নাম ‘ঠান্ডাই’ কেন ঠিক জানা না থাকলেও, অনুমান করা যায় ঠান্ডা থেকেই ঠান্ডাই। শরীর, মন জুড়িয়ে দেওয়া ঠান্ডা পানীয়টি দোলের দিনে গলা ভেজানোর জন্য খাওয়া হয়। রঙের উৎসবে ঠান্ডাই খাওয়ার চল ছিল মূলত অবাঙালিদের মধ্যে।
গত কয়েক বছরে উত্তর ভারতের সংস্কৃতির ছোঁয়া লেগেছে বঙ্গেও। বহু বাঙালি এখন ঠান্ডাইতে চুমুক দেন দোল উৎসবে। রকমারি বাদাম, দুধের মিশেলে তৈরি পানীয়টি ভাং মিশিয়ে বা ছাড়া দু’ভাবেই খাওয়া যায়। পানীয়টি বানানো মোটেই কঠিন নয়। হাতের কাছে ঠান্ডাই গুঁড়ো বা মশলা থাকলে তা দিয়ে শুধু পানীয় নয়, দোলের দিনে অতিথি আপ্যায়নে বানিয়ে ফেলতে পারেন ভিন্ন স্বাদের রকমারি মিষ্টিও।
ঠান্ডাই গুঁড়ো বা মশলা
উপকরণ
১/৪ কাপ কাঠবাদাম
১/৪ কাপ কাজুবাদাম
১/৪ কাপ পেস্তা
১ টেবিল চামচ মৌরি
১০-১২টি গোলমরিচ
২ টেবিল চামচ পোস্ত
২ টেবিল চামচ চারমগজ
৮-১০টি ছোট এলাচ
সামান্য একটু কেশর বা জাফরান
৪ টেবিল চামচ শুকনো গোলাপের পাপড়ি
আধ চা-চামচ দারচিনি এবং জয়িত্রী গুঁড়ো
পদ্ধতি: কড়াই তাতিয়ে নিন। তার পর আঁচ বন্ধ করে একে একে বাদামগুলি দিয়ে দিন। গরমে কড়ায় বাদাম আরও একটু শুকনো হয়ে যাবে। গুঁড়ো করতে সুবিধা হবে। তবে এই উপকরণগুলি কিন্তু গ্যাস জ্বালিয়ে আঁচে নাড়াচাড়া করা যাবে না। মৌরি, পোস্ত-সহ সমস্ত উপকরণ ভাল করে মিশিয়ে মিক্সিতে ঘুরিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে ঠান্ডাই গুঁড়ো বা মশলা।
ঠান্ডাই পানীয়

গলা ভেজাতে বাড়িতেই বানিয়ে নিন ঠান্ডাই। ছবি : সংগৃহীত।
উপকরণ
২৫০ মিলিলিটার
২ টেবিল চামচ ঠান্ডাই গুঁড়ো
২ টেবিল চামচ চিনি
বরফের টুকরো
পদ্ধতি: দুধ জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে রাখুন। মিক্সিতে দুধ, ঠান্ডাই গুঁড়ো, চিনি দিয়ে মিনিটখানেক ঘুরিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে পানীয়। পরিবেশনের সময় বরফ কুচি মিশিয়ে নিন।
ঠান্ডাই মালাই সন্দেশ

ঠান্ডাই মশলা দিয়ে বানানো যায় মালাই সন্দেশ। ছবি: প্রতিনিধিত্বমূলক।
উপকরণ
১ লিটার দুধ
১ কাপ ছানা
৩-৪ টেবিল চামচ ঠান্ডাই গুঁড়ো
কয়েকটি পেস্তা বাদাম
২ চামচ গোলাপের শুকনো পাপড়ি
সামান্য পরিমাণ জাফরান
আধ কাপ চিনি
পদ্ধতি: ছানা এবং ঠান্ডার গুঁড়োর মিক্সারে দিয়ে সামান্য ছানার জল ব্যবহার করে ঘুরিয়ে নিন। মিশ্রণটি যেন মসৃণ হয়, কোনও দলা না থাকে। এ বার কড়াইয়ে ১ লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিন। তাতে মিশিয়ে দিন সামান্য পরিমাণ জাফরান। দুধ আরও একটু ঘন হয়ে গেলে ছানা এবং ঠান্ডাই গুঁড়োর মিশ্রণটি তার মধ্যে দিয়ে কম আঁচে ক্রমাগত নাড়়তে থাকুন। একদম শেষ ধাপে যোগ করুন চিনি। মিশ্রণটি আরও ঘন এবং থকথকে হয়ে গেলে মাটির খুড়িতে ঢেলে ঠান্ডা হতে দিন। ঘরের তাপমাত্রায় আসার পর সেটি ফ্রিজে ভরে রাখুন। আধ থেকে এক ঘণ্টা রাখলেই সন্দেশ জমাট বেঁধে যাবে। উপর থেকে পেস্তা কুচি, জাফরান এবং গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন সন্দেশ।
ঠান্ডাই বরফি

ঠান্ডাই মশলা থাকলে বানিয়ে নেওয়া যায় বরফিও। ছবি: প্রতিনিধিত্বমূলক
১ টেবিল চামচ ঘি
২ কাপ দুধ
৩ কাপ গুঁড়ো দুধ
এক কাপ ঠান্ডাই গুঁড়ো
সামান্য জাফরান
এক মুঠো পেস্তা
২ টেবিল চামচ গোলাপের পাপড়ি
এক কাপ চিনিগুঁড়ো
পদ্ধতি: বরফি তৈরির জন্য ননস্টিক কড়াই নিলেই সুবিধা বেশি। ঘি গরম হলে কড়াইয়ে দিয়ে দিন তরল দুধ। ভাল করে জ্বাল দিয়ে যোগ করুন জাফরান। মিশিয়ে দিন গুঁড়ো দুধ। আঁচ কমিয়ে ক্রমাগত নাড়তে হবে, না হলেই গুঁড়ো দুধ দলা পাকিয়ে যেতে পারে। এ বার দিয়ে দিন ঠান্ডাই গুঁড়ো। আবার নাড়তে থাকুন। শেষ ধাপে যোগ করুন চিনি। সমস্ত উপকরণ মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ঘন হয়ে এলে আঁচ বন্ধ করে দিন। সামান্য একটু হাতে নিয়ে দেখুন তা দিয়ে গোল পাকানো যাচ্ছে কি না। যদি যায়, বুঝতে হবে মিশ্রণটি প্রস্তুত।
এ বার একটি চওড়া পাত্রে বেকিং কাগজে ঘি মাখিয়ে তার উপর মিশ্রণটি ঢেলে উপর থেকে সমান করে নিন। পেস্তা, জাফরান, গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হলেই তা জমাট বেঁধে আরও একটু শক্ত হয়ে যাবে। এর পর ছুরির সাহায্যে বরফির মতো কেটে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মিষ্টি।
ঠান্ডাই ফিরনি

দোলে খেয়ে দেখুন ঠান্ডাই ফিরনি। ছবি :সংগৃহীত।
১ লিটার দুধ
১/৪ কাপ চাল
২ টেবিল চামচ ঠান্ডাই গুঁড়ো
আধ কাপ চিনি
সামান্য পরিমাণ জাফরান
২ টেবিল চামচ গোলাপের পাপড়ি
পদ্ধতি: দুধ ভাল করে জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিন। চাল ধুয়ে অন্তত ঘণ্টাখানেক ভিজিয়ে রাখুন। গোবিন্দভোগ বা বাসমতী যে কোনও চাল দিয়েই এটি করা যাবে। চালে দুধ দিয়ে মিক্সিতে ঘুরিয়ে মিহি করে নিন। মিশ্রণটি দুধে মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। মিশিয়ে দিন জাফরান। একটু ঘন হয়ে গেলে দিয়ে দিতে হবে ঠান্ডাই গুঁড়ো এবং শেষ ধাপে চিনি। মিশ্রণ ঘন হয়ে গেলে মাটির খুড়িতে ঢেলে দিন। ঘরের তাপমাত্রায় সেটি এলে ঠান্ডা করতে ফ্রিজে ভরে দিন। পরিবেশনের আগে জাফরান এবং গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিন।