চন্দ্রযান ৩-এর বাজেট মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা। —ফাইল চিত্র।
এ বছরই মুক্তি পেয়েছিল প্রভাস অভিনীত ‘আদিপুরুষ’, যার বাজেট ছিল ৭০০ কোটি টাকা। হলিউডের দিকে পা বাড়ালে এই অঙ্কটা কিছুই না। অ্যাভেঞ্জার সিরিজ়ের শুধু ‘এন্ড গেম’-এর বাজেট ছিল ২৯৪১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে মহাকাশ অভিযান বিষয়ক ফিল্ম ‘গ্র্যাভিটি’ তৈরি করতে গিয়ে হলিউডের খরচ হয়েছিল ৮২৬ কোটি টাকা। এই সব রেকর্ড ভেঙে দিল বাস্তবের মহাকাশ অভিযান। তবে উল্টো গোনায়। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো-র ঘোষণা অনুযায়ী, চন্দ্রযান ৩-এর বাজেট মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা! ইসরোর আগের দুই চন্দ্রাভিযানের থেকেও কম।
খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট থেকে ভেঙে পড়া সেতু, বেহাল হাসপাতাল পরিকাঠামো, ভারতের মতো দেশে উন্নয়নের অভাব স্পষ্ট প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। যে দেশে দুর্নীতির চক্করে তৈরি হওয়ার আগেই পিচ উঠে যায় বহু রাস্তার, হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বিপুল ব্যয়ে নির্মীয়মাণ সেতু, সেখানে খরচে রাশ টেনে ইসরোর এই ‘অসাধ্য সাধন’ নজর কেড়েছে গোটা বিশ্বের। এ অবশ্য প্রথম নয়। মঙ্গলযান অভিযানেও একই রেকর্ড গড়েছিল ইসরো। ২০১১ সালে আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা মঙ্গলে কিউরিওসিটি রোভার পাঠাতে খরচ করেছিল ২৫০ কোটি ডলার, অর্থাৎ ২০৬৩৭ কোটি টাকা। এ নিয়ে রীতিমতো সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল সে দেশে। মহাকাশ গবেষণায় এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর ঠিক দু’বছর পরে লালগ্রহে মঙ্গলযান পাঠায় ভারত। ২০১৩ সালের সেই অভিযানে ইসরো খরচ করেছিল মাত্র ৪৫০ কোটি টাকা। সেটি অবশ্য অরবিটার ছিল। মঙ্গলের কক্ষপথে থেকে তার উপর নজরদারি চালিয়ে গিয়েছে সে। এই অভিযানের পর থেকেই ভারতের ‘মহাকাশ-বাণিজ্য’ আকাশ ছুঁয়েছে। গত এক দশকে বহু দেশের কৃত্রিম উপগ্রহ সফল ভাবে উৎক্ষেপণ করেছে ইসরো। এর অন্যতম কারণ, স্বল্প খরচে সফল পরিষেবা। গত মাসেই যেমন সিঙ্গাপুরের স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠিয়েছে ইসরো।
কম খরচে রেকর্ডের পাশাপাশি পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহে চন্দ্রযান-৩ পা রাখামাত্র মহাকাশ বিজ্ঞানের ‘কুলীন কূলে’ নাম লিখিয়েছে ভারত। আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের পরে ভারতই চতুর্থ দেশ, যার তৈরি যানের চাকার ছাপ পড়ল চাঁদের বুকে। তবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ভারতই প্রথম পা রাখল। দুর্গম, অন্ধকারাচ্ছন্না, পার্বত্য গহ্বর, জ্বালামুখে ভরা এই বন্ধুর উপত্যকায় এর আগে কেউ চন্দ্রযান পাঠাতে পারেনি। সদ্য রাশিয়ার চন্দ্রযান লুনা-২৫ এই দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি এক জায়গায় নামতে গিয়ে ভেঙে পড়েছে। আর সেই সঙ্গেই ছিটকে গিয়েছে ‘মহাকাশ দৌড়’ থেকে। রাশিয়ার লুনা-২৫ অভিযানে খরচ হয়েছিল ১৬০০ কোটি টাকা। ভারতের দ্বিগুণেরও বেশি। ইসরো জানিয়েছে, চন্দ্রযান-৩ অভিযানে রোভার ও প্রোপালশন মডিউল মিলিয়ে খরচ হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। বাকি খরচ হয়েছে উৎক্ষেপণ যানে, যা কি না ৩৬৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ৬১৫ কোটি টাকা, চন্দ্রযান-১ ও চন্দ্রযান-২-এর থেকেও কম। চন্দ্রযান-২ অভিযানে ইসরোর ব্যয় হয়েছিল ৯৭৮ কোটি টাকা। গত বাজেটে মহাকাশ গবেষণার জন্য বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা তার আগের অর্থবর্ষের তুলনায় ৮ শতাংশ কম। আর এই বরাদ্দের মধ্যে মহাকাশ অভিযান (যার মধ্যে চন্দ্রযানও রয়েছে) বাবদ বরাদ্দ কমানো হয়েছিল ৩২ শতাংশ। যদিও ‘অভাবের’ সংসারেও ঠিকই হাতে চাঁদ পেল ইসরো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy