Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Science News

জ্বালানি লিক, অন্তিম লগ্নে স্থগিত হয়ে গেল ‘চন্দ্রযান ২’-এর অভিযান

রবিবার শেষ রাতে, ২টো ৫১ মিনিটে চন্দ্রযান ২-কে নিয়ে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল জিয়োসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক থ্রি রকেটের।

চন্দ্রযান ২। ছবি: পিটিআই।

চন্দ্রযান ২। ছবি: পিটিআই।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শ্রীহরিকোটা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ০২:৫৯
Share: Save:

কাউন্টডাউন স্থগিত শেষ মুহূর্তে! রবিবার শেষ রাতে, ২টো ৫১ মিনিটে মাটি কাঁপিয়ে উড়ে যাওয়ার কথা ছিল বাহুবলীর। না, সিনেমার চরিত্র নয়। বাহুবলী একটি রকেট, জিয়োসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক থ্রি। ওড়ার নির্ধারিত সময়ের ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগে ত্রুটি ধরা পড়ল তাতে। ইসরো-র বিজ্ঞানীরা জানালেন, রকেট থেকে জ্বালানি লিক করছে। কখন সেটি উড়তে পারবে, মাঝরাত পর্যন্ত জানাননি তাঁরা।

অথচ সারাদিন সাজো সাজো রবই ছিল। রবিবার পুলিকট হ্রদ পেরিয়ে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্রে ঢোকার সময় থেকে ‘ফাইনাল কাউন্টডাউন’ শব্দটাই মাথায় ঘুরছিল।

ওজনদার মহাকাশযান বইতে সক্ষম বলে আদ্যোপান্ত ভারতীয় এই রকেট তেলুগু সিনেমার জনপ্রিয় চরিত্রের নামেই পরিচিত। ইসরো জানায়, শুধু এই রকেটের নিজের ওজনই ৬৪০ টন। তার উপরে চন্দ্রযানের ওজন আরও ৩৮০০ কিলোগ্রাম! সেই ওজন নিয়েই তার মাটি থেকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার কথা চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেওয়া ভারতের দূতকে।

আরও পড়ুন: রাকেশ-রবীশ ডাক পান না, ভুলে গিয়েছে দেশ!

ইসরোর বক্তব্য, মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মতো শক্তিশালী ও ব্যয়বহুল রকেট ভারতের নেই। তাই পৃথিবীর চারপাশে পাক খাইয়ে খাইয়ে চন্দ্রযানকে একটু করে দূরে পাঠানো হবে। নির্দিষ্ট দূরত্বে পৌঁছে গেলে এক লাফে চাঁদের কক্ষপথে ঢুকবে সে। তার পর ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে তাকে চাঁদের দিকে ক্রমশ ঠেলে দেওয়া হবে। পৃথিবীর চারপাশে পাক খাইয়ে দূরে ছুড়ে দেওয়ার এই প্রযুক্তির প্রয়োগ মঙ্গল অভিযানেও করা হয়েছিল। এবং প্রথম বারেই সফল হয় তা।

কম খরচে মহাকাশ পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসরো অবশ্য আগে থেকেই প্রথম স্থানে। মঙ্গলযানের খরচ ছিল হলিউডি ছবি ‘গ্র্যাভিটি’র বাজেটের থেকেও কম। দ্বিতীয় চন্দ্রযানের জন্য খরচ হচ্ছে সাম্প্রতিক ‘অ্যাভেঞ্জার্স এন্ড গেম’-এর থেকে ঢের কম। হলিউডি ছবিটি তৈরি হয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি ডলারে। সেখানে দ্বিতীয় চন্দ্রযানের বাজেট মাত্র ১৪ কোটি ডলার!

আরও পড়ুন: চার বছরের মধ্যেই চাঁদের পাড়ায় ‘বাড়ি’ বানাচ্ছে নাসা!

প্রায় ৯৬০ কোটি টাকার প্রকল্প। ইসরোর কর্তাদের চোখমুখ বলছে, প্রচণ্ড উদ্বেগে তাঁরা। ইসরোর কর্তারা বলছেন, উৎক্ষেপণ নিয়ে চিন্তা নেই। আবহাওয়াও অনুকূল। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ নিয়েই চিন্তা বেশি। প্রাক্তন ইসরো প্রধান জি মাধবন নায়ারও বলেছেন এই জটিল প্রযুক্তি ভারতীয় বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে চন্দ্রযান-২ নামবে চাঁদের এমন জায়গায় যেখানে আগে কোনও দেশের যান নামেনি বা মানুষের পা পড়েনি। ৬ বা ৭ সেপ্টেম্বরের কোনও এক সময় চন্দ্রযানের ‘ল্যান্ডার’ বিক্রম নামবে দক্ষিণ মেরুর কাছে। চাঁদের ৭০° অক্ষাংশে। ‘মানজিনাস সি’ এবং ‘সিমপেলিয়াস এন’ নামে দু’টি গহ্বরের মাঝে একটু উঁচু জমিতে। ৫০ বছর আগে নিল আর্মস্ট্রং এবং বাজ় অলড্রিন চাঁদের নিরক্ষরেখার কাছে নেমেছিলেন। তার পর রাশিয়া ও চিনের ল্যান্ডার নেমেছে উত্তর মেরুর কাছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে কোনও দেশ পৌঁছয়নি। ইসরোর বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, ওখানে সূর্যের আলো পৌঁছয় না বললেই চলে। ফলে চাঁদের বিবর্তনের ইতিহাসের সূত্র মিলতে পারে সেখানে। যে সূত্রই মিলুক, ভারতই প্রথম পাবে।

অভিযানের সাফল্য চেয়ে ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন তিরুপতি মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন। চন্দ্রযান ২-এর একটি প্রতিরূপও নিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে। ইসরো সূত্রের দাবি, এটা দীর্ঘদিনের রীতি। মঙ্গলযানের সময় তৎকালীন ইসরো প্রধান কে রাধাকৃষ্ণন মন্দিরে গিয়ে কীর্তনও গেয়ে এসেছিলেন। এ বার শেষ মুহূর্তে স্থগিত করতে হল উড়ান। ইঞ্জিনিয়াররা খতিয়ে দেখছেন, কী থেকে কী হল!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy