Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বিজ্ঞানে পঞ্চমুখী বঙ্গ মেধাকে কুর্নিশ ভাটনগরে

দু’জনেই বাঙালি। এক জন দূষিত গ্যাস কমানোর উপায় বার করেছেন। সেই দূষিত গ্যাস দিয়েই বিকল্প জ্বালানির সন্ধান দিচ্ছেন অন্য জন।

রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, অদিতি সেন দে এবং অম্বরীশ ঘোষ (বাঁ দিক থেকে)।

রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়, অদিতি সেন দে এবং অম্বরীশ ঘোষ (বাঁ দিক থেকে)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১০:৩৫
Share: Save:

দু’জনেই বাঙালি। এক জন দূষিত গ্যাস কমানোর উপায় বার করেছেন। সেই দূষিত গ্যাস দিয়েই বিকল্প জ্বালানির সন্ধান দিচ্ছেন অন্য জন।

এ বার দেশের বিজ্ঞানচর্চার সেরা পুরস্কার ‘শান্তিস্বরূপ ভাটনগর’ স্বীকৃতি দিল এই দুই বাঙালির গবেষণাকে। রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বাধীনকুমার মণ্ডল, দু’জনেই কল্যাণীর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইএসইআর)-এ কেমিক্যাল সায়েন্সেসের শিক্ষক।

শুধু এই দু’জন নয়, এ বছরের শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কারে বাংলারই জয়জয়কার। তালিকায় নাম রয়েছে আরও তিন বাঙালির। গোয়ার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওশানোগ্রাফির পার্থসারথি চক্রবর্তী, ইলাহাবাদের হরিশ্চন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অদিতি সেন দে এবং বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের অম্বরীশ ঘোষ। সব মিলিয়ে এ বার ১৩ জন প্রাপকের মধ্যে পাঁচ জনই বাঙালি। পার্থবাবু পুরস্কার পেয়েছেন ভূবিজ্ঞান, আবহবিদ্যা, সমুদ্রবিজ্ঞান ও গ্রহবিজ্ঞানে। বাকি দু’জন পদার্থবিদ্যায়। সাম্প্রতিক কালে একই বছরে এত বঙ্গসন্তানের এই পুরস্কার পাওয়ার নজির নেই।

বঙ্গসন্তানদের এই কৃতিত্বে পদার্থবিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ বলছেন, ‘‘বিজ্ঞানে বাঙালির মেধা চিরকালই স্বীকৃত। গোলমাল, ডামাডোল এ রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রভাব ফেলেছে। কিন্তু তার বাইরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের রুখবে কে!’’

পার্থসারথি চক্রবর্তী ও স্বাধীনকুমার মণ্ডল

আরও পড়ুন: বাতাসের বিষ থেকেই বিকল্প জ্বালানি! উপায় বাতলে ভাটনগর পেলেন দুই বাঙালি

রাহুলবাবু ও স্বাধীনবাবুর কলেজের পড়াশোনা এ রাজ্যেই। রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন থেকে স্কুল ও কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর এবং হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি সেরে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিলেন রাহুলবাবু। তার পরে পুণের ন্যাশনাল কেমিক্যাল ল্যাবরেটরিতে প্রায় ন’বছর কাটিয়ে গত বছর আইআইএসইআরে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদে যোগ দেন তিনি। তাঁর গবেষণা মূলত পরিবেশ সংক্রান্ত রসায়ন নিয়েই। জানালেন, এ দেশে ক্ষতিকর গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমনের মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গাড়ি ও কলকারখানার ধোঁয়ায় মিশে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড সেই গ্রিন হাউস গ্যাসের অন্যতম অংশীদার। সেই বিষাক্ত গ্যাসকে কী ভাবে বাতাসে মিশে যাওয়া থেকে আটকানো যায়, তার জন্য নতুন পদার্থের খোঁজ দিচ্ছেন তিনি। একই ভাবে হাইড্রোজেনকে কাজে লাগিয়ে বিকল্প শক্তি তৈরির দিশাও দেখাচ্ছেন এই বিজ্ঞানী। সিএনজি-র ব্যবহার বাড়ছে দেশে। বায়ুমণ্ডলের থেকে প্রায় ২০০ গুণ বেশি চাপে এই গ্যাসকে সিলিন্ডারে রাখা হয়। এই অতিরিক্ত চাপ থেকে বিপদ ঘটতে পারে। কী ভাবে কম চাপে সিলিন্ডারে এই গ্যাস রেখে ব্যবহার করা যায়, সেটাও রাহুলবাবুর গবেষণার অংশ।

আরও পড়ুন: ড্রিম ডেস্টিনেশন খুঁজতে দিশেহারা? মুশকিল আসান হতে আসছে গুগল ম্যাপ

রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কার্বনকণার সংযুক্তিকরণে ভারী ধাতু ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সেই ভারী ধাতু পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। ধাতুর বদলে হাইড্রোকার্বন ব্যবহার করে বিকল্প পথে কী ভাবে সেই কাজ করা যায়, তারই রূপরেখা তৈরি করেছেন স্বাধীনবাবু। বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে ব্যবহার করে মিথানলের মতো জ্বালানি তৈরির পথ বার করছেন তিনি। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পাঠ চুকিয়ে আইআইএসসি-তে পিইচ়ডি করেন স্বাধীনবাবু। পরে জার্মানিতে পোস্ট-ডক্টরেট করে আইআইএসইআর-এ যোগ দেন ২০০৭-এ। ক্রিকেটার হতে চাওয়া এই মানুষটির গবেষক হয়ে ওঠার পিছনে আছেন ছোটবেলার বান্ধবী এবং পরবর্তী কালে স্ত্রী সুদেষ্ণা। তিনি গত বছর মাত্র ৩৯ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। ‘‘এই পুরস্কার সুদেষ্ণা এবং আমাদের মেয়ে এথেনাকেই উৎসর্গ করছি,’’ বলছেন স্বাধীনবাবু।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE