Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Science News

ক্যানসারের টিকা একটি অবান্তর কথা...

টিকা দিয়ে সারানো যেতে পারে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে এমনটাই দাবি করেছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোনাল্ড লেভি। গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন’-এ। গত ৩১ জানুয়ারি। শনিবার  (৩ ফেব্রুয়ারি) আমরা সেই খবর করেছি ‘টিকায় ‘সারল’ ইঁদুরের ক্যানসার, এ বার মানুষের উপর পরীক্ষা’ শিরোনামে। এই দাবির সত্যতা কতটা? মতামত জানালেন কলকাতার বিশেষজ্ঞ ক্যানসার চিকিৎসক স্থবির দাশগুপ্ত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

স্থবির দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৭:০৬
Share: Save:

(টিকা দিয়ে সারানো যেতে পারে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে এমনটাই দাবি করেছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোনাল্ড লেভি। গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন’-এ। গত ৩১ জানুয়ারি। শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) আমরা সেই খবর করেছি ‘টিকায় ‘সারল’ ইঁদুরের ক্যানসার, এ বার মানুষের উপর পরীক্ষা’ শিরোনামে। এই দাবির সত্যতা কতটা? মতামত জানালেন কলকাতার বিশেষজ্ঞ ক্যানসার চিকিৎসক স্থবির দাশগুপ্ত।)

ইমিউনিটি’ বা ‘রোগ-প্রতিরোধ’ কথাটার মানে- ‘অনাক্রমণতা’।

দেহের বিশেষ একটা ব্যবস্থাকে কেউ যেন আক্রমণ করে ধ্বংস করতে না পারে। হামলায় ব্যতিব্যাস্ত করে তুলতে না পারে।

আমাদের শরীরে বিজাতীয় (বাইরে থেকে আসা) কোনও কোষ ঢুকে পড়লে আমাদের স্বাভাবিক কোষগুলি তাকে ‘অনাত্মীয়’ বলে চিনতে পারে। এমন ‘অনাত্মীয়’দের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর জন্য আমাদের শরীরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে বলেই চার পাশে থাকা লক্ষ কোটি জীবাণুর মহা-সমুদ্রেও আমরা বেঁচেবর্তে থাকি। চট করে আমাদের টলিয়ে দেওয়া যায় না।

ইমিউনিটির এই ধারণায় ভুল আছে...

গত শতাব্দীর সাতের দশকে বিজ্ঞানী ম্যাকফার্লেন বার্নেট আমাদের জানান, ইমিউনিটি নিয়ে আমাদের এই ধারণাগুলি যতটা সরল, সাধসিধে, বাস্তব ততটা সরল নয়।

ক্যানসারে কাবু কোষ

বার্নেট বললেন, নিরাপত্তার এমন একটা ব্যবস্থা আমাদের শরীরে আছে ঠিকই। কিন্তু জীবাণুর আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করাটাই তার একমাত্র কাজ নয়। সেটা তার প্রধান কাজও নয়। ইমিউনিটির প্রধান কাজ হল, আমাদের কোষ ও কলাগুলো যাতে সুবিন্যস্ত, সুগঠিত থাকে তার উপর নজর রাখা। সেটা যেন আমাদের গোটা শরীরেই উপরেই একটা ‘নজরদারির ব্যবস্থা’।

‘ভাল’ ও ‘খারাপ’ ইমিউনিটি

ইমিউনিটি যখন আমাদের বাঁচায়, তখন আমরা তাকে বলি ‘ভাল’, ‘বলবান’, ‘নিষ্কলঙ্ক’! আর যখন তা আমাদের বাঁচাতে পারে না, তখন তাকে বলি- ‘খারাপ’, দুর্বল’।

ইমিউনিটি যখন নিজেই নিজের শত্রু!

কখনও কখনও ইমিউনিটি নিজেই নিজের শত্রু হয়ে যায়। তখন তাকে বলি, ‘অটো-ইমিউনিটি’। তাতে আমাদের গোটা শরীরটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। তার মানে, ইমিউনিটি আমাদের যেমন রক্ষা করতে পারে, তেমনই পারে ধ্বংস করতেও।

ক্যানসার টিকায় সারানোর ভাবনা এল কী ভাবে?

কোনও কোনও বিজ্ঞানী ভাবলেন, এমন একটা ব্যবস্থা যখন আমাদের শরীরে আছেই তখন আমরা তাকে নিজেদের দরকারে, সুবিধা মতো ব্যবহার করতে পারি। ক্যানসার কোষ তো আমাদের শত্রু। তা হলে তার বিরুদ্ধেও আমরা একে ব্যবহার করতে পারি।

আরও পড়ুন- টিকায় ‘সারল’ ইঁদুরের ক্যানসার, এ বার মানুষের উপর পরীক্ষা​

এই ভাবনাটাই ছিল ‘ক্যানসার ইমিউনোথেরাপি’ (টিকায় ক্যানসার সারানো)-র মূল ভিত্তি।

এই ধারণার গলদ কোথায়?

বাস্তবটা হল, আমাদের ক্যানসার কোষগুলো ‘বিজাতীয়’ নয়। এটা ঠিকই, তারা স্বভাবের দিক থেকে অন্যান্য কোষের চেয়ে আলাদা। কিন্তু তারা কেউই ‘বেজন্মা’ নয়। তারা যে কোনও স্বাভাবিক কোষ থেকেই তৈরি হয়। স্বাভাবিক কোষেরই তারা ‘অনন্য সাধারণ রূপ’!

আগ্রাসন নয়? একটি কোষ থেকে অন্য কোষে ছড়িয়ে পড়ছে ক্যানসার

যাকে বিজ্ঞানীরা আজকাল বলছেন, ‘সুপার-ডিফারেনশিয়েটেড’। আমাদের সমস্ত কোষই ‘ডিফারেনশিয়েটেড’। মানে, স্বতন্ত্র। একে অন্যের চেয়ে আলাদা চেহারা-চরিত্র, চালচলন, মতিগতিতে।

আরও পড়ুন- বৃহস্পতির চাঁদে প্রাণ আছে? বাঙালির চোখে খুঁজে দেখবে নাসা​

কিন্তু ক্যানসার কোষগুলো আরও একটা ধাপ এগিয়ে গিয়ে ‘অনন্য সাধারণ’ হয়ে যায়। তার স্বভাব-চরিত্র পালটে যায়। বলা যায়, কিছুটা ‘দুশ্চরিত্র’ হয়ে যায়! হয়ে যায় আরেক ধরনের ‘প্রজাতি’ (স্পেসিস)।

ক্যানসার কোষ: শরীরে থেকেই তারা ‘বিদ্রোহী’!

ক্যানসারকে তাই অনেকে ‘বিশেষ প্রজাতি চরিত্র’ (স্পেশ্যাল স্পেসিস) বলেও ব্যাখ্যা করেন। এই ‘প্রজাতি’ কিন্তু আমাদের শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে (ইমিউনিটি) মানে না। তাকে আমরা যতই অচেনা, অনাত্মীয় বলে ভাবি না কেন, সে আমাদেরই একটা অংশ। আর আমাদের শরীরে থেকেই সে ‘চলতি হাওয়ার পন্থী’ নয়, ‘বিদ্রোহী’! রেভোলিউশনারি!

ভ্যাকসিন বা টিকার ভাবনার জন্ম হল কী ভাবে?

এখনকার বিজ্ঞানীদের অনেকেই ‘শত্রু’, ‘মিত্র’ আর ‘যুদ্ধ’-এর আলো-ছায়াতেই সব কিছু ভাবতে ভালবাসেন। সেই ভাবনাটা হল, ক্যানসার কোষকে যদি ‘শত্রু’ বলে ধরে নেওয়া যায় তা হলে তার ‘বিরোধী’ (শত্রুর শত্রু, যা কি না আমাদের ‘মিত্র’ হবে) কোনও ব্যবস্থাও নিশ্চয়ই আমাদের শরীরে থাকবে। আমাদের সেই সেই ‘মিত্র’রা অ্যান্টিবডি আর ইমিউনোসাইট।

যখন আগ্রাসনই, তখন ক্যানসার কোষ এগিয়ে চলে দলবদ্ধ ভাবে। জোট বেঁধে।

‘ইমিউনোসাইট’ কী জিনিস?

‘ইমিউনোসাইট’ হল সেই সব কোষ, যারা ইমিউনিটির ব্যাপারে বিশেষ করে, অ্যান্টিবডি তৈরির কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে। তারা ক্যানসার কোষগুলিকে ধ্বংস করে দিতে পারবে। ফলে, গবেষণার অভিমুখ হয়ে দাঁড়াল, কী ভাবে ওই ‘ইমিউনোসাইট’গুলিকে বেশি বেশি করে দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করা যায়। ওই ধারণা থেকেই শুরু হল যথার্থ অ্যান্টিবডি বা ভ্যাকসিনের খোঁজ-তল্লাশ।

ভ্যাকসিন নিয়ে আমজনতার ধারণা ধাক্কা খেল

এটা হবে, বিজ্ঞানীরা সে কথা জানতেন। তাই তাঁরা প্রথমেই বলে নিয়েছেন, ক্যানসার কোষগুলো ‘বিজাতীয়’। আমাদের শরীরে জন্ম নিলেও, তারা আসলে ‘কালাপাহাড়’। তারা শত্রু। তাই ভ্যাকসিন দিয়েই তাদের রুখতে হবে।

‘প্রতিরোধ’ শব্দের অর্থই যে বদলে গেল!

কিন্তু তাতে তো ‘প্রতিরোধ’ শব্দটার অর্থটাই বদলে গেল! কারণ, প্রতিরোধ করতে হয় বহির্শত্রুকে! ক্যানসার না হয় শত্রু। কিন্তু সে তো বাইরে থকে উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। তা হলে? এই প্রশ্নের সদুত্তর কেউই দেননি। বরং প্রশ্নটাকে এড়িয়ে গিয়ে বলা হয়েছে, এখন আর প্রতিরোধ নয়। এ বার ভ্যাকসিন (টিকা) দিয়েই ক্যানসার নিরাময়ের চেষ্টা করা হবে।

বিজ্ঞানীরা জানেন, তাড়া করছে জিনের ‘ভূত’!

ওই বিজ্ঞানীরা ভাল ভাবেই জানেন, কাজটা মোটেই সহজ হবে না। কারণ, আমাদের জিনগুলিকে, প্রোটিনগুলিকে এ দিক ও দিক করে দেওয়া যায় বটে, কিন্তু তার ফলটা খুব মারাত্মক হয়।

ক্যানসারে কাবু কোষ...বিপন্ন, অসহায়...

জিন-বিজ্ঞানের একটা মূল কথা হল, একই জিন যেমন অনেক রকম কাজ করতে পারে তেমনই অনেকগুলি জিন মিলেমিশে একটা নির্দিষ্ট কাজের জন্য দায়ী থাকে। তার মানে, জিন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা যায় ঠিকই। কিন্তু তার পরিণতি যে কী হবে, তা কারও জানা নেই। পরীক্ষানিরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সেই পরিণতি মোটেই সুখকর হয় না।

ক্যানসার: কেন ‘লাইনে’ সবার পিছনে ‘ইমিউনোথেরাপি’?

সে কথা বিজ্ঞানীদের অজানা নয়। তাই ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘ইমিউনোথেরাপি’কে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে রাখা হয় সবচেয়ে পিছনে। অন্যান্য প্রথাগত চিকিৎসা (অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, টার্গেটেড কেমোথেরাপি) ব্যর্থ হলেই তার ডাক পড়ে।

অনেকে অবশ্য এখনও ভাবেন, গবেষণা চলছে, উপায় একটা বেরবেই। ইমিউনোথেরাপি এক দিন ‘লাইন’-এর একেবারে সামনে চলে আসবে। আমাদের হাতে চলে আসবে ‘ম্যাজিক বুলেট’!

ম্যাজিক দেখাচ্ছে কোথায় ‘ম্যাজিক বুলেট’?

এমন কিছু ‘ম্যাজিক বুলেট’ বাজারে চালু রয়েছে। তাতে ‘ম্যাজিক’ তেমন দেখা যাচ্ছে না। তারা ‘বুলেট’ও নয়। বরং অনেকটা যেন ‘হাতুড়ি’র মতো আচরণ করে! তাতে কিছু ক্যানসার কোষ কিছু দিনের জন্য ধ্বংস হয়। কিন্তু তার সঙ্গে অসংখ্য স্বাভাবিক কোষও অসুস্থ হয়ে পড়ে।

অ্যান্টিবডি আর অ্যান্টিজেনের ‘গল্প’টাও অত সহজ নয়...

অ্যান্টিবডি আর অ্যান্টিজেন হল, মেরুদন্ডী প্রাণিদের কোষ-সাম্রাজ্যের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তা বলে তাদের দু’টি ‘প্রতিপক্ষ শিবির’ হিসাবে দেখাটা ঠিক নয়। কারণ, জীবজগতে ‘দোআঁশলা’ জীব (কিমেরা)-ও থাকে। তারা একাধিক জীবের মিশ্রণ। সেখানে একটা জীবের কোষগুলি অন্য জীবের অনাত্মীয়, অপরিচিত। কিন্তু তারা একই সঙ্গে থাকে।

ক্যানসারের ইমিউনোথেরাপি (বাঁ দিকে)

আবার উল্টোটাও হয়। সেটা- ‘অটো-ইমিউনিটি’। ‘আত্মীয়’ হয়েও একে অন্যের শত্রু। তা ছাড়া, নির্দিষ্ট ক্যানসারের কোনও নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন হয় না। একই অ্যান্টিজেন বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে দেখা যেতে পারে। তার চেয়েও বড় কথা, ওই অ্যান্টিজেনগুলি স্বাভাবিক কোষেও থাকে।

ইমিউনিটির ‘দু’টি হাত’!

একটা- কোষ-সংক্রান্ত ইমিউনিটি (‘লিম্ফোসাইট’)। অন্যটা হল, দেহরস-সংক্রান্ত ইমিউনিটি (‘অ্যান্টিবডি’)। ইমিউনিটির এই দ্বিতীয় ‘হাত’টা ক্যানসারের ক্ষতি করার বদলে তাকে নাকি আগলে রাখে! আর প্রথম ‘হাত’টা নাকি খুব সম্ভবত, ক্যানসারের জন্মে সাহায্য করে!

তাই ইমিউনিটি সম্পর্কে প্রথাগত ধারণাগুলিকে ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘অঙ্কের বাঁধা-ধরা নিয়ম’ মেনে প্রয়োগ করা যায় না। ক্যানসার টিকায় সারতে পারে, এই দাবি মেনে নিতে হলে ওই মূল বাস্তবতাকেই অস্বীকার করতে হবে!

ইমিউনোথেরাপি দিয়ে ক্যানসার ‘নিরাময়’-এর কথা যে অবান্তর, তা বিভিন্ন গবেষণায় বার বার বলা হয়েছে। তবু মাঝেমধ্যেই নতুন নতুন ওষুধ বাজারে আসে। তাদের নিয়ে নতুন জল্পনা শুরু হয়। আমরা ভাবতে বসি, এই বুঝি অন্ধকারের দিন কেটে গেল!

অতি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিক্যাল জার্নালগুলিতে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে যে সব নতুন ওষুধ বাজারে এসেছে তাতে কাজের কাজ যা হয় তা অতি সামান্যই। ওষুধের দামও অসম্ভব বেশি। ‘সামান্য কাজ’ বলতে এই টুকুই বোঝায়। ওই সব ওষুধ দিয়ে ক্যানসারের ‘মারমুখী’ ভাবটা হয়তো কিছু দিন একটু কমিয়ে রাখা যায়। সেটা দরকারও। কিন্তু তার জন্য রোগী ও তাঁর আত্মীয়-পরিজনদের যতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তা যথেষ্টই।

এর কারণ, ক্যানসার কোনও ‘পরজীবী’ নয়। তাই পরজীবীর মতো তাকে আক্রমণ করে নিকেশ করা যায় না।

মানুষের মতো সব ধরনের ক্যানসারেরও (এখনও পর্যন্ত ৪০০ রকমের ক্যানসারের হদিশ মিলেছে, জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকে। তবু তারা প্রত্যেকেই একে অন্যের চেয়ে আলাদা। স্বতন্ত্র। একেবারে মানুষের মতোই। তার মানে, প্রতিটি ক্যানসারই আলাদা। নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যে পরিচিত। কোনও একটি নির্দিষ্ট ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি সব রকমের ক্যানসারের উপর একই ভাবে খাটে না।

ক্যানসার টিকা: হালের গবেষণা, তর্কবিতর্ক...

ইমিউনোথেরাপি নিয়ে গবেষক বিজ্ঞানীরা এ বার (স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানসার টিকার হালের গবেষণা) ‘লিম্ফোমা’ নামে একটি বিশেষ ধরনের ক্যানসারের উপর তাঁদের ওষুধ প্রয়োগ করেছেন। দাবি করেছেন, তাতে ভাল ফল মিলেছে।

এখন শুরু হবে তর্ক-বিতর্ক। কী ধরনের লিম্ফোমা, রোগের কোন অবস্থায় ওই গবেষণা হয়েছে, সুফল মিলেছে কত দিন পর্যন্ত, কুফলই বা ঘটেছে কতটা। ইঁদুরের ওপর যা সত্যি তা কি মানুষের বেলাতেও সত্যি?

ক্যানসার: জিনের অদলবদল ঘটালেই কি ‘কিস্তিমাত’?

এটা ঠিকই, জিনের উপাদানগুলির অদলবদল ঘটিয়ে কোনও কোনও ক্যানসারের ধ্বংসাত্মক আচরণকে কিছুটা প্রশমিত করা যায়। কিন্তু সেই অদলবদল আবার অন্য দিকে তার ধ্বংসকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকে। তার ফলটা হয় এই যে, রোগী ক্যানসারে মারা যান না। মারা যান ক্যানসার চিকিৎসার অভিঘাতে!

সেই যে বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছিলেন...

সেই ‘অভিঘাত’ কি কমিয়ে রাখা যায় না? তা হয়তো যায়। বিজ্ঞানীরা সেই চেষ্টা করেই থাকেন। কিন্তু তা হলে তো বার্ট্রান্ড রাসেলের সেই কথাটাই নতুন করে বলতে হয়। রাসেল বলেছিলেন, ‘‘আধুনিক বিজ্ঞানের চরিত্রই হল, সে একটা সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে আরও পাঁচটা নতুন সমস্যা তৈরি করে ফেলে!’’

আমাদের ক্যানসার-চর্চার চরিত্রও আসলে তা-ই। এও একটি ‘বিজ্ঞান-দর্শন’। এই ‘দর্শন’ সম্বল করে ক্যানসারকে ধ্বংস করার স্বপ্নটা আসলে একেবারেই অবান্তর। তবে এই ‘দর্শন’ই তো আমাদের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে। আরও গবেষণার প্রেরণা দেয়।

ইঁদুরের উপর পরীক্ষার সাফল্যে বুক ফোলালে ভুল হবে!

পুরনো পথ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে হবে। এখন যা হয়, তা হল- প্রতিস্থাপিত (ট্রান্সপ্ল্যান্টেড), কৃত্রিম ক্যানসার নিয়ে গবেষণা। বিশেষ করে, ইঁদুরের দেহে ক্যানসার কোষ প্রতিস্থাপিত করে তার উপর গবেষণা। কিন্তু আমাদের শরীরে যে সব ক্যানসার হয়, সেগুলি একেবারেই প্রতিস্থাপিত নয়। সেগুলির জন্ম হয় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। সেগুলি সাধারণত, অ্যান্টিজেনের মতো আচরণ করে না। করলে, তার বিরুদ্ধে শরীরে ‘প্রতিক্রিয়া’ শুরু হয়ে যেত।

তাতে অবশ্য এক দিক দিয়ে ভালই হত। কারণ, ক্যানসারের জন্মের আগেই তাকে জানা যেত। তাই গবেষণার পদ্ধতি বদলাতে হবে। সেটা কী ভাবে হবে, তা নিয়ে আরও বেশি করে ভাবতে হবে।

‘তোমার স্বপ্নে কোনও বাস্তব নেই...’

‘সেবা-কাতর’ বিজ্ঞানীরা একটা নিরঙ্কুশ বিশ্বাসে ভর করে থাকেন! সাধারণ মানুষজনকেও সেই বিশ্বাসে সামিল হতে বলেন। তা ভাল। কিন্তু বিশ্বাস যখন যুক্তির পাঁচিল টপকে বেরিয়ে যায়, তখন আর সে তেমন বিশ্বাসযোগ্য থাকে না!

তখন মনে হয়, ‘তোমার স্বপ্নে কোনও বাস্তব নেই, বাস্তবে নেই কোনও স্বপ্ন’!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy