প্রোটিন মানেই বাবা-মায়েরা ভেবে নেন একগাদা মাছ বা মাংস খাইয়ে দেওয়া। এতে শরীরের জন্য জরুরি প্রোটিনের চাহিদা মেটে না। পাশাপাশি, অতিরিক্ত মাংস বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রাও বেড়ে যাবে। শিশুদের বড় হয়ে ওঠার জন্য প্রোটিন খুবই জরুরি। শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মস্তিষ্কের বিকাশেও প্রোটিন দরকার হয়। শুধু পেশি মজবুত নয়, দেহের প্রতিটি কোষ তৈরিতে প্রোটিনের গুরুত্বপূ্র্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ত্বক, চুল ভাল রাখতেও প্রোটিন জরুরি। বাড়ন্ত শিশুর খাবারে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন— সব কিছুরই ভারসাম্য থাকা জরুরি।
আমিষ বা নিরামিষ, যে কোনও খাবারের মধ্যে দিয়েই শরীরে প্রোটিন যেতে হবে। এমনটাই জানালেন পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী। তাঁর পরামর্শ, নিরামিষ খেলে দুধ, নানা রকম ডাল, সয়াবিন দিতে হবে। আর আমিষের ক্ষেত্রে রোজ একটি করে ডিম দেওয়া যেতে পারে শিশুকে। মুরগির মাংস হালকা করে স্ট্যু করে দিতে হবে। মাছ খেলে সব্জি দিয়ে পাতলা মাছের ঝোল খাওয়ানোই ভাল। তবে, প্রোটিন যেন বেশি না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখা দরকার। কারণ, অতিরিক্ত মাংস জাতীয় খাবার খেলে ফ্যাট বেড়ে যেতে পারে। সেটা আবার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল নয়।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর তালিকা অনুযায়ী শিশুর প্রতি কিলোগ্রাম ওজনে ০.৮ থেকে ০.৯ গ্রাম করে প্রোটিন জরুরি।
আরও পড়ুন:
কোন বয়সের শিশুর কতটা প্রোটিন দরকার?
১ বছর অবধি দিনে ৮-১০ গ্রাম প্রোটিন জরুরি।
১ থেকে ৩ বছর অবধি দিনে ১১.৩ গ্রাম প্রোটিন হলেই হবে।
৪ থেকে ৬ বছর অবধি ১৬ গ্রামের মতো প্রোটিন দরকার।
৭ থেকে ৯ বছর অবধি দিনে ২৩ গ্রাম প্রোটিন জরুরি।
৯ থেকে ১৩ বছর অবধি প্রতি দিনে কম করেও ৩৪ গ্রামের মতো প্রোটিন দরকার হবে।
১৪ বছরের পর থেকে ১৮ বছর অবধি ছেলেদের ক্ষেত্রে দিনে ৫২ গ্রাম ও মেয়েদের দিনে ৪৬ গ্রাম করে প্রোটিন খেতেই হবে।
এ দেশের অনেক শিশুই প্রোটিনের ঘাটতিতে ভোগে। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের হিসেব বলছে, দেশের ৫ বছরের নীচে কম করেও ৩৫ শতাংশ শিশু প্রোটিনের ঘাটতির শিকার। কারণ শিশুকে দিনে কতটা প্রোটিন দিতে হবে ও কোন কোন খাবার থেকে তা আসবে, জানেন না অধিকাংশ অভিভাবকই। পুষ্টিবিদ জানাচ্ছেন, অযথা প্রোটিন পাউডার খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। বয়স অনুযায়ী সকালের জলখাবারে দুধ-কর্নফ্লেক্স, দই বা চিজ়, পিনাট বাটার দিয়ে ব্রাউন ব্রেড দিতে পারেন। প্রোটিনের ভাল উৎস পিনাট বাটার। ডালের মধ্যে শুরুতে মুগ বা মুসুর ডাল খাওয়াই ভাল। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সব্জি দিতে হবে। লাউ, কাঁচা পেঁপে, ঝিঙে, গাজর জাতীয় সব্জি শিশুর পুষ্টির জন্য ভাল। পালং শাক, ব্রকোলি প্রোটিনের ঘাটতি মেটাবে। শিশুকে ছোট মাছ বা জিওল মাছ খাওয়ালে খুব ভাল। শিঙি, মাগুরের মতো জিওল মাছ খাওয়াতে পারেন শিশুকে। মাছ থেকে ভরপুর ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাবে শিশু। এক দিনেই মাছ, মাংস, ডিম না দেওয়াই ভাল। সেই সঙ্গে ডালিয়ার খিচুড়ি, ছানা, ছাতু বা সুজির পায়েস— যে কোনও কিছুই খাওয়াতে পারেন।