গ্রহাণু ‘২০২০ কিউজি’ (গোল করা অংশের ভিতরে লম্বা দাগটি)। পৃথিবীর সব চেয়ে কাছ ঘেঁষে চলে গিয়ে রেকর্ড গড়েছে এটি। ছবি: এএফপি।
আকারে একটা গাড়ির মাপের হবে। বড়জোর ৩ থেকে ৬ মিটার চওড়া। তার স্বজাতিদের তুলনায় নেহাতই ছোটখাটো চেহারার। কিন্তু রেকর্ড-বুকে নাম তুলল মহাকাশের এই খুদে সদস্য। পৃথিবীর একেবারে গা ঘেঁষে চলে গেল সে। নাসার বিজ্ঞানীদের দাবি, এর আগে এ গ্রহের এত কাছ দিয়ে চলে যায়নি কোনও গ্রহাণু।
প্রতি বছরই বহু ছোট ছোট গ্রহাণু পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসে। অধিকাংশই বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে আগুনের গোলার চেহারা নেয়। আর তার পর আছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে নিঃশেষ হয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে কিছু ক্ষণের জন্য হয়তো টেলিস্কোপের ক্যামেরায় ধরা পড়ে তার ছবি। কিন্তু এ বারের ঘটনা সব দিক থেকেই ব্যতিক্রম। বিজ্ঞানীদের কাছে ২০২০ সালের ‘মহাজাগতিক চমক’। নাম রাখা হয়েছে ‘২০২০ কিউজি’। গত রবিবার ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তের আকাশে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২৯৫০ কিলোমিটার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে গ্রহাণুটি। ৬ ঘণ্টা পরে যখন জানা গিয়েছে তার কথা, আগন্তুক তত ক্ষণে পৃথিবী থেকে বহু দূর।
বিজ্ঞানীদের পরিভাষায় এদের বলে ‘নিয়ার-আর্থ অ্যাস্টেরয়েড’। অর্থাৎ পৃথিবীর একেবারে কাছাকাছি চলে আসা গ্রহাণু। ‘২০২০ কিউজি’ আবার ‘নন-ইমপ্যাক্টিং’, পৃথিবীর কাছে এসেও তার বুকে আছড়ে না-পড়া গ্রহাণু। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন: ‘২০২০ কিউজি’ যদি তার নির্দিষ্ট আবক্র পথে থাকত, তা হলে হয়তো বায়ুমণ্ডলে ঢুকে আগুনের গোলার চেহারা নিত। বছরভর এমন ঘটনা ঘটেই থাকে। আবার এমনও হয় মাঝেমাঝে, ছোট ছোট গ্রহাণু যতক্ষণ না পৃথিবীর একেবারে কাছে চলে আসে, টেলিস্কোপে ধরাই পড়ে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেটা ঘটে থাকে, পৃথিবী থেকে নিরাপদ দূরত্ব রেখে এরা চলে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এর কোনওটাই ঘটেনি। সকলকে চমকে দিয়ে পৃথিবীর প্রায় গা ঘেঁষে চলে গিয়েছে মহাকাশের খুদে সদস্যটি। গতিবেগ ছিল সেকেন্ডে ১২.৩ কিলোমিটার। অন্য গ্রহাণুর তুলনায় অবশ্য কমই।
গ্রহাণু-কথা
• নাম: ২০২০ কিউজি
• আকার: ৩-৬ মিটার চওড়া
• গতিবেগ ছিল: ১২.৩ কিলোমিটার/সেকেন্ড
• রেকর্ড: পৃথিবীর সবচেয়ে কাছ ঘেঁষে চলে যাওয়া ‘নন-ইমপ্যাক্টিং’ গ্রহাণু
• যাত্রাপথ: রবিবার ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ প্রান্তের আকাশে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২৯৫০ কিলোমিটার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে গ্রহাণুটি
• ধরা পড়েছে: নাসার দূরবীক্ষণ যন্ত্র ‘জ়ুইকি ট্রান্সিয়েন্ট ফেসিলিটি’-র ক্যামেরায়
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা এবং আমেরিকার ‘ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন’-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি দূরবীক্ষণ যন্ত্র ‘জ়ুইকি ট্রান্সিয়েন্ট ফেসিলিটি’-র ক্যামেরায় প্রথম ধরা পড়ে ‘২০২০ কিউজি’। কিন্তু তখন সে একটা লম্বা দাগের মতো, পথিবী ছাড়িয়ে বহু দূর। বিজ্ঞানীদের অঙ্ক অনুযায়ী, তার অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে সে পৃথিবীর সব চেয়ে কাছে এসেছিল। দক্ষিণ ক্যালিফর্নিয়ায় নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবের ‘সেন্টার ফর নিয়ার-আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজ়’-এর ডিরেক্টর পল চোডাস বলেন, ‘‘পৃথিবীর এত কাছ দিয়ে কোনও গ্রহাণু কখনও চলে যায়নি। বেশ বোঝা গিয়েছে, এ গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ-বলে ওর যাত্রাপথ বা ট্রাজেক্টারিও ঝুঁকে পড়েছিল পৃথিবীর দিকে। আমাদের হিসেব বলছে, পৃথিবীর টানে অন্তত ৪৫ ডিগ্রি বেঁকে গিয়েছিল ওর সেটি। মহাবিশ্বের চমক!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy