Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প

তীর্থযাত্রী

জুন রে। জন্ম শিকাগোতে। বাংলা জানে কিন্তু তাতে অবাঙালি টান স্পষ্ট। মার্কিনি নয়, উর্দুভাষীরা বাংলা বললে যেমন শোনায়, খানিকটা সে রকম। আমার নাম অরিত্র বোস। অরিত্র বলতে গিয়ে তা ভেঙেচুরে যা দাঁড়াল তাতে বলতে বাধ্য হলাম বোস-টাই ভাল। অরিত্র বলার দরকার নেই।

ছবি: পিয়ালী বালা

ছবি: পিয়ালী বালা

সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৮ ০০:২৩
Share: Save:

একটু আগে বার্থাল পেরিয়েছি। জুন এখন মুড়িসুড়ি দিয়ে বসেছে দুটো পা বাসের সিটে তুলে। আরও প্রায় তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে পহেলগাম পৌঁছব আমরা। জুনের বসার ভঙ্গিটা দেখে হঠাৎ আমার রামধনিয়ার কথা মনে পড়ে গিয়ে খুব হাসি পেল। রামধনিয়া ছিল আয়া, আমার দাদুর জীবনের শেষ দিকে ও দাদুর দেখাশোনা করত। রামধনিয়া এ রকম হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে ঘুমোত আর এক পাশে ঝুঁকে পড়ত, একদম পড়ে যাওয়ার ঠিক আগে কেমন করে কে জানে ঠিক সামলে নিয়ে আবার খাড়া পজিশনে চলে আসত।

পহেলগাম থেকে আমরা জিপ গাড়িতে যাব চন্দনওয়াড়ি, ঘণ্টা দুই লাগবে। আর সেখান থেকে শুরু হবে আমাদের অমরনাথ যাত্রা। এ বাসের মধ্যে আমি আর জুন বলা যায় ‘অড টু আউট’। সেটা শুধু বয়সের জন্য নয়, আমার কাছাকাছি বয়সের দু-এক জন আছে দেখেছি। আমরা আলাদা। কারণ আমরা পুণ্যার্জনের জন্য যাচ্ছি না। আমি যাচ্ছি ছবি তুলতে আর জুন যাচ্ছে বই লেখার রসদ সংগ্রহ করতে। ও আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি পড়ায়, হিন্দুদের ধর্মাচরণ নিয়ে একটা বই লিখছে। ওর সঙ্গে আলাপ মনতালাইতে। ছাড়বার ঘণ্টা দুই পরে এখানে বাসটা থামে। আমি নেমে চা খেয়ে হাওয়া বাঁচিয়ে সিগারেটটা সবে ধরিয়েছি, তখন ও আমার দিকে এগিয়ে এসে লাইটার চাইল আর আলাপ করল। ওর কাছে দেশলাই আছে, কিন্তু এ হাওয়ায় তা জ্বালাবার চেষ্টা মানে কাঠির অপচয়।

জুন রে। জন্ম শিকাগোতে। বাংলা জানে কিন্তু তাতে অবাঙালি টান স্পষ্ট। মার্কিনি নয়, উর্দুভাষীরা বাংলা বললে যেমন শোনায়, খানিকটা সে রকম। আমার নাম অরিত্র বোস। অরিত্র বলতে গিয়ে তা ভেঙেচুরে যা দাঁড়াল তাতে বলতে বাধ্য হলাম বোস-টাই ভাল। অরিত্র বলার দরকার নেই।

ও দেখলাম দু-চার বার ‘বোস বোস’ বলে সেটা ঝালিয়ে নিল।

অমরনাথ যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভাল রাস্তা হল বিমানে শ্রীনগর এসে সেখান থেকে ঘণ্টা দুয়েকের পথ বাসে বা জিপে করে পহেলগাঁও। আমার অ্যাপ্রুভাল যখন এল তখন দিল্লি থেকে শ্রীনগর ফ্লাইটে আর জায়গা নেই। কাজেই ট্রেনে জম্মু আর তার পর এই ছ’ঘণ্টার বিরক্তিকর বাস জার্নি। মেমসাহেব কেন এই বাজে রুট নিয়েছেন কে জানে?

মনতালাই থেকে বাসে ওঠার পর জুন বলল, “ক্যান আই সিট বিসাইড ইউ?”

সানন্দে জবাব দিলাম, “ইয়েস শিয়োর।” এটাই চাইছিলাম। পেপারব্যাক পড়ে আর গেমস খেলে সময় কাটানোর চেয়ে এক জন সুন্দরী তরুণীর সান্নিধ্য হাজার গুণে ভাল। আমি একটা তিন জনের সিটে একাই বসেছিলাম। ও এসে বসল আমার পাশে আর বসেই একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করল।

‘‘বোস আর ইউ ম্যারেড, বিয়ে করেছ?’’

‘‘না, এখনও করিনি। কেন বলো তো?’’

‘‘না আমি শুনেছি ইন্ডিয়ান মেয়েরা তাদের স্বামীর পাশে কোনও মেয়ে বসলে পছন্দ করে না।’’

ভারত সম্পর্কে আরও কী কী অদ্ভুত ধারণা নিয়ে এসেছেন মহিলা কে জানে। আমি ওকে দেখছিলাম। বয়স পঁচিশ-ছাব্বিশের বেশি হবে না। পরেছে সাদা শার্ট, জিন্‌স, কমলা রঙের সোয়েটার আর অলিভ গ্রিন রঙের একটা জ্যাকেট। জ্যাকেটটা মনে হয় খুব দামি আর অস্বাভাবিক রকম মোটা। আমার পাশে আমার ক্যামেরার একটা ব্যাগ ছিল। রাস্তায় ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা বাইরে রেখেছিলাম। যদিও আর একটা ক্যামেরা, ট্রাইপড সব সুটকেসে আর সুটকেস বাসের খোলের ভিতর। বাস ছাড়তেই জুন আমার ক্যামেরাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ও বসেছে জানালার ধারে। এ সব বাসে এসি-টেসি কিছু নেই তাই জানালা খোলা যায়। আমাদের পথের পাশে পাশে ছুটে চলেছে তায়ি নদী। জুন মাঝে মাঝেই জানালা দিয়ে বাইরের ছবি তুলছে, কিন্তু ছবি তোলার পর ডিসপ্লে দেখে হতাশ হচ্ছে। আসলে এ রকম বেঁকে বেঁকে চলা পাহাড়ি রাস্তায় চলন্ত বাস থেকে ছবি তোলা ওর কর্ম নয়। অবশেষে বলতে বাধ্য হলাম, ‘‘তুমি আমার সিটে এস আর আমি যাই জানালার ধারে। আমাকে বলে দাও কী তুলতে হবে, আমি তুলে দেব।’’

ও রাজি হল। আমি বেরিয়ে দাঁড়াচ্ছিলাম কিন্তু ও বলল, দরকার নেই, ও আমাকে পেরিয়ে যেতে পারবে। ও যখন আমাকে পেরিয়ে যাচ্ছে তখন হঠাৎ বাসটা একটা ঝাঁকুনি দেওয়ায় ওর কোমরের পিছনে আমার মুখটা বসে গেল। এক অদ্ভুত শিহরন খেলে গেল আমার সারা শরীরে। ওর অবশ্য কিছু হয়েছে বলে মনে হল না, ও শান্ত ভাবে এসে আমার আগের সিটে বসে এটা-ওটা দেখাতে লাগল। ওর উৎসাহ কিন্তু খান দশেক ছবির পরেই শেষ।

‘‘আরে রাখো না ক্যামেরাটা...তোমরা গ্যাজেটস নিয়ে এত অবসেসড কেন?’’

বোঝো! মার্কিন নাগরিক আমাকে বলছে আমি নাকি গ্যাজেট নিয়ে অবসেসড।

হেসে বললাম, “ছবি তো তুমিই তুলতে বললে।”

সে বলল, ‘‘বলেছিলাম, বাট দ্যাট ইজ় পাস্ট। এখন আর ভাল লাগছে না। একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। এর পরে আবার কখন স্টপ দেবে?”

বললাম, “শুনেছি বানিহালে একটা স্টপ দেবে, তা এখনও এক ঘণ্টা বাকি।”

‘‘হার্ড লাক।’’

‘‘কিন্তু তুমি কী জানো, হাঁটা শুরু হওয়ার পর ওই পাঁচ-ছ’দিন সিগারেট মদ সব মানা।’’

‘‘ইজ ইট সো? বাট হোয়াই?’’

‘‘সেক্রেড পিলগ্রিমেজ বলে কথা... শুধু সাধুরা গাঁজা টানতে পারে তাদের বেলায় কোনও নিয়ম নেই।’’

‘‘তোমরা ক্রেজি! তীর্থস্থান বলে ওই বরফের রাস্তায় অ্যালকোহল অ্যালাউ করবে না!’’

‘‘তোমার এত চিন্তা করার কিছু নেই। সাধুদের ডেরায় সব পাবে। সুন্দরী মেয়ে চাইলে সহজেই বোতল বার করে দেবে। ওই সাধুরা সিগারেট বিড়িও নাকি রাখে। তবে ওই লিকার তোমার চলবে কি না কে জানে?’’

‘‘আই ডোন্ট কেয়ার। আমি চাইবও না।’’

‘‘সঙ্গে করে নিয়ে এসেছ না কি? সর্বনাশ, সব নিয়ে নেবে, চন্দনওয়ারিতে আঁতিপাঁতি করে সব চেক করে। তার আগে অনন্তনাগে আছে সিকিয়োরিটি চেক।’’

‘‘নাহ তা নয়... আমার তখন ও সব লাগবে না।’’

এ বার বেশ কিছু ক্ষণ চুপচাপ। ও একটা রুট ম্যাপের বই দেখছে মন দিয়ে। আমরা এখন চলেছি এন এইচ ফর্টি ফোর দিয়ে। এর পোশাকি নাম শ্রীনগর-কন্যাকুমারী হাইওয়ে। এত লম্বা রাস্তা এ দেশে আর নেই। জুন যেন আমার চিন্তাটা পড়ে ফেলে আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘‘এই রাস্তাটা সত্যি নর্থ থেকে একদম সাউথে গেছে?’’

‘‘তাই তো বলছে। দু’হাজার তিনশো সাতাশ মাইল। সারা পৃথিবীর ডায়ামিটারের থার্টি পার্সেন্ট।’’

‘‘ও মাই গড।’’

তার পর ও হঠাৎ বলল, ‘‘আমার তোমাকে বেশ ভাল লাগছে। তুমি বেশ ভদ্র।’’

‘‘হঠাৎ!’’

‘‘এত ক্ষণ পাশে বসে আছি তুমি কিন্তু আমার কাছে বেশি সরে আসার চেষ্টা করোনি। ইন ফ্যাক্ট হোয়েন আই ওয়াজ ক্রসিং ইউ আর তোমার মুখ আমার হিপসে লেগে গেল, ইউ ব্লাশড।’’

এ কথার কোনও উত্তর হয় না একটু বোকা বোকা হাসি ছাড়া। আসলে আমি কথা বলতে ঠিক চাইছিলামও না। আমি শুধু ওকে দেখতে চাইছিলাম। এই বাসটা মোটামুটি ভারতের হিন্দি বলয়ের একটা ছোট এডিশন। এক নাগাড়ে হিন্দিতে শিবের ভজন চলছে সস্তা স্টিরিয়োতে, মাঝে মাঝে পুণ্যার্থীরাও তাতে যোগ দিচ্ছে, দেহাতি হিন্দিতে কথা চলছে এ পাশে ও পাশে। আর তার মধ্যে এ রকম সুন্দরী একটি মেয়ে যাকে বিদেশিনীই বলা যায়। বিভোর হয়ে রাস্তা দেখছে... এ যেন কেমন একটা অপার্থিব ব্যাপার। ওর গাঢ় বাদামি চুল উড়ে এসে পড়ছে ওর চোখের উপরে কপালে, ও হাত দিয়ে সরিয়েও দিচ্ছে না। ভাবতে ভাল লাগছিল, সামনের ক’টা দিন ওর সঙ্গে একসঙ্গে কাটানো যাবে।

‘‘কী হল... কী দেখছ?’’

ওর কথায় সম্বিত ফিরল। “না কিছু না,” অপ্রস্তুত অবস্থাটা কাটানোর চেষ্টা করে বললাম আমি।

“বাস থামছে মনে হচ্ছে, মনে হয় তোমার ওই ‘বানি হোল’ এসে গেল।’’

এ বার আমি হেসে ফেলি, বানিহাল মেমসাহেবের কাছে ‘বানি হোল’ হয়ে গিয়েছে। বানিহাল পুলিশ ফাঁড়ির সামনে বাস থামে। এখান থেকে বানিহাল পাস প্রায় পনেরো কিলোমিটার। একটা টুরিস্ট ডাকবাংলো আছে। চা-টা কী রকম অদ্ভুত। আমি ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছিলাম। জুনের দিকে ক্যামেরা তাক করতেই দেখেছি ও আপত্তি করে। ওর আর একটা পাগলামি হল, ওর নাকি ছবি ভাল ওঠে না। তবে ও যখন খেয়াল করছে না, তখন কয়েকটা ছবি তুলেছি। যত এগোচ্ছি তত দেখছি উর্দি পরা বন্দুকধারীদের সংখ্যা বাড়ছে। জুন এখন একটু সরে গিয়ে কাকে যেন ফোন করছে। খেয়াল করলাম, মেয়েটার সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জানা হয়নি। এমনকি বিবাহিত না অবিবাহিত সেটাও জিজ্ঞেস করিনি। এখানে ঠান্ডাটা বেশ বেশি, জ্যাকেটের সঙ্গে লাগানো টুপিটা দিয়ে কান মাথা ঢেকে নিলাম।

‘‘কাম বোস, হ্যাভ সাম।’’

জুন কোত্থেকে দেখি খবরের কাগজে মোড়া ক’টা সামোসা নিয়ে এসেছে। মেয়েটার কী ঠান্ডাও লাগে না! হুহু করে হাওয়া বইছে আর ওর তো কান মাথা সব খোলা! ওকে সেটা বলতেই একটু হেসে সঙ্গের একটা ছোট জলের বোতল বার করে আমাকে দিল।

‘‘এই ঠান্ডায় জল খাব কেন?’’

‘‘খাও না, আমি বলছি একটু খাও। দাও ক্যামেরাটা আমাকে দাও। আমি কয়েকটা ছবি তুলি।’’

অগত্যা চুমুক দিলাম। মেয়েটা করেছে কী! এ তো জলের সঙ্গে হুইস্কি। বাস ছাড়ার তাগাদা দিয়ে ঘন ঘন হর্ন দিচ্ছে। বোতলটা হাতে নিয়েই বাসের দিকে পা বাড়ালাম।

‘‘আরে আমার ক্যামেরা!’’

‘‘আছে বাবা, আমার কাছে আছে... চুরি করব না।’’

শুনলাম অনন্তনাগ আর তার পরে একেবারে পহেলগাম-তে স্টপ দেওয়া হবে। আমি মদ্যপান বড় একটা করি না, কাজেই জলের সঙ্গে যে কী হুইস্কি মিশিয়েছে সেটা বুঝিনি। কিন্তু যাই মিশিয়ে থাকুক না কেন, তা বেশ স্ট্রং, মাথার মধ্যে থাবা বসাচ্ছে। বাসের জানালা দিয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়ারও নেশা চড়ায় একটা ভূমিকা আছে নিশ্চয়ই। বাকি সবাই জানালা বন্ধ করে দিয়েছে কিন্তু মেয়েটার দেখছি কোনও হুঁশ নেই। বাধ্য হয়েই বলতে হল জানালা বন্ধ করার কথা। তাপমাত্রা যে হুহু করে নামছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। জুন একটা অদ্ভুত হেসে বলল,

‘‘হোয়াই আর ইউ সাচ এ কাওয়ার্ড! একটু না হয় ঠান্ডা হাওয়া লাগলই, তাতে কি তুমি একদম মরে যাবে? হোয়াট এ ফুল... এত ভয় নিয়ে বাঁচো কী করে আর বেঁচে লাভই বা কী?’’

বুঝলাম মেমসাহেবের নেশা চড়েছে। কিছু বলার আগেই ওর বোতলটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নাও হ্যাভ আ সিপ, তা হলে আর শীতকাতুরে প্রাণীর মতো হাইবারনেশনে যেতে চাইবে না।’’ এর সঙ্গে কথা বলার মানে হয় না এখন। আমাদের জানালা দিয়ে হাওয়া ঢুকে গোটা বাসটাকেই ঠান্ডা করে দিচ্ছে। কেউ বোধ হয় বাসের এক মাত্র বন্দুকধারী পুলিশটির কাছে আপত্তি জানিয়েছে। সে এসে আমাকে জানালা বন্ধ করতে বলে গিয়েছে। অল্প অভদ্রতা হচ্ছে জেনেও আমি ঝুঁকে পড়ে জানালাটা বন্ধ করে দিলাম আর তার পরেই দেখলাম ওর চোখমুখ পালটে গিয়েছে।

‘‘আমি তোমাকে ভদ্রলোক ভেবেছিলাম বোস। হাউ কুড ইউ ডু দিস টু মি?’’

‘‘কী করব আমি, তুমি শুনছই না, এটা পাবলিক বাস। সবার সুবিধে-অসুবিধে নিয়ে ভাবতে হয়।’’

‘‘বাট ইউ হ্যাভ টেকেন দ্য চান্স টু টাচ মি ইনডিসেন্টলি!’’

ওর দিকে ভাল করে তাকালাম। খুব ভাল করেই জানি ও যা বলছে তেমন কিছু আমি করিনি। আমার কনুই শুধু ওর কাঁধ ছুঁয়েছে মাত্র।

‘‘আই উইল কল দ্য পুলিশ এন্ড হ্যান্ড ইউ ওভার টু হিম।’’

এ বার আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিল। এক জন বিদেশিনী মহিলার এ হেন অভিযোগের ফল কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার আগে আমার কয়েক রাত্রি হাজতবাস হয়ে যাবে। ওকে বোঝাবার চেষ্টা করলাম যে ও ভুল করছে। “গেট ডাউন অর আই উইল শাউট,” হিসহিসে গলায় বলল জুন।

এখন ওর চোখে... হ্যাঁ মেয়েটা পাগল। আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল। মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। এ জায়গাটার নাম খুদওয়ানি, একটা বড় স্কুল আছে, গাড়ি ঠিকই পেয়ে যাব। বাস থামাতে বললাম। পুলিশটি অবাক হল নিশ্চয়ই কিন্তু কিছু বলল না। আমাকে নামিয়ে দিয়ে বাস চলে যাচ্ছে। আমি রাস্তার ধারে
একটা কালভার্টে বসলাম। জানালা দিয়ে মুখ বার করে জুন আমাকে দেখছে। কী পাগল রে বাবা মেয়েটা। এখন ওর দৃষ্টি দেখলে মনে হবে ও ওর কাজের জন্য দুঃখিত। কী করুণ ভাবে তাকিয়ে আছে। যাকগে মরুকগে যাক। আমি একটা সিগারেট ধরানোতে মন দিলাম আর তখনই শুনলাম আওয়াজটা।

জুন রে-র মিশন সফল। গোটা বাসটা এখন জ্বলছে। এ দিকে ও দিকে ছড়িয়ে রক্তমাখা দেহাংশ। ওই ঢাউস জ্যাকেটের তলায় যে বোম ছিল তা কেমন করে জানব। বিস্ফোরণটা একটা বড় পেট্রল পাম্পের সামনে হওয়ায় সেটাতেও আগুন ধরে গিয়েছে।

******

আমি এখন দিল্লিতে আমার ফ্ল্যাটে। চাকরি থেকে সাসপেন্ডেড। একটা অন্য চাকরি হয়েছে বটে। কিন্তু রোজ দু’বেলা পুলিশের জেরার মুখে বসতে হয়। ওই দিনের ঘটনার পর যারা বেঁচে গিয়েছিল, তাদের বয়ান থেকে পুলিশ জানতে পারে বাসে জুন আমার সহযাত্রী ছিল এবং ঠিক বিস্ফোরণের আগে আমি বাস থেকে নেমে গিয়েছিলাম। এটা আমার বিরুদ্ধে গিয়েছে। রোজ দু’বেলা একই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমি চেষ্টা করে চলেছি যে অমরনাথ যাত্রীদের হত্যাকারী মেয়েটিকে আমি চিনতাম না কোনও দিন, তার আসল নামও জানতাম না।

অন্য বিষয়গুলি:

Short Story ছোটগল্প
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy