ছবি: কুনাল বর্মণ।
ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় রবিবার লুম ডাইননোহ পাহাড়চূড়ায় ঈশ্বরী আবির্ভূত হন, প্রতি বছর। কথিত আছে, পুরাকালে তিনি মানুষের উপরে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। মানুষের মাত্রাছাড়া লোভ, হিংসা ও স্বার্থপরতা তাঁর সৃষ্টিকে কলুষিত করে তুলেছিল। পৃথিবীটা দ্রুতবেগে এগিয়ে চলেছিল প্রলয়ের দিকে। তাঁর অন্তরে সঙ্কল্পের উদয় হতেই বিশ্বচরাচর থরথর কেঁপে উঠল। নিদ্রিত আগ্নেয়গিরিরা উন্মুখ হল লাভা উদ্গীরণ করার জন্য। সাতসমুদ্দুর ফুলে উঠে ধেয়ে চলল জগৎসংসার ভাসিয়ে দিতে।
এই সময় এক জন নারী দু’হাত তুলে ছুটে গিয়েছিল অসন্তুষ্ট ঈশ্বরীর দিকে। আভূমি মাথা নত করে সে মিনতি করেছিল, “হে সৃষ্টিকর্ত্রী, দোহাই তোমার, বিরত হও। তারা অপরাধ করেছে। যুগে যুগে তুমি দূত পাঠিয়েছ, তবুও পাপ করে যাচ্ছে। আমার মধ্য দিয়ে তোমার ভাবী সন্তানেরা আসবে। তাদের উপরে বিশ্বাস রাখো। ক্ষমা করো।”
ঈশ্বরী উ ব্লেই নংথ ভ্রূকুঞ্চিত করলেন। বললেন, “বেশ, তোমাদের শেষ সুযোগ দিলাম। এমন চলতে থাকলে এই মহান সৃষ্টি আমি আবার আমাতেই সংবরণ করে নেব।”
পৃথিবী তৎক্ষণাৎ স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে এল। থেমে গেল ভূকম্পন। আগ্নেয়গিরি হল শান্ত। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ নিরীহ ভাবে আঘাত করল তটে।
ওই নারী তার পর থেকে দেবী হিসেবে পূজিত হন। মিন্টডু দেবী নদী হয়ে বয়ে যাচ্ছেন ও মানুষের উপর নজর রাখছেন। তাঁর সহচরী দেবী হলেন লাখ্মী ও রিয়াং খাংনো। বছরের ওই বিশেষ দিনে অসংখ্য ভক্তজন পাহাড়ের পাকদণ্ডী পথ অতিক্রম করে পাহাড়চুড়োয় দেবীমায়ের গুহায় পুজো দিতে যায় এবং মানুষের বিশ্বাস, সেই দিন তিনি একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটাবেন।
ওয়াহ লাঙচেন লেকের পাশে খাড়া উঠে গেছে সবুজ গাছপালা ঢাকা পাহাড়টা। টলটলে স্বচ্ছ সরোবরের জলে শৈবাল বা গুল্মলতা নেই। একটা পাতাও গাছ থেকে ঝরে পড়ে না। নির্মল নিস্তরঙ্গ জলে হাঁসের দল তরতরিয়ে সাঁতার কেটে চলে। শীতের অগণিত পরিযায়ী পাখি এসে নামে। তাদের পাখার আন্দোলনে তখন জল অশান্ত হয়ে উঠে গিরিচূড়ার প্রতিবিম্ব খানখান করে দেয়।
বেতের ঝুড়িতে মুরগি নিয়ে বিলোরিস নংগ্রুম অতি কষ্টে পাহাড় বেয়ে উঠছিল। পুজোর বলি। বিগত কয়েক বছরের মতো এই দিনটায় বিলোরিস যাবেই দেবীমাঈ-এর গুহায়। পথের পাশে সারি সারি ভিক্ষাপ্রার্থীদের ভিড়। বহু বিকলাঙ্গ, অসুস্থ, আর্ত মানুষ দূরদূরান্ত থেকে এই বিশ্বাস বুকে নিয়ে আসে যে, আজ তার প্রার্থনাই পূরণ করবেন দেবীমাঈ। অলৌকিক মির্যাকলটা সে দিন তার ভাগ্যেই ঘটে যাবে।
ধীরে ধীরে উঠছে বিলোরিস। নিরন্তর প্রতিশোধের আগুন জ্বলে তার বুকে। যে বার তার একমাত্র মেয়ে রেবেকা তাকে ছেড়ে একটা বদমাশের সঙ্গে চলে গিয়েছিল, সেই দিন থেকে ধিকিধিকি কাঠকয়লার আগুনে তার মন পুড়ে যাচ্ছে। মেয়েটাও তেমনই অকৃতজ্ঞ বিশ্বাসঘাতক। মার কোনও নিষেধ শোনেনি। বিলোরিসের স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার পর সে একলা মেয়েকে বড় করে তুলেছিল। অন্য পুরুষেরা যে তার সহায় হতে এগিয়ে আসেনি তা নয়, কিন্তু বিলোরিস বাইরের জগতের আঁচ বাঁচিয়ে রেবেকাকে একদম নিজস্ব চারাগাছের মতো পালন করেছিল। এই অঞ্চলে একটা এনজিও খুবই সাহায্য করেছিল ওকে। বিলোরিসদের গ্রুপের তৈরি করা বেতের হস্তশিল্প, সূচিকর্ম একটা সমবায় সমিতির মাধ্যমে গুয়াহাটির সব সরকারি এম্পোরিয়ামে সরবরাহ করত। মায়ের আদরে ভালবাসায় রেবেকা প্রস্ফুটিত হচ্ছিল ফুলের কুঁড়ির মতো। রেবেকার মতো রূপবতী আর ছিল না ওই তল্লাটে।
বাজারের ঝাঁকা নিয়ে হাটে গেলে অনেক তরুণের মুগ্ধদৃষ্টি ওকে অনুসরণ করত। ফেরার পথে কখনও কোনও সাহসী ছেলে রেবেকার মোট সাইকেলে তুলে ঘরের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে যেত। বিলোরিসের চোখে পড়ে গেলে আর রক্ষে নেই। তার জিভের তাড়নায় হতভাগ্য ছেলেটির যে দুর্দশা হত বলার নয়, সে তখন প্রাণ নিয়ে পালাতে পারলে বাঁচে! অপরিচিত ছেলেদের আশকারা দেবার জন্য নিদারুণ বকুনি জুটত রেবেকার কপালে। বিলোরিস পক্ষিমাতার মতো ডানা বিস্তার করে আগলে রেখেছিল মেয়েকে।
সেই মেয়ে এক দিন ভিনগ্রামের ছেলে বানটেইডরের হাত ধরে গৃহত্যাগ করেছিল। ভেঙে পড়েছিল বিলোরিস। বিত্তবান পরিবারের ছেলে বানটেইডর। মায়ের কানে এসেছিল, সে মদ-ড্রাগস-জুয়াখেলা যাবতীয় নেশায় যথেষ্ট পারদর্শী। তার সঙ্গে মেলামেশায় ঘোর আপত্তি ছিল বিলোরিসের। কিন্তু প্রথম যৌবনের প্রাবল্যে ভেসে গিয়েছিল রেবেকা।
পবিত্র পাহাড়চুড়োয় দেবীদর্শনে যাত্রা ওই বছর থেকেই আরম্ভ করেছিল বিলোরিস। বলির জন্য শূকরশাবক নারী-পুরোহিত কা সোহ ব্লেইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সময় জানাতে হয় দেবীর কাছে ভক্তের কী প্রার্থনা। বিলোরিস হিংস্রস্বরে বলেছিল, “শয়তান বানটেইডরের সর্পদংশনে মৃত্যু হোক!”
তার পর প্রতি বছর ওই বিশেষ দিনে বিলোরিস সেই একই প্রার্থনা নিয়ে দেবীমাঈ-এর গুহায় বলি নিবেদন করতে যায় এবং আকুলভাবে তাঁকে অনুরোধ করে, সে বারের মির্যাকল যেন তার ভাগ্যেই ঘটে!
ঘর ছাড়ার বছরদুই পর অন্তঃসত্ত্বা রেবেকাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল বানটেইডর। মেয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল মায়ের দরজায়। দরজা খোলেনি বিলোরিস। প্রবল ঠান্ডায় বাইরে বসে সারা রাত কেঁদেছিল রেবেকা। তার পর এক সময় চলে যায় কোথাও। রেবেকাকে আজও ক্ষমা করেনি তার মা। বিলোরিসের সমস্ত দুঃখযন্ত্রণার মূল কারণ বানটেইডরকেও নয়। তার অপঘাত মৃত্যু না হলে হৃদয় শান্ত হবে না তার। বিলোরিস সেই দিনটার প্রত্যাশায় থাকে, যে দিন সাপের কামড়ে ছটফট করে মরবে শয়তানটা।
পঙ্গু আতুর তীর্থযাত্রীদের দল পাকদণ্ডী পথ বেয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে থেমে থেমে শ্বাস নিয়ে দেবীমাঈ-এর নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতে তারা চড়াই ভাঙে। বলিদানের পশুপাখি অবোধ্য আর্তনাদে কাকে ডাকে বোঝা যায় না।
পাহাড়ের শিখরে দেবীমাতার গুহার সামনে অনেকটা জায়গা জুড়ে সমতল চাতাল। বিগ্রহ নেই, সিঁদুর-চন্দন লেপা একটা বড়সড় প্রস্তরখণ্ড। তার দু’পাশে অপেক্ষাকৃত ছোট আরও দুটো প্রস্তরখণ্ডকে ধনসম্পদ-শস্যের দেবী লাখ্মীমাঈ ও রিয়াংমাঈ জ্ঞানে পুজো করা হয়ে থাকে। প্রধান পূজারি পুরুষ-পুরোহিত লিংডো। কা সোহ ব্লেই বলিপ্রদত্ত জীবকে গুহার বাইরে যূপকাষ্ঠের অদূরে খুঁটিতে বেঁধে রাখে। বলিদানের আগের মুহূর্তে ভক্তের প্রার্থনা জীবের কানে কানে বলে দেওয়া হয় পরপারে গিয়ে দেবীকে জানাবার জন্য। ভক্তের দানে দেবী প্রসন্ন হলে তিনি অলৌকিক কাণ্ড ঘটিয়ে তার অভিলাষ পূর্ণ করে দেন। প্রত্যেক বছর একটি মির্যাকল ঘটবেই, এমনই দেবীর মাহাত্ম্য।
তীর্থযাত্রীর লাইন সর্পিল গতিতে গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছে।
চাতালের মাঝখানে কয়েকজন এক বালিকাকে টানতে টানতে নিয়ে এল। তার হাতদুটো পিছনে বাঁধা। বারো-তেরোর বেশি বয়স নয় তার। তার পরনের ফ্রক মলিন ছেঁড়া, কটু দুর্গন্ধময়। অপুষ্ট দেহ, মুখের উপর ছড়ানো খোলা চুলের ফাঁকে-ফাঁকে তার উদ্ভ্রান্ত ভীত চোখ। মেয়েটাকে ভর করেছে দুষ্ট অপদেবতা। অশ্রাব্য গালাগাল করছে। তার মুখের কষ বেয়ে ফেনা গড়াচ্ছে।
মেয়েটার পরিবার নাকি ধনী, অনেক টাকা দান করেছে। লিংডো বেরিয়ে এল গুহা থেকে। এ বার সে মেয়েটার ঘাড় থেকে অপদেবতা তাড়াবে। কা সোহ ব্লেই এসে সস্নেহে হাত রাখল মেয়েটার মাথায়। পাগলি তার মুখে একদলা থুতু ছিটিয়ে দিল। তার নোংরা গালাগালির মাত্রা বেড়ে গেল। মেয়েটার মাকে বিলোরিস জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে ওর?”
“দুষ্টু অপদেবতা ওর মাথায় চাপে। তখন এই রকম করে।”
“তোমরা কোথা থেকে এসেছ?”
“সে অনেক দূরের পথ। মওসিনরাম গ্রাম। দেবীমাঈ-এর থানে মেয়েকে নিয়ে এসেছি অনেক আশা করে। লিংডো বলেছে, মায়ের কৃপা হলে তিনি অলৌকিক কাণ্ড ঘটিয়ে মেয়েকে ভাল করে দেবেন।”
“তোমাদের গ্রামে ওঝা নেই?”
“আছে। সে খুব বড় ওঝা। মোড়লের বৌয়ের ঘাড় থেকে অপদেবতা নামিয়েছিল। সেটা স্বর্গে ঢুকতে না পেরে এ দিক-সে দিক পাগলের মতো ছুটে বেড়াচ্ছিল। আমার মেয়েটা এক দিন বাইরে এঁটো হাতমুখ ধুতে গেছে, অমনি সামনের গাছটা থেকে সেটা লাফ মেরে ওর ভিতরে সেঁধিয়ে গেছে।”
“কী ভয়ের কথা!”
“অমনি মেয়েটা ও রকম আচরণ করতে লেগেছে। শুচি-অশুচি মানে না। খারাপ কথা বলে, কোথায় যে সে সব শিখল জানি না। ভর করলে ওই একরত্তি মেয়েটার গায়ে দানবের শক্তি, বেঁধে রাখলে দড়ি ছিঁড়ে ফেলে। ঘরের জিনিসপত্র ভেঙেচুরে তছনছ করে। সামনে যাকে পায় আঁচড়ে-কামড়ে রক্তাক্ত করে দেয়। ওঝা হাল ছেড়ে দিয়েছে, বলছে, একই অপদেবতা দু’বার তাড়ানো কোনও মানুষের কর্ম নয়। তাই তো এলাম দেবীমাঈ-এর কাছে।”
“কী সর্বনাশ!” বিলোরিস ভয় পেয়ে বলল, “দেবীমাঈ ওটাকে তাড়িয়ে দিলে যদি অন্য কারও ভিতর ঢুকে পড়ে? কী হবে?”
“না, তা হবে না। লিংডো বলেছে, দেবীমাঈ তাকে পৃথিবী থেকেই তাড়িয়ে দেবে। সে আর কারও ক্ষতি করতে পারবে না।”
বিলোরিস বললে, “আমি অনেক বছর ধরে আসছি। আমার শত্রু নিশ্চিত সাপের বিষে মরবে। দেবীমাঈ এ বার আমার প্রার্থনাই রাখবে…”
সূর্য মধ্যগগনে। পাথরের চাতাল তেতে উঠেছে। গরমে ভক্তদের অস্থিরতা বাড়ছে। এক ধারে গাছের ছায়ায় একটু উঁচু পাথরে তিন উৎসুক যুবতী উঠে ভিড়ের উপর দিয়ে দেখতে চায় লিংডো আর অপদেবতার লড়াই। ওদের এক জনের কোলে এক ফুটফুটে গোলগাল শিশু অবাক চোখে মাথা ঘুরিয়ে কাণ্ডকারখানা বোঝার চেষ্টা করছে। বছর দেড়-দুই বয়স হবে। মাঝে মাঝে অকারণে খলবল হেসে উঠছে। মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কারও চুল ধরে টানছে। খুব দুষ্টু। ওর হাবভাবে মজা পেয়ে অন্য মেয়েরা হেসে কুটিপাটি। আদর করে নরম বাদামি চুলের শিশুটিকে কোলে নিচ্ছে, কিন্তু সে চটপট ফিরে যাচ্ছে মা’র কাছে। এত ক্ষণে বিলোরিসের নজর গেল বাচ্চাটার মায়ের দিকে।
মেয়েটি রোগাভোগা, অল্পকেশী, রুগ্ণ। মুখে বিষাদের ছাপ, চোখের কোণে কালি। তার ময়লা জীর্ণ পোশাকে অজস্র তালি মারা। বোঝা যায়, মেয়েটা এক সময় খুব সুন্দরী ছিল। দারিদ্র তার রূপ শুষে নিয়েছে। রাগে জ্বলে উঠল বিলোরিসের চোখ। আবার মনে মনে খুশিও হল। দেবীমাঈ উচিত শাস্তি দিয়েছে রেবেকাকে। বিশ্বাসঘাতকতার উপযুক্ত পুরস্কার। মায়ের বুকের পাঁজর ভেঙে দিয়ে এক দিন চলে গিয়েছিল একটা শয়তানের সঙ্গে। পালিয়ে যাওয়ার পরে এই প্রথম রেবেকাকে দেখল বিলোরিস। বেশ হয়েছে। বেশ হয়েছে।
অজান্তে বিলোরিসের চোখ চলে গেল রেবেকার কোলে ওই উচ্ছল প্রাণবন্ত শিশুটির দিকে। ভারী নিষ্পাপ মুখ, অনেকটা বিলোরিসের মায়ের মুখের আদল যেন। পরক্ষণে তার বুকে অভিশাপের আগুন জ্বলে উঠল। নানা ভাবের ওঠাপড়া তাকে চঞ্চল করে তুলল। না, মোটেই তার মায়ের মতো দেখতে নয় ওই ভিখিরি রেবেকার ভিখিরি মেয়েটাকে। বরং তার বদমাশ বাপের বংশের ছাপ। সাপের বাচ্চা সাপ হবে না তো কী! অপমান-ঘৃণা-প্রতিহিংসায় বিলোরিসের অন্তর কানায়-কানায় ভরে আছে। এক বিন্দু প্রেম-মায়া-ক্ষমার ঠাঁই নেই সেখানে।
গুহার ভিতর ঘণ্টা বাজল। চাতালের মাঝখানে অপদেবতা পাওয়া মেয়েটাকে ঘিরে জনতা থিকথিক করছে। কা সোহ ব্লেইয়ের হিজিবিজি মন্তর ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠল। লিংডো হুঙ্কার ছেড়ে কাঁটাগাছের ডালের বাড়ি মারছে মেয়েটার শরীরে। ওর গলায় গোঁ-গোঁ দুর্বোধ্য শব্দ। সবুজ রঙের বমি করল মেয়েটা। লিংডো উৎসাহিত হয়ে চিৎকার করল, “হচ্ছে, কাজ হচ্ছে। দেবীমাঈ কৃপা করছেন। হাইড্রাহিয়া শয়তানটার চোখে ধুনো দে।” কা সোহ ব্লেই মেয়েটার মুখ ঠেসে ধরল অঙ্গারের পাত্রে। জন্তুর মতো আর্তনাদ করে উঠে মেয়েটা এক টানে হাতের শক্ত বাধন ছিঁড়ে ফেলল। জনতা ভয়ের আওয়াজ তুলে পিছিয়ে গেল কয়েক পা। লিংডো সিঁদুর-চর্চিত একটা গোল কালো পবিত্র শিলাখণ্ড তুলে ধরল মেয়েটার মুখের সামনে। সে নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। তার অবসন্ন মাথাটা নেমে এল পাথরের টুকরোটার উপর। দেবীমাতার নামে জয়ধ্বনি তুলে লিংডো মেয়েটাকে ঘিরে উদ্দাম নাচতে লাগল। মেয়েটার মা চোখ মুছতে-মুছতে ভিড়ের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে এলিয়ে পড়া ছোট্ট শরীরটাকে বুকে চেপে ধরে সযত্নে দোলাতে লাগল।
বিকেলের রোদে পরিশ্রান্ত কিন্তু তৃপ্ত ভক্তের দল ফিরছিল। সেদিনকার প্রত্যক্ষ অলৌকিক ঘটনা নিয়ে সকলে উত্তেজিত গলায় আলোচনা করছিল। আনন্দে উজ্জ্বল বিলোরিসের কোলে একটা বাদামি চুলের মিষ্টি শিশু ঘুমিয়ে কাদা। তার পিছনে-পিছনে মাথা নিচু করে নামছিল রেবেকা।
সকলের অলক্ষে অন্তর্যামী হাসলেন। হ্যাঁ, সে দিন মির্যাকল তিনি ঘটিয়েছেন নিশ্চিত। তবে একটাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy