ইনসেটে, বম্বে আইআইটি-র অধ্যাপক কস্তুরী সাহা।
আর পাঁচটা সাধারণ কম্পিউটার নয়। গুগ্ল, আইবিএম এখন যাকে উত্তরোত্তর শক্তিশালী করে তুলতে মরীয়া হয়ে উঠেছে, সেই সর্বাধুনিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার এ বার হিরেতেই বানাচ্ছেন ধর্মতলার কস্তুরী সাহা!
যা সাধারণ কম্পিউটারের চেয়ে অনেক অনেক বেশি দ্রুত গতির। যার কাছে হার না মেনে উপায় নেই আধুনিক সভ্যতার পয়লা দুশমন হ্যাকারদের।
হিরের ফাঁকফোকড়েই মাদারিকা খেল!
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ‘মাদারিকা খেল’ দেখানোর জন্য কাচ কাটা হিরের মধ্যেই কস্তুরী তৈরি করে নিচ্ছেন ফাঁকফোকড়। কখনও হিরের কোনও কার্বন পরমাণুকে নাইট্রোজেন পরমাণু দিয়ে সরিয়ে দিয়ে। কখনও বা হিরের যে কার্বন পরমাণুটিকে সরাচ্ছেন, তার পাশের কার্বন পরমাণুটিকেও একেবারে হাপিস করে দিচ্ছেন কস্তুরী।
হিরে থেকেই যমজ ফোটন
হিরের সেই ফাঁকফোকড় থেকেই নিজের কেরামতিতে কস্তুরী বার করে আনছেন বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন আলোর কণা ফোটনদের। যাদের জন্ম হচ্ছে যমজ ভাইদের মতো। তার পর তাদের অনেক দূরে সরিয়ে দিলেও, নিজেদের মধ্যে বিন্দুমাত্র যোগাযোগ না থাকা সত্ত্বেও এক জনের স্বভাব, চরিত্র কিছুটা বদলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেই স্বভাব, চরিত্রগুলি বদলে যাচ্ছে অন্য জনেরও।
এই যমজ ফোটনদের সাহায্য নিয়েই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সম্পূর্ণ নিরাপদে বার্তা পাঠানো যাবে সর্বাধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায়।
কোনও হ্যাকারের পক্ষেই সেই বার্তা গোপনে পড়ে ফেলা সম্ভব হবে না। কারণ, যমজ ফোটনের এক জনের স্বভাব, চরিত্র কিছুটা বদলানোর খবর যদি কেউ গোপনে আড়ি পেতে জেনে ফেলে, তা হলে সঙ্গে সঙ্গেই সেটা বুঝে ফেলবে অনেক দূরে থাকা অন্য ফোটনও।
ফলে, সেই ফোটনটি আর তার যমজ ফোটনকে নকল করে তার সেই সব স্বভাব, চরিত্রগুলি বদলে ফেলবে না। তাই কেউ গোপনে আড়ি পাতলেই তা ধরা পড়ে যাবে সঙ্গে সঙ্গে।
সর্বাধুনিক কোয়ান্টাম টেলিযোগাযোগব্যবস্থা তখন আপনাআপনিই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। হাজারো কায়দা, কসরত করেও হ্যাকারদের পক্ষে আর সেখানে নাক গলানো সম্ভব হবে না।
কস্তুরীর গবেষণা ‘কোয়েস্ট’-এর মুকুট
দেশে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কমিউনিকেশন ও টেকনোলজির উন্নতিতে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের (ডিএসটি) অর্থানুকুল্যে যে ‘কোয়ান্টাম এনহ্যান্সড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (কোয়েস্ট)’ প্রকল্পের কাজ চলছে, মুম্বইয়ের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি মুম্বই)’-র পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক কস্তুরীর গবেষণা তার একটি মুকুট। তাঁর প্রকল্পের নাম- ‘ডায়মন্ড বেস্ড কোয়ান্টাম টেকনোলজি’।
ধর্মতলার কস্তুরী যে ভাবে মাতলেন হিরের খেলায়
আদতে রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের বাসিন্দা কস্তুরীর স্কুল ক্যালকাটা গার্লস। কলেজ দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স। দিল্লির আইআইটি থেকে মাস্টার্সের পর কস্তুরী পাড়ি জমান আমেরিকায়। পিএইচডি করেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার পর পোস্ট ডক্টরাল ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-তে। আমেরিকা থেকে ফিরে অধ্যাপনা শুরু করেন মুম্বইয়ের আইআইটি-তে।
গবেষণার শুরু থেকেই হিরেকে বেছে নিয়েছিলেন কস্তুরী। বললেন, ‘‘দু’-একটা ব্যাতিক্রম বাদ দিলে ভারতে হিরের উপর কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের কাজ তেমন হয়নি বললেই চলে। তাই গোড়া থেকেই আমার পছন্দ ছিল হিরে।’’
কার্বন যৌগের বহু রূপ, নানা রঙের হিরে
আমাদের পেন্সিলের ফিনফিনে সিস বা গ্র্যাফাইট যা, কাচ কাটা অসম্ভব শক্ত হিরেও আদতে তা-ই। দু’টিই কার্বন মৌলের বহুরূপ। বিজ্ঞানের পরিভাষায়, ‘অ্যালোট্রপ’। ‘বহু রূপে সম্মুখে’ এই ভাবেই আমরা খুঁজে পাই কার্বনকে।
প্রাকৃতিক ভাবে আমরা যে সব হিরে পাই, তা নানা রঙের হয়। কখনও ঝকঝকে সাদা। কখনও হলুদ, কখনও বা গোলাপি। এই রং-বদলই হিরেকে আরও দুর্লভ, দুর্মূল্য করে তোলে।
হিরের রং বদলে যাওয়ার জন্য দায়ী বায়ুমণ্ডল। আরও সঠিক ভাবে বলতে হলে, বাতাসে থাকা নাইট্রোজেন। আমাদের বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন বা কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে ঢের বেশি পরিমাণে থাকে নাইট্রোজেন। ৭৮ শতাংশ।
এই নাইট্রোজেনই হিরের রং বদলে দেয়। ভূপৃষ্ঠে তৈরি হওয়ার সময়েই বাতাসের নাইট্রোজেনের কিছুটা ঢুকে যায় হিরের ভিতরে। তাতেই হিরের রং হয়ে যায় হলুদ। কারণ, নাইট্রোজেন ঢোকার ফলে হিরের ভিতরটা বদলে যায়। যেন হিরের ‘হৃদয়ে রদবদল’!
হিরের ভিতরে কার্বন পরমাণুগুলি চারটি হাত দিয়ে অন্যগুলির হাত ধরে থাকে খুব শক্ত করে। দু’টি কার্বন পরমাণুর মধ্যে বন্ধনই (‘বন্ড’) তো সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। সবচেয়ে জোরালো বন্ধন।
বাতাসের নাইট্রোজন সেই বন্ধনও ভেঙে দেয়। বাতাসের নাইট্রোজেন হিরের দু’টি কার্বন পরমাণুর বন্ধন ভেঙে দিয়ে একটি কার্বন পরমাণুকে সরিয়ে তার জায়গায় গিয়ে বসে পড়ে। এটা হলেই হিরের রং বদলে গিয়ে হয়ে যায় হলুদ।
তবে হিরের কেলাস তৈরি হয়ে গেলে তার ভিতরে আর বাতাসের নাইট্রোজেনের ঢুকে পড়া সম্ভব নয়। তাই খোলা জায়গায় অনেক দিন ধরে পড়ে থাকলে কিন্তু হিরের রং-বদল ঘটে না। সেটা হয় একমাত্র হিরের কেলাসের জন্ম-মুহূর্তেই। তাই সাদা হিরের চেয়ে হলুদ রঙের হিরে কিছুটা দুর্লভ। দামও বেশি।
হিরে গোলাপি হওয়ার জন্যও থাকে নাইট্রোজেনেরই ভানুমতীর খেল! খোলা জায়গায় থাকা হিরের উপর বাতাস পড়তে পড়তে তার নাইট্রোজেন হিরের ভিতরের একটা কার্বন পরমাণুকে সরিয়ে তার জায়গায় বসার পাশাপাশি যদি পাশের কার্বন পরমাণুটিকেও উধাও করে দিতে পারে, তা হলে হিরে আর হলুদ থাকে না। হয়ে যায় গোলাপি। যা আরও দুর্লভ। তাই সবচেয়ে দামিও।
প্রকৃতির কাজটা নিজে করেই চমক কস্তুরীর
হিরের এই রং-বদলটা কস্তুরী ঘটিয়েছেন গবেষণাগারে। কৃত্রিম ভাবে। নাইট্রোজেনের ‘বিম’ ফেলেছেন খুব পাতলা একটা হিরের উপর। লম্বা ও চওড়ায় যা ৩ মিলিমিটার করে। আর পুরু মাত্র ৩০০ মাইক্রন (এক মিলিমিটারের এক হাজার ভাগের এক ভাগ)। সেই নাইট্রোজনই হিরের অন্তরে থাকা একটি কার্বন পরমাণুকে সরিয়ে সেই জায়গায় গিয়ে বসে। আর তার পাশের কার্বন পরমাণুটিকে একেবারে হাপিস করে দেয়।
আর সেটা হলেই তৈরি হয়ে যায় একটি ‘কিউবিট’। যা আদতে ‘কোয়ান্টাম বিট’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটাই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের একক বা ‘ইউনিট’।
বিট, কিউবিট: ক্লাসিক্যাল ও কোয়ান্টাম কম্পিউটার
সাধারণ বা ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারেরও থাকে এমন দু’টি একক। শূন্য (০) আর এক (১)। এই অঙ্কদু’টি আসলে স্থান (‘পজিশন’)-এর নির্ণায়ক। এদের বলা হয় ‘ক্লাসিক্যাল বিট্স’ বা ‘বিট্স’। এই দু’টি অঙ্ক বা ‘ডিজিট’-এর যোগবিয়োগেই তৈরি হয় সাধারণ কম্পিউটারের মূল চালিকাশক্তি। ‘অ্যালগরিদম’।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার চালানোর অ্যালগরিদম শুধুই এই দু’টি অঙ্ক দিয়ে বানানো যায় না। শূন্য (০) আর এক (১) ছাড়াও সেখানে থাকে আরও কয়েকটি স্থান বা ‘সুপার পজিশন’। সেগুলি দিয়েই তৈরি করা হয় কোয়ান্টাম কম্পিউটারের অ্যালগরিদম।
কস্তুরীর কাজের অভিনবত্ব কোথায়?
প্রথমত, নাইট্রোজেন এসে হিরের কোনও একটি কার্বন পরমাণুকে সরিয়ে তার জায়গায় বসে পড়লেও তার পাশের কার্বন পরমাণুটিকে একেবারে হাপিস করে দিতে পারবে কি না, তা নিখুঁত ভাবে বলা সম্ভব নয়। পাশের কার্বন পরমাণুটি হাপিস হতে পারে। আবার না-ও হতে পারে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘প্রোবাবিলিস্টিক সিচ্যুয়েশন’।
কস্তুরীর গবেষণার লক্ষ্য, এই বিষয়টিকে নিশ্চিত করা। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘ডিটারমিনিস্টিক সিচ্যুয়েশন’। কারণ, সেটা হলেই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের চালিকাশক্তি একটি কিউবিট তৈরি হবে। আর সেটা করা না গেলে কিন্তু কিউবিট তৈরি করা সম্ভব হবে না।
দ্বিতীয়ত, অনিশ্চয়তা থেকে নিশ্চয়তার পথে হাঁটার জন্য হিরের অন্তরের এই ‘পালাবদল’কে নিয়ন্ত্রিত করাটাও কস্তুরীর গবেষণার আর একটি লক্ষ্য। যাতে হিরের ভিতরে যে জায়গায় একটি কার্বন পরমাণুকে নাইট্রোজেন দিয়ে সরিয়ে তার পাশের কার্বন পরমাণুটিকেও আমরা হাপিস করতে চাইছি, একটি কিউবিট তৈরি করার জন্য, ঠিক যেন সেই জায়গাটিতেই সেটা করতে পারি। এক জায়গায় করতে গিয়ে সেটা অন্য জায়গায় হলে সেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিন্তু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত হবে না।
অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ার আরও কারণ রয়েছে। গবেষণাগারে খুব পাতলা হিরের উপর নাইট্রোজেনের বিম ফেলা হচ্ছে। তার ফলে, সেই বিমে থাকা অসংখ্য নাইট্রোজেন পরমাণুর মধ্যে কোন পরমাণুটি হিরের অন্তরে থাকা কোন কার্বন পরমাণুটিকে সরিয়ে ঠিক তার পাশের কার্বন পরমাণুটিকে হাপিস করে দিতে পারবে, সেটাও নিশ্চিত করে বলা যায় না।
কস্তুরীর কৃতিত্ব, তিনি সেটাও করে দেখাচ্ছেন। অনিয়ন্ত্রিতকেও নিয়ন্ত্রণে আনছেন। তাঁর বশ মানাচ্ছেন!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কাজগুলি ভারতে সর্বাধুনিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানানোর ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক হবে।
কস্তুরীর লক্ষ্য, হিরেতে আপাতত ৪টি কিউবিট (আক্ষরিক অর্থে, ‘স্পিন কিউবিট’) বানানো। তার পর সেই সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ানো হবে। যাতে অনেকগুলি যমজ ভাইয়ের জন্ম হয়। আর তাদের একসঙ্গে কুচকাওয়াজ করানো যায়। তার ফলে যত কিউবিট বানানো সম্ভব হবে ততই শক্তিশালী হয়ে উঠবে সেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
অবদান কোয়ান্টাম টেলিযোগাযোগেও
অভিনব উপায়ে দেশে উন্নত মানের কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানানো ছাড়াও কস্তুরী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চাইছেন কোয়ান্টাম টেলিযোগাযোগব্যবস্থাতেও। যার জন্য খুব জরুরি একটি একলা ফোটন অথবা দু’টি যমজ ফোটনের জন্ম দেওয়া।
কস্তুরী সেই একলা ফোটনের জন্ম দিয়েছেন হিরেতেই। হিরেকেই করে তুলেছেন কোয়ান্টাম টেলিযোগাযোগব্যবস্থার জন্য খুব জরুরি ‘একলা ফোটনের সোর্স’ বা উৎস। এর মাধ্যমে পরে যমজ ফোটনেরও জন্ম দেওয়া সম্ভব।
কাজটা আরও সহজে করার জন্য নাইট্রোজেন পরমাণুর পাশাপাশি কখনও সিলিকন, কখনও বা জার্মেনিয়াম পরমাণুও ব্যবহার করেছেন কস্তুরী।
নাইট্রোজেন পরমাণু হিরের অন্তরে থাকা কার্বন পরমাণুকে সরিয়ে তার জায়গায় বসে যায়। কখনও কখনও তার পাশের কার্বন পরমাণুটিকেও হাপিস করে দেয়।
আর সিলিকন বা জার্মেনিয়াম বিম হিরের উপর ফেলা হলে সিলিকন বা জার্মেনিয়াম পরমাণু হিরের ভিতরের দু’টি কার্বন পরমাণুর বন্ধনের মধ্যে গিয়ে বসে পড়ে অস্থায়ী ভাবে। কোনও কার্বন পরমাণুকে অপসারণ বা হাপিস করে দেয় না। এর ফলেই জন্ম হয় বিকিরণের। যার জন্য ওই একলা ফোটনের জন্ম হয়।
‘‘শুধু কোয়ান্টাম টেলিযোগাযোগব্যবস্থাই নয়, এই যমজ ফোটনের মাধ্যমে সর্বাধুনিক কোয়ান্টাম সেন্সরও বানানো যাবে। যা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ১০ লক্ষ ভাগ ছোট চৌম্বক ক্ষেত্রেরও শক্তি মাপতে পারবে। এমন ছোট ছোট চৌম্বক ক্ষেত্র থাকে আমাদের হার্টের পেশি আর মস্তিষ্কের নিউরনে। তাই এই কোয়ান্টাম সেন্সরের মাধ্যমে আমরা অনেক অজানা জৈবনিক প্রক্রিয়াগুলিও এ বার জানতে পারব’’, বলছেন কস্তুরী।
কস্তুরীর গবেষণা তাই হ্যাকারদের বোকা বানানো কম্পিউটার থেকে শুরু করে আমাদের হার্ট ও মস্তিষ্কের জটিল রহস্যভেদেরও পথ খুলে দেবে।
হিরে দিয়েই হ্যাকারদের কিস্তিমাত করতে চলেছেন কস্তুরী।
ছবি- অধ্যাপক কস্তুরী সাহার সৌজন্যে।
ভিডিয়ো সৌজন্যে: ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে ও নিউ জার্নাল অব ফিজিক্স।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy