লুচির তুতো ভাইদের চিনুন। ছবি: সংগৃহীত।
উৎসব হোক না হোক, বাঙালির পাতে সাতসকালে ফুলকো লুচি পড়লেই মেজাজ ফুরফুরে। আর উৎসব হলে তো কথাই নেই। দুর্গাপুজো, কালীপুজো হোক বা ভাইফোঁটার সকাল। লুচি বিনা বাঙালির উৎসব মণিহারা ফণীর মতোই নীরস। কিন্তু সব উৎসব লুচিতেই বা থামবে কেন! উৎসবের খুশিকে খানিক বাড়িয়ে নিতে তো ক্ষতি নেই। লুচির বদলে লুচি গোত্রের আর কী কী খাওয়া যেতে পারে উৎসবের প্রাতরাশে? কালীপুজো-ভাইফোঁটার সকালের জন্য রইল তেমনই এক ডজন লুচির ‘প্রাদেশিক তুতো ভাই’দের সন্ধান।
১। জোয়ানের লুচি: বেলা আর ভাজা লুচির মতোই। তবে ময়দা নয়, তৈরি করতে হবে আটা দিয়ে। বিহার, ঝাড়খণ্ড তো বটেই উত্তরাখণ্ডেও এই লুচি বা পুরি জনপ্রিয়। আটা মাখার সময়ে মিশিয়ে নিতে হবে জোয়ান, সামান্য কসুরি মেথি এবং নুন। চাইলে সামান্য সুজি আর দুধের সরও মিশিয়ে নিতে পারেন এর সঙ্গে।
২। বাটুরা: বিরাট কোহলির পছন্দের খাবার। চানা মশলার জুটি হিসাবে দিল্লির বিখ্যাত জলখাবার। বাড়িতে বানানো মোটেই কঠিন নয়। ময়দা মাখার সময় শুধু তাতে মিশিয়ে নিতে হবে দই, বেকিং সোডা আর কিছুটা নুন। কিছু ক্ষণ রেখে দিতে হবে। তার পরে লম্বাটে করে বেলে ডুবোতেলে ভেজে নিতে হবে। বাটুরা হবে লুচি বা পুরির থেকে আকারে অনেকটাই বড়।
৩। গুজরাতের লুচি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে লুচি বা পুরি বানানো হয় আটা দিয়ে। সঙ্গে মেশাতে হবে সামান্য হলুদ, হিং, লঙ্কার গুঁড়ো আর নুন। এর পরে ছোট ছোট করে বেলে ভেজে নিলেই তৈরি গুজরাতি লুচি।
৪। কড়াইশুঁটির কচুরি: বাঙালির শীতকালীন বিলাসিতা। তবে বাজারে এখন কড়াইশুঁটি পাওয়া যায় সারা বছরই অল্পবিস্তর। কেউ কেউ আবার শীতকালে কড়াইশুঁটি কিনে সংরক্ষণও করেন। তাঁরা সুবিধা মতো বিশেষ উৎসবে বানিয়ে নিতেই পারেন কড়াইশুঁটির কচুরি। পুর বানানোর জন্য কড়াইশুঁটিকে কাঁচালঙ্কা আর আদার সঙ্গে বেটে নিয়ে কড়ায় ঘি দিয়ে ওই মিশ্রণে যোগ করতে হবে নুন, চিনি, হিং এবং ভাজা মশলা। এর পরে পুর ভরে লেচি বেলে ভেজে নেওয়ার অপেক্ষা। সঙ্গে থাকুক আলুর দম।
৫। ফুলকপির কচুরি: ঘরের কাছের রাজ্য ওড়িশার জলখাবার। ফুলকপি কুরে নিয়ে তাতে মিহি করে কুচোনো লঙ্কা, গুঁড়োনো চিনেবাদাম, লঙ্কা গুঁড়ো, জিরে, নুন এবং ধনেপাতা মিশিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। এ বার ময়দার লেচি ছোট করে বেলে তার মধ্যে চামচে করে ওই পুর ভরে গোল করে পাকিয়ে নিন। হালকা হাতে বেলে ডুবোতেলে ভাজুন।
৬।বেদমি পুরি: মথুরা, বেনারস, আগরা এমনকি, দিল্লিতেও এই পুরি জনপ্রিয়। বানানোর প্রক্রিয়াও সহজ। বিউলির ডাল ভিজিয়ে রাখতে হবে দু’-তিন ঘণ্টা। এর পরে ভেজানো ডাল, কাঁচালঙ্কা, আদা, হলুদ গুঁড়ো, লাল লঙ্কার গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, আমচুর, হিং এবং মৌরি দিয়ে মিক্সিতে বেটে নিন। খুব বেশি মিহি করে বাটবেন না। এ বারে আটার সঙ্গে সুজি, কসুরি মেথি এবং নুন মিশিয়ে তাতে ওই ডাল বাটা যোগ করে নিয়ে তেল এবং প্রয়োজন মতো জল দিয়ে মেখে নিন। তার পরে লেচি কেটে বেলে ভেজে নিন।
৭। ডাল ভরি পুরি: ছোলার ডালের পুর দিয়ে তৈরি কচুরি। মন্দিরের শহর কাশীতে এর জন্ম। সিদ্ধ ছোলার ডাল অমসৃণ ভাবে বেটে নিন। কড়ায় ঘি বা তেল দিয়ে তাতে হিং, জিরে, আদা, কাঁচালঙ্কা, লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে নেড়েচেড়ে ডালের মিশ্রণ দিয়ে ভাজা ভাজা করে তুলে নিন। এ বার ওই পুর ময়দার লেচিতে ভরে বেলে ভেজে নিলেই তৈরি ডাল ভরি পুরি।
৮। রাধাবল্লভী: এককালে বাঙালির বিয়ের নেমন্তন্নে প্রথম পদ হত রাধাবল্লভী। এখনও বহু মিষ্টির দোকানে সকাল সকাল গেলেই গরম গরম রাধাবল্লভীর খোঁজ মেলে। বাড়িতে বানাতে চাইলে প্রথমে ভাজা মশলা বানিয়ে ফেলুন। সমপরিমাণ মৌরি এবং জোয়ান, কয়েকটি শুকনো লঙ্কা আর খুব সামান্য জয়িত্রি দিয়ে শুকনো খোলায় নেড়ে মিক্সিতে গুঁড়িয়ে নিন। রাতভর ভিজিয়ে রাখা অড়হর ডাল, সামান্য আদা এবং লঙ্কা দিয়ে বেটে নিন। কড়ায় ঘি দিয়ে তাতে হিং, অড়হর ডাল বাটা, পরিমাণ মতো নুন, চিনি এবং তৈরি করা ভাজা মশলা দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে ছোট ছোট ভাগে ভেঙে ময়দার লেচিতে ভরে বেলে নিন।
৯। মেথির লুচি: উত্তর ভারতের জলখাবার। আটা বা ময়দা মাখার সময়েই তাতে দিতে হবে হিং, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, জোয়ান, এবং কুচোনো মেথি শাক। ভাল করে মেখে নিয়ে লেচি কেটে বেলে ভেজে নিন।
১০। পালংশাকের লুচি: নামেই বোঝা যাচ্ছে এ লুচির মূল উপকরণ হল পালং শাক। জন্ম মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে। তবে এখন গোটা ভারতেই সমাদর। প্রথমে গরম জলে শাক ভাপিয়ে নিন। তার পরে তাতে নুন, কাঁচালঙ্কা, আদা এবং রসুন মিশিয়ে বেটে নিয়ে সেই মিশ্রণেই আটা বা ময়দা মিশিয়ে ভাল করে মেখে নিতে হবে। বাকিটা লুচির মতো।
১১। মশলা লুচি: মাইসুরু বা কর্নাটকের প্রিয় প্রাতরাশ। ময়দা বা আটা মাখার সময়েই তাতে মিশিয়ে নিন আদা, রসুন, থেঁতো করা কাঁচালঙ্কা, নুন এবং হিং। এ বার লেচি বেলে ভেজে নিতে হবে।
১২। কুর্গি পুরি: দাক্ষিণাত্যের এই লুচি তৈরি হয় ভাত দিয়ে। চমকে যাবেন না, ব্যাপারটা আসলে তাই-ই। পৌনে এক কাপ সিদ্ধ ভাতে এক কাপ চালের আটা, তার সঙ্গে ধনেপাতা কুচো, লঙ্কাকুচি আর নুন আর প্রয়োজন মতো জল দিয়ে মেখে ১৫ মিনিট রেখে দিন। তার পর লেচি বেলে ভেজে তুলুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy