Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
foods

ভ্যাপসা গরমে এসি রেস্তরাঁয় পান্তাভাত! আর কী কী সঙ্গে?

প্রখর তাপে পান্তার মাহাত্ম্যের কথা মানছেন চিকিৎসকেরাও। তাঁদের বক্তব্য, গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে পান্তাভাত চোখ বুজে চলতে পারে।’’

চমক: পাতে পান্তা। নিজস্ব চিত্র

চমক: পাতে পান্তা। নিজস্ব চিত্র

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ১৭:০৯
Share: Save:

গল্পের বইয়ের পাতার পান্তাবুড়ি থেকে শুরু করে প্রয়াত বিশ্বশ্রী মনোহর আইচ। পান্তাভাতের রেসিপিতে মজেছেন অনেকেই। গ্রামবাংলার বহু মানুষ গরমে পান্তা ভাত খেয়ে কাজে বেরোন। এতে মাঠে-ঘাটে চড়া রোদে কাজ করতে সুবিধা হয় বলে তাঁদের দাবি। পুষ্টিবিদরাও সেই দাবি উড়িয়ে দেন না। ফলে, গরম কাল জুড়ে এক এক জায়গায় এক এক কায়দায় তৈরি পান্তা বাঙালির পাতে দিব্যি জায়গা করে নিয়েছে।

গেরস্থের হেঁসেল ছাড়িয়ে সেই পান্তা তৈরি হচ্ছে ঝাঁ চকচকে রেস্তরাঁর কিচেনে। নরম আলোয় মাখা ডাইনিং রুমে চেয়ার-টেবিলে বসে পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা দিয়ে গোগ্রাসে পান্তা খাচ্ছেন কেতাদুরস্ত অনেকেই। এলিট ক্লাস। পান্তার আদি-অকৃত্রিম স্বাদ পেতে কেউ হাতেই সাবাড় করছেন। কেউ বা চামচে। বিরিয়ানি-চিকেন লালিপপের যুগে বাবা-মায়ের হাত ধরে রেস্তরাঁয় চেটেপুটে পান্তা খেয়ে ঢেকুর তুলছে জেন ওয়াই।

ফণী বিদায়ের পর থেকে গরমে কাহিল বাংলা। মঙ্গল-বুধ সন্ধ্যায় বৃষ্টি হলেও বাতাসে আপেক্ষিক আদ্রতার সৌজন্যে দুপুরে অস্বস্তি কমল কই! এই মরসুম দেখেই দিন কয়েক ধরে দুপুরের মেনুতে পান্তার সংযোজন‌ হয়েছে শ্রীরামপুরের একটি রেস্তোরাঁয়।

আরও পড়ুন: ‘হা’ বললে ‘হালিম’ বোঝেন! কেন কলকাতায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই পদ জানেন?

রেস্তোরাঁর কর্ণধার দীপঙ্কর সরকার জানালেন, রাতে ভাত রেঁধে জল ঢেলে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হচ্ছে। সকলে ফ্রিজে ঢোকানো হচ্ছে। মধ্যাহ্নভোজে পরিবেশন করা হচ্ছে। পান্তার উপরে জলের সঙ্গে ভাসছে কিঞ্চিৎ সর্ষের তেল। সঙ্গে থাকছে কাঁচা লঙ্কা, পেঁয়াজ, গন্ধরাজ লেবু, সন্দক লবন। পাশের প্লেটে মুচমুচে মৌরলা, কাতলা মাছ ভাজা, আলুর চপ। দাম দেড়শো টাকা।

বুধবার দুপুরে এখানে সপরিবারে পান্তাভোজে মজেছিল শ্বাশ্বতী বিশ্বাসদের পরিবার। মাথা গুনে দেখা গেল মোট ১৪ জন। গুড়াপ থানার অফিসার ইন-চার্জ অমলেন্দু বিশ্বাসের ঘরণী শ্বাশ্বতীদেবী বললেন, ‘‘বাইরে খেতে বেরনো মানে তো চপ-কাটলেট, বিরিয়নি, চিকেন চাপ এই সব। দল বেঁধে পান্তা খেতে এসেছি, এটা আরও মজার। আর ভ্যাপসা গরমে লঙ্কা-পেঁয়াজ, ভাজাভুজি, পেঁয়াজ-কাঁচা লঙ্কা, গন্ধলেবু দিয়ে পান্তা খেয়ে মনে হচ্ছে মহাভোজ।’’

বাতানুকুল রেস্তোঁরায় তখন মৃদু শব্দে গান চলছে। শাশ্বতীদেবীর বছর তেরোর ছেলে অনঘ ইংরেজি মাধ্যমে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। চকোলেট, আইসক্রিম, চিকেনে বার্বিকিউ-এর ভক্ত অনঘও পান্তার স্বাদে আহ্লাদিত।

আরও পড়ুন: মাতৃদিবসে মায়ের পাতে তুলে দিন আনারস দেওয়া চিকেন স্যালাড

ওই রেস্তোরাঁয় পান্তার কথা শুনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবশ্য ঈষৎ বিমর্ষ। জনাইয়ের বাসিন্দা, শ্রীরামপুর আদালতের এই আইনজীবীর কথায়, ‘‘কর্মবিরতি চলায় সে ভাবে আদালতে যাচ্ছি না। গেলে অবশ্যই পান্তা চেখে দেখতাম। ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাড়িতেও পান্তাভাতের চল রয়েছে।’’ দীপঙ্কর জানান, আলু ভাজা, আলু সেদ্ধও থাকছে। খদ্দের যা চাইবেন, তাই পাবেন।

প্রখর তাপে পান্তার মাহাত্ম্যের কথা মানছেন চিকিৎসকেরাও। তাঁদের বক্তব্য, গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে পান্তাভাত চোখ বুজে চলতে পারে। গরম ভাতের তুলনায় পান্তায় আয়রন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম বেশি। ডায়াটেশিয়ান শিবানী দে ভট্টাচার্যের ছাড়পত্র, ‘‘গরমে সকালে বা দুপুরে পান্তাভাত খুবই উপকারী।’’

বিশ্বশ্রী, শতায়ু মনোহরবাবুকে আবার বলতে শোন গিয়েছিল, পান্তা ভাতের জল / তিন জোয়ানের বল।

অন্য বিষয়গুলি:

Foods Rice Recipe Summer Restaurant Serampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE