ছবি: রৌদ্র মিত্র।
বুড়ো শিবতলার মোড়ে পৌঁছতেই পরিস্থিতি বেগতিক ঠেকল ভজহরির। কাঁচা বয়সের জনাতিনেক চ্যাংড়া ছোঁড়া চটুল হিন্দি গান গাইতে গাইতে এগিয়ে আসছে তাঁর দিকে। তাদের পরনে ছেঁড়া ফাটা জিন্স, হাতে বালা, চোখে গগল্স। ভজহরিকে দেখা মাত্র গান থামিয়ে তারা মুখ চাওয়াচাওয়ি করল নিজেদের মধ্যে। তার পর তিন জনের মধ্যে এক কাঠি সরেস যে, সে হাওয়ায় ছুড়ে দিল প্রশ্নটা, “আরে কাকা, মেন পয়েন্ট খোলা কেন?”
“তাই তো, আমি মাইরি লক্ষ করিনি এত ক্ষণ!” হো হো করে হাসতে লাগল আর এক জন। তৃতীয় জন গম্ভীর গলায় বলল, “জিও কাকা, আপনার ক্যালি আছে।”
“ক্যালি বলে ক্যালি...”
“ক্যালি না কলা, ক্যালানি খেয়ে যাবে দ্যাখ না!”
“কাকা ফিরে যান, না হলে কপালে কষ্ট আছে।”
ভজহরি দারুণ বিব্রত বোধ করতে লাগলেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় তিনি কয়েক কদম এগিয়ে এসে নিচু হয়ে প্যান্টের দিকে তাকালেন। বেশ কয়েক বছর আগে আপিসে এ রকম কেস এক বার খেয়েছিলেন তিনি, চেনটা লাগাতে ভুলে গেছিলেন। কী একটা উপলক্ষে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হয়েছিল সে দিন। মেঝেয় শতরঞ্চি বিছিয়ে খেতে বসেছিলেন জনাদশেক সহকর্মী। পাশে বসা রতনতনুবাবু দাবনায় কনুই ঠেকিয়ে চোখের ইশারায় দেখিয়ে দিয়েছিলেন প্যান্টের চেন-খোলা অংশটা ফুলেফেঁপে কী রকম রুহিতনের টেক্কার আকার ধারণ করেছিল। কেবল বাঁ-হাতের খেলা ছিল না তখন আর, এঁটো হাতটা শুদ্ধ লাগিয়ে চেন টেনে কোনও রকমে লজ্জা নিবারণ করেছিলেন ভজহরি। এ বারও কি তবে সেই কেস? কিন্তু এমনটা হওয়ার তো কথা নয়, কারণ এখন তিনি বসে নেই, হাঁটছেন। প্যান্টের চেন খোলা থাকলেও, হাঁটলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে খোলা অংশ সে ভাবে প্রকটিত হওয়ার কথা নয়।
দেখেশুনে অবাক হওয়ার পালা। নাঃ, চেন তো খোলা নেই! তা হলে? তা হলে কেন অমন করছিল চ্যাংড়াগুলো? বাপের বয়সি একটা লোকের সঙ্গে এই রকম ব্যবহার? শিক্ষাদীক্ষা কি কিছু নেই? ভজহরি আপন মনে গজগজ করতে করতে আরও অনেকটা এগিয়ে এলেন। ভাদ্র মাসের ছাতিফাটা রোদ। কপাল থেকে ঘাম চুঁইয়ে পড়ছে। মফস্সল শহরের রাস্তা শুনশান। কবে যে লকডাউন আর কবে আনলক, মনে রাখা দুষ্কর। ভজহরি দেখলেন, এই মুহূর্তে রাস্তায় পুলিশের ছড়াছড়ি। কনস্টেবল গোছের এক জন এগিয়ে এসে বিরক্ত গলায় ভজহরিকে বললেন, “দাঁড়ান।” ভজহরি স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে পড়লেন। কনস্টেবল চোয়াল শক্ত করে বললেন, “কোথায় যাবেন?”
“ওষুধের দোকান।”
“মাস্ক পরেননি কেন?”
ভজহরি পকেটে হাত চালিয়ে দ্রুত রুমালটা বের করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু পোড়া কপাল, বেরোনোর সময় নানা ব্যস্ততায় রুমালটাই পকেটে পুরতে ভুলে গিয়েছেন। খানিক ইতস্তত করে তিনি বললেন, “আসলে গিন্নি অসুস্থ তো, তাড়াহুড়ো করে বেরোতে গিয়ে...”
“তাড়াহুড়ো করে জামাপ্যান্ট তো কই পরে আসতে ভোলেননি!” কনস্টেবলের গলা কর্কশ।
ভজহরির বুঝতে আর বাকি রইল না, কেন বেপাড়ার বেহায়া চ্যাংড়াগুলো ঠাট্টাইয়ার্কি করছিল তাঁকে নিয়ে। সত্যিই তো এই করোনা-কালে নাক আর মুখই তো আমাদের মেন পয়েন্ট! সে সব না ঢাকা দিলে কপালে তো কষ্ট থাকবেই, পুলিশ ছাড়বে কেন? রাস্তায় কি কাউকে নাক-মুখ খোলা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে? ভজহরি ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, “আজকের মতো ক্ষমা করে দিন স্যর, আর কখনও হবে না।”
“আমি ক্ষমা করলেও, যমরাজ ক্ষমা করবে তো?” কনস্টেবল ক্রূর হাসলেন। ভজহরি কোনও উত্তর দিলেন না। গুটিগুটি পায়ে তিনি এগোতে উদ্যত হতেই কনস্টেবল ডান হাতের তর্জনী উঁচিয়ে রাস্তার ও পারের সারিবদ্ধ দোকানগুলো দেখিয়ে বললেন, “এক্ষুনি চলে যান ওখানে। আগে মাস্ক, তার পর অন্য কথা। না হলে আবার পুলিশ ধরবে। আজ খুব ধরপাকড় চলছে।”
“আজ্ঞে স্যর,” উপায়ান্তর না দেখে বাধ্য ছাত্রের মতো মাথা নেড়ে ভজহরি রাস্তা টপকে ও পারের দোকানের দিকে এগোলেন।
এই লকডাউনে দীর্ঘ দিন আপিস যেতে হয়নি। এখন যদিও বা চল্লিশ-পঞ্চাশ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ চলছে তালিতাপ্পি মেরে, বড়সাহেব ভজহরিকে আসতে বারণ করে দিয়েছেন কড়া ভাবে, “তুমি আমাদের সিনিয়রমোস্ট কর্মচারী। তিন মাস পর রিটায়ারমেন্ট। তা ছাড়া তোমার শুগার আছে, হাই প্রেশার। এক দিনও অফিস আসতে হবে না তোমাকে। বাকিটা আমি বুঝে নেব।” বুঝে কতটা নিচ্ছেন বড়সাহেব সেটা তাঁর ব্যাপার, কিন্তু ভজহরি এখন মর্মে মর্মে বুঝে যাচ্ছেন, বাড়িতে থাকার কী জ্বালা! এমনিতেই মানদার ভয়ে আপিস থেকে দেরি করে ফেরা ছিল যাঁর নিত্যনৈমিত্তিক কৌশল, সেই মানুষটার অবস্থা যে এখন সিংহীর খাঁচায় ঢুকে দিনাতিপাত করার সমান, এ বিষয়ে তাঁর মনে অন্তত কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। ভজহরি নিরীহ মানুষ, গোবেচারা, সাত চড়ে রা কাড়েন না, সবই ঠিক আছে, কিন্তু কাঁহাতক আর আঁচড়-কামড় সহ্য করা যায়? মাঝে মাঝে ঘর সংসার ছেড়ে সন্ন্যাসী হয়ে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, পরক্ষণেই মনে হয়, মানুষটা তো খারাপ নন মানদা, ভিতরে কোথাও যেন একটা অদৃশ্য টান লাটাইয়ের সুতোর মতোই তাঁকে সংসারাকাশে ভাসিয়ে রেখেছে, ওই টান না থাকলে নিয়ন্ত্রণহীন ঘুড়ির মতো মুখ থুবড়ে কবেই চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়তেন!
এই আজ সকালেই যখন শুনলেন মানদার তলপেটে তিন দিন ধরে এত ব্যথা, বাথরুম হচ্ছে উজ্জ্বল খয়েরি, তখন আর তর সইল না তাঁর, পড়িমরি করে বেরিয়ে এলেন ডাক্তারের খোঁজে। থানার পাশে থানকুনি ফার্মেসিতে প্রতি মাসের প্রথম মঙ্গলবার নামী ইউরোলজিস্ট বসেন, আগের দিন নাম লেখাতে হয় লাইন দিয়ে। ভাগ্যক্রমে কালই সেই দিন! এই লকডাউনে ভগবান যদি মুখ তুলে তাকান তো আজই নাম লেখানো হতে পারে। তাই গড়িমসি করেননি ভজহরি। এমনিতেই মানদা বঞ্চনার অভিযোগ এনেছেন তাঁর বিরুদ্ধে, “আমার ব্যাপারে কোনও খেয়াল আছে তোমার? তিন দিন ধরে এত কিছু হচ্ছে, টের পেয়েছ তুমি?”
“তুমি আমায় বলোনি কেন? না বললে কী করে...”
“কী? না বললে তুমি কিচ্ছু জানতে পারবে না? তুমি বুঝি অন্য দেশে বাস করো?”
“তুমি শান্ত হও মানু!”
“হ্যাঁ, শান্ত তো আমায় হতেই হবে। তোমার আর কী, আমি চিরতরে শান্ত হলেই তো তুমি আবার ড্যাংড্যাং করে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়বে,” এ কথা বলতে বলতেই মানদা ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কাঁদতে শুরু করলেন।
“ও ভাবে বোলো না মানু, জানো তো তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই!”
উল্টো ফুটপাতে মাস্কের দোকানে স্টক শেষ। পরশু ঢুকবে নতুন মাল। এর মধ্যেই অনেক কাস্টমার অর্ডার করে রেখেছেন। ডিমান্ড হেবি। ভজহরিকেও অর্ডার করতে পরামর্শ দিলেন দোকানদার। খানিক দোনামনা করে শেষ অবধি পঞ্চাশ টাকা অ্যাডভান্স করে ভজহরি দোকান থেকে বেরিয়ে আবার হাঁটা লাগলেন থানকুনি ফার্মেসির দিকে। কিছু দূর এগোতেই চোখে পড়ল, একটা চোদ্দো-পনেরো বছরের ছেলে কচি ডাব বিক্রি করছে ফুটপাতে। লোভ হল ভজহরির। এমন ডাবের জল পেলে নিশ্চয়ই মানদার উপকার হবে। এক বার আপিসের রতনতনুবাবুর বাথরুম ক্লিয়ার হচ্ছিল না, ডাক্তার ডাবের জল খেতে বলেছিলেন। উপকারও মিলেছিল হাতেনাতে। সাতপাঁচ ভেবে দু-দুটো ডাব কিনে ফেললেন ভজহরি। এই বাজারে কড়কড়ে একশো টাকা বেরিয়ে গেলেও, ডাব দুটো ঝোলায় ভরতে ভরতে মনটা খুশিতে নেচে উঠল তাঁর। হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে যখন পৌঁছলেন গন্তব্যে, ঘড়ির কাঁটা বেলা বারোটা ছুঁই-ছুঁই। ভজহরির কপাল ভাল, কাল ডাক্তারবাবু বসবেন। একশো টাকা অগ্রিম দিয়ে নাম লেখালেন মানদার। কুড়ির দাগে নাম হল, আসতে হবে বিকেল পাঁচটা নাগাদ। আপাতত ফেরার পালা।
কিন্তু অনর্থ ঘটে গেল অচিরেই। থানকুনি ফার্মেসিতে গিন্নির নাম লিখিয়ে বাঁ-হাতের ভারী ঝোলাটা ঈষৎ দোলাতে দোলাতে যেই না তিনি থানা ক্রস করছেন, অমনি পড়লেন পুলিশের মুখে, “মাস্ক কোথায়?”
“ভুল হয়ে গিয়েছে স্যর।”
“মানে? রুমালও নেই?”
“আজ্ঞে রুমালটা হয়েছে কী...”
“থানায় আসুন!”
ভিতরে ঢুকতে গিয়ে বুকের ভিতরটা ঢিবঢিব করতে লাগল ভজহরির। না জানি এরা আবার কী করে! কথায় বলে পুলিশে ছুঁলে...
“ওখানে বসুন,” একটা বেঞ্চির দিকে ইশারা করে ইনস্পেক্টর দাস হেঁড়ে গলায় নির্দেশ দিতেই চুপসে যাওয়া বেলুনের মতো ভজহরি সেঁটে গেলেন সেখানে। টানা দু’ঘণ্টা স্থির বসে আছেন তিনি। পেটে ছুঁচোয় ডন মারছে। মাথা ঘুরছে। চোখে অন্ধকার দেখছেন। মুখ থেকে মাস্ক থুতনিতে নামিয়ে ইনস্পেক্টর দাস তাকালেন এত ক্ষণে, “কী করেন?”
“সরকারি আপিসের গ্রুপ ডি স্টাফ। সামনের অঘ্রানে অবসর।”
“আপনারা শিক্ষিত মানুষ হয়ে যদি এই কাজ করেন...”
“মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না স্যর, দোকানে অর্ডার করেছি!”
“ও সব ফালতু কথা রাখুন। কে বলল পাওয়া যাচ্ছে না?”
ভজহরি চুপ। তাঁর পায়ের কাছে নামানো ঝোলায় চোখ পড়ল ইন্সপেক্টর দাসের, “কী আছে ওতে?”
“ডাব, স্যর।”
“বাঃ! যা গরম পড়েছে,” ইন্সপেক্টর দাস ঠোঁট চাটলেন।
“খাবেন, স্যর?”
কনস্টেবল কার্তিককে ডাকলেন ইনস্পেক্টর দাস।
“কিতু বলতেন, ত্যার?” কনস্টেবল কার্তিক এসে দাঁড়াল। কার্তিকের জিভে আবার বর্ণমালার ‘ত’-অক্ষরটির ওপর নির্লজ্জ পক্ষপাত। বহু অক্ষরকে তাদের ন্যায্য জায়গা থেকে হটিয়ে সে নির্বিচারে ‘ত’ বসিয়ে দেয়।
“এই দুটো স্যরকে দাও,” ঝোলা থেকে ডাবগুলো বের করে ভজহরি ধরিয়ে দিলেন কার্তিকের হাতে। যদি বেঁচে বেরনো যায়!
“আরে কচি ডাব তো, কাট দেখি,” ইনস্পেক্টর দাসের মুখে গ্যালগেলে হাসি। কার্তিক প্লাস্টিকের গ্লাস নিয়ে এল ভিতর থেকে, তার পর ডাব কেটে জল বার করতে গিয়ে টেবিলেই ফেলে দিল অর্ধেকটা। নিজের কৃতকর্মে কিঞ্চিৎ অনুতপ্ত হয়ে সে এক হাত জিভ কেটে বলল, “দাঁড়ান ত্যার, মুতে দিত্তি।”
“হ্যাঁ, মুতে দাও, গোটা টেবিলটা মুতে দাও,” রাগে ইনস্পেক্টর দাস দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলেন, “কতটা জল নষ্ট! যত অপদার্থের দল!”
শেষমেশ ডাবের জলের ওপর দিয়েই ছত্রিশ ঘা এড়াতে পারলেন ভজহরি বাবু। ইনস্পেক্টরের নির্দেশে কার্তিক ভজহরিকে নিয়ে থানার উল্টো দিকের দোকানে গিয়ে মাস্ক কিনে দিল। পকেটে আর একটা টাকাও রইল না। মুখে মাস্ক লাগিয়ে ক্লান্ত শরীরে ভজহরি যখন বাড়ি ঢুকলেন, তখন রোদ্দুর সরে গেছে উঠোন থেকে। ভজহরির মনে বড় ভয়, নিজের জন্য মাস্ক কিনলেও মানদার জন্য তো কেনা হল না, তিনি কি এই বৈষম্য সহজ ভাবে নেবেন? না জানি কী ভয়ঙ্কর শাস্তি অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য! তা ছাড়া মাস্ক ছাড়া মানদাকে নিয়ে কাল বিকেলে যাবেনই বা কী করে ডাক্তারবাবুর কাছে? আবার তো পুলিশ ধরবে! এই সব ভাবতে ভাবতেই অবাক বিস্ময়ে দেখলেন, শাড়ির আঁচলে চোখের জল মুছতে মুছতে মানদা এসে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন তাঁর বুকে, “এত ক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি? আমাকে শাস্তি দিচ্ছিলে বুঝি? এই ভাবে কষ্ট দিতে হয়? মোবাইলটাও তো সঙ্গে নিয়ে যাওনি! আমার বুঝি চিন্তা হয় না?”
“কাল বড় ডাক্তারবাবু বসবেন, আমি নাম লিখিয়ে দিয়েছি, মানু।”
“আমার কিচ্ছু হয়নি গো,” মানদার চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে ভজহরির ঘেমো জামা, “দু’জনে একটু বাইরে বেরোনোর একটা সুযোগ পাব বলে আমি তোমায় নাম লেখাতে বলেছিলাম। ঘরে বন্ধ থেকে কিচ্ছুটি ভাল লাগছিল না আর... কত দিন দু’জনে এক সঙ্গে বেরোনো হয়নি বলো তো! তুমি না-হয় বাজার দোকান করতে মাঝে-মাঝেই... তখন আমার একা একা যে কী কষ্ট...”
মৃদু বিরক্তি দেখাতে গিয়েও চুপ করে গেলেন ভজহরিবাবু। বরং আলতো হাতে মানদার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy