কাল ৬ অগস্ট। বিজ্ঞানে কালাদিবস। ৭৫ বছর আগে ওই তারিখে পরমাণুশক্তি প্রথম মানুষ মারার কাজে ব্যবহৃত হয়। সেই প্রথম, সেই শেষ।
প্রথম জাপানের হিরোশিমা শহরে। তিন দিন পরে ৯ অগস্ট একই ঘটনা আরও এক জনপদে। নাগাসাকিতে। অ্যাটম বোমা। পদার্থের মধ্যে লুকোনো শক্তি বা এনার্জি, যার সন্ধান পেয়েছিলেন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। সেই ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর আবিষ্কৃত স্পেশাল থিয়োরি অব রিলেটিভিটিতে। যার উপহার E = mc2 ফর্মুলা। E মানে এনার্জি। m হল পদার্থ। ওই ফর্মুলার সবচেয়ে সাঙ্ঘাতিক জিনিস c। যা হল আলোর বেগ। মানে, এক সেকেন্ডে প্রায় ৩০০,০০০ কিলোমিটার। তার আবার বর্গ বা স্কোয়ার। অর্থাৎ, ৯০,০০০,০০০,০০০। তাই এক গ্রাম ইউরেনিয়াম থেকে মিলতে পারে এত তাপ বা এনার্জি, যা পেতে আড়াই টন কয়লা পোড়াতে হয়!
না, ১ গ্রাম ইউরেনিয়াম পুরোটা এনার্জি বা শক্তিতে রূপান্তরিত হয় না। হয় যা, তা হল ইউরেনিয়াম পরমাণুকে নিউট্রন কণা দিয়ে আঘাত। আঘাতে ইউরেনিয়াম পরমাণু দু’টুকরো হয়ে যায়। ওই দুটো টুকরোর ওজন ইউরেনিয়াম পরমাণুর চেয়ে কম। মানে, কিছুটা পদার্থ (m) হারিয়ে যাচ্ছে। ওই হারানো পদার্থটাই অ্যাটম বোমার এনার্জি। সুতরাং, ওই হিসেব থেকে এটা বোঝায় না যে, ১ গ্রাম ইউরেনিয়াম পুরো উবে গিয়ে ওই পরিমাণ এনার্জি দেয়। দেয় ১ গ্রাম ইউরেনিয়াম-এর মধ্যে যেটুকু পদার্থ উবে যায়, সেইটুকু।
ফর্মুলা তো অঙ্ক। আইনস্টাইন তা আবিষ্কার করার পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন পদার্থকে বিপুল পরিমাণ এনার্জিতে রূপান্তরিত করে অ্যাটম বোমা বানানোর কথা। কল্পবিজ্ঞান কাহিনিকার হারবার্ট জর্জ ওয়েলস তাঁর ‘দ্য ওয়ার্ল্ড সেট ফ্রি’ গল্পে অ্যাটম বোমার কথা লেখেন। সে তো গল্পে। বাস্তবে আইনস্টাইন-আবিষ্কৃত ফর্মুলাকে প্রয়োগ করে অ্যাটম বোমা তৈরির সম্ভাবনা কতটা? প্রশ্নটা করা হয়েছিল খোদ আইনস্টাইনকে। রসিক মানুষ ছিলেন তিনি। বলেছিলেন, কাজটা এত কঠিন যে, যে জঙ্গলে পাখি নেই, সেখানে রাতের অন্ধকারে পাখি শিকারের মতো। এ হেন কঠিন কাজ সমাধান করে ফেলেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তার পর সে মারণাস্ত্র প্রয়োগ করা হল মানুষেরই বিরুদ্ধে। হিরোশিমা-নাগাসাকিতে অ্যাটম বোমা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে মারা যায় এক লক্ষেরও বেশি মানুষ। পরে তিলে তিলে আরও তিন লক্ষ। বিজ্ঞানীর কাজ গবেষণা। এটা-সেটা বানানো। কিন্তু বিজ্ঞান যুগে যুগে কলুষিত হয়েছে রাজনীতির ছোঁয়ায়। রাজনীতিই তার পৃষ্ঠপোষক। মা-বাবা। রাজনীতি ছাড়া বিজ্ঞান চলতে পারে না। বিজ্ঞানের সঙ্গে রাজনীতি মিশলে কী হয়, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিরোশিমা-নাগাসাকি।
গোড়ায় গলদ! আমেরিকার তরফে অ্যাটম বোমা বানাতে নামা স্রেফ ভয়ে। এই আশঙ্কায় যে অ্যাডলফ হিটলারের জার্মানি তা আগেভাগে বানিয়ে ফেলবে। এবং তা ফেলবে আমেরিকার ঘাড়ে। হিটলার অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর কিছু দিন পর থেকেই ইউরোপ শাসাচ্ছিলেন এই বলে যে, তাঁর হাতে আছে এক ‘সুপারওয়েপন’, যা দিয়ে তিনি যুদ্ধ জিতবেন। এ দিকে হিটলারের অত্যাচারে তখন ইউরোপের অনেক দেশের বড় বড় বিজ্ঞানী পাড়ি দিয়েছেন আমেরিকা। অধ্যাপক হিসেবে যোগ গিয়েছেন বিভিন্ন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওঁদের ভয় পাওয়ার কারণ ছিল। অ্যাটম বোমার যা মূল কাজ— ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম পরমাণুকে নিউট্রন কণা দিয়ে আঘাত করে দু’টুকরো করে ফেলা— সে কাজের মধ্যে ইউরেনিয়াম বিভাজন বা ফিশন প্রথম টের পাওয়া গিয়েছিল জার্মানিতে। সেই টের যিনি পেয়েছিলেন, তাঁর নাম অটো হান। সে উপলক্ষে কেমিস্ট্রিতে নোবেল প্রাইজ় দেওয়া হয় তাঁকে। সেই নোবেল দেওয়ারও ৭৫ বছর এ বার। যা হোক, মোট কথা বিজ্ঞানীদের তরফে হিটলারের হাতে অ্যাটম বোমা এসে গিয়েছে বা যাচ্ছে— এ রকম ভয় পাওয়ার সঙ্গত কারণ ছিল।
অন্য বিজ্ঞানীদের কথা থাক। ভয় আইনস্টাইনও পেয়েছিলেন। প্রমাণ ১৯৩৯ সালের ২ অগস্ট আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডিলানো রুজ়ভেল্টকে লেখা তাঁর চিঠি। যুদ্ধ তখনও শুরু হয়নি। তার আগেই জার্মানি পদানত দেশগুলোর খনি থেকে ইউরেনিয়াম রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে— এ খবর প্রেসিডেন্টকে দিয়ে আইনস্টাইন জানালেন অ্যাটম বোমা বানানোর সম্ভাবনার কথা। লিখলেন, ‘এটা ভাবা যেতে পারে— যদিও ব্যাপারটা এখনই নিশ্চিত নয়— প্রচণ্ড ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ধরনের এক বোমা বানানো যেতে পারে।’ সে নতুন বোমা কী পারবে? হায়, এখানেও আইনস্টাইনের অনুমান ক্ষমতার অভাব প্রকট। তিনি লিখলেন, ‘‘তেমন একটা বোমা স্টিমারে বয়ে নিয়ে গিয়ে যদি কোনও বন্দরে ফাটানো যায়, তা হলে গোটা বন্দর এবং আশপাশের এলাকা ধ্বংস হবে।’’
আইনস্টাইনের চিঠি পড়েই যে রুজ়ভেল্ট অ্যাটম বোমা বানাতে নামেন, এমন নয়। অনেকের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বিশেষত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল-এর সঙ্গে। ৭ ডিসেম্বর, ১৯৪১। জাপানি সেনার পার্ল হারবার আক্রমণ। চার দিন পরে হিটলারের তরফে ঘোষণা: আমেরিকা জার্মানির শত্রু। সুতরাং তার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু হবে। রুজ়ভেল্ট এ বার ডেকে পাঠালেন ভ্যানেভার বুশকে। বুশ অফিস অব সায়েন্টিফিক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওএসআরডি)-এর ডিরেক্টর হিসেবে প্রেসিডেন্টের বিজ্ঞান উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রধান। রুজ়ভেল্ট বুশকে হুকুম দিলেন অ্যাটম বোমা তৈরির কাজে নামতে।
তড়িঘড়ি যুদ্ধ শেষ করে মার্কিন সেনাবাহিনীর বিপুল ক্ষয়ক্ষতি রুখতে চেয়েছিলেন হ্যারি ট্রুম্যান। তাই হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে অ্যাটম বোমা ফেলার নির্দেশ দেন তিনি।
আর জার্মানি? বিশ্বযুদ্ধের পরের দিকে জার্মানি যখন পিছু হটছে, তখন আশঙ্কা দূর হয়। অ্যাটম বোমা হাতে থাকলে হিটলার মরণকামড় দিতে তা ফাটাতেন। তবে কি তা ওঁর হাতে আসেনি? যুদ্ধশেষে জানা যায় আসল সত্য। তা এই যে, আমেরিকার মতো জার্মানিতে অ্যাটম বোমার লক্ষ্যে একমুখী এবং দ্রুত লয়ে কাজ হয়নি। অসূয়াপরায়ণ জার্মান বিজ্ঞানীরা কাজ করেছেন আলাদা আলাদা ভাবে। কোনও সমন্বয় ছিল না তাঁদের কাজের মধ্যে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল আর এক রোগ। জার্মান বিজ্ঞানীদের হামবড়াই মনোভাব। জার্মানি অ্যাটম বোমা বানাচ্ছে ধরে নিয়ে ব্রিটিশ এবং আমেরিকান বিজ্ঞানীরা দ্রুত ওই মারণাস্ত্র বানাতে চাইছিলেন। আর জার্মান বিজ্ঞানীরা ভাবছিলেন, যে কাজ তাঁরা করে উঠতে পারছেন না, তা মিত্রশক্তিদের বিজ্ঞানীদের কম্মো নয়। বোমার দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার বড় কারণ এ হেন মনোভাব। এই মনোভাবের দরুণ হিরোশিমা-নাগাসাকির খবরে জার্মান বিজ্ঞানীরা প্রথমে অবিশ্বাস করেছিলেন। ভেবেছিলেন, ভাঁওতা দেওয়া হচ্ছে।
১২ এপ্রিল ১৯৪৫। আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারল্ড এস ট্রুম্যানের তড়িঘড়ি ডাক পড়ল হোয়াইট হাউসে। ব্যাপার কী? ট্রুম্যান ভাবলেন প্রেসিডেন্ট রুজ়ভেল্টের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসতে হবে। তার বদলে রুজ়ভেল্টের স্ত্রী ইলিয়ানর শোনালেন খবর। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা গিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। ট্রুম্যানের প্রতিক্রিয়া: আপনার জন্য কী করতে পারি বলুন। ইলিয়ানর-এর উত্তর: আপনার জন্য কী করতে পারি বলুন। আপনি এখন সমস্যায় পড়লেন। দু’ঘণ্টার মধ্যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ট্রুম্যান। তাঁকে ব্রিফিং-এ জানানো হল, চারটে অ্যাটম বোমা প্রায় রেডি। বোমা তৈরির প্রকল্প— এস-ওয়ান— এত গোপনে চলেছিল যে, ট্রুম্যান ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কিচ্ছু জানতেন না। জানলেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে।
এই ট্রুম্যানই হিরোশিমা-নাগাসাকি শহরে অ্যাটম বোমা ফেলার হুকুম দেন। তিনি আত্মজীবনীতে সগর্বে লিখেছেন, ‘অ্যাটম বোমা কোথায়, কখন ফেলা হবে, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমার। এ ব্যাপারে কারও যেন কোনও সন্দেহ না থাকে। আমি বোমাটাকে যুদ্ধের একটা অস্ত্র হিসেবেই দেখেছি। ওটা কাজে লাগাতে তাই কোনও দ্বিধা করিনি।’ বলা বাহুল্য, ট্রুম্যানের তরফে হিরোশিমা-নাগাসাকি শহরে অ্যাটম বোমা ফেলা ঘিরে ইতিহাস দ্বিধাবিভক্ত। ফেলার পিছনে আশু প্রয়োজন না কূটনীতি— কোনটা যে আসল কারণ, সে প্রশ্নের মীমাংসা গত ৭৫ বছরে হয়নি। বিতর্ক এখনও জারি। এবং ইতিহাসবিদেরা দু’দলে ভাগ। সে যা হোক, ঘটনায় ফিরে আসি।
২৭ এপ্রিল, ১৯৪৫। জার্মানি দ্রুত হারের মুখে। কিন্তু জাপান পুরোদমে লড়ে যাচ্ছে। ও দেশের কোন কোন শহরে অ্যাটম বোমা ফেলা যেতে পারে, তা ঠিক করতে টার্গেট কমিটির প্রথম বৈঠক। ঠিক হল হিরোশিমা, নিগাটা, কোকুরা এবং নাগাসাকি শহরে বোমা ফেলা যেতে পারে। কারণ? ওই সব শহরে মার্কিন সেনা বেশি ক্ষতি করতে পারেনি। ৮ মে। জার্মানি নতজানু। ১৬ জুলাই। আমেরিকার নিউ মেক্সিকো প্রদেশের আলামোগোর্ডো মরুভূমিতে অ্যাটম বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ। আগুন ধোঁয়ার কুণ্ডলী। কানফাটানো শব্দ। তাপে মরুভূমির বালু জমে কাচ। আগুনের দিকে তাকিয়ে যে সব বিজ্ঞানী বোমা বানিয়েছিলেন তাঁদের নেতা রবার্ট ওপেনহাইমারের মনে গীতায় অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপ দেখানোর কথা। আকাশে একসঙ্গে হাজারটা সূর্য! আর বিজ্ঞানী হেনরি লিনস্কিৎজ় বিড়বিড় করলেন: হে ভগবান, এ জিনিস আমরা একটা শহরে ফেলতে চলেছি! ২৪ জুলাই। জার্মানির পটসড্যাম শহরে কনফারেন্স। হাজির তিন রাষ্ট্রপ্রধান। ট্রুম্যান, উইনস্টন চার্চিল এবং জোসেফ স্ট্যালিন। ট্রুম্যান স্ট্যালিনকে বললেন, তাঁর হাতে এসে গিয়েছে এক ‘নতুন অস্ত্র, যার ধ্বংসক্ষমতা অকল্পনীয়’। ওটা যে অ্যাটম বোমা, তা ফাঁস করলেন না ট্রুম্যান। না করলে কী হবে, সোভিয়েট গুপ্তচর (যাঁদের প্রধান ক্লাউস ফুক্স) মারফত স্ট্যালিন জেনে গিয়েছেন সব। ১৫ দিনের মধ্যে হিরোশিমা এবং নাগাসাকি।
কেন? উত্তর দুই। প্রথম উত্তর: জাপান মরণকামড় দিচ্ছিল। মরছিল বহু মার্কিন সেনা। সুতরাং যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজন ছিল জাপানের উপর খাঁড়ার ঘা। ট্রুম্যান-এর ইয়া মোটা জীবনীর (১,১১৭ পৃষ্ঠার) লেখক ডেভিড ম্যাককুলোঘ মনে করেন, ও ব্যাখ্যাই ঠিক। ও দিকে অনেক ইতিহাসবিদের দৃঢ় বিশ্বাস, অ্যাটম বোমার প্রয়োগ নাকি কমিউনিজ়ম বিরোধিতা। আসল টার্গেট জাপান নয়, সোভিয়েট ইউনিয়ন। স্ট্যালিনের কমিউনিজ়ম আগ্রাসী মূর্তি ধারণ করছে। তাকে বাগে আনতে এটা বোঝানো দরকার যে, আমেরিকার হাতে অ্যাটম বোমার মতো সাঙ্ঘাতিক অস্ত্র আছে। সোভিয়েট ইউনিয়নকে বাগে আনা গেল না। অচিরে তার বিজ্ঞানীরা বানিয়ে ফেলল অ্যাটম বোমা। শুরু হল অস্ত্র প্রতিযোগিতা।
ইতিহাসের দুই ব্যাখ্যা ঘিরে জোর বিতর্ক দেখা গিয়েছিল হিরোশিমার ৫০ বছরে। যখন ওয়াশিংটনের এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজ়িয়াম এক বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এনোলা গে, যে বিমান থেকে ফেলা হয়েছিল হিরোশিমার অ্যাটম বোমা, তা জনগণকে দেখানো হবে। সঙ্গে লেখা হবে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরুর কথা। প্রবল আপত্তি উঠেছিল। কাদের? প্রাক্তন মার্কিন সেনা অফিসারদের। ওঁদের দাবি, হিরোশিমা-নাগাসাকি না হলে যুদ্ধ অনেক দিন গড়াত। আরও অনেক প্রাণহানি হত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy