটিও ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গিয়েছে। যা বোঝাচ্ছে, অনেক দূর থেকে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছুটে এসে ওই গ্রহাণুটি খুব জোরে ধাক্কা মেরেছিল মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে।’’
পুরু বরফের চাদর মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে
সেই গর্তটা হতে পারে সুগভীর!
মুম্বইয়ের ‘টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ’ (টিআইএফআর)-এর জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর দেবেন্দ্র ওঝা বলছেন, ‘‘গ্রহাণুর চেহারাটা বড়সড় আর তার ধাক্কাটা জোরালো ছিল বলেই বিজ্ঞানীদের অনুমান, তার ফলে যে গর্তটা হয়েছে মঙ্গলের পিঠে, তার গভীরতা হবে অনেকটাই। আর নীচের বালির স্তর যে ভাবে ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে উপরে উঠে এসেছে, তাতে এও আশা করা হচ্ছে, সেই সুগভীর গর্তের নীচের দিকটার মুখটা ঢাকা নেই। সেটাও খোলা রয়েছে। তার ফলে, ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে মঙ্গলের তলায় লুকিয়ে থাকা তরল জলের স্রোতের হদিশ মেলার সম্ভাবনা থাকতেই পারে।’’
ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: নাসা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy