চাঁদ থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে ল্যান্ডার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ছোট্ট একটি লাফ। তাতেই চাঁদের আরও কাছে পৌঁছ গেল বিক্রম! ইসরোর মতে, চাঁদের প্রায় দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে বিক্রম। বর্তমান কক্ষপথ থেকেই চাঁদে নামবে সে।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে এই অবতরণকে ‘ঐতিহাসিক’ বলছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। যা চাক্ষুষ করতে শুক্রবার গভীর রাতে বেঙ্গালুরুতে ইসরোর টেলিমেট্রি, ট্র্যাকিং অ্যান্ড কম্যান্ড নেটওয়ার্ক (ইসট্র্যাক)-এর স্যাটেলাইট কন্ট্রোল সেন্টারে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হাজির থাকবে ৬০ জন স্কুলপড়ুয়া। এ রাজ্যের বর্ধমানের ইউসুরা আলম-সহ দুই পড়ুয়াও সেই তালিকায় রয়েছে। বিক্রমের অবতরণ বিভিন্ন চ্যানেল এবং নেট মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারও হবে।
চন্দ্রযান-২-এর মোট তিনটি অংশ। অরবিটার বা কক্ষযান, ল্যান্ডার বিক্রম (বিক্রম সারাভাইয়ের নামে) এবং রোভার বা চাঁদের গাড়ি প্রজ্ঞান। গত ২ সেপ্টেম্বর অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিক্রম। তার পেটের ভিতরে রয়েছে প্রজ্ঞান। আগামী শুক্রবার রাত দেড়টা থেকে ২টোর মধ্যে চাঁদের মাটি ছোঁবে বিক্রম। তার কয়েক ঘণ্টা পরে প্রজ্ঞান বেরিয়ে আসবে।
ইসরো জানিয়েছে, অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে বিক্রম গত কাল ও আজ— দুই লাফে চাঁদের থেকে দূরত্ব কমিয়েছে। গত কাল প্রথম লাফ দেওয়ার পরে বিক্রম যে কক্ষপথে পৌঁছায় তাতে চাঁদের সঙ্গে তার ন্যূনতম দূরত্ব ১০৪ কিলোমিটার এবং সর্বাধিক দূরত্ব ১২৮ কিলোমিটার ছিল। আজ দূরত্ব কমেছে আরও। বর্তমানে এটির ন্যূনতম দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার এবং সর্বাধিক দূরত্ব ১০১ কিলোমিটার। আজ ভোর ৩টে ৪২ মিনিটে বিক্রমের শরীরে বসানো ইঞ্জিন ৯ সেকেন্ডের জন্য চালু করা হয়েছিল। তাতেই এই দূরত্ব কমেছে।
বিক্রমের অবতরণস্থল হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। এর আগে মাত্র তিনিটি দেশ যান নামিয়েছে চাঁদে। রাশিয়া, আমেরিকা ও চিন। কিন্তু দক্ষিণ মেরুতে কোনও দেশের শাম নামেনি। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বিক্রমের অবতরণ য়ে কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞান গবেষণার জন্য বিক্রমের শরীরে তিনটি যন্ত্র বসানো রয়েছে। সেগুলি চাঁদের আবহাওয়ায় তাপমাত্রা, ইলেকট্রনের পরিমাণ বা ঘনত্ব , চাঁদের মাটির তাপমাত্রা এবং চাঁদে ভূমিকম্পের ধরন ও তীব্রতা পরীক্ষা করবে। ফলে বিক্রমের মাধ্যমেই চাঁদ সম্পর্কে নতুন তথ্য দিতে পারে ইসরো।
তবে বিজ্ঞান গবেষণা সফল হবে কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করছে অবতরণের সাফল্যের উপরে। ইসরো সূত্র জানাচ্ছে, শেষ পনেরো মিনিট কার্যত গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি হবে। প্রাথমিক ভাবে বিক্রমের অবতরণের জন্য দু’টি জায়গা বেছে রাখা হয়েছে। তবে কোথায় সে অবতরণ করবে তা ঠিক করবে বিক্রম নিজেই। শরীরে বসানো ক্যামেরা দিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠের ছবি তুলতে তুলতে সে আদর্শ স্থান বেছে নেবে।
রাত ১টা থেকে ২টোর মধ্যে অবতরণ শুরু হবে। অবতরণ শুরু থেকে মাটি ছোঁয়া, গোটা প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগবে। অবতরণ শুরু হওয়ার পর থেকে পাল্লা দিয়ে গতি এবং উচ্চতা দুই কমবে। শেষে কার্যত পাখির পালকের মতো ভাসতে ভাসতে চাঁদ ছোঁবে বিক্রম। পাখির পালকের মতো পতন ইসরোর মুকুটে নতুন পালক যোগ করতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy