Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রেমিক জেব্রাকে নিয়ে হিমশিম চিড়িয়াখানা

এ গল্পে পুরুষ আছে। নারী আছে। আছে প্রত্যাখ্যান এবং বিরহ। আছে সেই বিরহের টানে পিছু নেওয়াও। এ গল্প আরও একটি প্রেমের গল্প। আলিপুর চিড়িয়াখানার এক পুরুষ জেব্রা প্রেমে পড়েছিল সদ্য মা হওয়া এক জেব্রার। কিন্তু প্রেম নিবেদনের সময়েই ঘটে বিপত্তি। মাদি জেব্রাটির পছন্দ হয়নি পুরুষ জেব্রাটিকে।

সেই জেব্রা। বুধবার, আলিপুর চিড়িয়াখানায়। —নিজস্ব চিত্র।

সেই জেব্রা। বুধবার, আলিপুর চিড়িয়াখানায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ০৩:১৭
Share: Save:

এ গল্পে পুরুষ আছে। নারী আছে। আছে প্রত্যাখ্যান এবং বিরহ। আছে সেই বিরহের টানে পিছু নেওয়াও। এ গল্প আরও একটি প্রেমের গল্প।

আলিপুর চিড়িয়াখানার এক পুরুষ জেব্রা প্রেমে পড়েছিল সদ্য মা হওয়া এক জেব্রার। কিন্তু প্রেম নিবেদনের সময়েই ঘটে বিপত্তি। মাদি জেব্রাটির পছন্দ হয়নি পুরুষ জেব্রাটিকে। নাছোড় প্রেমিককে শিক্ষা দিতে শেষমেশ মাদি জেব্রা কামড়ে দেয় তাকে। প্রেমের ক্ষতে জ্বালা জুড়োয়নি। টানও কমেনি এতটুকু। চিকিৎসার জন্য অন্য খাঁচায় সরানোর পরে একটু সুস্থ হতেই ফের প্রেমিকার কাছে ফিরতে মরিয়ে হয়ে ওঠে বিরহী পুরুষ জেব্রাটি। আর তার সেই ফেরার তাগিদেই নাস্তানাবুদ বুধবার সকালের চিড়িয়াখানা।

সাতসকালে টিন, বাঁশ, প্লাস্টিকের চাদর নিয়ে অগত্যা সেই প্রেমিক জেব্রার পিছনে ছুটে বেড়ালেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। প্রেমের টান কবেই বা হার মেনেছে এ সবের কাছে! কিছুতেই তাই কাবু করা যাচ্ছিল না তাকে। মুখের সামনে ঘেরাটোপ দেখলেই জোড়া পা পিছনে ছুড়ে ফের পালাচ্ছিল সে। ততক্ষণে এ সব দেখে চিৎকার জুড়েছে খাঁচাবন্দি বাঁদরেরা। ভয়ে এক ছুটে শিপাঞ্জি ঢুকে গিয়েছে নিজের ঘরে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে লড়াই চালিয়ে ঘণ্টা দেড়েক বাদে শেষ পর্যন্ত প্রেমিক জেব্রাকে খাঁচায় পোরা গেল বটে, তবে সেখানে প্রেমিকাকে না পেয়ে তার বড্ড মনখারাপ। প্রেমিকা যে রয়ে গিয়েছে বেশ অনেকটা দূরে, তার নিজের খাঁচায়।

সকাল সাড়ে ৭টা থেকে এই কাণ্ড চলাকালীন কোনও দর্শনার্থী না থাকায় কোনওক্রমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় বলে জানিয়েছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। আলিপুর চিড়িয়াখানায় এখন পাঁচটি জেব্রা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২০১০ সালে ইজরায়েল থেকে দু’টি মাদি এবং দু’টি পুরুষ জেব্রা নিয়ে আসা হয়। তখন তারা ছোট। এখন তাদের বয়স পাঁচ-ছ’বছর। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে একটি মাদি জেব্রা গত বছর একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেছে। চিড়িয়াখানার কর্তারা জানান, এখন জেব্রাদের প্রজননের মরসুম। মা জেব্রাটিকেই এ বছর সঙ্গিনী করার মতলবে ছিল ওই পুরুষ জেব্রাটি। কিন্তু দিন কয়েক আগে প্রেম নিবেদনের সময় থেকেই বিপত্তির সূত্রপাত।

কিন্তু প্রেমে প্রত্যাখ্যান করে কেন এমন কামড় বসাল মাদী জেব্রা? চিড়িয়াখানার অধিকর্তা কানাইলাল ঘোষের অনুমান, সন্তান বড় না হওয়া অবধি মা জেব্রা কারও সঙ্গিনী হতে রাজি নয়। সেই কারণে পুরুষটি তার ঘনিষ্ঠ হতে চাইলে রেগে গিয়ে কামড়েই দিয়েছে সে।

কী ঘটেছিল এ দিন?

চিড়িয়াখানার কর্মীরা জানান, এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ জেব্রাদের খাঁচার প্রহরী দেখেন, পুরুষ জেব্রাটি সেখানে নেই। খোঁজ করে জানা যায়, তাকে এ দিন সকালে খাবার দেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত প্রহরী তখন খাঁচার দরজা বন্ধ করতে ভুলে যান। এর পরে পশু চিকিৎসকের এসে তার ক্ষতে ওষুধ লাগানোর কথা ছিল। কিন্তু তিনি আসার আগেই খোলা দরজা দিয়ে অভিসারে বেরিয়ে পড়ে পুরুষ জেব্রাটি। এর পরেই খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে যায়। এর মধ্যে খবর আসে রক্ষীরা জেব্রাটিকে দেখতে পেয়েছেন বাঁদরের খাঁচার পাশে। খাঁচার সুপারভাইজার মারফত জেব্রার বেরিয়ে পড়ার খবর পৌঁছয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে। সতর্কতার সঙ্গে সেটিকে যে কোনও খালি একটি খাঁচায় পুরে ফেলতে বলেন কর্তৃপক্ষ।

চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, টিন, বাঁশ, প্লাস্টিকের বড় বড় চাদর জোগাড় করে ঘেরাটোপ তৈরি করে জেব্রাটিকে খেদিয়ে কোণঠাসা করার চেষ্টা শুরু করেন কর্মীরা। অত লোকজন দেখে ভয় পেয়ে জেব্রাটি ছুটে এক বার কুমির, এক বার শিম্পাজির এনক্লোজারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। সেখানেও তাকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা হয়। এক সময়ে গণ্ডারের ‘এনক্লোজার’ পেরিয়েও ছুটতে থাকে সেটি।

শেষমেশ বেলা পৌনে ন’টা নাগাদ তাকে খেদিয়ে সরীসৃপদের ঘরের পাশে হরিণদের পরিত্যক্ত একটি এনক্লোজারে পুরে ফেলেন প্রহরীর দল। পরে ওই এনক্লোজারের ভিতরে টিনের ছাদ দেওয়া চার খোপের খাঁচায় পুরে দেওয়া হয়। বেলা ন’টার পরে অন্য দিনের মতোই চিড়িয়াখানার দরজা খুলে দেওয়া হয় দর্শনার্থীদের জন্য।

এ দিন বেলা সওয়া ১১টায় চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, হরিণদের পরিত্যক্ত ওই খাঁচায় ঢুকে ছটফট করছে জেব্রাটি। ঘনঘন ল্যাজ নাড়াচ্ছে। সেই জায়গায় দর্শনার্থীদের যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন কর্তৃপক্ষ। লোকজন যাতে কোনও ভাবেই জেব্রাটির মুখোমুখি হতে না পারে, সে জন্য ওই খাঁচার চার দিকে মুড়ে ফেলা হয়েছে নীল রঙের প্লাস্টিকে।

চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর বলেন, “কী ভাবে জেব্রাটি বাইরে চলে গেল, এ ক্ষেত্রে কারও গাফিলতি ছিল কি না, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হচ্ছে।” কবে নিজের পুরনো খাঁচায় ফিরে যাবে জেব্রাটি? কর্তৃপক্ষ জানান, শারীরিক ভাবে পুরো সুস্থ না হওয়া অবধি তাকে ওই পরিত্যক্ত খাঁচাতেই রাখা হবে।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, খাঁচা থেকে পশুপাখি বেরিয়ে পড়ার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও একাধিক বার এই ঘটনা ঘটেছে। কখনও হরিণ, কখনও শিম্পাঞ্জি, কখনও সাপ, কখনও বা পাখি খাঁচার বাইরে বেরিয়ে পড়েছে। সাবধানে ফের খাঁচাবন্দিও করেছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। কিন্তু খাঁচাছাড়া হওয়ার এমন কারণ আগে কখনও দেখেছেন কি না, মনে করতে পারেননি চিড়িয়াখানার কর্তারাও।

প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে! জেব্রাই বা ধরা পড়বে না কেন?

অন্য বিষয়গুলি:

zebra alipore zoo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE