গণতন্ত্রের উৎসবেও হোক ভূরিভোজের আয়োজন। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
ভোটের দিনটিতে অনেকেরই ছুটি থাকে। এ বার নির্বাচন নিয়ে সকলের মধ্যেই উত্তেজনা তুঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গে ক’টা আসন তৃণমূল জিতবে, ক’টাই বা বিজেপির হাতে থাকবে, বামফ্রন্ট আদৌ খাতা খুলতে পারবে কি না— পাড়ার মোড়ে মোড়ে প্রত্যেকটি চায়ের দোকানেই এখন এই একটাই আলোচনা। দুর্গাপুজোই হোক কিংবা ভোট— বাঙালির কাছে কোনও উৎসব ভোজন ছাড়া একেবারে অসম্পূর্ণ। ছুটির দিন ভোট পড়েছে বলে কথা, বাড়িতে একটু ভাল-মন্দ রান্না না করলে কি চলে?
সকালের দিকে না হয় গরমাগরম লুচি আর সাদা আলুর তরকারি সঙ্গে একটা জিলিপি খেয়ে সপরিবার ভোট দিতে যাওয়া হবে। কিন্তু ভোট দিয়ে আসার পর, দুপুরের ভোজে কী থাকবে? সেই চিন্তা কি করেছেন? গণতন্ত্রের উৎসবের দিন দুপুরের খাওয়াদাওয়ায় একটু রাজকীয় ভাব না থাকলে কি চলে? প্রথম পাতের শুক্তো থেকে শেষ পাতে মিষ্টি— উৎসবের দিনে ভূরিভোজের আয়োজনে রাখতে হবে সব কিছুই।
ভোটের দিন যতই ভাল খাবার খেতে ইচ্ছে করুক না কেন, ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি ক্ষণ সময় কাটাতে কারই বা ভাল লাগে? হেঁশেলে একা কেন কাজ করবেন? ছুটির দিনে সবাই মিলে রান্না করলে কিন্তু রান্নাবান্নার কাজ তাড়াতাড়ি মিটে যাবে আর পরিবারের সঙ্গে ভাল সময়ও কাটাতে পারবেন।
প্রথম পাতে শুক্তো চাই-ই চাই
ভূরিভোজের শুরুতে গরম বাসমতী চালের ভাতের সঙ্গে ভিন্ন স্বাদের শুক্তো থাকলে কেমন হয়? বানিয়ে ফেলতে পারেন ঝিঙে শুক্তো। মটর ডাল মিহি করে বেটে নিন। ডালের মধ্যে সামান্য নুন দিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে দিন। কড়াইয়ে তেল গরম করে ডালের বড়া ভেজে তুলে রাখুন। ঝিঙে সরু সরু করে কুচিয়ে নিন। আদা, পোস্ত আর নারকেল একসঙ্গে মিহি করে বেটে নিন। কড়াইয়ে সর্ষের তেল গরম করে সর্ষে ফোড়ন দিয়ে ঝিঙে কুচি দিন। অল্প নুন দিয়ে নেড়েচেড়ে ঢাকা দিন। কিছু ক্ষণ পরে ঢাকনা খুলে জল দিন। ঝিঙে সিদ্ধ হয়ে গেলে আদা-পোস্ত-নারকেল বাটা আর ডালের বড়া দিন। স্বাদ মতো নুন-চিনি দিয়ে নেড়ে নামিয়ে নিন। খুব সহজেই কিন্তু রেঁধে ফেলতে পারেন এই পদ।
ডাল হোক, তবে রোজের মতো নয়
শুক্তো খেয়ে যখন আপনার খিদেটা আর একটু বেড়ে যাবে, তখন ভাতের সঙ্গে মুসুর ডালের চচ্চড়ি কিন্তু দারুণ জমবে। এই পদ বানানোর জন্য মুসুর ডাল ভাল করে ধুয়ে নিয়ে আধ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখুন। আবার কড়াইতে তেল নিয়ে তাতে গোটা গরম মশলা, তেজপাতা আর শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিন। এর পর পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নাড়াচড়া করুন। পেঁয়াজ লালচে হয়ে এলে রসুন বাটা আর টম্যাটো কুচি দিয়ে ভাল করে নাড়াচাড়া করুন। এর পর সব হলুদ গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়োর মতো শুকনো মশলা একে একে দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন। এ বার জল ঝরানো ডাল কড়াইতে দিয়ে মিশিয়ে নিন। এর পর সামান্য জল দিয়ে অল্প আঁচে ঢেকে রান্না করুন। প্রয়োজন হলে আর একটু জল দিতে পারেন। তবে লক্ষ রাখবেন রেসিপিটি যেন মাখোমাখো হয় আর ডাল যেন একেবারে গলে না গিয়ে একটু দানা দানা থাকে। রান্না হয়ে গেলে উপরে ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন ডাল চচ্চড়ি। এই ডাল খেতে এতটাই সুস্বাদু যে, আলাদা করে ডালের সঙ্গে কোনও ভাজার প্রয়োজন পড়বে না।
বাঙালির মাছ না হলে কি চলে!
ডাল ভাত খাওয়ার পর মনটা একটু মাছ মাছ করবে। দুপুরের ভোজে ভাল মাছের পদ না হলে আবার ভোজটা ঠিক জমে না! বাড়িতে পাবদা মাছ থাকলে আম দিয়ে রেঁধে ফেলতে পারেন দারুণ স্বাদের আম পাবদা। প্রথমে নুন, হলুদ মাখিয়ে সর্ষের তেলে পাবদা মাছগুলি হালকা করে ভাজতে হবে। সেই তেলেই পাঁচফোড়ন দিয়ে সর্ষে, পোস্ত ও কাঁচা লঙ্কা বাটা আর সামান্য হলুদ দিয়ে কষতে হবে। কড়াইয়ের মশলা থেকে তেল বেরোতে শুরু করলে কাঁচা আম বাটা ও নুন দিতে হবে। ঝোল ফুটে উঠলে মাছ দেওয়ার পালা। মিনিট পাঁচেক কম আঁচে ঢাকা দিয়ে রান্না করলেই তৈরি। উপর থেকে কাঁচা তেল আর ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে পরিবেশন করতে পারেন আম পাবদা।
পাঁঠার মাংসে পড়ুক কাশ্মীরি ফোড়ন
মাছ খেলেই তো আর হল না, ছুটির দিনে পাঁঠার মাংস খাওয়া মাস্ট। তবে আলু দিয়ে মাংসের ঝোল কিংবা মটন কষা নয়, ভোট উৎসবে না হয় কাশ্মীরের একটি পদ বানিয়ে ফেলা যাক। খুব অল্প সময় খরচ করে মটন রোগনজোস আপনি বানিয়ে ফেলতে পারবেন। পেঁয়াজ, রসুন ছাড়াই রেঁধে ফেলা যায় এই পদ। প্রেশার কুকারে সর্ষের তেল নিয়ে খুব ভাল করে গরম করে নিন। এ বার গোটা গরম মশলা, তেজপাতা, হিং ফোড়ন দিন। এ বার মাংস দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। একটি পাত্রে কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো, আমচুর গুঁড়ো, মৌরি গুঁড়ো, শুকনো আদার গুঁড়ো, নুন ও টক দই নিয়ে একটা ঘন পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। সামান্য কষিয়ে পরিমাণ মতো জল দিয়ে কুকারের ঢাকনা বন্ধ করে সাত থেকে আটটা সিটি পড়লেই তৈরি হয়ে যাবে মটন রোগনজোস।
শেষ পাতে থাকুক চাটনি, তবে আমের নয়, পেয়ারার
পেট ভরে খাওয়াদাওয়ার পর একটু চাটনি না হলে খাবারটা ঠিক হজম হয় না। তাই শেষ পাতের জন্য বানিয়ে ফেলতে পারেন আমাদা দিয়ে পেয়ারার চাটনি। পাকা পেয়ারা টুকরো করে কেটে ভাল করে মিক্সিতে পেস্ট বানিয়ে নিন। কাঁচা পেয়ারাগুলিও টুকরো করে কেটে রাখুন। কড়াইয়ে সর্ষের তেল গরম করে পাঁচফোড়ন দিন। এ বার কাঁচা পেয়ারাগুলি ভাল করে ভেজে নিন। ভাজা হয়ে গেলে পাকা পেয়ারা পেস্ট দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন। তার পর সামান্য নুন, পরিমাণ মতো চিনি, তেঁতুলের ক্বাথ দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। নামানোর আগে খানিকটা আমাদা কুচি আর ভাজা মশলার গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন এই চাটনি।
মিষ্টির কথা কি ভুললে চলে!
এত খাওয়াদাওয়ার পর পেটে আর মিষ্টি খাওয়ার জায়গা থাকবে না। তবে তা-ও যদি কারও মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে তা হলে আমের কুলফি বানিয়ে ফেলতে পারেন। দুধ গাঢ় করে তার মধ্যে চিনি, গুঁড়ো দুধ, এলাচ গুঁড়ো আর আমের ক্বাথ দিয়ে আবার ভাল করে গাঢ় করে নিন। ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন। গরমের দিনে প্রাণ জুড়োবে এই মিষ্টির পদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy