Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Science News

এত সোনা নিয়ে কেন চাঁদে যাচ্ছে চন্দ্রযান-২?

হিরের খোঁজে বাংলা থেকে আফ্রিকার চাঁদের পাহাড়ে গিয়েছিলেন শঙ্কর। হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের পরোয়া না করে। বিভূতিভূষণের গল্পে। আর সোনায় গা আদ্যোপান্ত মুড়ে প্রায় চার লক্ষ কিলোমিটার দূরে চাঁদে যাচ্ছে ভারতের চন্দ্রযান-২।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ১২:২১
Share: Save:

সোনার সাজে সেজে কেন চাঁদে যাচ্ছে চন্দ্রযান-২? তার গা ভরা সোনায়। দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলিতে যেমন সোনার সাজে সেজে থাকেন দেবদেবীরা! তেমনটাই।

ইসরোর দ্বিতীয় চন্দ্রযানের শরীরের ভিতরে থাকা ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-এরও গা সোনায় মোড়া। সেই বিক্রমের অন্তরে, অন্দরে লুকিয়ে থাকা রোভার ‘প্রজ্ঞান’-ও আপাদমস্তক মোড়া সোনায়। যা ‘বিক্রম’ নামার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তার পেট থেকে বেরিয়ে পড়বে চাঁদের মাটি চষতে। ঢুঁড়ে বেড়াতে।

হিরের খোঁজে বাংলা থেকে আফ্রিকার চাঁদের পাহাড়ে গিয়েছিলেন শঙ্কর। হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের পরোয়া না করে। বিভূতিভূষণের গল্পে। আর সোনায় গা আদ্যোপান্ত মুড়ে প্রায় চার লক্ষ কিলোমিটার দূরে চাঁদে যাচ্ছে ভারতের চন্দ্রযান-২।

সেই সোনা কোন ‘জাতে’র?

ইসরো সূত্রে খবর, একেবারে নিখাদ সোনা যেমন আমরা গায়ে পরতে পারি না, তেমনই চন্দ্রযান-২-এর গা মোড়া যে সোনায়, সেটাও সত্যিকারের সোনা নয়। আবার স্যাকরার দোকানে ‘সোনার জল’ বলতে যা বোঝানো হয়, তা-ও নয়।

সারা অঙ্গে সোনা, শুধুই সোনা! ল্যান্ডার ‘বিক্রম’

আরও পড়ুন- ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিরহস্যের জট খুলতে আরও রোমাঞ্চকর অভিযানের পথে ইসরো

আরও পড়ুন- চাঁদে এখন না নামলে পরে খুবই পস্তাতে হত ভারতকে!​

ইসরোর ‘মিশন চন্দ্রযান-২’-এর এক বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ জানাচ্ছেন, ওই সোনা আসলে ‘পলিমাইড’ (যা ‘পলিঅ্যামাইড’ বা ‘পলিইমিড’ও হয়) ও অ্যালুমিনিয়ামের একটি মিশ্র ধাতু বা সংকর ধাতু (অ্যামালগ্যামেট)। যার সামনের দিকটায় রয়েছে পলিমাইড পদার্থ। আর পিছনের দিকটায় রয়েছে অ্যালুমিনিয়াম।

এত সোনার সাজসজ্জা কেন?

কেন সোনার সাজে সাজিয়ে চাঁদ-মুলুকে পাঠাতে হচ্ছে চন্দ্রযান-২, বিক্রম আর প্রজ্ঞানকে?

যে ভাবে চাঁদে নামবে সোনায় মোড়া ল্যান্ডার ‘বিক্রম’

আমদাবাদের ‘ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি’র অধ্যাপক বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্তোষ ভাড়াওয়ালে জানাচ্ছেন, এই স‌োনার সাজে না সাজালে চন্দ্রযান-২, বিক্রম আর প্রজ্ঞানকে চাঁদের মুলুকে খুব বেশি ক্ষণ সচল রাখা যেত না। তারা নিস্তেজ হয়ে পড়ত অচিরেই।

দু’রকমের ধকল সইতে হয় মহাকাশে!

মহাকাশে গেলে যে কোনও মহাকাশযানকেই সইতে হয় দু’রকমের ধকল। হয় তাদের পিঠে আছড়ে পড়ে সূর্যের অসম্ভব জোরালো আলো, ক্ষতিকর বিকিরণ। না হলে মহাজাগতিক রশ্মির (কসমিক রে) ঝড়, ঝাপটা। আর সেগুলি অসম্ভব গতিতে এসে আছড়ে পড়ে বলেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মহাকাশযানে থাকা যন্ত্রগুলি অসম্ভব গরম হয়ে যায়। আর সেই খুব বেশি তাপমাত্রায় যন্ত্রগুলির পক্ষে আর কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। সেগুলি বিকল হয়ে পড়ে।

সূর্যের আলো, বিকিরণ পড়লে তো খুব বিপদ!

আবার মহাকাশযানের যে দিকটায় সূর্যের আলো একেবারেই পড়ে না, বা পড়লেও তা নেহাৎই হয় যৎসামান্য, সেই দিকটার যন্ত্রগুলিকে সচল রাখার ক্ষেত্রে সমস্যাটা হয় ঠিক উল্টো। মহাকাশের হাড়জমানো ঠান্ডায় সেই দিকটার যন্ত্রগুলি দিয়ে আর কাজ চালানো যায় না। সেগুলি নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন- ৩০ বছরের মধ্যেই চাঁদে বড় শিল্পাঞ্চল গড়ে ফেলবে মানুষ!​

আরও পড়ুন- চার বছরের মধ্যেই চাঁদের পাড়ায় ‘বাড়ি’ বানাচ্ছে নাসা!​

কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’-এর অধিকর্তা, বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, মহাকাশযানের ওই সোনার সাজসজ্জা দু’রকমের সমস্যা মেটাতেই প্রধান ভূমিকা নেয়। পলিমাইড এমন এক ধরনের পদার্থ, যার পিঠে এসে আছড়ে পড়া সূর্যরশ্মি বা বিকিরণ অথবা মহাজাগতিক রশ্মির বেশির ভাগটাই প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায়। পলিমাইডের মধ্যে দিয়ে সেই রশ্মি বা বিকিরণ গলে যেতে পারে না। ফলে, মহাকাশযানের পিঠে পলিমাইডের ওই ‘সোনার সাজ’ থাকলে সূর্যরশ্মি বা ক্ষতিকর বিকিরণের জন্য তা সেই দিকের যন্ত্রগুলিকে অসম্ভব গরম হয়ে পড়ার হাত থেকে বাঁচায়।

সোনার সাজে রোভার ‘প্রজ্ঞান’

আলো, বিকিরণ না পড়লেও বিপদ কম নয়!

আবার যে দিকটায় সূর্যের কোনও আলো পড়ে না, সেই দিকের যন্ত্রগুলিকে সচল রাখতেও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় পলিমাইডের ওই ‘সোনার সাজ’। মহাকাশযানে কোনও যন্ত্র চললে তার যান্ত্রিক শক্তির কিছুটা তাপ শক্তিতে পরিবর্তিত হয়। তাই যন্ত্রটা গরম হয়ে পড়ে। কিন্তু পলিমাইডের সোনার সাজ না থাকলে সেই তাপ শক্তি মহাকাশে বেরিয়ে যেত। ফলে, যন্ত্রটা ঠান্ডা হয়ে পড়ত কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই। কিন্তু পলিমাইড সেই তাপ শক্তিতে মহাকাশে বেরিয়ে আসতে দেয় না। প্রতিফলিত করে সেই বিকিরণকে যন্ত্রের দিকেই পাঠিয়ে দেয়। ফলে, যন্ত্রটির তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থাতেই থাকে। তা সচল ও কর্মক্ষম থাকে।

কেন চন্দ্রযান-২-এর গা সোনায় মোড়া? দেখুন ভিডিয়ো

নিখাদ সোনারও ব্যবহার হচ্ছে এখন মহাকাশযানে

সন্তোষ বলছেন, ‘‘এখন নাসা আসল সোনা ব্যবহার করছে মহাকাশচারীদের হেলমেটেও। সূর্যরশ্মি, ক্ষতিকর বিকিরণ আর মহাজাগতিক রশ্মির ঝড়, ঝাপটা থেকে মহাকাশচারীদের বাঁচাতে। ইসরো এর আগেও ‘সোনার সাজে’ সাজিয়েছে চন্দ্রযান-১, মঙ্গলযান-এর মতো ভারতের মহাকাশযানগুলিকে।’’

ছবি সৌজন্যে: ইসরো

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

ভিডিয়ো সৌজন্যে: গরিব সায়েন্টিস্ট

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy