প্রতীকী চিত্র।
পেশাদার গোয়েন্দা নন। বিজ্ঞানীও নন। বিশ্বের নানা প্রান্তের বিভিন্ন পেশার মানুষের জোট ‘ড্রাস্টিক’ চালিয়ে যাচ্ছে এক খোলা তদন্ত। কোথা থেকে ছড়িয়েছিল কোভিড-১৯ অতিমারির ভাইরাস সার্স কোভ-২? ২৯ বছরের এক বাঙালি সেই সত্যান্বেষীদের এক জন। টুইটারে পরিচয় ‘দ্য সিকার’। পদবি রায়। ভক্ত সত্যজিৎ রায়ের। আপাতত থাকেন ভুবনেশ্বরে। পড়াশোনা স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে। আনন্দবাজারকে তিনি জানালেন তাঁদের কর্মকাণ্ডের কথা।
সার্স কোভ-২ ভাইরাসের উৎস সন্ধানে কতটা এগিয়েছেন? ‘সিকার’ বলেন, “এই রহস্যের সমাধান কিন্তু এখনও হয়নি। এটা ওপেন এন্ডেড মিস্ট্রি। ড্রাস্টিকে আমরা প্রত্যেকে নিজের মতো খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি। তার পর টুইটার চ্যাটে চলছে আলোচনা।” কোভিড অতিমারির শুরুর দিকে চিনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির দিকে আঙুল তুলেছিলেন অনেকেই। গোড়ায় নিছক সন্দেহ বা চক্রান্তের তত্ত্ব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু বিশ্বাস করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর উত্তরসূরি জো বাইডেনও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিষয়টি। আর এই সূত্রেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, ‘ড্রাস্টিক’-এর অনুসন্ধান। পুরো নাম, ‘ডিসেন্ট্রালাইজ়ড র্যাডিক্যাল অটোনোমাস সার্চ টিম ইনভেস্টিগেটিং কোভিড-১৯।’ টুইটারে রয়েছে তাদের জোগাড় করা তথ্য-প্রমাণ।
ড্রাস্টিকের জোগাড় করা প্রমাণে বারবার উঠেছে উহানের বিজ্ঞানী শি চেংলির প্রসঙ্গ। বাদুড় থেকে পাওয়া করোনাভাইরাস নিয়ে একাধিক গবেষণার কারণে তাঁকে ‘ব্যাটওম্যান’ বলা হয়। প্রথম খোঁজ শুরু করেন রুশ গবেষক ইউরি ডাইজিন। ইউরির লেখা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন ‘সিকার’। তার পরেই তাঁর অ্যাকাউন্টটি সাসপেন্ড হয়ে যাওয়ায় টুইটারে ‘ড্রাস্টিক’-এর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। যোগাযোগ হয় ইউরির সঙ্গেও।
ড্রাস্টিকের সদস্য, অস্ট্রিয়ার ইনসব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট রোজ়ানা সেগ্রেটো ২০২০-এর মার্চে নেচার পত্রিকায় শি চেংলির একটি গবেষণাপত্রে কিছু গরমিল দেখতে পান। গবেষণাপত্রটিতে র্যাটজি১৩ নামে একটি ভাইরাসের কথা বলে, যেটির সঙ্গে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের ৯৬.২% জিনগত মিল রয়েছে। ভাইরাসটি কোথায় পাওয়া গিয়েছিল, তা কিন্তু চেংলি জানাননি। দু’দিন পরে রোজ়ানা আর একটি গবেষণাপত্রে প্রায় পুরো মিল থাকা ভাইরাস বিটি/৪৯৯১-এর খোঁজ পান। বলা ছিল, ২০১৩ সালে ইউনানের এক খনিতে এই ভাইরাসের সন্ধান পান চেংলি। ‘ব্লাস্ট’ সার্চ ইঞ্জিনে জানতে পারেন দুটি আসলে একই ভাইরাস! অথচ উহানের গবেষণাগার বিষয়টি নিয়ে কোনও বিবৃতিই দেয়নি!
সন্দেহের শুরু সেখানেই। ঠিক দু’মাস পরে, ‘সিকার’ খোঁজ শুরু করেন চিনা ন্যাশনাল নলেজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিএনকেআই) সাইটে। সেখানে কুনমিং মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ২০১৩ সালের এক গবেষণাপত্রে জানতে পারেন অজানা ভাইরাসে ছ’জনের অসুস্থতার কথা। যার লক্ষণ কোভিডের মতো। আর একটি গবেষণাপত্রে ‘সিকার’ খুঁজে পান চার জন খনি শ্রমিকের একই অসুস্থতার বিবরণ। তাঁর কথায়, “মনে হয়েছিল, যে খুনের অস্ত্রটা খুঁজে পেলাম।”
এই দুই যোগসূত্র মিলিয়ে ‘ড্রাস্টিক’ খুঁজে পায় মোজিয়াং খনি, যা উহান থেকে ১০০০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে ইউনানে অবস্থিত। ২০১২ সালে ওই খনির শ্রমিকরাই কোভিডের মতো অসুখে আক্রান্ত হন। তিন জন মারাও যান। চেংলির দাবি, খনির এক বিষাক্ত ছত্রাকে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। ড্রাস্টিকের দাবি, মৃত্যুর কারণ ভাইরাসই। কিছু পরোক্ষ প্রমাণ রয়েছে যা ইঙ্গিত করে, ওই খনি থেকে বহু বার ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
ড্রাস্টিকের এই মতবাদ অবশ্য মানেন না বিশ্বের বেশির ভাগ বিজ্ঞানী। ‘সিকার’ বললেন, “২০১২-তে ওই খনি শ্রমিকদের কী হয়েছিল, সেই রহস্যের সমাধান আমরা করে ফেলেছি। কিন্তু কোভিডের উৎস সম্পর্কে আমরা অজস্র সূত্র সংগ্রহ করেছি। ব্যাপারটা ঠিক পাজ়লের মতো, যার অনেকগুলো টুকরো এখনও অমিল। আশা করি খুব শিগগিরই অফিশিয়াল তদন্ত হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy