উৎসব: কলকাতার রাস্তায় ড্রাগন নাচ আর গানবাজনায় চিনা নববর্ষ উদ্যাপন। ডান দিকে, মনিকা লিউ
রাতে ঘুম হয়নি পুঁচকে মেয়েটার। বিছানায় ছটফট করতে করতে ভোরের প্রতীক্ষা। ক্যাম্পে মাংস রান্না হচ্ছে যে! রোজকার আধসেদ্ধ চালের ভাত আর লাউ-আলুর অখাদ্য ঘ্যাঁট থেকে মুক্তি। সম্ভবত এক বছর বাদে মাটনের বিস্মৃত স্বাদের হাতছানি। আলো ফুটলেই বড়-বড় দুটো ডাব্বা নিয়ে লাইন দিতে হবে বলে নিজেকে প্রস্তুত করছে দশ বছরের মনিকা।
কাঁটাতারের ঘেরাটোপে বন্দি রুক্ষ কঠিন দেশের রাঙাপ্রভাত। মানচিত্রের ভতরের এক নেই-রাজ্যের ঠিকানা। রাজস্থানের দেওলির বন্দি-শিবিরের সেই ভোরে চোখ লেগে গিয়েছিল মনিকা লিউয়ের। “ওঠ! রান্না হয়ে গিয়েছে তো!” পিঠোপিঠি ভাইটার ঠেলায় সচকিত দশ বছরের বালিকাবেলা। ভোর সাড়ে পাঁচটায় ডাব্বা হাতে ভাই-বোনে ছুটে যাওয়া। কোথায় কী! দৈত্যাকার জালায় সেই ট্যালটেলে ডালের মুখ-দর্শন। মাটনের চিহ্ন ত্রিসীমানায় নেই। মনিকা বোঝে, ডাল মে জরুর কুছ কালা হ্যায়! চোখে পড়ে পাশের উইংয়ের দুটো ঢ্যাঙাপানা চেহারা বড়-বড় দুটো টিন হাতে ক্যান্টিনের পিছনে সটকে পড়ছে। মনিকা গম্ভীর মুখে তাদের পিছু নেয়।
লোকদুটো তাঁদের কোয়ার্টারের কাছাকাছি যেতেই পথ আটকায় সাহসী শৈশব। কোথায় যাচ্ছ?
তোর কী তাতে...
মেয়ে টরটরিয়ে বলে, মাংসে আমাদেরও হক। ভালয়-ভালয় ভাগ না-দিলে লোক জড়ো করব।
এ তো মহাপাকা মেয়ে... (বলতে বলতে হার মানেন মাংসহরণকারী)
ডাব্বায় দু’হাতা নেওয়ার পরেও মনিকা বলে, ওটুকুতে হবেটা কী! আমরা সাত জন— মা-বাবা, আমি, এই ভাইটা, আরও দু’ভাই আর এক বোন।
একেবারে কোলের, দেড় বছরের ভাইটা মাংস খায়নি কখনও। তার ভাগটাও চেয়ে নেয় মনিকা।
প্রায় ছ’দশক পার করে ট্যাংরায় তাঁর সুবিশাল রেস্তরাঁ ‘বেজিং’-এর টেবিলে বসে সত্তর ছুঁই-ছুঁই নারী ঝলমলিয়ে হাসেন, “ওরা ঠিকই বুঝেছিল, আমি মহাপাকা। আ হার্ড নাট টু ক্র্যাক! আমার মা গেলেও সে দিন মাংসটা আনতে পারত না।”
২০২০-র কলকাতায় চাইনিজ় রেস্তরাঁ সাম্রাজ্যের দাপুটে অধীশ্বরী মনিকা লিউয়ের ভিতরে এখনও বেঁচে আছে ১৯৬২-র রাজস্থানের দেওলির বন্দিশিবিরের হার না-মানা একরোখা খুকি।
এখনও মনের দেওয়ালে সেই দিনগুলো। উইং থ্রি, রোল নম্বর ৮৮০। বাবা ৮৭৮, মা ৮৭৯, তার পরেই মনিকার। পাঁচটা উইংয়ের প্রথম দুটোয় কলকাতা থেকে চালান হওয়া ভারতীয় চিনা পরিবারগুলির জায়গা হয়েছিল। তিন থেকে পাঁচে কালিম্পং থেকে গুয়াহাটি, শিলং-সুদ্ধ উত্তর-পূর্ব ভারতের চিনা পরিবারগুলো। মনিকা কলকাতার বৌবাজারে জন্মালেও চৌরঙ্গির জুতোর দোকানে চাকরিটা টেকেনি বাবার। কালিম্পং হয়ে শিলংয়ে ঘাঁটি গেড়েছিল পরিবারটি। ছোটখাটো রেস্তরাঁর কারবার। অভাব থাকলেও অভিযোগ ছিল না।
’৬২-র যুদ্ধ শুরুর পর পৃথিবী পাল্টে গেল। শিলং থেকে সাত রাত আট দিনের বিভীষিকাময় রেল সফর। অসহ্য গরমে, তেষ্টায়, এক বেলা খেয়ে কী ভাবে রেলবোঝাই গরুছাগলের মতো মনিকারা এসে পড়েন রাজস্থানের কাঁটাতার-ঘেরা জগতে।
ঘেরাটোপের এই জগৎ ঘিরে কয়েক দশক ধরে নৈঃশব্দ্যই ভারী হয়েছে। গুপ্তচর সন্দেহে এই ভূখণ্ডের কয়েক হাজার ছাপোষা চিনার জীবন তছনছ হয় যুদ্ধের হাওয়ায়। সাধারণ ছুতোর মিস্ত্রি, দাঁতের ডাক্তার, জুতোর দোকান, বিউটি পার্লার কি লন্ড্রি কারবারি, কত পরিবারের কোমর ভাঙে চিরতরে। কত জন মারা গিয়েছেন। কত পরিবারে চিরবিচ্ছেদ। ভাগ্যবানরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। অনেক পরে টরন্টো বা ক্যালিফোর্নিয়ায় দেশান্তরী হয়ে কেউ কেউ তাঁদের রাগ, ঘেন্না উগরে দিয়েছেন। অথচ লোকগুলো এখনও নিজেদের মধ্যে হিন্দিতে বকবক করে, রফি-হেমন্তের গান গায় আর জিলিপি-শিঙাড়া পেলে ডায়াবিটিসকে ভুলে যায়। এ দেশে টিকে থাকা চিনাদেরও ইদানীং ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। আজকের বৌবাজারের তরুণ, পেশাদার গায়ক, মুখে ঝরঝরে বাংলার খই-ফোটা ফ্রান্সিস ইয়ি লেপচা গালওয়ানে চিনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিয়মিত ফেসবুকে পোস্ট করেন। তবু যুক্তিহীন বিদ্বেষের জবাবে তিনিও সে দিন লিখেছেন, “আমাদের রান্না চাউমিন-চিলি চিকেনের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক নেই।” ফ্রান্সিস ইয়ি লেপচার ‘লেপচা’ পদবীর মধ্যেও লুকিয়ে ভারতীয় চিনাদের ইতিহাসের করুণ বিষাদগাথা। ফ্রান্সিসের ঠাকুরদা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে চিন থেকে আসেন। পারিবারিক পদবী ‘ইয়ি’। বিয়ে করেছিলেন এক লেপচা মহিলাকে। ভারত-চিন যুদ্ধের সময়ে দেওলির বন্দিশিবিরে চালান হওয়া ঠেকাতেই শ্বশুরবাড়ির পদবী নেন। কলকাতা ছেড়ে ডুয়ার্সের গরুবাথানের সংসারে তখন নিজের চিনা পরিচয়টাই ঢেকে ফেলছেন।
তবু ফ্রান্সিসের পরিবারের গায়েও ‘দেওলিওয়ালা’ তকমা সেঁটে। “আমার মা ডরিসও ছোটবেলায় দেওলিতে থেকেছেন!”
ফ্রান্সিসের মা আর মনিকা দুজনেই প্রায় সমবয়সি। তবে শিলং জেল, দেওলি ক্যাম্প, তার পর অসমের নগাঁও জেল মিলে মনিকার জীবন জুড়ে সাড়ে পাঁচটি বছর। গত তিন দশকে এ শহরের আধ ডজন রেস্তরাঁ ‘কিমলিং’, ‘বেজিং’, দুটি শাখায় ‘ম্যান্ডারিন’, ‘টুংফং’ আর নবাগত ‘কিমলি’-র মালকিন মনিকা লিউ এই বয়সেও কারখানার শ্রমিকের মতো অক্লান্ত খাটেন। ভোর পাঁচটা থেকে নিজের নুডলস কারখানায় সব ক’টা রেস্তরাঁর জন্য স্বহস্তে মেশিনে ১০০ কেজি নুডলস তৈরি থেকে দিনের শুরু। রান্নাঘরে হাত লাগানো, গুচ্ছের চেক সই কিংবা শর্টসের পকেট থেকে বার করা নগদের হিসেব মেটানো চলে নিটোল ছন্দে। কর্মচারীদের হিন্দি-বাংলায় বকুনি যেন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজ়িক! মনিকা হাসেন, দেওলির ক্যাম্প থেকেই খাটনিতে ট্রেনিং। সকালে সাত জনের পরিবারের জন্য চায়ের সঙ্গে সাকুল্যে দশটা রুটি বরাদ্দ। নিজেরা হেঁশেলে ভলান্টিয়ারগিরি করলে দুটো রুটি একস্ট্রা জুটবে।
তাই সাতসকালে নিজেই রুটি বেলত বালিকা। আটার রুটি আর আলুর তরকারি যত ভালই হোক, এখনও দু’চক্ষে দেখতে পারেন না মনিকা। সে দিন বৌমা ডালপুরি ভেজেছেন। শাশুড়ি অগ্নিশর্মা, “দেওলিতে অখাদ্য আলুর তরকারি আর একঘেয়ে আটার রুটি খেয়ে জিভে চড়া পড়ে গিয়েছে!”
দেওলির সেই দিনগুলোয় স্কুল-কলেজহীন নিরন্তর ছুটি। বাইরের জগৎ বলতে কাঁটাতারের ধারে ভেসে আসা সিনেমাহলের কলরোল। কাঁটাতারের ও পার থেকেই গান, ডায়লগ সব স্পষ্ট শোনা যেত।
‘৬৫র ভারত-পাক যুদ্ধের সময়ে সন্দেহভাজন পাকিস্তানিদেরও দেওলিতে দেখেছিলেন চিনারা।
পরের ঠিকানা, নগাঁওয়ের জেল। মনিকার ইংরেজি জ্ঞান তখন ক’অক্ষর গোমাংস। তবু না-বুঝেই নড়বড়ে হাতের লেখায় কোনও এক জনের সাহায্যে অসমের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ফেলল মেয়েটা। অনেকেই বকেছিল। তবু মনিকা নির্বিকার, সরকার তো ভুলেই গিয়েছে! যদি মনে পড়ে! কিশোরীর কাঁচা হাতের লেখা চিঠিতেই মিলল মুক্তির চাবিকাঠি।
‘‘মিথ্যে বলব না! সুযোগ পেলে আমিও কানাডা চলে যেতাম।”— বলছিলেন মনিকা। নার্স হওয়ার খুব ইচ্ছে তখন। কিন্তু শিলংয়ে ইস্কুলের গেটে পর্ক মোমো বিক্রি করে মায়ের রোজগার আর বাবার ধার-করা জুতোর দোকানের আয়ে কি আর বিদেশ পাড়ি দেওয়া সম্ভব!
তবে জেল থেকে মুক্তির পরে শিলংয়ের প্রথম আশ্রয়দাতা জেনি লি-র ঋণ ভুলতে পারেন না মনিকা। তখন শিলংয়ে তুলনায় সম্পন্ন চিনা পরিবারগুলির বাড়িতে ভাগাভাগি করে আশ্রিত মনিকাদের পরিবার। জেনি নিজেও তার দু’বছর আগে দেওলি থেকে ছাড়া পান।
এখন অশীতিপর বৃদ্ধা, কলকাতার চিনে সমাজে ‘তান নুই আন্টি’ বলে পরিচিত সেই জেনি। ট্যাংরায় তাঁদের পারিবারিক সস কারখানার পাশেই থাকেন জেনির কন্যা অ্যান লি।
অ্যানের জন্ম দেওলি ক্যাম্পেই। বন্দি শিবিরের সেই দিনগুলো আজও নানা ভাবে বয়ে নিয়ে চলেছেন কলকাতার চিনারা। সল্টলেকের ‘গোল্ডেন সিটি’ রেস্তরাঁর কর্তা জন লিয়াও দেওলিতে ছোট্ট মনিকার খেলার সঙ্গী ছিলেন। বলছিলেন, “তখনও তো ভারত গণতন্ত্রের শিশু অবস্থায়। তাই কিছু ঘটনা ঘটেছে।” এ বার বললেন, “দেওলি আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়েছে। কৃচ্ছ্রসাধন, দায়বদ্ধতা। সব থেকে বড় কথা, ওই দিনগুলো দেখেছি বলেই জীবনে একটা ব্যালেন্স রাখতে পারি।”
মনিকা লিউ সব পারেন, হারতে পারেন না। কানাডায় নার্সগিরি করতে যাওয়ার বদলে জীবন তাঁকে ফের টেনে আনল জন্মভূমি কলকাতায়। বাবার সিদ্ধান্তে বাইশ বছরের বড় বর লিউয়ের সঙ্গে দাম্পত্যজীবন শুরু হল ট্যাংরায়। বরেদের দশ ভাইয়ের পারিবারিক ট্যানারি। মনিকা ট্যানারির কাজও সব জানেন। সেই সঙ্গে ল্যান্সডাউনে খুললেন নিজের বিউটি পার্লার। তার পরে ধাঁ করে স্কুটার চালিয়ে বাড়ি।
১৯৯১ সাল নাগাদ এক আত্মীয়ের জমি কিনে ‘কিমলিং’ রেস্তরাঁর পত্তনের পরে বর, ছেলেমেয়ে সকলকেই নিজের পক্ষপুটে আগলে রেখেছেন। বছর পনেরো আগে যথেষ্ট আয় হয়েছে ভেবে অবসর নেবেন ঠিক করেছিলেন। কিন্তু দু’সপ্তাহ বিশ্রামেই হাঁপিয়ে ওঠেন। মনিকা বলেন, “দেওলির বাঁচার লড়াই আমার ভিতরে একটা সিক্সথ সেন্স গড়ে দিয়েছে। রেস্তরাঁয় কোথায় কী ঘটছে, এক জায়গায় বসেই আমি সবার আগে টের পাই।”
কিছু ঘা আপাত ভাবে শুকোলেও মিলিয়ে যায় না। কয়েক বছর আগে টরন্টো থেকে সেই বিক্ষত হৃদয়েই এ শহরে এসেছিলেন মিং তাং শে। তাঁরও কলকাতায় জন্ম। বৃদ্ধ ২০০৪-এ টরন্টোয় গড়ে ওঠা ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া দেওলি ক্যাম্প ইন্টার্নিজ়’-এর শরিক।
তবে ট্যাংরা-টেরিটিতে ছড়িয়ে থাকা হাজার দুয়েক চিনারা আর হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে চান না। ১৯৪৭-এর পরে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁরা নাগরিকত্ব পেয়েছেন জন্মসূত্রেই। তারও আগে কলকাতায় জন্মানো ভারতীয় চিনারা অনেকেই রাষ্ট্রহীন অ-নাগরিক হয়েই জীবনটা কাটিয়ে দিলেন। বো ব্যারাকের পর্ক রোস্ট বিশারদ ‘আঙ্কল রিচার্ড’ তথা হো ইউয়ান ফু এই সে-দিনও ভারতনিবাসী ‘ব্রিটিশ সাবজেক্ট’ ছিলেন। ঠিক দুটো ক্রিসমাস আগে ‘ওভারসিজ় ইন্ডিয়ান সিটিজ়েন’-এর তকমায় উন্নীত হওয়ার মুহূর্তটি তাঁর কাছে ছিল সত্যি বড়দিন।
নিজের রেস্তরাঁ রমরমিয়ে চললেও ট্যাংরার সাবেক সিমেট্রি, শহরের অপরূপ চিনা মন্দিরগুলোর ভবিষ্যৎ ভেবে যন্ত্রণাবিদ্ধ হন মনিকা। মন খারাপ হলে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে যান তিনি। প্রতি চাইনিজ় নিউ ইয়ারের পরে একলা দক্ষিণেশ্বরে মা কালীর কাছে যাওয়া মনিকার পুরনো অভ্যাস। পোউচং সস কারখানার কর্ণধার ডমিনিক লি কানাডায় থাকতে না পেরে কলকাতায় ফিরে এসেছেন। ফ্রান্সিসের মতো কয়েক জন আধা বাঙালি বলেন, অন্য কোথাও গিয়ে মরতে পারব না!
‘দেশপ্রেমে’ চিনে রেস্তরাঁয় মদের স্টক লুঠপাট হচ্ছে ইদানীং। শহরের নানা সংস্থায় চিনা দোভাষী সরবরাহের কারবারি বা চিনে উইগ রফতানিকারী খুদে ব্যবসায়ীদের সাড়ে সর্বনাশ! ভবানীপুরের গোবিন্দ বসু লেনের তরুণী বধূ স্টেফানি ওরফে হো ইয়োক হো এই সময়েই দ্বিতীয় সন্তানের আসার প্রহর গুনছেন। তাঁর বর অভ্রজিৎ চৌধুরী চিনা মার্শাল আর্ট উ শু-র রেড স্যাশজয়ী, শহরে ড্রাগন বোট উৎসবের এক প্রধান উদ্যোক্তা। বো ব্যারাকের মেয়ে ইয়োক হো এবং অভ্রর প্রথম কন্যা একরত্তি আরিয়ানা মেইলিং চৌধুরী। মেইলিং চিনের প্রিয় ফুল, প্লাম ব্লসম। অবিশ্বাসের কাঁটায় বেঁধা দুর্দিনেও ফুল-ফোটা বসন্তের অপেক্ষা জারি রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy