প্রতীকী ছবি।
‘রাধাঅষ্টমী’তে আর চাঁদে নামা হল না ভারতের। নামবে বলে ক্যালেন্ডারে সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখটাকে গত কয়েকমাস ধরেই আমরা লাল দাগে দাগিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু গতকাল চন্দ্রযান-২ রওনা দিতে পারেনি বলে ক্যালেন্ডার থেকে আপাতত আমরা ওই দিনটাকে মুছে দিয়েছি। ইসরোর একটি সূত্র জানাচ্ছে, এখন যা পরিস্থিতি তা যদি ঠিকঠাক ভাবে এগিয়ে চলে, তা হলে যখন এই বাংলায় কাঠি পড়বে পুজোর ঢাকে, তখনই দুর্গা অষ্টমীতেই চাঁদের পিঠে নামবে চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। ল্যান্ডারের মধ্যেই থাকবে ছোটখাটো ২০ কিলোগ্রাম ওজনের একটি রোভার। ‘প্রজ্ঞান’। দুর্গা অষ্টমীর তারিখটা হচ্ছে ৫ অক্টোবর।
কেন অন্তত এক মাস পিছিয়ে যাচ্ছে চাঁদের মাটিতে ভারতের পদার্পণ? কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসটি)-র অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘রাধা অষ্টমীর পর দুর্গা অষ্টমী ছাড়া আর যে ভাল দিন নেই চাঁদের মাটিতে পা ছোয়ানোর জন্য!’’
কেন নেই?
সন্দীপ জানাচ্ছেন, চাঁদ তার নিজের কক্ষপথে লাট্টুর মতো ঘুরপাক খেতে সময় নেয় পৃথিবীর ২৮টি দিন। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতেও চাঁদ ওই একই সময় নেয়। এই ২৮ দিন সময়ের মধ্যে চাঁদের কোনও একটি এলাকায় সূর্যের আলো থাকে ১৪ দিন ধরে। এই ১৪ দিন কিন্তু পৃথিবীর হিসাবে। তারপর চাঁদে নামে রাত। যখন সেই এলাকায় আর সূর্যের আলো পড়ে না, চাঁদের সেই রাতটাও হয় পৃথিবীর ১৪ দিনে। তার মানে পৃথিবীতে যেমন একটি দিন ও রাত মিলিয়ে হয় ২৪ ঘণ্টা, তেমনই চাঁদে একটি দিন ও রাত হয় পৃথিবীর ২৮টি দিনকে যোগ করে।
আরও পড়ুন: গলদ ‘ও’ রিংয়েই, ফুলে ফেঁপে ওঠেনি বলেই গভীর রাতে থমকে গেল চন্দ্রযান-২ অভিযান
তার ফলে ইসরো ১৫ জুলাই দিনটিকে ঠিক করেছিল চাঁদে রওনা হওয়ার জন্য। ইসরোর হিসাব ছিল, যদি সোমবার ভোর রাত ২টো ৫১ মিনিটে রওনা দিত চন্দ্রযান, তাহলে তার ল্যান্ডার ও রোভার চাঁদের মাটিতে নেমে কাজ শুরু করত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে। আমাদের পঞ্জিকা মতে যেটা আসলে রাধা অষ্টমীর দিন। ওই দিনই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশে শুরু হত চাঁদের ভোর। যা সকাল হয়ে দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা হতে নিত পৃথিবীর আরও ১৪টি দিন। সেই সময়ে সূর্যের আলো পুরোপুরি পাওয়া যেত বলে তার সাহায্যে চাঁদের পিঠে রোভার ও ল্যান্ডারের কাজকর্ম চালাতে সুবিধা হত ইসরোর। কারণ তারপর রাত নেমে এলেই রোভার, ল্যান্ডারগুলো চালানোর জন্য সোলার প্যানেল আর কাজ করতে পারত না। চলে যেত ‘স্লিপ মোডে’। চাঁদের সেই ১৪ দিনের রাত শেষ হলে আবার ল্যান্ডার ও রোভারগুলো সে সময়ও বহাল তবিয়তে থাকলে আবার সেগুলোকে সক্রিয় করা যেত। কিন্তু সে ক্ষেত্রে চাঁদে রাতের দীর্ঘ সময় সে ক্ষেত্রে নিষ্কর্মাই হয়ে থাকতে হত আমাদের ল্যান্ডার ও রোভারটিকে।
আরও পড়ুন: জ্বালানি লিক, অন্তিম লগ্নে স্থগিত হয়ে গেল ‘চন্দ্রযান ২’-এর অভিযান
সন্দীপ বলছেন, ‘‘সেই কারণেই ১৫ জুলাই থেকে অন্তত ২৮ দিন অপেক্ষা করতেই হবে ইসরোকে চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণের জন্য। সে ক্ষেত্রে ১২ অগস্টের আগে উৎক্ষেপণ হওয়ার সম্ভাবনা কম আর তা যদি হয় তাহলে আগামী ৫ অক্টোবর দুর্গা অষ্টমীর দিনই চাঁদের পিঠে নামবে বিক্রম ও প্রজ্ঞান।’’
আরও পড়ুন: চার বছরের মধ্যেই চাঁদের পাড়ায় ‘বাড়ি’ বানাচ্ছে...
সন্দীপ এ-ও জানাচ্ছেন, পৃথিবী থেকে চাঁদের কক্ষপথে ঢোকার জন্য রুটের কিছু সামান্য রদবদলও করতে পারে ইসরো। যে ভাবে পৃথিবীর কক্ষপথ ডিঙিয়ে চাঁদ মুলুকে পৌঁছনোর কথা ভেবেছিল ইসরো, তা কিছুটা বদলাতে পারে যদি ৫ অক্টোবরের আগেই চাঁদে নামতে চায় ভারত। যদিও ইসরো ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, বিগড়ে যাওয়া লিকুইড প্রপেল্যান্ট চেম্বারগুলো সারাতে তাদের অন্তত ১০ দিন সময় লাগবে। যদি ধরে নিই ১০ দিন পরেই রওনা দিতে পারবে চন্দ্রযান-২, তা হলে হয়তো সেপ্টেম্বরেই চাঁদে পৌঁছতে পারবে ভারত। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও চাঁদের ১৪টি দিনকে গবেষণার কাজে লাগানোর সুযোগ হারাবে ইসরো। হাতে পড়ে থাকবে চাঁদের মাত্র ১৪টি দিন। যে সময়ে সূর্যের আলো থাকবে চাঁদের বিশেষ এলাকায়।
ভারতের চন্দ্রাভিযান সম্পর্কে এগুলো জানেন কি?
তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অনেকেই মনে করছেন, অন্তত ২৮ দিন (প্রায় এক মাস) বা ৫৬ দিন (প্রায় দু’মাস)-এর আগে চন্দ্রযান-২ এর চাঁদমুলুকে রওনা দেওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্টই কম।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy