শুধুই দ্রুত হারে সংক্রমণ নয়, সার্স-কোভ-২ ভাইরাস তার পদক্ষেপ-এর ভয়াবহ ছাপ রেখে যাচ্ছে মানবরক্তে। বদলে দিচ্ছে শ্বেত রক্তকণিকা, লোহিত কণিকা এমনকি অণুচক্রিকাগুলির আকার, আকৃতি। রক্তে তাদের স্বাভাবিক পরিমাণ। স্থায়িত্বও। রক্তকণিকাগুলির এই রূপান্তর কোভিডমুক্ত হওয়ার পরেও রোগীদের ক্ষেত্রে নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতা তৈরি করছে। থেকে যাচ্ছে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। নানা ধরনের মানসিক রোগেরও শিকার হতে দেখা যাচ্ছে কোভিডমুক্তদের। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর দ্য সায়েন্স অব লাইট-এর বিজ্ঞানীদের গবেষণা এই উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘বায়োফিজিক্যাল জার্নাল’-এ।

এই পর্যবেক্ষণের জন্য গবেষকরা একটি বিশেষ পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। যার নাম- ‘রিয়েল-টাইম ডিফরম্যাবিলিটি সাইটোমেট্রি (আরটি-ডিসি)’। এই পদ্ধতিতে এক সেকেন্ডে কয়েকশো রক্তকণিকা পরীক্ষা করা যায়।

গবেষকরা ৫৫ জন কোভিড রোগীর রক্তকণিকাগুলি পরীক্ষা করে দেখেন। এঁদের মধ্যে ১৭ জনের ক্ষেত্রে কোভিড ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল। ৯ জনের মৃত্যুও হয়। পাশাপাশি তাঁরা এমন আরও ২৪ জনের রক্তকণিকাগুলি পরীক্ষা করে দেখেন যাঁদের কোভিড হয়নি। তাঁরা মোট ৪০ লক্ষ রক্তকোষ পরীক্ষা করেন।

আরও পড়ুন

শিশুদের শরীরে কোভোভ্যাক্সের ট্রায়ালে নিষেধাজ্ঞা কেন্দ্রের, বড় ধাক্কা খেল সিরাম

আরও পড়ুন

কেন্দ্রীয় বরাদ্দ মাত্র ৯০ লক্ষ, জুলাইতেও রাজ্যে টিকার আকাল থাকার আশঙ্কা প্রবল

মূল গবেষক, জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর দ্য সায়েন্স অব লাইট-এর অধ্যাপক জোকেন গাক জানিয়েছেন, গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোভিড রোগীদের লোহিত রক্তকণিকাগুলির (এরিথ্রোসাইটস) আকার অনেকটাই বদলে গিয়েছে। সেগুলি খুব অনমনীয় হয়ে গিয়েছে। যার ফলে তারা আর মানবদেহে স্বাভাবিক পরিমাণে অক্সিজেন জোগাতে পারছে না। ধমনীতে এর ফলে রক্তসংবহন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সেটা পরে সংক্রমণ না থাকলেও হচ্ছে। আবার ‘লিউকোসাইটস’ বা শ্বেতকণিকাদের মধ্যে এক ধরনের রক্তকণিকা (লিম্ফোসাইটস) যতটা অনমনীয় থাকার কথা, কোভিড সংক্রমণে তাদের সেই অনমনীয়তা অনেকটাই কমে যাচ্ছে। অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে আর এক ধরনের শ্বেতকণিকা (যাদের নাম মনোসাইটস)-র পরিমাণও। আকার, আকৃতি অনেকটাই বদলে যাচ্ছে আর এক ধরনের শ্বেতকণিকা ‘নিউট্রোফিল’-এরও। মানবরক্তে নিউট্রোফিলের আয়ু বড়জোর ১ দিন। কিন্তু গবেষকরা দেখেছেন কোভিড রোগীদের রক্তে তা সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার কয়েক মাস পরেও থেকে যাচ্ছে।

গবেষকরা জানাচ্ছেন, রক্তকণিকাগুলির এই সব পরিবর্তনই মানবদেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা দীর্ঘ দিনের জন্য দুর্বল হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। যার জেরে কোভিডমুক্ত হওয়ার পরেও দীর্ঘ দিন ভুগতে হচ্ছে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায়। নানা ধরনের মানসিক রোগেরও শিকার হতে দেখা যাচ্ছে কোভিডমুক্তদের।