Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
earth

Earth: হৃদয়ের উষ্ণতা দ্রুত হারাচ্ছে পৃথিবী, নিষ্প্রাণ হয়ে পড়বে মঙ্গলের মতোই, দাবি গবেষণায়

এর ফলে, পৃথিবীর পক্ষে আর বাসযোগ্য থাকা সম্ভব হবে না খুব বেশি দিন। চৌম্বক ক্ষেত্র আর বায়ুমণ্ডল হারিয়ে তা হয়ে পড়বে মঙ্গল আর বুধের মতো নিষ্প্রাণ।

পৃথিবীর পক্ষে আর বাসযোগ্য হয়ে থাকা সম্ভব হবে না খুব বেশি দিন। -ফাইল ছবি।

পৃথিবীর পক্ষে আর বাসযোগ্য হয়ে থাকা সম্ভব হবে না খুব বেশি দিন। -ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২২ ১২:২৪
Share: Save:

সর্বনাশের দিন দ্রুত ঘনিয়ে আসছে!

হৃদয়ের উষ্ণতা খুব দ্রুত হারাচ্ছে পৃথিবী। কমে আসছে এই নীলাভ গ্রহের হৃদস্পন্দন। দ্রুত হারে।

এর ফলে, পৃথিবীর পক্ষে আর বাসযোগ্য হয়ে থাকা সম্ভব হবে না খুব বেশি দিন। চৌম্বক ক্ষেত্র আর বায়ুমণ্ডল হারিয়ে পৃথিবীও হয়ে পড়বে ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গল আর সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধের মতোই নিষ্প্রাণ। প্রাণের টিকে থাকার পক্ষে অযোগ্য। একেবারেই অ-বাসযোগ্য।

সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটরি সায়েন্স লেটার্স’-এ। সোমবার।

ভূপৃষ্ঠের নীচে পৃথিবীর অন্দরের মূলত দু’টি স্তর রয়েছে। একটির নাম— ‘ম্যান্টল’। অন্যটি, ‘কোর’। এই দু’টি স্তরেরই ভিতর ও বাইরে, দু’টি উপস্তর রয়েছে। পৃথিবীর একেবারে অন্দরে (যাকে পৃথিবীর হৃদয়ও বলা যায়) কোর-এ রয়েছে অসম্ভব উষ্ণ গলিত ধাতুর স্রোত। সেই স্রোতের পরিচলনই পৃথিবীর হৃদস্পন্দন। হৃদপিণ্ডের ‘লাব-ডুব’।

কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন, সেই অত্যন্ত উষ্ণ গলানো ধাতুর স্রোত খুব দ্রুত হারে ঠান্ডা হয়ে আসছে। ফলে, সেই গলানো ধাতুর স্রোত খুব তাড়াতাড়ি হয়ে পড়তে চলছে কঠিন। নিষ্প্রাণ। এই উষ্ণ গলানো ধাতুর স্রোতের পরিচলনই ভূস্তর ও ভূগর্ভের নানা পরিবর্তন ঘটায়। টেকটনিক প্লেটগুলিকে নামায়, ওঠায়। একে অন্যের উপর দিয়ে সরিয়ে দেয় এক জায়গা থেকে অন্যত্র। তার ফলে, ভূমিকম্প হয়। জেগে ওঠে আগ্নেয়গিরি। হয় অগ্ন্যুৎপাত। যা কয়েকশো কোটি বছর ধরে প্রাণের অস্তিত্ব ও টিকে থাকার সহায়ক হয়েছে। পৃথিবীর হৃদয়ের এই অত্যন্ত উষ্ণ গলিত ধাতুর স্রোতের পরিচলনের জন্যই পৃথিবীর চার পাশে তৈরি হয়েছে অত্যন্ত শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র। যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উবে যেতে বাধা দিচ্ছে। সূর্য থেকে ছুটে আসা নানা ধরনের ভয়ঙ্কর হানাদার ও মহাজাগতিক রশ্মির হাত থেকে বাঁচিয়ে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করেছে। করে চলেছে। প্রাণকে টিকিয়ে রাখছে।

গবেষকদের কৃতিত্ব, পৃথিবীর হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত হারে কমে আসার অন্যতম কারণটিকে তাঁরা চিহ্নিত করতে পেরেছেন। সেটি আদতে একটি খনিজ পদার্থ। যার নাম— ‘ব্রিজম্যানাইট’। এটি রয়েছে পৃথিবীর অন্দরে ম্যান্টল-এর ভিতরের স্তর আর কোর-এর বাইরের স্তরের সীমানায়। পৃথিবীর ম্যান্টলের ভিতরের স্তরে বয়ে চলেছে গলানো নানা ধরনের ধাতুর স্রোত। আর কোর-এর বাইরের স্তরে বয়ে চলেছে গলিত লোহা ও নিকেলের স্রোত। এই দু’টি অত্যন্ত উষ্ণ গলিত ধাতুর স্রোতের মধ্যে তাপের পরিবহণ ও পরিচলন ঘটাতে সাহায্য করে ম্যান্টলের ভিতরের স্তরে থাকা খনিজ পদার্থ ব্রিজম্যানাইট। পৃথিবীর হৃদয়ের উষ্ণতা বজায় থাকবে কি না তা নির্ভর করে খনিজটি কী গতিতে সেই কাজটি করছে তার উপরেই।

গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

সুইৎজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা দেখিয়েছেন, সেই ব্রিজম্যানাইটের জন্যই পৃথিবীর কোর-এর তাপ উপরে থাকা ম্যান্টলে উঠে আসছে এত দিনের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি হারে। ফলে, পৃথিবীর হৃদয় (কোর) ঠান্ডা হয়ে আসছে খুব দ্রুত হারে। অস্বাভাবিক গতিতে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়া আগামী দিনে আরও ত্বরান্বিত হবে। যার অর্থ, পৃথিবীর হৃদয় কঠিন, নিষ্প্রাণ হয়ে উঠবে আরও দ্রুত হারে। আর সেটা হবে দ্রুত ঠান্ডা হয়ে গিয়ে খনিজ ব্রিজম্যানাইট অন্য একটি পদার্থে (যার নাম— ‘পোস্ট-পেরোভস্কাইট’) রূপান্তরিত হচ্ছে বলে। এই পোস্ট-পেরোভস্কাইট আরও বেশি পরিমাণে পৃথিবীর কোর-এর তাপ টেনে নিচ্ছে। ফলে, পৃথিবী দ্রুত হয়ে পড়ছে নিষ্প্রাণ।

সেটা কত দিনে সভ্যতার বিনাশ কারণ হয়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে অবশ্য স্পষ্ট ভাবে কিছু জানাননি গবেষকরা। তাঁদের ধারণা, এর অনেক আগেই হয়তো উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন আর আশঙ্কাজনক ভাবে সমুদ্রের জল-স্তর উঠে আসায় পৃথিবী প্রাণের পক্ষে হয়ে পড়বে একেবারেই অ-বাসযোগ্য। নিষ্প্রাণ।

অন্য বিষয়গুলি:

earth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy