দু’কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাট। বসার ঘরে ডাঁই করে রাখা শিশি-কৌটো, বই-কাগজ, দৈনন্দিন প্রয়োজনের হাজারও টুকিটাকি। শোওয়ার ঘরের বিছানার উপরে জামাকাপড়ের স্তূপ। দুই ঘরের কোনওটিতেই সুস্থির হয়ে বসার জায়গা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কারণ চেয়ার আর খাটের উপরেও জিনিসপত্রের স্তূপ। ঘরের এক ধারে এক চিলতে রান্নার জায়গা। সেখানে ডাঁই করা বাসনপত্র। ভিজে মেঝেয় হাজারো দাগ। এক হাত চওড়া বারান্দায় গ্যাস সিলিন্ডার আর আনাজের ঝুড়ি। কম-বেশি ৪০০ বর্গফুটের এই জায়গাকে নতুন ভারতের ইতিহাস তৈরির আঁতুড়ঘরও বলা যেতে পারে।
দক্ষিণ দিল্লির শাহিনবাগে দিন-রাত এক করে যাঁরা সিএএ-এনআরসি-র বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, তাঁদেরই এক জনের ফ্ল্যাটে কয়েক মিনিটের জন্য ঢোকার সুযোগ মিলেছিল। গৃহস্থালির আটপৌরে গন্ধ পেরিয়ে কী ভাবে সেখানে পৌঁছে গিয়েছে বিপ্লবের ঝাঁজ, প্রাথমিক ভাবে সেটা আন্দাজ করা সত্যিই কঠিন।
বছর পঁয়ত্রিশের নাফিসা খাতুন জানিয়েছিলেন, তিনি বা তাঁর স্বামী কেউই স্কুলের গণ্ডি পেরোননি। তবে ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছেন। স্বামী একটি পরিবহন সংস্থায় ঠিকা কর্মীর কাজ করেন। তাঁদের নিস্তরঙ্গ জীবনটা কখন, কী ভাবে বদলে গেল, সেটার স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যা তাঁদের কাছেও নেই। রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল তো দূরের কথা, নাফিসা বলেন, ‘‘এক জায়গায় পাঁচ জন লোক জড়ো হয়ে চেঁচিয়ে কথা বললেও আমরা ভয় পেতাম, ভাবতাম, নিশ্চয়ই কোনও ঝামেলা হচ্ছে। ওখানে গেলে হয়তো আমরাও জড়িয়ে পড়ব। তার চেয়ে বরং ও দিকে না যাওয়াই ভাল। সেই আমরাই কী ভাবে রাত জেগে স্লোগান দিচ্ছি, সেটা ভাবলে নিজেদেরই অবাক লাগে। শুধু এটুকু বুঝি, আমাদের জীবনটা আচমকাই বদলে গেছে। আর আগের জায়গায় ফিরবে না।’’
নাফিসা জানান, রাতে যখন জামিয়া মিলিয়া-র পড়ুয়াদের পুলিশ বেধড়ক মেরেছে বলে খবর এল, সেই রাতে আবাসনের নীচে একটা জটলা হচ্ছিল। সত্তরোর্ধ্ব দুই ‘দাদি’ হঠাৎই ‘‘হামলোগ কেয়া ঘর মে বৈঠে রহেঙ্গে? কুছ করেঙ্গে নেহি?’’ বলে চেঁচিয়ে ওঠেন। তাঁদের কথায় সায় দেন আরও কয়েক জন। বৃদ্ধা বিলকিস বেগম বলে ওঠেন, ‘‘চলো সড়ক পে বৈঠে।’’ সমস্বরে সায় দেন বাকিরাও। শিশুসন্তান কোলে বেরিয়ে আসেন কয়েকজন মা-ও। মুহূর্তে জন্ম নেয় এমন এক আন্দোলন যা আদতে আন্দোলনের সংজ্ঞাটাই বদলে দিল বেশির ভাগ মানুষের কাছে। যেখানে ওই মহিলারা গিয়ে খোলা আকাশের নীচে বসলেন, মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে সেখানেই কয়েকশো পুরুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন এবং কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিয়েছিল। সন্তান কোলে মায়েদের ক্ষেত্রে সেই ঝুঁকিটা পুলিশ বা প্রশাসন কেউই নিতে পারেনি।
সমবেত: দিন হোক বা রাত, একত্র সকলে। শাহিনবাগ। ছবি: এএফপি
নাফিসা বলেন, ‘‘যাঁরা সেই রাতে চিৎকার করেছিলেন, তাঁরা কেউই কিন্তু এলাকার খুব গুরুত্বপূর্ণ মুখ নন। আমরা সকলেই সাধারণ, খুব সাধারণ। এলাকার কোনও বিষয়েও কেউ কখনও আমাদের মতামত চায়নি। আমরা আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে অন্য কেউ নয়, আমরা নিজেরাও নিজেদের কখনও কল্পনা করিনি।’’
প্রথম রাতে বড়জোর বারো-তেরো জন ছিলেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, রাত পেরোলে আন্দোলনের ‘হুজুগ’ও কাটবে। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে পরদিন বেলা বাড়তেই ভিড় একটু বাড়ল। আর তার পর দিন থেকে তো জনস্রোত। প্রথম রাতে ছাউনি ছিল না। খোলা রাস্তায়, আকাশের নীচে দাঁতে দাঁত চেপে ঠায় বসেছিলেন ওঁরা। পরের দিন বিকেলেরও পরে ছাউনির ব্যবস্থা হল। ব্যস্ত রাস্তা আটকে বসে পড়ায় গাড়ি চলাচল তো বন্ধ হলই, পাশাপাশি ঝাঁপ বন্ধ রইল দোকানগুলোরও। অন্য দিনের ভিড় উপচে পড়া শপিং মলও বন্ধ রইল। অবস্থান বিক্ষোভ তুলতে এসে মহিলাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে ফিরে গেল পুলিশও। শাহিনবাগের বাইরের পৃথিবী বুঝতে শুরু করল, ভেঙে যাওয়ার জন্য আন্দোলনটা শুরু হয়নি।
ডিসেম্বর, জানুয়ারির কনকনে ঠান্ডা তো রয়েছেই। এক-এক দিন তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে বৃষ্টিও। হু-হু হাওয়ায় মায়েদের শরীরের সঙ্গে আরও লেপ্টে থাকছে শিশুরা। কিন্তু তারা এক বারও বলছে না, ‘‘মা বাড়ি চলো।’’ বলছে না, ‘‘আমাদের কষ্ট হচ্ছে।’’ যে মায়েরা অন্য সময় বাচ্চারা সামান্য ভিজলেই ঠান্ডা লাগার ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকেন, তাঁরাও অবলীলায় বলছেন, ‘‘সব সময়ে অত ভয় পেলে চলে না কি! বড় হয়ে ওদেরও তো ‘সচ কা সামনা’ করতে হবে!’’
কিন্তু প্রত্যেকটি পদক্ষেপই কি এতটাই মসৃণ? বছর ত্রিশের নেহার বেগমের অনেকগুলো রাত কেটেছে যন্ত্রণা আর টানাপড়েনে। স্বামী আলতাফ আর তিন সন্তানকে নিয়ে সংসার। প্রতি রাতে মদ খেয়ে অত্যাচারটাই আলতাফের রুটিন। নেহারকে সে স্পষ্ট জানিয়েছিল, এলাকার ‘গন্দি অওরত’রা রাস্তায় বসছে বসুক। কিন্তু নেহার সেই পথে হাঁটতে চাইলে তাকে ‘চাবকে সিধা’ করে দেবে সে। ‘‘জানেন আপা, তিনটে রাত ঘুমোতে পারিনি। মনে হয়েছে, বাড়ি থেকে বার করে দিলে ছেলেমেয়ে নিয়ে যাব কোথায়? খাব কী? তার পর ভাবলাম, ভয় পেয়ে পোকামাকড়ের মতো জীবন আর কত দিন কাটাব? আমার বড় মেয়ের বয়স এখন পনেরো। ও-ও আমাকে বলল, চলো, আমিও তোমার সঙ্গে যাব। আমরা দু’জনেই আছি এখানে। এখানকার লড়াই শেষ হলে বাড়িতে আরও বড় লড়াই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।’’
দিন কয়েক আগেই আঠেরো বছরে পা রেখেছে সাফিয়া আনসারি। আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে উঠেছে সেও। সাফিয়া জানায়, সে আর তার দাদি চব্বিশ ঘণ্টা পড়ে থাকে শাহিনবাগে। মা আসেন না? এক মুহূর্ত থমকায় সে। তার পরে বলে, ‘‘আমার আব্বু বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। খুব অসুখ। আম্মি সেলাই করে সংসার চালায়। তাই আম্মি আসতে পারে না। কিন্তু আমাকে আম্মি বলে দিয়েছে, যাই ঘটুক না কেন, তুই কিন্তু সরে আসবি না। আমাদের কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে হবে।’’
শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়া! এটাই শাহিনবাগের লড়াইয়ের মূল মন্ত্র। যা-ই ঘটুক না কেন, ভয় পাওয়া চলবে না। সরে আসা চলবে না। কেউ যদি কখনও ক্লান্তিতে ভেঙে পড়েন, অন্য জন পিঠে হাত রেখে তাঁকে মনের জোর দেন। অনেক নতুন নতুন শব্দ শিখেছেন তাঁরা। যে ভাবে তাঁদের শব্দভাণ্ডারে যোগ হয়েছে ‘আজাদি’, সে ভাবেই যোগ হয়েছে ‘কমরেড’। যোগ হয়েছে ‘কমিউনিটি কিচেন’। এলাকার লোকজন, দোকানদার, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খাবার বিলি করছেন। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের অনেকের বাড়ি থেকেও রান্না করা খাবার আসছে। হয়তো এক জনের বাড়িতে রান্না হল, কিন্তু খরচটা দিলেন আরও কয়েকজন। হাসতে হাসতে শবনম খাতুন বললেন, ‘‘স্পনসরশিপের প্রস্তাবও এসেছে কিন্তু! একটা সংস্থা এটাও বলেছিল, আমরা চারবেলার খাবার দেব। শুধু এখানে একটা ব্যানার থাকবে আমাদের।’’
ব্যানার টাঙাবে! কথাটা উচ্চারণ করে হাসতে হাসতে এ ওর গায়ে গড়িয়ে পড়লেন শাহিনবাগের বিপ্লবীরা। বোধহয় বলতে চাইলেন, খাবারের লোভ দেখিয়ে আন্দোলনটাকে কিনতে চাইছে! বোকামিরও একটা সীমা আছে!
শাহিনবাগ দিল্লির ব্যস্ত এলাকার তালিকাতেই পড়ে। শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা তো বটেই। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তাও এটি। বড় রাস্তায় একাধিক দোকানপাট, পরিবহণ সংস্থার দফতর, রেস্তরাঁ। সরু, মাঝারি গলিতে একে অন্যের গায়ের উপরে উঠে পড়া বাড়ি। সব মিলিয়ে ঘিঞ্জি পরিবেশ। কিন্তু সেই রাস্তাই বন্ধ এত দিন। বন্ধ থাকছে মেট্রো স্টেশন। সে নিয়ে মানুষের যে একেবারে অসন্তোষ নেই তা নয়। কিন্তু নেহাতই কম। যাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাঁদেরও অধিকাংশই শেষে যোগ করেছেন, ‘‘এঁরা তো শুধু নিজেদের কথা ভেবে করছেন না। অন্যদের কথা ভাবছেন। আমরাই বা শুধু নিজেদের স্বার্থের কথা ভাবি কী করে?’’
টানা অনেকটা সময় কাটিয়েছি শাহিনবাগে। রাত জেগেছি ওঁদের সঙ্গে। আমাদের চেনাজানা আর পাঁচ জন মহিলার সঙ্গে বাইরে ওঁদের কোনও তফাত নেই। তফাতটা ভিতরের ইস্পাত-কঠিন মনোভাবে। যেমন, জুনির বয়স উনিশ। সদ্য বিয়ে করা, ঝলমলে মেয়েটা বলে ওঠে, ‘‘আমার ভিতরের ছটফটে মেয়েটা কবে যে দায়িত্বশীল হয়ে উঠল বুঝতেই পারলাম না। আসলে আমি প্রথমে আসিনি। যে রাতে আন্দোলনটা শুরু হল, তার পরের দিন দুপুরে দেখতে এসেছিলাম। তখন এখানে গাওয়া হচ্ছিল ‘সরফরোশি কি তমন্না আব হমারে দিল মে হ্যায়...’ কী যে হয়ে গেল আমার! তার পর থেকে এখানেই।’’
বস্তুত, শাহিনবাগের রাস্তায় যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা সবাই সব সময়েই যে খুব সিরিয়াস তা নয়। এঁদের ভিনগ্রহের প্রাণী মনে করার কোনও কারণ নেই। স্লোগানের সময়ে স্লোগান। আবার অন্য সময়ে সাধারণ ঘরগেরস্থালির গল্প, হাসি-মজা, গানের অন্তাক্ষরী। বাদ থাকছে না কিছুই। চেহারা, হাবভাবে এঁরা আমার-আপনার বাড়ির অতিথিবৎসল মা, দিদি, মাসির মতো। রাতে যখন বসে থেকেছি, যত্ন করে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়েছেন। কেক-ডিমসেদ্ধ খেতে বলেছেন। জোর করে হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন জলের পাউচ। টানা বসে থাকার সময়ে জানতে চেয়েছেন আমার পরিবারের কথা। আশি পেরনো দাদি বলেছেন, ‘‘ছবি দেখাও তোমার বাড়ির লোকের। ওদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছ তো? না হলে ওরা কিন্তু চিন্তা করবে!’’
পর মুহূর্তেই আবার এঁদের অন্য চেহারা। শাহিনবাগের মঞ্চে দশ মিনিট সময় পেতে এখন অনেক তথাকথিত নামী লোকজনকেও অনুরোধ-উপরোধ করতে হচ্ছে। নিজেই দেখলাম, দশ মিনিট সময় পেয়ে মঞ্চে উঠে পনেরো মিনিটেও না নামায় উদ্যোক্তারা সবিনয়ে এক বক্তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলছেন, ‘‘এ বার আপনাকে যেতে হবে।’’ প্রতি পদক্ষেপে ওঁদের পরিণতমনস্কতা অবাক করার মতো। যে বিকেলে জামিয়া মিলিয়ার বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়াদের মিছিলকে অবস্থান মঞ্চের অদূরেই মানবশৃঙ্খল করে আটকে দিলেন ওঁরা, তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। মিছিল থেকে ধর্মীয় স্লোগান উঠছিল। ওঁরা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাত ধরে বললেন, ‘‘আমরা এখানে ধর্মের পরিচয়ে বসে নেই। দয়া করে দুটোকে এক করে দেবেন না। তার চেয়ে বরং আমরা সবাই এখানে দাঁড়িয়ে এক সঙ্গে বলি আজাদি।’’ ‘আজাদি’র স্লোগান দিতে দিতে ওই জায়গা থেকেই ফিরে গিয়েছিল মিছিল। কোনও মন-কষাকষি, তিক্ততা নয়। এটাই এই আন্দোলনের চরিত্র।
সদ্যোজাত শিশু থেকে নব্বই পেরনো বৃদ্ধা, সবাই শরিক এখানে। রাত যত বাড়ে, গান-বক্তৃতা-শায়রির তেজ কমতে থাকে, তখন বিভিন্ন ধরনের সিনেমাও দেখেন ওঁরা। পুরনো হিন্দি ছবি থেকে শুরু করে হিন্দিতে ডাব করা বা সাবটাইটল দেওয়া বিদেশি ছবিও বাদ যায় না। নানা ধরনের আন্দোলনের গল্প থাকে সেই সব ছবিতে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা জোগান দেন সে সব।
এক সন্ধ্যায় হঠাৎই খবর এল, পুলিশ আসতে পারে। ভাঙার চেষ্টা হতে পারে তাঁদের অবস্থান। সকলেই চিন্তিত। ছোট, ছোট জটলায় আলোচনা চলছে। এক জন মঞ্চে উঠে মাইক টেনে নিয়ে শুরু করলেন স্লোগান—
তুম পুলিশ বুলাও।
আজাদি।
তুম ডান্ডে মারো।
আজাদি।
তুম জেল মে ডালো।
আজাদি।
এ বার এক কিশোরী এগিয়ে আসে সামনে। কয়েক মুহূর্তের নীরবতা। তার পরেই চেঁচিয়ে ওঠে সে। বলে, ‘‘হমে না কহেনে কি আজাদি!’’ তুমুল হর্ষধ্বনিতে যেন কেঁপে ওঠে এলাকা।
এই ঘটনার কয়েক দিন পরে টিভিতে জেএনইউ চত্বরে কানহাইয়া কুমারের বক্তৃতা শুনছিলাম। অনেক কথার ফাঁকে কানে এল এই শব্দগুলোও। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কখন যে এক হয়ে যায় শাহিনবাগ!
এই আন্দোলনে পুরুষদের ভূমিকাটা ঠিক কী? এই প্রশ্নটা থাকছে অনেকের মনেই। উদ্যোক্তাদের মধ্যে বহু পুরুষ রয়েছেন সে কথা ঠিক। যেমন, সামনের সারিতে রয়েছেন সোনু ওয়ারসি। বহু ক্ষেত্রেই আন্দোলনকারীদের হয়ে কথা বলতে এগিয়ে যাচ্ছেন এই যুবক। রয়েছেন মিরাজ খান। মিরাজ শাহিনবাগ কোঅর্ডিনেশন কমিটির অন্যতম মুখ। বার বার বলছিলেন, ‘‘আমাদের অনেক কিছুর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। গুজবের সঙ্গে লড়াইটা খুব কঠিন। অনেকেই বলছেন আমরা বাইরে থেকে আন্দোলনটা পরিচালনা করছি। আর আমাদের পরিচালনা করছে কোনও রাজনৈতিক দল। এটা যে কত বড় ভুল!’’ সামনে দাঁড়িয়ে সেটার সাক্ষীও থেকেছি। যে দিন কোঅর্ডিনেশন কমিটি বিবৃতি দিয়ে জানাল তারা মনে করছে রাস্তা জুড়ে আন্দোলন এ বার বন্ধ করা উচিত, আন্দোলনের রাস্তাটা বদলানো জরুরি, সে দিন মহিলারা সামনে এসে বলেছিলেন, ‘‘ওটা আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। আমরা উঠব না।’’
চলে আসার আগেও তমন্না, ফেরদৌসি, শবনমরা বলেছিলেন, ‘‘কোনও বিপ্লবের প্রসঙ্গ উঠলে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পুরুষদের নামই সামনে আসে। এর পরে যখন বিপ্লবের কথা বলবেন, মহিলাদের কথাটা বলতে ভুলবেন না। পুরুষদের সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু নিজেদের অস্তিত্বের আলাদা স্বীকৃতিটুকু আমরা দাবি করছি।’’
শাহিনবাগ জিতবে কি না তা সময় বলবে। কিন্ত শাহিনবাগ যা শিখিয়ে গেল তা হল, সব ক্ষেত্রে বিপ্লবের পূর্বাভাস থাকে না। স্ফুলিঙ্গ আচমকাই দেখা যায়। আর বিশ্বাসের ভিত মজবুত থাকলে সেই স্ফুলিঙ্গ থেকে জ্বলে ওঠা আগুন সহজে নেভে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy