নদী তাকে আলিঙ্গন করেছিল। বিস্ফোরণে গুঁড়িয়ে যাওয়া চোয়াল, তরলে বুজে আসা ফুসফুস, দু’সপ্তাহেরও বেশি অনাহার নিয়ে সে এগোচ্ছিল নিশ্চিত পরিণতির দিকে। বুঝতে পেরেছিল, জলসমাধিতে যাওয়ার সময় হয়েছে।
জলসমাধি শব্দটাই ব্যবহার করেছেন কেরালার বন প্রশাসক মোহন কৃষ্ণণ, গর্ভিণী হাতিটির মৃত্যুমুহূর্তের অভিঘাত বর্ণনার সময়। প্রশ্ন জাগতে পারে, আমরা কি একটু বেশি মানুষী বোধে জড়িয়ে নিচ্ছি এই প্রাণীটিকে? অ্যানথ্রোপমর্ফিজ়মের ফাঁদ যে পশু-আচরণ সংক্রান্ত যুক্তিসিদ্ধ অনুসন্ধানের গোড়ালি কামড়ে ধরতে পারে, এ বিষয়ে বহু জ্ঞানী বহু বার সরব হয়েছেন। হাতির কি মৃত্যুবোধ আছে? মন, আত্মচেতনা আছে কি তার?
গত পঞ্চাশ বছরের নিরীক্ষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে, যে সব মনোবৃত্তির জন্য মানুষকে মানুষ বলি, অথবা যা না থাকার জন্য মানুষকেই বলি অমানুষ, তার প্রায় প্রতিটি রয়েছে হাতির মধ্যে। আছে অন্য বহু প্রাণীরও। মানুষের সমকক্ষ হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতায় এরা কেউ নেই, হাতিরাও নয়, কিন্তু মানুষকে তার স্বেচ্ছানির্মিত একমেবাদ্বিতীয়ম বোধটির ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি দিতে হয়তো তারা সহায়ক হতে পারে।
হাতিরা মৃত্যুর মুখ চেনে। আফ্রিকায় নিয়মিত পরিকল্পিত ভাবে হাতি নিধন করে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। ছোট প্লেন বা হেলিকপ্টারের সাহায্যে তাদের খেদিয়ে একত্রে এনে গুলি করা হয়। এমনও দৃষ্টান্ত আছে, কোনও অরণ্যে যখন হাতি শিকার করা হচ্ছে, তার থেকে বিপুল দূরত্বে থাকা অন্য এক অরণ্যের হাতিরা সন্ত্রস্ত হয়ে সরে গিয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো অভিমুখে প্রান্তঘেঁষা এলাকায়। কেমন করে তারা বুঝল ওখানে নিধনযজ্ঞ চলেছে?
মুমূর্ষু হাতিরাই তা জানান দিয়েছে। হাতিরা নিজেদের মধ্যে বহু দূর থেকে সংযোগ রক্ষা করতে পারে ইনফ্রাসোনিক শব্দের সাহায্যে। প্রতি সেকেন্ডে ন্যূনতম যতগুলো শব্দতরঙ্গ না উঠলে আমরা কানে শুনি না— আনুমানিক কুড়ি— এই শব্দের কম্পাঙ্ক তার থেকে কম। কিন্তু জোরালো। তা বহু কিলোমিটার যেতে পারে। ঘাতকের অজান্তেই তাদের কীর্তি জেনে যাচ্ছিল অন্য হাতিরা।
আফ্রিকায় দু’টো আর ভারতের একটা, মোট তিনটে প্রজাতির হাতি আছে পৃথিবীতে (সম্ভবত আছে আরও দু’টি, যা নিয়ে মতানৈক্য প্রবল)। ৩০ লক্ষ বছরেরও বেশি সময় আগে ভারতীয় হাতির প্রজাতিধারাটি অপর শাখা থেকে আলাদা হয়ে গেছে। তবু ইন্দ্রিয়ক্ষমতা, শারীরবৃত্তি ও আচরণে এরা যে অনেকটাই সমতুল তা প্রকাশ পেয়েছে ভারতীয় হাতি নিয়ে গবেষণায়। ভেলিয়ার হাতিটি (শেষ আশ্রয় দেওয়া নদীটির নামে এই নামাঙ্কন) কি তার মৃত্যু আসন্ন বুঝতে পেরে আহত হওয়ার পর সরে গিয়েছিল দল থেকে, এবং নিশ্চুপ থেকেছিল?
যদি বার্তা পেত দলটি, কী করতে পারত? যূথের কারও মৃত্যু প্রত্যক্ষ করতে থাকা হাতির দলের অনেক রকম আচরণ দেখা গেছে। সিংহের হাতে প্রাণ দেওয়া একটা হাতির বাচ্চাকে বহু দূর থেকে ঘিরে রেখে দেখছিল হাতির দল। ক্রমশ আরও বিভিন্ন দলের বিপুল সংখ্যক হাতি জড়ো হয় সেখানে। সিংহ পরিবার ভুক্তাবশেষ ফেলে রেখে চলে গেলে তারা এগিয়ে আসে। বহু ক্ষণ ঘিরে থাকে, মরদেহ স্পর্শ করে শুঁড় দিয়ে, তার গায়ের ওপর এনে রাখে পাতা কাঠি মাটি, যেন সমাধিস্থ করার চেষ্টা।
হাতিরা হাতির দেহাবশেষ হিসেবে পুরনো হাড়গোড়ও চিনতে পারে। নতুন কোথাও হাড়গোড় পড়ে থাকতে দেখলে তারা থমকে যায়, বহু ক্ষণ সেখানে কাটায়, হাড়গুলো নেড়েচেড়ে দেখতে থাকে। এ এতই সাধারণ একটা আচরণ যে, ফোটোগ্রাফাররাও কোথাও থেকে হাতির হাড়গোড় কুড়িয়ে এনে সুবিধে মতো জায়গায় রেখে অপেক্ষা করেন, ছবি তোলার প্রিয় ভঙ্গিটি পেতে।
হাতির শরীরের স্থূলত্বকে তার বুদ্ধিবৃত্তিতে আরোপ করে আমরা যে বরাবর নিজেদের স্থূলত্বকেই জাহির করছি, এ কথা অজস্র গবেষকের কাজে প্রমাণিত। আলাদা উল্লেখ করা না গেলেও ইয়েন ডগলাস-হ্যামিলটন, সিনথিয়া মস, রামন সুকুমার, জয়েস পুল প্রমুখ গবেষক যে তথ্যসম্ভার জড়ো করেছেন, তাতে হাতিদের প্রকৃতি এবং তাদের সঙ্গে নিজের সম্পর্কটি নতুন করে পর্যালোচনা করতে হচ্ছে আমাদের।
সামাজিক প্রাণী হিসেবে গর্বিত মানুষের উঁচু ঘাড়টিতে যেমন প্রথমেই হুল ফোটায় মৌমাছি ও পিঁপড়ে, তাতে শুণ্ডজাত হালকা বাতাস নিক্ষেপ করে হাতিরাও। সদা পরিবর্তনশীল পরিবেশে একটা প্রজাতির আধিপত্যের পিছনে কাজ করে তার সমাজবদ্ধতার মাত্রা। সমাজবত্তার শর্ত আছে কিছু, যেমন সহযোগিতা— আর তার জন্য জরুরি পারস্পরিক সংযোগ, উন্নত বার্তাবিনিময়ের ব্যবস্থা ইত্যাদি। হাতিদের মধ্যে আছে এর সব ক’টি।
হাতি পরিবার মাতৃতান্ত্রিক। মা ও তার শাবক ঘনিষ্ঠতম একক। তাকে ঘিরে আছে অন্য মায়েরা, দিদিমা ও কুমারীরা, ঈষৎ দূরবর্তী সারিতে সদ্য সাবালক হতে থাকা পরিবারের পুরুষরা। হাতির শাবক যখন জন্ম নেয়, গোটা পরিবার তখন সক্রিয়। শাবকটি ভূমিষ্ঠ হয়েই দেখে তাকে ঘিরে রেখেছে তার দিদিমা, মাসি ও বড় বোনেরা। টলমল পায়ে চলতে শুরু করার সময় থেকে পরের কয়েক বছর শাবকটিকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখে পুরো দল। তাকে মাঝখানে সুরক্ষিত রেখে চলে যাতায়াত।
হাতির চিন্তাক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি প্রখর। তারা পরিকল্পনা করে, বিভিন্ন রকমের বস্তু ব্যবহার করে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। বনে ঘুরতে গেলে হাতির দলের কাউকে না কাউকে গাছের ছোট ডাল ভেঙে ঝাড়নের মতো ব্যবহার করে গা থেকে মাছি তাড়াতে দেখা যাবে হামেশাই। হাতিরা বিদ্যুতায়িত বেড়ার উপর গাছের ডাল ইত্যাদি ফেলে তাকে অকেজো করে পেরিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ তারা মনের মধ্যে ভবিষ্যতের ছবি গড়ে কর্মপদ্ধতি সাজাতে সক্ষম। অতীতও তারা সহজে ভোলে না।
আফ্রিকায় পরিকল্পিত নিধনের সময় হস্তিশাবকগুলোকে রেহাই দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের চোখের সামনেই চলতে থাকে নিধনযজ্ঞ। দেখা গেছে, পরে বহু দিন অবধি ঘুমের ঘোরে তাদের অনেকে চিৎকার করে ওঠে। একে কি দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠা বলব? কেবল ভাষার দাক্ষিণ্য নেই বলেই হয়তো তারা হলোকস্ট-উত্তর সাক্ষ্যের মতো কিছু রেখে যেতে পারে না।
সুখস্মৃতিও জোরালো হয়। অনেক সময় কোনও দল দু’ভাগ হয়ে দূরে চলে যায়। বহু বছর বাদে আকস্মিক মিলনের পর তাদের যে আচরণ দেখা যায় তাকে উল্লাস ছাড়া আর কিছু বলা চলে না। উত্তেজিত নড়াচড়া, পরস্পর শুঁড়ে শুঁড়ে আলিঙ্গন, খুনসুটি এবং বিষ্ঠাপাত ও মূত্রত্যাগ, ওই মুহূর্তে এগুলোরও সামাজিক ভূমিকা আছে— তার লক্ষণ।
সার্কাস থেকে ছুটি পাওয়ার পর শার্লি নামে একটি বয়স্কা হস্তিনীকে এনে রাখা হয়েছিল আমেরিকায় এক হস্তী সংরক্ষণশালায়। সেখানে রাখা আর-একটি সার্কাসের হাতির সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাতের মুহূর্তগুলো কেটেছিল একে অপরকে পুরনো ক্ষতচিহ্নগুলো দেখানোর মধ্য দিয়ে। তারা শুঁড় বুলোচ্ছিল পরস্পরের ক্ষতস্থানে। পরে সেখানে ঠাঁই পায় অপর এক তরুণী হাতি, যার সঙ্গে অতীতে কিছু দিন একই সার্কাসে কাটিয়েছিল শার্লি। সাক্ষাতের মুহূর্তেই বোঝা যায় তারা পরস্পরকে চিনতে পেরেছে। দূরে দূরে থাকা দু’টো আলাদা ঘেরের মধ্যে তাদের রাখা হয়েছিল প্রথমে। কিন্তু সে দিনই দু’জন এমন উন্মত্তের মতো গর্জন করতে থাকল যে, তাদের পাশাপাশি এনে রাখতে হল। গরাদের মধ্য দিয়ে চলল পরস্পরকে ছোঁয়ার পালা।
হাতির শুঁড় তাদের সব থেকে সংবেদনশীল অঙ্গ। প্রায় দেড় লক্ষ পেশি একে দিয়েছে অসাধারণ নমনীয়তা, দৃঢ়তা ও শক্তি। একটা গাছকে বেড় দিয়ে উপড়ে ফেলার পরেই সে একটা মুদ্রাকে আলগোছে ধরে পৌঁছে দিতে পারে মাহুতের হাতে। এই ললিত অঙ্গটিই আনারসের ভেতরে রাখা বোমা পৌঁছে দিয়েছিল হস্তিনীটির মুখগহ্বরে।
স্মৃতির তাড়না হাতিকে প্রতিশোধপ্রবণও করে তুলতে পারে। অসমের এক হাতির মালিক তাকে এক জনের কাছে রেখে দীর্ঘ দিনের জন্য চলে গিয়েছিল। অস্থায়ী পালকটি হাতিটিকে শারীরিক নির্যাতন করত। মালিক ফিরে আসতেই হাতিটি তার প্রতিশোধ নিল। পায়ের বাঁধন ছিঁড়ে প্রথমে হত্যা করে অস্থায়ী পালককে। তার পর মালিককে আজীবনের মতো পঙ্গু করে দিয়ে সে পালিয়ে যায়।
প্রতিশোধের উল্টো দিকে আছে হাতির সংবেদনশীলতা। তা কেবল নিজের প্রজাতির প্রতি নয়। আফ্রিকায় এক বার এক গোষ্ঠীজননী এক বনকর্মীকে হঠাৎ আক্রমণ করে। তাৎক্ষণিক ভুল বোঝাবুঝির পরিণাম। মানুষটির পা ভেঙে যায়। হাতিটি বুঝতে পারে, লোকটি চলচ্ছক্তিহীন। সে তাকে পাহারা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রায় দু’দিন পরে তাকে যখন খুঁজে পেল অনুসন্ধানকারী দল, হাতিটি তাদেরও এর কাছে ঘেঁষতে দিতে নারাজ। হাতিটিকে গুলি করে মারার উদ্যোগ হচ্ছে বুঝে আহত মানুষটিই ইঙ্গিতে নিষেধ করে। পরে কিছুটা কৌশলে ছাড়া পায় সে, শোনায় হাতিটি কী ভাবে সারা ক্ষণ অন্য বন্য জন্তু থেকে তাকে রক্ষা করেছে।
মনে হতে পারে যেন বেছে বেছে কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনাকে তুলে নেওয়া হচ্ছে মানুষের সঙ্গে এই ‘নিম্নতর’ প্রাণীগুলোর সাযুজ্য প্রমাণের জন্য। কিন্তু গত কয়েক দশকে এ নিয়ে এত লেখালিখি হয়েছে যে, কেন আলাদা করে হাতির পক্ষ থেকে তার বুদ্ধিবৃত্তি ও আবেগ-মননের জন্য সওয়াল করতে হবে, এটাই বিস্ময়ের।
চেতনার স্তরের কোন বিন্দুতে মানুষ আর অমানুষের ভেদরেখা টানা হবে তা নির্ধারণ করা কঠিন। এক প্রখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ লিখেছিলেন, আজ যদি এমন কোনও অ্যামিবা দেখা যায় যার চালচলন উদ্দেশ্য সাদা চোখে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি, তবে তারও মন আছে, এমনটাই আমরা ধরে নেব। তার পরে অবশ্য এক শতাব্দী পেরিয়ে গিয়েছে। বহু গবেষক প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, মানুষের প্রতিটি অনুভূতি পশুদের মধ্যে বিদ্যমান। ডগলাস হফস্ট্যাটার (এক জন পদার্থবিদ, কৃত্রিম মেধা ও চেতনার স্বরূপ বিষয়ে তাঁর ভাবনা ও গ্রন্থগুলি আলোড়ন তুলেছে) লিখেছিলেন, তিনি টম্যাটো খান নিশ্চিন্তে, নির্দ্বিধায় মশা মারেন, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য এক সতীর্থ দু’টো গিনিপিগ মারতে সাহায্য করতে বললে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। তাঁর জিজ্ঞাসার মূলে ছিল প্রাণিহত্যার নৈতিকতা সংক্রান্ত প্রশ্ন। সেখান থেকে পথ গিয়েছে নিরামিষ ভোজনের দিকে। চেতনার ক্রমবর্ধমান মাত্রাকে একটা উল্লম্ব রেখায় সাজিয়ে তিনি তার সমান্তরালে জীবজগৎকে দেখতে চেয়েছেন একখানে। কিন্তু কোনও স্পষ্ট বিভাজনরেখা নির্দিষ্ট করতে পারেননি।
মন আর শরীরের যে বিভাজন রেনে দেকার্ত টেনেছিলেন, তাকে স্নায়ুবিজ্ঞানী আন্তোনিয়ো দামাসিয়ো নস্যাৎ করে দেন। তাঁর মতে মন আসলে গোটা শরীরের নানা অংশের দশার একটা সম্মিলিত লক্ষণ। পরিবেশের সঙ্গে শরীরটা টিকিয়ে রাখতে, তার ভিতরকার অবস্থাকে সুসমন্বিত রাখতে শরীরের সমস্ত অংশের রিপোর্ট কার্ড প্রতিফলিত হয় এই পর্দায়, যাকে বলি মন। তাঁর কথা অনুসরণ করলে বলতে হয়, দেহ আছে এমন যে কোনও প্রাণীর ক্ষেত্রেই কোনও না কোনও মাত্রার চেতনা থাকা স্বাভাবিক। হাতির নির্দিষ্ট সমাজব্যবস্থা আমাদের সঙ্গে তার আচরণ ও মননগত সাদৃশ্যকে জোরালো করে তুলতে পারে।
শেষে একটা গল্প। দক্ষিণ আফ্রিকার এক অরণ্যে সমস্ত হাতি তখন মারা গিয়েছে, একটি বাদে। এক গোষ্ঠীজননী। এই ঘটনার পর্যবেক্ষক দক্ষিণ আফ্রিকার এক জীববিজ্ঞানী ও নৃতত্ত্ব-গবেষক, অরণ্যের প্রান্তে সমুদ্রের কাছে উঁচু পাহাড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে নীল তিমির ডাক শুনছিলেন। নীল তিমিও মৃদু কম্পাঙ্কের কিন্তু উচ্চ শক্তিসম্পন্ন শব্দতরঙ্গের সাহায্যে কথা বলে। হঠাৎ তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করল টিলার ওপরে একটি হাতি। সেই গোষ্ঠীজননী। নিঃসঙ্গ, প্রিয়জনহারা। পর্যবেক্ষকের কানে হঠাৎই এল মেঘের ডাকের মতো একটা গুরুগুরু শব্দ। তিনি চমকে উঠে দেখলেন, সমুদ্রের নীল তিমির ডাকে সাড়া দিচ্ছে হাতিটি। দীর্ঘ দিন নিঃসঙ্গ হাতিটির কানে আসেনি তার পরিচিত ইনফ্রাসোনিক তরঙ্গায়িত কোনও শব্দ। তিমির ডাক হাতিটিকে তাই টেনে এনেছে সমুদ্রের কাছে। দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা প্রজাতি, জলের বৃহত্তম প্রাণী আর স্থলের বৃহত্তম প্রাণীটির মধ্যে সংলাপ নয়, যেন পারস্পরিক আস্বাদন চলেছে। তিমি বা তার কোনও বোধ হাতির মনে থাকার কথা নয়। কিন্তু দু’টো আলাদা প্রজাতির এই আকর্ষণ ও সংযোগের ইচ্ছে এক আলাদা মাত্রা বহন করে। এক বেদনাবিধুর বিস্ময়বোধ আক্রান্ত করে আমাদেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy