লাল বাতি জ্বলে গিয়েছে মহাকাশে!
দুর্বিষহ ট্র্যাফিক জ্যামে হাঁসফাঁস করছে মহাকাশ। কোনও যান পাঠানোর আগে এ বার নাসা, ইসরো, ইএসএ-কে জেনে নিতে হবে, লাল বাতি ‘সবুজ’ হল কি না মহাকাশে!
বিভিন্ন দেশের পাঠানো ভুরি ভুরি মহাকাশযান এতটাই যানজট পাকিয়েছে এই সৌরমণ্ডল আর তার বাইরের ব্রহ্মাণ্ডে যে, বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে যে কোনও মূহুর্তে। ঘটতে পারে প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত একটি করে বড়সড় দুর্ঘটনা। ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে পারে যে কোনও মহাকাশযান। আর তা ভেঙে পড়তে পারে আমাদের মাথায়!
এই মূহুর্তে মহাকাশযান, কৃত্রিম উপগ্রহ, টেলিস্কোপ মিলিয়ে ৩৫ হাজারেরও বেশি পার্থিব জিনিসপত্র রয়েছে মহাকাশে। সংখ্যাটা আর পাঁচ বছরে ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
কোনও কল্প-কথা নয়। হালে এই দুঃসংবাদটি দিয়েছে বিশ্বের সবক’টি দেশের সবক’টি মহাকাশ গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে গড়ে ওঠা ‘ইন্টার-এজেন্সি স্পেস-ডেব্রি কো-অর্ডিনেশন কমিটি (আইএডিসি)’। মহাকাশের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করতে গত অক্টোবরে জরুরি বৈঠকে বসেছিল আইএডিসিসি। সেই বৈঠকে মূল আলোচ্য ছিল-‘সুগভীর মহাকাশে মহাকাশচারী ও মহাকাশযানের নিরাপত্তা।’
আইএডিসি-র এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য, মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক হিল্লোল গুপ্ত জানাচ্ছেন, ‘‘আইএডিসি-র বৈঠকে গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সমস্যা মেটানোর লক্ষ্যে সর্বসম্মতিতে নেওয়া হয়েছে একটি প্রস্তাব।’’
সেই প্রস্তাবে কী কী বলা হয়েছে?
লরেল থেকে ই মেলে হিল্লোলবাবু জানাচ্ছেন, ‘‘ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘‘আগামী দিনে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে মহাকাশে। চুরচুর করে ভেঙে পড়তে পারে প্রচুর মহাকাশযান। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একটা করে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে মহাকাশে।’’
কী ভাবে মহাকাশে ঘটতে পারে সেই সব দুর্ঘটনা?
হিল্লোলবাবুর কথায়, ‘‘আইএডিসি-র প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মোটামুটি ছয় রকম ভাবে ওই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এক, অন্য একটি মহাকাশযান থেকে ছিটকে আসা কোনও অংশ ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে আরেকটি মহাকাশযানকে। যে নিয়মে পাখির ধাক্কায় বিমানের ক্ষতি বেশি হয়, সেই নিয়মেই কোনও মহাকাশযান থেকে ছিটকে আসা টুকরোর আঘাতে অন্য মহাকাশযানের ক্ষতিই বেশি হবে। দুই, দীর্ঘ দিনের মহাকাশ যাপনে খাবারের প্যাকেট, ডিজপোজেবল জামাকাপড় ও কাগজের তোয়ালে প্রচুর পরিমাণে জমে যায় মহাকাশযানে। তা থেকে ভয়াবহ আগুন লাগতে পারে। ব্যাটারি ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিও খুব গরম হয়ে গেলে আগুন লেগে যেতে পারে মহাকাশযানে। তিন, গাণিতিক হিসেবের সামান্য ভুলচুকে বিভিন্ন দেশের পাঠানো মহাকাশযানের কক্ষপথ খুব কাছাকাছি হয়ে গেলে বা তারা একই কক্ষপথে খুব কাছাকাছি চলে এলে হয়ে যেতে পারে মুখোমুখি সঙ্ঘর্ষ। চার, কোনও উল্কা-খণ্ড বা অন্য কোনও মহাজাগতিক বস্তু থেকে ছিটকে আসা কোনও অংশ ভেঙে চুরমার করে দিতে পারে মহাকাশযান। পাঁচ, মহাকাশচারীর স্পেস স্যুটে বড়জোর সাত ঘণ্টার অক্সিজেন মজুত করে রাখা যায়। কোনও কারণে মহাকাশচারী ভয় পেয়ে গেলে সেই অক্সিজেনের ভাণ্ডার খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যেতে থাকে। এতে মহাকাশচারীর জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ছয়, মহাকাশচারীদের স্পেস স্যুটের হেলমেটে ফাটল ধরছে। আর তা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ছে মহাকাশের জলীয় বাষ্প। যা মহাকাশচারীর স্পেস স্যুটের তাপে গলে জল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মহাকাশের শূন্য অভিকর্ষে সেই জল-বিন্দু নীচের দিকে নামতে না পেরে তা মহাকাশচারীদের চোখ বা নাকের ওপর জমা হচ্ছে। এতে মহাকাশচারীদের দৃশ্যমানতার সমস্যা হচ্ছে। বাড়ছে শ্বাসকষ্ট। যাতে মৃত্যু হতে পারে মহাকাশচারীর।’’
সমস্যা মেটাতে কী কী করণীয়?
সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের ভূতপূর্ব অধিকর্তা বিকাশ সিংহ বলছেন, ‘‘ট্র্যাফিক জ্যাম কমাতে গোটা বিশ্বে বাড়ানো হচ্ছে উড়ালপুলের সংখ্যা। একই ভাবে মহাকাশে যানজটের সমস্যা কমাতে আইএডিসি সেখানে যাওয়ার জন্য ‘বিকল্প রুট’ বা নতুন নতুন কক্ষপথ খুঁজে বের করতে বলেছে বিশ্বের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলিকে।’’
না হলে মহাকাশে এক দিন নাসা, ইসরোকে বলতেই হবে, ‘এই রোকো রোকো, পৃথিবীর গাড়িটা থামাও…’!
বা, পাড়ি জমানোর আগে জেনে নিতে হবে, লাল বাতি কি ‘সবুজ হল’ মহাকাশে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy