Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Akashvani

ভুলে যাওয়া আকাশবাণী

কলকাতা থেকে প্রথম বেতারবার্তা পাঠানো হয়েছিল শতবর্ষ আগে। কয়েক বছর বাদে গড়ে উঠল স্বতন্ত্র রেডিয়ো স্টেশন। খামতি ছিল না শাসকের বিধিনিষেধের। তবু চিরকাল সাধারণ মানুষের স্বর হতে চেষ্টা করেছে বেতার সম্প্রচার। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে এ দেশের রেডিয়োর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিচিত্র সব ঘটন-অঘটন। 

Akashvani Bhavan

স্মৃতিবাহী: আকাশবাণী ভবন। ১৯৫৮ সালে রেডিয়োর ‘আকাশবাণী’ নামকরণের পরই তারা ইডেনের পাশে আজকের ঠিকানায় সরে আসে

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ০৭:১৯
Share: Save:

তখনও স্বাধীন হয়নি দেশ। ২৩ জানুয়ারি দুপুরে কলকাতার রেডিয়ো স্টেশনে ডিউটি করতে আসার আগে এলগিন রোডে নেতাজি ভবন দর্শনে গিয়েছিলেন তরুণ স্টাফ আর্টিস্ট, ঘোষক। স্বাধীনতার আগে অশান্ত সেই দিনগুলোয় ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে প্রায়শ নির্ধারিত ডিউটিতে পৌঁছতে পারতেন না বেতারের ঘোষক-শিল্পীরা। ১৯৪৬ সালে সুভাষ-জয়ন্তীর দিনে আজাদ হিন্দ ফৌজে নেতাজি-সহচর শাহনওয়াজ খান এসেছিলেন এলগিন রোডের বাড়িতে। তাঁর বক্তৃতায় নেতাজির ঐক্য, আত্মবলিদান, দেশপ্রেমের মন্ত্র শুনে তরুণ বেতারকর্মীর রক্ত টগবগিয়ে উঠল। তার পর যা ঘটল, তা ইতিহাস!

রেডিয়োর স্টাফ আর্টিস্ট সুনীল দাশগুপ্ত সে দিন বেতারে নিষিদ্ধ সব গান বাক্সে ভরেই স্টুডিয়োয় ঢুকলেন। অনুষ্ঠান শুরু হতেই দেশাত্মবোধক কিছু কবিতা গড়গড়িয়ে আবৃত্তি করে চালিয়ে দিলেন ‘কদম কদম বঢ়ায়ে যা’! ডিউটি অফিসার ভ্যাবাচ্যাকা। তৎকালীন প্রোগ্রাম ডিরেক্টর প্রভাত মুখোপাধ্যায় বাড়িতে রেডিয়ো শুনতে শুনতেও হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। ডিউটি অফিসারকে ফোন করে তিনি বললেন, “সুনীলকে স্টুডিয়ো থেকে এখনই দূর করো! তুমি নিজে ঠিকঠাক গান চালাও!”

সুনীল দাশগুপ্ত পরে লিখেছেন, “আমি স্টুডিয়ো ছেড়ে মিলিটারি ঢঙে গটগট করে বেরিয়ে এসে মিশে গেলাম রাজপথের জনারণ্যে! প্রাণে মনে, অপার আনন্দ, আকাশে ওড়া মুক্ত বিহঙ্গের মতো।”

কলকাতা বেতার কেন্দ্রে প্রাক্-স্বাধীনতা যুগের এই চরিত্রটিকে আপনারা বিমল রায়ের ‘মন্ত্রমুগ্ধ’ ছবিতে নায়কের পার্টে দেখে থাকতে পারেন। তবে সেই ছবির কথা না-জানলেও ‘ধন্যি মেয়ে’ ছবিতে সুনীলকে দেখেছেন নিশ্চয়ই। ইউটিউবে চাইলেই দেখা যায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ঠোঁট মেলাচ্ছেন এক আপনভোলা সৌম্য প্রৌঢ়। ‘এ ব্যথা কী যে ব্যথা/ বোঝে কি আনজনে…’! যে গান শুনে থমকে দাঁড়ায় গাঁয়ের দস্যি মেয়ে মনসা। যেন তার মনের ভাষার বর্ণমালাই গানের সুরে হাওয়ায় পাক খাচ্ছে। সুভাষ-জয়ন্তীর দুপুরে সেই রেডিয়ো বিপ্লবের পরে সুনীল রাতারাতি নায়ক হয়ে ওঠেন।

নিষিদ্ধ সুভাষ

রেডিয়োতে বাজা এক-একটি গান বা শব্দব্রহ্মের অভিঘাত বুঝতে এত দিন বাদেও এই পুরনো বেতার-কাহিনি শোনার গুরুত্ব আছে। তখনও বন্দে মাতরম্ বাজানো থেকে গান্ধীর নাম উচ্চারণ পর্যন্ত বেতারে কার্যত নিষেধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটেনের শত্রু দেশ জাপানের বিরুদ্ধে স্বকণ্ঠে প্রচার চালাতে রাজভবনবাসী ছোটলাট ফ্রেডরিক বারোজ সশরীরে রেডিয়ো স্টেশনে আসতেন। সাহেবের মেজাজ বিগড়ে যেতে পারে বলে রেডিয়োর ধুতি-পাঞ্জাবিধারী বাঙালি বাবুদের তখন একটি ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে হত। এ-হেন নানা ঘটনাতেই সুনীল দাশগুপ্তদের মতো কারও কারও মেজাজ চড়তে শুরু করেছিল। সেই সময়ে রেডিয়োর অস্থায়ী শিল্পী ও স্টাফ আর্টিস্টদের মাইনে বাড়াতে গণনাট্যকর্মী সুধী প্রধান ও বেতার কর্মী মহম্মদ ইসরাইলের নেতৃত্বে তুমুল আন্দোলন চলছে। সুনীল স্টাফ আর্টিস্ট হয়েও আন্দোলন মঞ্চে বেতার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিয়ে কোপদৃষ্টিতে পড়েছেন। তিনি নিজেই লিখেছেন, অফিসের নানা বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক রকম প্রতিশোধ নিতে সম্প্রচারে অবরে-সবরে ‘উঠ গো ভারত লক্ষ্মী’ বা ‘বল বল বল সবে’র মতো গান বাজানোর কথা। পরে ‘ভুল হয়ে গেছে’ বা ‘বুঝতে পারিনি’ গোছের অজুহাতও দিতেন। কিন্তু ২৩ জানুয়ারি আজাদ হিন্দ ফৌজের গান বাজানোর স্পর্ধায় তৎকালীন কর্তৃপক্ষের সহ্যের বাঁধ ভাঙল। বেতার থেকে বিতাড়িত সুনীল অবশ্য শহর-শহরতলির বড় বড় ক্লাবের জলসায় সাদরে ঘোষক হিসেবে ডাক পেতেন। অনুষ্ঠানে সুনীল থাকলে অনেক শিল্পী নাকি এক পয়সা নিতেন না। পরে চলচ্চিত্রাভিনেতা হিসেবেও প্রতিষ্ঠা পান তিনি। কিন্তু কলকাতা বেতার কর্তৃপক্ষ স্বাধীনতার পরেও এই বেপরোয়া ছেলেটিকে ক্ষমা করতে রাজি হননি। সাহিত্যিক নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, শিক্ষাবিদ খগেন্দ্রনাথ সেন, অভিনেতা জহর গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ গণ্যমান্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং অগণিত শিল্পী সুনীলকে বেতারে ফেরাতে সওয়াল করেছিলেন। তাতে লাভ হয়নি। এবং তার থেকেও বড় কথা, স্বাধীন দেশেও অন্তত প্রথম কয়েক বছর সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালনে জড়তা কাটাতে পারেনি বেতার কর্তৃপক্ষ। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্র— বাংলার সংস্কৃতি জগতের নক্ষত্রেরা একযোগে আন্দোলনে নেমেও সফল হননি। নমো নমো করে সুভাষ-স্মরণ সারে কলকাতা বেতার কেন্দ্র। এক কথায় বাংলা তথা ভারতের বীর সন্তানটির যথোচিত মর্যাদাদানে ব্যর্থ হয়েছিলেন বেতার কর্তৃপক্ষ। বোঝাই যায়, বিষয়টি নিয়ে দিল্লিরও আদৌ আগ্রহ ছিল না। কলকাতার বেতার-কর্তারা তাঁদের নির্দেশের বাইরে পা বাড়াতে পারেননি। অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হলেও এ দেশের বেতার বিবিসি-র মতো স্বাধীন সত্তা খুঁজে পায়নি। ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য মেনে তা শাসনযন্ত্রের হাতিয়ারই থেকে যায়। তবে এ সব সত্ত্বেও দেশপ্রেমের উদ্বোধনে বেতারের ভূমিকা স্বাধীনতার আগে বা পরে বার বারই প্রকট হয়েছে।

শতং বদ মা লিখ

সতর্কতামূলক এই সংস্কৃত আপ্তবাক্যটি কখনওই বেতারের ক্ষেত্রে খাটে না। বরং বন্দুকের গুলির মতো মুখ ফস্কে ভুলভাল কিছু বেরোলে কী হবে— পদে পদে এই দুশ্চিন্তা। কারণ শব্দ হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেও দেওয়ালেরও কান আছে। এবং কোন কথায় কার মনে লাগে খেয়াল রাখাটাই পাবলিক ব্রডকাস্টিং বা জনসম্প্রচারের শর্ত। তবে আমাদের বেতারের খুঁতখুঁতেপনা কখনও সখনও একটা প্রহসনের পর্যায়ে ঠেকত। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বলা একটা গল্প শুনলে বিষয়টা খোলসা হবে।

সেটা রেডিয়োর আদিযুগের কথা। বম্বের পরে দেশের দ্বিতীয় বেতারকেন্দ্র হিসেবে কলকাতায় সম্প্রচার শুরুর প্রথম দিন থেকে বাংলা সংবাদপাঠক, ঘোষক ছিলেন রাজেন সেন। তিনি আবার ১৯১১-র শিল্ডজয়ী মোহনবাগানের অমর একাদশে হাফব্যাক। প্রোগ্রাম হেড নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মজুমদারের বন্ধুও। ‘বেতারজগৎ’-এর পুরনো সংখ্যায় বীরেন ভদ্র লিখেছিলেন, রাজেনদার মতো ‘অতিরিক্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ’ ব্যক্তি অফিসে কমই ছিলেন। তখনও রেকর্ড করা অনুষ্ঠান পারতপক্ষে হত না। আর মাইক্রোফোনের সামনে পান থেকে চুন খসলেও রাজেনবাবুর শ্যেনদৃষ্টি। কেউ হালকা কাশলেও ঠিক চোখ পাকাবেন! তেমনই এক বার কোনও নাটকের সম্প্রচারের সময়ে তাঁকে নিঃশব্দে গজরাতে দেখলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ। রাজেনদা হাত নেড়ে বোঝালেন, তিনি ঠিক শুনেছেন নাটকের এক ঝগড়াঝাঁটির কোলাহলের মুহূর্তে কেউ একজন অপশব্দ ব্যবহার করেছেন। মাইক্রোফোন সজাগ বলে স্টুডিয়োয় কেউ বিষয়টা জিজ্ঞেসও করতে পারছেন না। নাটক শেষে ঘোষণা করতে উঠে রাজেন সেন সটান বলে দিলেন, মাননীয় শ্রোতৃবৃন্দ, আজকের অভিনয়ে জনৈক অভিনেতা হঠাৎ একটি বাক্যদুষ্টি করে ফেলেছিলেন, তার জন্য আপনাদের কাছে আমরা ক্ষমা চাইছি। এর পরেই আসল কাণ্ড! রাজেনদাকে কিছুতেই বোঝানো গেল না, ভিড়ের মধ্যে কেউ আলটপকা কিছু বলে থাকলেও তা শ্রোতাদের কান অবধি যায়নি, তাই ওই ঘোষণার দরকারই ছিল না! এর কিছু ক্ষণ বাদেই ডিউটি রুমে ফোনের পরে ফোন। সবারই এক প্রশ্ন, মশাই কী বাক্যদুষ্টি হয়েছিল দয়া করে বলুন না, আমরা খেয়াল করিনি! এই বিষয়টি জানতে চেয়ে শতাধিক চিঠিও রেডিয়ো স্টেশনে আছড়ে পড়ে।

আকাশবাণীর কল

১৯২২-এ বিবিসি-র রেডিয়োর পথ চলা শুরু। ভারতের পড়শি দ্বীপরাষ্ট্রে ‘রেডিয়ো সিলোন’ও প্রায় তার সমবয়সি। তখনও এ দেশে বেতার সম্প্রচার শুরু হতে কিছুটা দেরি আছে। সম্ভবত ১৯২০-র দশকের গোড়ায় গান্ধীজির ডাকে উত্তাল স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমিতে বেতার সম্প্রচার চালুর পরিণাম নিয়ে ব্রিটিশরা দ্বিধায় ছিল। কিন্তু ‘আকাশবাণী’ শব্দটা তখনই বঙ্গজীবনের অংশ হতে শুরু করেছে বলাই যায়।

১৯২২-এ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। ঠিক ১০১ বছর আগে ১২ মার্চ, ১৯২২ কলকাতা থেকে প্রথম বেতার বার্তাটি পাঠানো হয়েছিল। তবে সাবেক ইন্ডিয়ান স্টেট ব্রডকাস্টিং সার্ভিস বা অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো নয়, এই বার্তার প্রেরক মার্কনি মেরিন ওয়্যারলেস কম্পানি। মার্কনির সংস্থা তখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া স্টিম নেভিগেশন কোম্পানির জাহাজের জন্য ওয়্যারলেস বোর্ড তৈরির চেষ্টা করছে। সেই সূত্রেই পাঠানো হয় কলকাতার প্রথম বেতার বার্তা। ওই ১৯২২-এর মাঝপর্বেই ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত সুকুমার রায়ের প্রবন্ধ ‘আকাশবাণীর কল’। তিনি লিখছেন, “এমন করে ‘যে গান কানে যায় না শোনা’ সে গান আকাশের তরঙ্গে চড়ে বিদ্যুতের মতো বেগে চারিদিকে ছুটে বেড়ায়, সেই অশব্দ গানকে আকাশময় ছড়িয়ে দিয়ে মানুষ আবার তাকে কলের মধ্যে ধরে আকাশের ভাষা ও আকাশের সুর শুনছে। আমাদের দেশে গল্পে ও পুরাণে যে আকাশবাণীর কথা শুনতে পাই, এও যেন সেই আকাশবাণীর মতো। কোথাও কোনও আওয়াজ নাই, জনমানুষের সাড়া নাই, অথচ কলের মধ্যে কান দিলেই শুনি আকাশময় কত কণ্ঠের ভাষা, কত বিচিত্র গান আর কত যন্ত্রের সুর।”

স্বাধীন দেশে ১৯৫৮-য় অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো-র নাম হয় আকাশবাণী। তথ্যসম্প্রচার মন্ত্রী বিশ্বনাথ কেশকরের বয়ান অনুযায়ী, মহীশূরের করদ রাজ্যে ১৯৩৫-এর বেসরকারি বেতার কেন্দ্রের নাম থেকেই এই নাম। ১৯৩৮ সালে নলিনীকান্ত সরকার, সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীদের অনুরোধে ‘বেতারজগৎ’ পত্রিকার জন্য রবীন্দ্রনাথ লেখেন, “ধরার আঙিনা হতে ঐ শোনো / উঠিল আকাশবাণী / অমরলোকের মহিমা দিল যে মর্ত্যলোকেরে আনি!”

ওই মহাসিন্ধু

এ দেশে বেতার সম্প্রচারের দিক খোলার সঙ্কল্প নিয়ে ঠিক একশো বছর আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে ফিরেছিলেন আর এক মেধাবী বঙ্গযুবা শিশিরকুমার মিত্রও। প্যারিসে রেডিয়ো প্রযুক্তি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতার প্রযুক্তি নিয়ে পঠনপাঠনের স্নাতকোত্তর শিক্ষাক্রম চালু করতে উপাচার্য স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে চিঠি লেখেন শিশির। আশুতোষও সাধ্যমতো প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। শিশিরের রেডিয়ো ক্লাবের সৌজন্যেই সায়েন্স কলেজের ল্যাবরেটরি থেকে কলকাতায় প্রথম বেতার সম্প্রচার ১৯২৫-এ। শুরুতেই ‘ওই মহাসিন্ধুর ও পার হতে’ গেয়েছিলেন হীরেন বসু। শোনা যায়, কাশী, আগরা বা বর্মাতেও কলকাতার এই রেডিয়োর সম্প্রচার শোনা যেত।

বম্বে, কলকাতা, মাদ্রাজে বিক্ষিপ্ত বেতারচর্চার রমরমা এবং রেডিয়ো নামক যন্ত্রটির বাজারে কাটতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের বাজার থেকে তা দূরে রাখা যাবে না, বুঝেছিল ব্রিটিশ সরকারও। সেই সঙ্গে ভয় ছিল, দেশের মধ্যে বেতারকেন্দ্র না থাকলে ক্রমশ মস্কো বা বার্লিনের নানা ধরনের সম্প্রচারে ব্রিটিশ-বিরোধী প্রবণতা এ দেশে আরও জোরালো হবে। অগত্যা এ দেশেও বেতার সম্প্রচার ব্যবস্থা চালুর পক্ষে সায় দেয় তারা। ১৯২৭-এর ২৩ জুলাই বম্বে এবং তার পরে ২৭ অগস্ট কলকাতায় ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি-র রেডিয়ো স্টেশন সম্প্রচার চালু করল। কলকাতায় বেতার কেন্দ্রের আদি বাড়ি হাই কোর্টের উল্টো দিকে টেম্পল চেম্বার্স। সম্প্রচার শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তারা ১ নম্বর গারস্টিন প্লেসে সরে যায়। ১৯৫৮ সালে রেডিয়োর ‘আকাশবাণী’ নামকরণের পরই তারা ইডেনের পাশে আজকের ঠিকানায় সরে আসে।

রেডিয়ো স্টেশন না রেল স্টেশন

রেডিয়ো বাণিজ্যিক ভাবে সফল হতেও সময় লেগেছিল। খরচ কমিয়ে ব্রিটিশ সরকার বেতার ব্যবস্থার শরিক হয়।

এই পর্বে বেতারের নাম ইন্ডিয়ান স্টেট ব্রডকাস্টিং সার্ভিস বা আইসিবিএস। বেতারের প্রথম কন্ট্রোলার লায়োনেল ফিলডেন বড়লাটকে বুঝিয়ে এই গালভরা নামটিকে পাল্টে ‘অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো’ করেন। বম্বে, কলকাতার পরে ১৯৩০-এর দশক জুড়ে ধাপে ধাপে বেতার কেন্দ্র বসেছে দিল্লি, পেশোয়ার, লাহোর, মাদ্রাজ, লখনউ, তিরুচিরাপল্লি, ঢাকাতেও। সেই সঙ্গে মহীশূর, বরোদা, ঔরঙ্গাবাদ, হায়দরাবাদ, ত্রিবান্দ্রমের মতো করদ রাজ্যগুলিতেও তাদের নিজেদের চেষ্টায় বেতার কেন্দ্র বসে। কিন্তু তখনও ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্সের তুলনায় ভারতে রেডিয়োর গ্রাহক মুষ্টিমেয়। ‘বেতারজগৎ’ সম্পাদক নলিনী সরকার মশাইকে তাঁর এক বন্ধু বলেছিলেন, তাঁর বাড়িতে ফাঁকা ঘরে রেডিয়োর শব্দ শুনে বেজায় ঘাবড়ে এক পরিচারিকা ভূতের ভয়ে গৃহত্যাগ করেন।

১৯৩৬ নাগাদ কন্ট্রোলার ফিলডেন সাহেব হাওড়া স্টেশনের ট্যাক্সিচালককে রেডিয়ো স্টেশন যাওয়ার কথা বললে তিনি অবাক হয়ে কোন স্টেশন জানতে চান। মর্মাহত ফিলডেন পরে কলকাতার বেতার কেন্দ্রের সহকর্মীদের ‘তোমরা তবে করছটা কী!’ বলে বিস্তর চোটপাট করেছিলেন।

বিশ্বযুদ্ধ থেকে জরুরি অবস্থা

রেডিয়ো যন্ত্রটাকে যুগে যুগে মগজ ধোলাইয়ের যন্ত্র হিসেবে খাড়া করতে চেয়েছে শাসক। ততই সে ডানা মেলেছে একরোখা বিদ্রোহে। বছর দুয়েক আগে প্রয়াত, শ্যামবাজারের নবতিপর সুশীলকুমার চাটুজ্জেমশাই ওরফে নকুবাবুর কাছে শুনেছি, রেডিয়োর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ জুড়ে দরকার মতো ভালভ বসিয়ে কী ভাবে কলকাতার ব্ল্যাকআউটের রাতে তাঁরা টুকটুক করে সারা বিশ্বের স্টেশনে বিচরণ করতেন। ভদ্রলোকের ঘর-ভর্তি সাবেক রেডিয়োর ছড়াছড়ি। নরেন্দ্র দেব লেখেন, “…এতদিন শুনিয়েছে নানা সুর সেতারে/ কত কথা উপকথা নাটক সে বেতারে/ যুদ্ধের হাঙ্গামা শুনি ওর খবরে/ ঘুমহারা যায় কারা জীবন্ত কবরে!/ রাত জেগে বসে বসে কেউ ধরি মস্কো/ কেউ ধরি বার্লিন— সান ফ্রান্সিস কো!/ পাশাপাশি ঘাটে পাই পৃথিবীর রেডিয়ো/ ফেটে গেল ভালভ বুঝি কী মর্মভেদী ও!”

প্রশান্ত মহলানবিশকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়ে ব্রিটিশ-রাজ দেখেছিল, এ দেশের শ্রোতাদের কাছে কিন্তু অক্ষশক্তির প্রোপাগান্ডার কাছে হেরে ভূত হচ্ছে অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো। তবে বাঙালির জন্য সবচেয়ে বড় রোমাঞ্চ ছিল ঘরের ছেলে সুভাষচন্দ্রের কণ্ঠ শোনা।

১৯৪১-এর জানুয়ারিতে এলগিন রোড়ের বাড়ি থেকে তাঁর মহানিষ্ক্রমণের তেরো মাস বাদে সুভাষ যেন আজাদ হিন্দ রেডিয়োয় আকাশবাণীর মতোই অবতীর্ণ হলেন ভারতবাসীকে তার ভবিতব্যের দিশা দেখাতে। জার্মানি থেকে প্রথম সুভাষের গলা শোনা গেল। এ দেশের বেতার কেন্দ্রের তৎকালীন ‘দিস ইজ় ক্যালকাটা কলিং’ ধ্বনির আদলে যেন দেশবাসীকে এক সংগ্রামী ঐক্যের রক্তের বন্ধনে বাঁধতে চাইলেন সুভাষ। “এই শোন স্বাধীন ভারতের স্বর… আজাদ হিন্দ ডাক পাঠাচ্ছে অস্ত্র হাতে নিতে…কলিং টু আর্মস!” বিবিসি-তে এক বার সুভাষের মৃত্যুর ভুয়ো খবরও প্রচার হয়েছিল, সে বারও টোকিয়োর কাছে বিমান দুর্ঘটনায়। তাতে বিচলিত গান্ধীজি সুভাষ-জননীর কাছে তারবার্তায় শোকপ্রকাশ করেন। কিন্তু এক দিনের মধ্যে সুভাষ নিজে জার্মানি থেকে বিবিসি-র খবর খণ্ডন করে তাঁর লড়াই জারি থাকার বার্তা দেন। পরে সাবমেরিনে জাপান পৌঁছেও টোকিয়ো, সিঙ্গাপুর, রেঙ্গুন থেকে সুভাষের কণ্ঠস্বরের প্রেরণা অব্যাহত থাকে। সরাসরি স্বীকার না-করলেও ব্রিটিশ-রাজ বাস্তবিক নড়ে গিয়েছিল সেই বেতারবার্তায়। বিবিসি-তে জর্জ অরওয়েল তখন নিয়মিত লিখছেন। মুখে স্বীকার না করলেও তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রচার মোকাবিলার চেষ্টা করতেন। কলকাতা বেতারকেন্দ্রেও তখন মিত্রশক্তির সমর্থনে নিয়মিত কথিকা বলা হচ্ছে। তবে আজাদ হিন্দ ফৌজ বা সুভাষচন্দ্রের অভিযানের কথা সেখানে উচ্চারিত হত না। অনেকটা একই ভাবে ১৯৪২-এ মেদিনীপুরে বিধ্বংসী ঝড়ের খবরও এ দেশের রেডিয়ো শুনিয়েছিল ষোলো দিন বাদে। তত দিনে অন্য জেলার বাঙালিরাই জাপান রেডিয়ো মারফত ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির খুঁটিনাটি জেনেছে।

কয়েক দশক বাদে স্বাধীন দেশেও আকাশবাণীর এই নিষ্ক্রিয়তার ছবি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। জরুরি অবস্থার প্রাক্‌-পর্বে দেশব্যাপী রেল ধর্মঘটের চরম দুর্ভোগের ছায়া ছিটেফোঁটাও ছাপ ফেলেনি রেডিয়োর খবরে। আকাশবাণীর ‘সব ঠিক হ্যায়’ খবরের হঠকারিতাকে বিঁধে কশাঘাত করে আনন্দবাজারের সম্পাদকীয়, “যদিও নিজস্ব সংবাদ বিভাগ আছে, দেশময় ছড়াইয়া আছে নিজস্ব সংবাদদাতা, তবু কর্তাভজা আকাশবাণী ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ প্রচার ছাড়া আর কিছু ভাবিতে পারে না। আকাশবাণী দৈববাণীর ভান করিলেও সে সরকারি প্রচারযন্ত্র মাত্র। তাহার দেবতাদেরঅধিষ্ঠান দিল্লিতে।”

ভাবতে অবাক লাগে, এর মাত্র কয়েক বছর আগে স্রেফ বাংলা ভাষাকে হাতিয়ার করে যে শত্রুকে ঘায়েল করা যায়, তা দেখিয়েছিল এই আকাশবাণীই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে প্রণবেশ সেন-দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়দের ‘সংবাদ বিচিত্রা’ বা দিলীপ সেনগুপ্তের ‘রেডিয়ো কার্টুন’ বেতার সম্প্রচারে সৃজনশীলতার শেষ কথা হয়ে ওঠে।

রক্তে রাঙা অধ্যায়

সম্ভবত জরুরি অবস্থার দিনেই রবীন্দ্রনাথের গল্প নিয়ে একটি ভাষণ পাঠের রেকর্ডিংয়ে এসে শঙ্খ ঘোষের মনে হয়েছিল, কয়েকটি কথা না বললেই নয়। তাঁর পাঠে রবীন্দ্রনাথের ‘মেঘ ও রৌদ্র’ গল্পে শশিভূষণের জেলখানা বিষয়ক একটি উদ্ধৃতি শুনে প্রযোজক, বন্ধুপ্রতিম কবিতা সিংহের মনে হয়েছিল, সর্বনাশ! কিন্তু শঙ্খ তাঁর অবস্থানে অনড় থাকেন, ‘আপনি কিন্তু ওটা পাল্টাতে পারবেন না।’ ‘বন্ধুকে কেন বিপদে ফেলবেন!’ শুনে কবিতাকে স্মিত আশ্বাস দেন, ‘না না কিছুই হবে না আপনাদের!’

হয়ওনি। কিংবা হয়তো সরকারি নজরদারদের চশমার পুরু কাচ ভেদ করতে পারেনি রবীন্দ্র-উপমার সূক্ষ্মতা। জেলের ভিতরে-বাইরে গোটা দেশটাই জেলখানা হয়ে থাকার কথা রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে বলতেও শঙ্খ চেয়েছিলেন। এবং তা বুঝতে পারেন কবিতাও।

গঙ্গাপদ বসু এক বার গণনাট্যের প্রসঙ্গে ‘রক্তে রাঙা অধ্যায়’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। কমিউনিস্ট প্রীতির গন্ধ পেয়ে তদারকির ভারপ্রাপ্ত প্রোগ্রাম এগজ়িকিউটিভের থরহরি কম্প। ‘টিনের তলোয়ার’-এর রেকর্ডিংয়ে এসেও আকাশবাণী কর্তৃপক্ষকে ঠাট্টা করতে ছাড়েননি উৎপল দত্ত। ভরা স্টুডিয়োয় সংলাপে বেশ কয়েকটি অপশব্দ শুনিয়ে, ‘এ সব চলবে তো’ বলে উৎপল বেচারি সরকারি আধিকারিকদের জন্য রীতিমতো অস্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন।

হলদে পাখির পালক

বেতারে কোন শব্দ বলা যাবে বা যাবে না, তা নিয়ে বিধিনিষেধে আকাশবাণীর এক সময়ের প্রযোজক লীলা মজুমদারও বেশ ব্যতিব্যস্ত হয়েছেন। তখনও যৌনকর্মী শব্দটির উদ্ভব হয়নি। ‘বেশ্যা-সমস্যা’ বিষয়ে কথিকা রেকর্ড করতে আসা কল্যাণী কার্লেকরকে নীলিমা সান্যাল বোঝান, ‘বেশ্যা’ শব্দটি রেডিয়োয় বলা যাবে না। বেতারের নিয়ম-বিধিতে কোনও শব্দই আসলে তুচ্ছার্থে প্রয়োগ করা যায় না, এটা বুঝলেও লীলা মনে করতেন, কিছু নিয়মে বেশ বাড়াবাড়ি রয়েছে। তবে রেডিয়োর শৃঙ্খলা যে লেখার মধ্যে অনাবশ্যককে ছেঁটে একটা শক্ত বন্ধন এবং প্রকাশের বলিষ্ঠতা এনে দেয়, তা মুক্তকণ্ঠে বলে গেছেন লীলা। তখন গল্পদাদুর আসরে জয়ন্ত চৌধুরী ধারাবাহিক ভাবে ‘হলদে পাখির পালক’ পড়ছেন। ‘পাকদণ্ডী’-তে লীলা লিখেছেন, “শুনে অবাক হয়ে ভাবতাম আমার লেখাটাকে (হলদে পাখির পালক) ও দশ গুণ ভাল করে দিচ্ছে।… বেতারের যত দোষই থাকুক! সব সময়ে একটা সৃষ্টির হাওয়া বইত।” নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকলেও এটাই বিশ্বাস করতেন লীলা।

জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের ‘রম্যগীতি’-র মতো অসামান্য অনুষ্ঠানও বাংলা ভাষার নিশান উড়িয়েই রাগ-রাগিণী চর্চার গভীরে ডুব দিয়েছে। এবং একই সঙ্গে গোটা উপমহাদেশের সঙ্গীতভুবনের জানলা খোলা রেখে বুকে টেনেছে বহুত্বের বাণী। তবু এ দেশের ঐক্যসাধনে বা অগ্রগতির পথে এগিয়ে দিতে আকাশবাণীর ভূমিকাকে সম্মানের আসনে বসাতে কিছু দ্বিধা করে গেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ‘প্রণবেশ সেন স্মারক বক্তৃতা’য় তিনি একদা বলেন, “বেতার ভারতবাসীকে ঐক্যের মধ্যে মুক্তি দেয়নি, শাসন ও শাসক শ্রেণির প্রচারব্যবস্থাকেই বলিষ্ঠ করেছে।”

জীবনের আলো

কিছু মুহূর্ত স্বপ্নভঙ্গের! তবে তা কখনওই স্বপ্নগুলি খাটো করে না। মহিলামহলের বেলা দে লিখেছেন, প্রথম স্বাধীনতা দিবসে কলকাতা বেতারকেন্দ্র সরাসরি সম্প্রচার করে দেশবন্ধুজায়া বাসন্তীদেবীর অনুষ্ঠান। স্বামীর কথা মনে পড়ায় এবং খণ্ডিত স্বাধীনতার শোকে তিনি মোটেও আনন্দে ভাসতে পারেননি। ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকারের কথিকাটি আবার সে দিন বীর শহিদদের আত্মবলিদান বা দেশভাগের জ্বালার নামগন্ধ করেনি। কারণ, সম্ভবত বেতারের উচ্চতর কর্তৃপক্ষ তথা দেশনেতাদের প্রভাবশালী অংশ সে সব মনে রাখতে চাননি। পরে সুভাষচন্দ্র বিষয়ক কথিকার অংশ সম্পাদনা নিয়েও বিভিন্ন গুণিজনের সঙ্গে বেতার কর্তৃপক্ষর মতবিরোধ ঘটে। বরং দেশের রোজকার যাপনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পঙ্কজ মল্লিকের রবিবারের সঙ্গীত শিক্ষার আসরে দেশ এবং আকাশবাণী বার বার একাকার হয়ে গিয়েছে। কারণ স্বাধীনতা লাভের সপ্তাহেই পঙ্কজ শিখিয়েছিলেন, ‘ওরে নূতন যুগের ভোরে/ দিসনে সময় কাটিয়ে বৃথা সময় বিচার করে’ কিংবা ‘নাই নাই ভয় হবে হবে জয় / খুলে যাবে এই দ্বার’! আর গান্ধী হত্যার পরের সপ্তাহে পঙ্কজ শেখালেন, ‘বৈষ্ণব জন তো’!

অতীতে সোদপুরের গান্ধী আশ্রম থেকে তাঁর প্রার্থনাসভাও এসডি অশোক সেনের নেতৃত্বে গিয়ে রেকর্ড করেন কলকাতার বেতার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কলকাতার বেতার কেন্দ্রটিতে তাঁর কখনও পা রাখা হয়নি। এর কয়েক দিন পরেই জাতির ডাকে সাড়া নিয়ে দিল্লির ব্রডকাস্টিং হাউসের স্টুডিয়োয় আসেন গান্ধীজি। বিড়লা হাউসে তাঁর প্রার্থনাসভার আদলে নিচু তক্তপোশে সাজানো হয়েছিল বেতারের স্টুডিয়োও। বেতারযন্ত্রের আশ্চর্য শক্তি চাক্ষুষ করার পরে কুরুক্ষেত্রের উদ্বাস্তু শিবিরের ঘরহারাদের উদ্দেশে গান্ধী মিনিট কুড়ি কথা বলেন। ১২ নভেম্বরের এই দিনটিই এ দেশে ‘জনসেবা সম্প্রচার দিবস’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতের ঐতিহাসিক মধ্যরাতের স্বাধীনতার মুহূর্তটিতে শঙ্খ ঘোষের মনে হয়েছিল, “রেডিয়ো ঘিরে বসে আছি সবাই, যেন ওটাই দেশ, ওরই মধ্যে আছে সব জাদু!”

রেডিয়ো বা গণমাধ্যমের সামনে এমন মন্ত্রমুগ্ধ মুহূর্ত হয়তো এর পরেও এসেছে জাতির জীবনে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ঘোষণা, বিশেষ দিনের সংবাদ, রুদ্ধশ্বাস ক্রিকেট ফাইনালের মুহূর্ত… সঙ্কল্পে দৃঢ়মুষ্টি বা গ্লানিতে দেওয়ালে পিঠ-ঠেকা জাতি একমন একপ্রাণ হয়ে থেকেছে। আর একটি বিশেষ মুহূর্ত ১৯৪৮-এর ৩০ জানুয়ারির সেই দুঃস্বপ্ন সন্ধ্যায়। মেলভিল ডিমেলো সন্ধ্যা ছ’টায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের জন্য শ্রোতাদের অপেক্ষা করতে বললেন। স্ট্যান্ড বাই ফর গ্রেভ নিউজ়! এর পরে প্রধানমন্ত্রী নেহরুই স্টুডিয়োয় ঘোষণা করবেন দেশবাসীর জন্য সেই হৃদয়বিদারক খবর, জাতির জনকের মৃত্যুসংবাদ! আমাদের জীবনের আলো নিভে গেছে। একটি জাতির জীবনে বেতারের ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকার সেই গভীরতম মুহূর্তটিকে কি দেশ মনে রেখেছে?

তথ্যঋণ: কলকাতা বেতার, সম্পাদনা: ভবেশ দাশ; সংবাদ কথায় বেতার জগৎ: ইন্দিরা বিশ্বাস; ভারতে বেতার: সৌম্যেন বসু

অন্য বিষয়গুলি:

Akashvani All India Radio
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy