Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Chandrayaan-3 Update

চাঁদে গুটিগুটি পায়ে হাঁটছে প্রজ্ঞান, কাজও শুরু রম্ভা, চ্যাস্টে, ইলসাদের, কী অগ্রগতি চন্দ্রযানের?

চাঁদে বৃহস্পতিবার সকালেই পা রেখেছে রোভার ‘প্রজ্ঞান’। গুটিগুটি পায়ে সে হাঁটাচলা শুরু করেছে। সন্ধ্যায় ইসরো টুইট করে চন্দ্রযান-৩-এর অগ্রগতির কথা জানিয়েছে।

চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম।

চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৩ ২২:০৩
Share: Save:

চাঁদের মাটি ছোঁয়ার মুহূর্তে কেমন দেখাচ্ছিল পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটিকে? কী ছবি তুলেছিল ল্যান্ডার বিক্রমের ক্যামেরা? বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেই ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে ইসরো। টুইটে ভিডিয়োটি শেয়ার করে ইসরোর পক্ষে লিখেছে, ‘‘চাঁদের মাটিতে নামার ঠিক আগের মুহূর্তে ল্যান্ডারের ক্যামেরা এই ছবি তুলেছে।’’ ভিডিয়োটি প্রকাশের আগে আরও একটি টুইট করে ইসরো। সেখানে তারা জানায়, চাঁদে পৌঁছনোর পর চন্দ্রযান-৩-এর সব ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোথাও কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। ল্যান্ডার মডিউল থেকে ইলসা, রম্ভা, চ্যাস্টে পেলোড কাজ শুরু করে দিয়েছে। রোভারের ‘মবিলিটি অপারেশন’ও শুরু হয়েছে। অর্থাৎ, ইসরোর পরিকল্পনা অনুযায়ীই চলছে চন্দ্র অভিযান। কোথাও কোনও বিচ্যুতি নেই।

চাঁদের উপরে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথে আগেই পৌঁছে গিয়েছিল চন্দ্রযান-৩। বুধবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিট থেকে সেটিকে নামানোর কাজ শুরু হয়। অবতরণ প্রক্রিয়ায় মোট ১৯ মিনিট সময় লেগেছে। ধাপে ধাপে ল্যান্ডারের গতি কমিয়ে সেটিকে চাঁদের দিকে নামানো হয়। সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ফেলে বিক্রম। এর পর বেশ কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার পর বিক্রমের দরজা খুলে যায়। পেট থেকে বেরিয়ে আসে রোভার। বৃহস্পতিবার সকালে প্রজ্ঞানের অবতরণের কথা জানায় ইসরো। চাঁদে যে সময় বিক্রম পা রেখেছে, তখন সেখানে সবে ভোরের আলো ফুটেছে। পৃথিবীর সময় অনুযায়ী আগামী ১৪ দিন সেখানে দিনের আলো থাকবে। এই সময়ের মধ্যে চাঁদের মাটিতে ঘুরে ঘুরে রোভার তথ্য সংগ্রহ করবে। বিক্রম সেই তথ্য পাঠাবে পৃথিবীতে। সৌরশক্তিতে কাজ করবে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান। ফলে ১৪ দিন পর চাঁদে সূর্য ডুবলে আর এই যন্ত্রগুলি কাজ করবে না।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমেছে চন্দ্রযান-৩। এই অংশ এত দিন অনাবিষ্কৃত ছিল। ভারতই প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করাল। সেই সঙ্গে চাঁদে ‘সফ্‌ট ল্যান্ডিং’ করানোর ক্ষেত্রে সফল দেশগুলির তালিকায় চতুর্থ স্থানে জুড়ে গিয়েছে ভারতের নাম। এর আগে এই কৃতিত্ব ছিল কেবল আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের।

চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যে থেমে থাকছে না ইসরো। আগামী দিনে আরও অনেক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামবে ভারতের এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। সূর্যের কাছে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো থেকে শুরু করে মহাকাশে মহাকাশচারী পাঠানো, একাধিক অভিযান ইসরোর তালিকায় রয়েছে। আদিত্য-এল১ নামের একটি উপগ্রহ সেপ্টেম্বর মাসেই সূর্যের অভিমুখে পাঠানো হবে। ২০২৪ সালে গগনযান অভিযানে মহাকাশে মানুষ পাঠাবে ইসরো। এ ছাড়া, চাঁদে জলের উৎস সন্ধানে জাপানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লুপেক্স মিশনে কাজ করবে ভারত। ওই অভিযানকে ‘চন্দ্রযান-৪’ নামেও চিহ্নিত করা হচ্ছে।

চাঁদে ভূমিষ্ঠ প্রজ্ঞান

বৃহস্পতিবার সকালে ইসরো টুইট করে জানায়, ল্যান্ডার বিক্রমের পেট থেকে বেরিয়ে এসেছে রোভার প্রজ্ঞান। চাঁদের মাটিতে সেটি হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছে। এই রোভারের চাকার সঙ্গে এক দিকে ইসরোর লোগো এবং অন্য দিকে ভারতের অশোকস্তম্ভ খোদাই করা আছে। প্রজ্ঞান এগোলে চাঁদের মাটিতে তার ছাপ পড়ার কথা। রোভার আগামী ১৪ দিন চাঁদে ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করবে। সেই তথ্য প্রজ্ঞানের থেকে নিয়ে বিক্রম ইসরোর অফিসে পাঠিয়ে দেবে।

কী করবে প্রজ্ঞান?

প্রজ্ঞানের সঙ্গে রয়েছে একাধিক দিকনির্দেশক স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা। চাঁদের মাটিতে অনুসন্ধান চালাবে সে। একাধিক বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি নিয়ে চাঁদে নেমেছে প্রজ্ঞান। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চাঁদের ভূমিরূপ কী ভাবে তৈরি হয়েছে, কোন কোন উপাদান দিয়ে চাঁদের মাটি তৈরি, তা খতিয়ে দেখে বার্তা পাঠাবে রোভারটি। আগামী দু’সপ্তাহ ধরে স্পেকট্রোমিটার বিশ্লেষণের মাধ্যমে চাঁদের মাটিতে কোন ধরনের খনিজ বস্তু আছে, তা খুঁটিয়ে দেখবে সে।

ল্যান্ডার, রোভারের ‘মৃত্যু’ অবধারিত?

চাঁদে সৌরশক্তির জোরেই কাজ করবে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান। সেই কারণে দিনের বেলার সময়টিকে বেছে নিয়েছে ইসরো। আগামী ১৪ দিন চাঁদে দিনের আলো থাকবে। সূর্য ডুবে গেলে কি চন্দ্রযান-৩-এর ‘মৃত্যু’ অবধারিত? ইসরো জানিয়েছে, ল্যান্ডার এবং রোভারটির চাঁদে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সূর্যের আলো নিভলেই তাদের কাজ ফুরিয়ে আসবে। অন্ধকারে আর কোনও কাজ তারা করতে পারবে না। তবে আরও ১৪ দিন পরে চাঁদে সূর্যোদয় হলে আবার তাদের শক্তি ফিরবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

‘কল্পনা’র হাত

কল্পনা চাওলা নয়, অন্য এক কল্পনার অবদান রয়েছে চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের নেপথ্যে। তিনি ইসরোর চন্দ্রযান-৩ অভিযানের ডেপুটি ডিরেক্টর কল্পনা কলাহান্তি। কর্নাটকের কল্পনা খড়্গপুর আইআইটির প্রাক্তনী। চন্দ্রযান-৩ অভিযানের ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’ তিনি। অর্থাৎ, ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথের পর তিনিই চন্দ্রযান-৩ নিয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বুধবার যেন ‘হাতে চাঁদ’ পেয়েছেন কল্পনা।

‘সূর্যজয়ের’ হাতছানি

চন্দ্রযান-৩ অভিযান সফল। তবে চাঁদের পাশাপাশি ইসরোর ভাবনায় রয়েছে সূর্যও। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই সূর্যে পাড়ি দেবে ‘আদিত্য-এল১’। বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে এ কথা জানিয়েছেন ইসরোর বাঙালি বিজ্ঞানী শুভ্রদীপ ঘোষ। তিনি নিউ গড়িয়ার পঞ্চসায়রের বাসিন্দা। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ ছেড়ে চাঁদের কক্ষপথে চন্দ্রযান-৩-কে পাঠানোর দায়িত্ব ছিল তাঁরই কাঁধে। শুভ্রদীপ বলেন, ‘‘সূর্যের পৃষ্ঠে তো নামা সম্ভব নয়, আদিত্য-এল১ নামের যে উপগ্রহ পাঠানো হবে, সেটি যাবে একটি নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত। ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট-১ বলে একটা জায়গা পর্যন্ত পাঠানো হবে। ওই জায়গায় পৃথিবী এবং সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ থাকে না। ওই জায়গায় উপগ্রহ পৌঁছে গেলে আজীবন থেকে যেতে পারবে। সেই চেষ্টাই করছে ইসরো। ২ অথবা ৩ সেপ্টেম্বর উপগ্রহটা পাঠানো হবে। তার কাজ চলছে এখন।”

আসছে ‘চন্দ্রযান-৪’

চন্দ্রযান-৩-এর পর ইসরোর লক্ষ্য ‘চন্দ্রযান-৪’। এই অভিযানের জন্য জাপানের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ভারত। জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘জাক্সা’ এবং ভারতের ‘ইসরো’ যৌথ ভাবে লুপেক্স (লুনার পোলার এক্সপ্লোরেশন) মিশনে কাজ করবে। যাকে ‘চন্দ্রযান-৪’ নামেও চিহ্নিত করা হচ্ছে। লুপেক্সে মূলত চাঁদের মেরুকেন্দ্রিক পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ চালাবে ভারত এবং জাপান। খুঁজবে সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্নটির জবাব— চাঁদে কি আদৌ জল আছে?

চাঁদে ‘হল্ট স্টেশন’

দূরের কোনও শহরে যেতে হলে যেমন মাঝে কোনও না-কোনও বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে বিমান খানিক জিরিয়ে নেয়, তেমনই দূর গ্রহে পাড়ি দেওয়ার পথে চাঁদকে ‘হল্ট স্টেশন’ বানাতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। মহাকাশ গবেষণার জন্য চাঁদ হবে মহাকাশচারীদের ‘বিশ্রামক্ষেত্র’। বুধবার সেই উদ্দেশ্য সাধনের পথেই এক ধাপ এগিয়েছে ইসরো।

কী বলছেন ইসরো প্রধান?

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সাক্ষাৎকারে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে ইসরোর প্রধান এস সোমানাথ জানিয়েছেন, কেন চন্দ্রযান-৩ অবতরণের জন্য চাঁদের দক্ষিণ মেরুকেই বেছে নিল! তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে ৭০ ডিগ্রি দূরে অবতরণ করেছি। এখানে নামার অনেক কারণ রয়েছে। চাঁদের এই এলাকায় মহাকাশ গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। মানুষ চাঁদে যেতে চায়। সেখানে থাকার মহল্লাও বানাতে চায়। আমরা সেই কাজের জন্য সেরা এলাকাটি খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তেমন জায়গা খুঁজে পাওয়ার অনেক সম্ভাবনা আছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy