Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Rabindranath Tagore

তাঁর শেষ দিনগুলি

মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে দারোয়ানের পেট ব্যথার খোঁজ। কুকুর-চড়াইদের ভাবনা। শেষ বার শান্তিনিকেতন ছেড়ে যাওয়ার সময় চোখে রুমাল চাপা দেওয়া। শেষ দিকে সংশয়ে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ নিজেও, আর কি ফেরা হবে শান্তিনিকেতনে! এর কয়েক দিন পরেই ২২ শ্রাবণ। সুরজিৎ ধর

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২০ ০০:০৬
Share: Save:

মৃত্যু সম্পর্কে নির্মলকুমারী মহলানবিশকে রবীন্দ্রনাথ প্রায়ই বলতেন, ‘‘মৃত্যু না থাকলে জীবনের কোন মানে নেই। আর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে জীবনকে না দেখলে অমৃতের সন্ধান মেলে না। এই জীবন মরণের খেলা দিয়েই জগৎ সত্য হয়ে উঠেছে।’’ জীবনে তিনি বহু প্রিয়জনের মৃত্যু দেখেছেন, তাই হয়তো দৃপ্ত স্বরে বলতে পেরেছিলেন, ‘করি না ভয় তোমারি জয় গাহিয়া যাব চলিয়া, দাঁড়াবো আসি তব অমৃত দুয়ারে।’ জীবনের শেষ লগ্নে রোগশয্যায়, অশক্ত

শরীরে অসুস্থতার কথা একেবারেই বলতে চাননি। তাঁর তখন খুব ইচ্ছে হত নিজের হাতে কলম নিয়ে লিখতে। খাতা নিয়ে লিখতে শুরু করলে, একটু পরেই হাত কেঁপে পেশি শিথিল হয়ে পড়ত। সে সময় তিনি মুখে মুখে বলে যেতেন, তাঁর লিপিকার সুধীরচন্দ্র কর লিখে নিতেন। ‘তিনসঙ্গী’ বইয়ের ‘রবিবার’ গল্পটি ছিল প্রথম মুখে বলে লেখানো। শান্তিনিকেতনে কবির সঙ্গে থেকে অস্তগামী রবির দিনলিপি তিনি ১৩৪৮-এর অগ্রহায়ণে ‘প্রবাসী’তে লিখে গিয়েছিলেন। মৃত্যু সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের ধারণা সম্বন্ধে সুধীরবাবু লেখেন, ‘‘কোনদিনও তিনি মৃত্যুপথের বীভৎস্যতাকে কিংবা তার অনিশ্চয় ভয়কে মনে আমল দেননি। উপরন্তু জীবনের প্রথম থেকেই দেখি

মৃত্যুর নিবিড় উপলব্ধি তাঁর কাব্যে একটি বিশেষ ধারায় নানা বাণীতে প্রকাশ পেয়েছে।’’

প্রথম জীবনে তিনি ‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে’ বলে শুরু করলেও মধ্য জীবনে ‘বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি সে আমার নয়’ এ কথাও ঘোষণা করেন। শেষ জীবনে রোগশয্যায় যে ক’জন তাঁর সঙ্গে থাকতেন, তাঁদের সঙ্গে রীতিমতো হাসি-ঠাট্টা করতেন। গভীর আগ্রহ ছিল আশ্রমিক অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের অতিথিদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার। কিন্তু শরীর একেবারেই ভেঙে পড়ায় রোগশয্যায় একেবারেই ঘরবন্দি। সেখানেই এক দিন চিনের অতিথি তাই-চি-তাও’কে ডেকে এনে আলাপ করলেন। ইতিপূর্বে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মিস র‌্যাথবোন ভারতীয় নেতাদের স্বাধীনতার দাবিকে ব্রিটেনের প্রতি অকৃতজ্ঞতা বলে, জওহরলাল-সহ অন্যান্য নেতাদের নিন্দা করে প্রবন্ধ লিখেছিলেন। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে কবি তার উত্তরে যে জ্বলন্ত বিবৃতি লিখেছিলেন, সেটাই ছিল তাঁর সর্বশেষ বিবৃতি।

তাঁর শুশ্রূষাকারীদের ভার লাঘবের জন্য আর শারীরিক যন্ত্রণা ঢাকার জন্য, এ সময় নানা রকমের মজাদার ছড়া সকলকে শুনিয়ে পরিবেশ হালকা করতে চাইতেন। ৪/১২/১৯৪০ তারিখে তাঁর সেবারতা পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘ডাবও ভালো, ঘোলও ভালো/ ভালো সজনে ডাঁটা,/ বৌমা বলেন ভালো নহে / শুধু সিঙ্গি মাছের কাঁটা।’’ আর নাতনিকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘‘ঘড়ি ধরা নিদ্রা আমার/ নিয়ম ঘেরা জাগা/ একটুকু তার সীমার পারেই / আছে তোমার রাগা।/ কি কব আর রবি ঠাকুর / ভয়ে তরস্ত/ এত বড় মানুষ ছোট্ট/ হাতের করস্ত।’’

রোগশয্যায় বিশ্বকবি তখন চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ। তাঁর গভীর ঘুমের সময় সকলে তটস্থ হয়ে দূর থেকে দেখে, শ্বাস-প্রশ্বাস যথাযথ হচ্ছে কি না। ফিসফিস করে খবর চালাচালি হতে থাকে। বেশির ভাগ সময় সোফায় আচ্ছন্ন ভাবে দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকেন। এক সময় নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। এক দিন রাত বারোটার পর তন্দ্রা ভেঙে গেলে জানতে চান, ‘‘দারোয়ানের যেন পেটে ব্যথা হয়েছিল। কেমন আছে সে?’’ কোনও দিন কুকুরটাকে খাবার দিয়ে আদর করতেন। কৌতূহল নিয়ে দেখতেন চড়ুইটাকে। তাদের নিয়ে তাঁর অজস্র প্রশ্ন। মৃত্যুভয় তাঁকে কখনও কাবু করতে পারেনি। এক দিন মজা করে তাঁকে বলা হয়েছিল, বুড়ো বয়সে সবাই ঠাকুরদেবতার নাম জপে, আর আপনি পশুপাখি লোকজন নিয়ে হাসি গল্প করছেন। লোকে কী বলবে আপনাকে? কবি আরও মজা পেয়ে ছদ্মগাম্ভীর্যে বললেন, ‘‘সত্যিই তো লোকে কী বলবে!’’

রোগশয্যায় পা ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারেন না। সবাই বলে বিশ্রাম নিতে। নাতনি ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়াতে চায়। সবার পীড়াপীড়িতে কিছু ক্ষণ ঘুমের ভান করেন। রাত তিনটের সময় চিরদিনের অভ্যেসমতো লিখতে চান। সবাই বলে, এখনও ওঠার সময় হয়নি। তাঁর বিশ্বাস হয় না— ‘‘নিশ্চয়ই আমাকে তোরা ফাঁকি দিচ্ছিস।’’ এরই মধ্যে খাতায় লেখা ভরে ওঠে। এ রকম শয্যাশায়ী অবস্থায় এক দিন ‘প্রবাসী’ থেকে লেখা আছে কি না জানতে চাওয়া হলে, কবি সেই মজার ছড়াগুলি দিয়ে বললেন, ‘‘তোমরা তো আমার যা পাও ঠেসে ভরে দাও প্রবাসীতে। দাও নিয়ে এগুলোও।’’ যিনি লেখা আনতে গিয়েছিলেন, তিনি এই নতুন ধরনের মজার ছড়া পেয়ে তো দারুণ খুশি। রবীন্দ্রনাথ অবাক হয়ে বললেন, ‘‘আরে ঠাট্টা করে বললুম তোমাকে। ছেলেমানুষি এই লেখাগুলো বের হতে পারে না।’’ অনেক কষ্টে কবির কাছ থেকে অনুমতি আদায় করে, সবার রস গ্রহণের সুবিধার জন্য প্রসঙ্গ উল্লেখ করে একটু লিখে দেওয়ার অনুরোধ করলে, তিনি সকৌতুকে বলে ওঠেন ‘‘তুলো ধুনতে গেলে পরে, কতকটা সেই তুলো/ লেপের মধ্যে প্রবেশ করে, কতক ঢাকে ধুলো।’’

দুর্বল শরীরে টানা কাজ করতে পারেন না। কপালের শিরায় ফুটে ওঠে শীর্ণতা। দৃষ্টি ক্ষীণ। শ্রবণশক্তিও। দু’-তিন জন মেয়ে পালা করে, তাঁর ফরমায়েশি গানগুলো গায়। তাই শুনে বলেন, ‘‘ওরে গানটা ভালো করে গা তো। সিন্ধুপারে চাঁদ তো বুঝি আমার জন্য আর উঠবে না।’’ শান্তিনিকেতন ছেড়ে যাওয়ার সময় ভুবনডাঙার রাস্তার ধারে নতুন পাওয়ার হাউস দেখে তিনি নাতনি নন্দিতাকে ঠাট্টা করে বলেছিলেন ‘‘পুরনো আলো চললো, আসবে বুঝি এবার তোদের নতুন আলো।’’ উদয়নের দোতলা থেকে নামার পর তার প্রিয় ‘বাঙাল’ ক্ষিতিমোহন সেনকে বলেন, ‘‘একমাস পরে ফিরবো। দেখো ছড়ার বইটা যেন ছাপানো শেষ হয়ে থাকে।’’ প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় ‘রবীন্দ্রজীবনকথা’তে লেখেন, ‘‘শান্তিনিকেতনের সঙ্গে সত্তর বৎসরের স্মৃতিজড়িত; কবি কি বুঝতে পেরেছিলেন এই তাঁর শেষ যাত্রা? যাবার সময় চোখে রুমাল দিচ্ছেন দেখা গেল।’’

জোড়াসাঁকোয় অসুস্থ কবিকে সারা ক্ষণ দেখাশোনা করতেন প্রশান্ত মহলানবিশের স্ত্রী নির্মলকুমারী মহলানবিশ (রানী)। কবি তাঁকে মজা করে বলতেন ‘হেডনার্স’। কবির শেষ দিনগুলির রোজনামচা লিখে গেছেন ‘বাইশে শ্রাবণ’ বইটিতে। শ্রীমতি মহলানবিশের কোথাও যাওয়ার কথা উঠলেই কবি হুমকি দেন ‘‘শেষ পর্যন্ত এমন একটা অসুখ করবো, তখন দেখি আমার হেডনার্স কি করে যায়।’’ কবির অপারেশন জোড়াসাঁকোয় হবে বলে ঝকঝকে করে পরিষ্কার করা হয়েছে। ডাক্তার সত্যেন্দ্রনাথ রায় গ্লুকোজ় ইনজেকশন দেওয়ার পর ম্যালেরিয়া রোগীর মতো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এল। পরের দিন ইনজেকশনের এই প্রতিক্রিয়া কেটে যাওয়ার পর বেশ হাসিমুখে রানী মহলানবিশকে বললেন, ‘‘জানো আজও আর একটা কবিতা হয়েছে সকালে। এ কী পাগলামি বল তো? প্রত্যেকবারই ভাবি এই বুঝি শেষ, কিন্তু তারপরেই দেখি আবার একটা বেরোয়। এ লোকটাকে নিয়ে কি করা যাবে?’’ লেখাটি ছিল ‘প্রথম দিনের সূর্য’ নামে বিখ্যাত কবিতাটি।

জীবনের গভীর কষ্টের মধ্যেই তাঁর লেখনী যেন আরও গতিময় হয়ে উঠেছে। তিনিও বলেছিলেন ‘‘জীবনের গভীর দুঃখের সময়ই দেখি লেখা আপনি সহজে আসে। মন বোধহয় নিজের রচনা শক্তির ভিতরে ছুটি পেতে চায়।’’ একমাত্র নাতি নীতীন্দ্রনাথের মৃত্যুর সংবাদ আসায় অনেকে বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠান বাতিলের কথা বললে তিনি রাজি হননি। এ সম্পর্কে মেয়ে মীরাকে লেখেন, ‘‘নিতুকে খুব ভালবাসতুম, তাছাড়া তোর কথা ভেবে প্রচণ্ড দুঃখ চেপে বসেছিল বুকের মধ্যে। কিন্তু সর্বলোকের সামনে নিজের গভীরতম দুঃখকে ক্ষুদ্র করতে লজ্জা করে। ক্ষুদ্র হয় যখন সেই শোক সহজ জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।’’ এই কারণেই বোধহয় নিজের শারীরিক ও মানসিক কষ্ট প্রকাশ করতে

এত কুণ্ঠা। অপারেশনের দিনটি তাঁর কাছে চেপে রাখা হয়েছিল, কিন্তু কবিতার সঙ্গে যাঁর নিরন্তর যাপন, সেই ১৯৪১ সালের ৩০ জুলাইয়ে রচনা করেন তাঁর শেষ কবিতাটি রানী চন্দের কলম ধরে। ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি/ বিচিত্র ছলনা জালে হে ছলনাময়ী’। আর সকাল সাড়ে ন’টায় শেষ তিনটি লাইন রানী চন্দকে লিখে নিতে বলেছিলেন, ‘‘সকালবেলার কবিতাটার সঙ্গে জুড়ে দিস।’’ তার পর অপারেশনের কথা শুনে রানীকে বললেন সকালের কবিতাটা পড়ে শোনাতে। তিনি কবির কানের কাছে জোরে কবিতাটি আবৃত্তি করলে, তা শোনার পর কবি বললেন ‘‘কিছু গোলমাল আছে, তা থাক— ডাক্তাররা তো বলেছে অপারেশনের পরে মাথাটা আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে। ভালো হয়ে পরে ওটা মেজে ঘষে দেবো।’’

অস্ত্রোপচারের পরে প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিল। তা-ও অতিক্লান্ত শরীরে শয্যার পাশে নির্মলকুমারীর উদ্বিগ্ন মুখ দেখে ‘হাঃ’ করে চেঁচালে শ্রীমতী মহলানবীশ হেসে ফেলেন। কবি তৎক্ষণাৎ বলে ওঠেন ‘‘এই তো একটু হাসো। তা না গম্ভীর মুখে করে এসে দাঁড়ালেন। এতো গম্ভীর কেন?’’ এর পরে ঘনঘন হিক্কা কবিকে বিপর্যস্ত করে। তখন দেশীয় টোটকা মিছরি এলাচগুঁড়ো বারকয়েক দেওয়ার পর কিছুটা কমলে বললেন, ‘‘আঃ বাঁচলুম এই জন্যই তো হেডনার্স বলি।’’ অবশেষে এল ২২ শ্রাবণ রাখী পূর্ণিমার দিন। কবির মুখ পুব দিক করে রাখা। অস্তমিত রবির প্রাক্‌মুহূর্ত। আগের রাতে চিনা ভবনের অধ্যাপককে কবির খাটের পাশে অ্যাম্বারের জপমালা নিয়ে জপ করতে দেখার পর থেকেই সে ঘরে ভগবানের নাম ধ্বনিত হয়। অমিতা দেবী কানের কাছে ‘শান্তম্‌ শিবম্‌ অদ্বৈতম্’ মন্ত্র আর বিধুশেখর শাস্ত্রী পায়ের কাছে মাটিতে বসে ‘ওঁ পিতা নোঽসি’ মন্ত্রপাঠ শুরু করলেন। শেষ রাত্রি থেকেই ব্রহ্মসঙ্গীত শুরু হয়। মধ্যাহ্নের ঠিক শেষ মুহূর্তের আগে ডান হাতখানা কাঁপতে কাঁপতে উপরে তুলে কপালে ঠেকাতেই হাত পড়ে গেল। অস্তমিত হলেন কবি রবি।

কবির একান্তই ইচ্ছা ছিল কলকাতার উন্মত্ত কোলাহলের মধ্যে ‘জয় বিশ্বকবি কি জয়, জয় রবীন্দ্রনাথের জয়, বন্দেমাতরম্’ এ সব জয়ধ্বনির মধ্যে শেষযাত্রা না করে, শান্তিনিকেতনের উদার মাঠে উন্মুক্ত আকাশের তলায় স্তব্ধ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে। সে ইচ্ছা পূরণ করতে পারতেন যাঁরা, সেই রথীন্দ্রনাথ তখন শোকে মুহ্যমান, প্রশান্ত মহলানবিশ অসুস্থ শরীরে শয্যাশায়ী। শান্তিনিকেতনের ছাত্র প্রদ্যোতকুমার সেনও সেই জনতাকে রাজি করাতে পারেননি। সবাই বলছে, শান্তিনিকেতনের নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এখানেই সব আয়োজন হয়ে গিয়েছে। শ্রীমতী মহলানবিশ জানান, বেলা তিনটের সময় এক দল লোক বরবেশী কবিকে তুলে নিয়ে গেল। সেই মিছিলে যথারীতি গর্জিত হল ‘জয় বিশ্বকবির জয়, জয় রবীন্দ্রনাথের জয়, বন্দেমাতরম্‌।’

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindranath Tagore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy