ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ।
তিতিবিরক্ত হয়ে সুজয় বলে উঠল, “উফফ! আবার কানেকশন লস্ট! এ ভাবে কাজ করা যায় না কি!”
বাড়ির ওয়াই-ফাইটা ক’দিন হল খুব জ্বালাচ্ছে। মাঝে মাঝেই কানেকশন চলে যাচ্ছে। আর যখন থাকে, বেশির ভাগ সময়ই ভীষণ স্লো। বাড়িতে বসে টানা অফিস করাটা সত্যিই খুব কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। সুজয় আজ আর ধৈর্য রাখতে পারছে না। হবে না-ই বা কেন! কোম্পানির গুরুদায়িত্ব যাকে সামলাতে হয়, তার পক্ষে সময়ের একটুও অপচয় মানে অনেক বড় ক্ষতি। একে এই লকডাউনের মধ্যে নানা রকম প্রতিকূলতা নিয়েই কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। সুজয়ের আন্ডারে দশ জনের একটা টিম কাজ করে। ফলে প্রায় সর্বক্ষণ তাদের কাজের হিসেব রাখা, বসকে রিপোর্ট করা, সবই তাকে একা হাতে সামলাতে হয়। আসলে কোম্পানিতে সুজয়ের একটা গুডউইল আছে। ও কাজের প্রতি এতটাই নিবেদিতপ্রাণ যে, কোম্পানিও ওর উপর দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত। কিন্তু এই মন্দার বাজারে কোথাও এতটুকু খুঁত রাখা যাবে না। শ্রমের কোনও বিকল্প হয় না, সেটা সুজয় মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে।
অহনা ওর পাশে বসে একমনে অফিসের কাজ সারছিল। তারও ওয়ার্ক ফ্রম হোম। তবে সুজয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ ওকে সামলাতে হয় না। একটা ছোটখাটো প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করে অহনা। সামান্য এই চাকরি এক দিন অহনাকে অসম্ভব মনের জোর জুগিয়েছিল। হঠাৎ করেই মা চলে গেল। বাবা কেমন খাপছাড়া হয়ে গেল। ভবিষ্যৎ একটা বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে অহনার মাথায় ঝুলতে লাগল। ঠিক সেই সময় মুশকিল আসানের মতো চাকরিটা হয়েছিল। নয় নয় করে প্রায় দশ বছর চাকরি হয়ে গেল। এখন সে রীতিমতো জড়িয়ে-পেঁচিয়ে গেছে সে এই চাকরিটার সঙ্গে। এই লকডাউনে সেটা বেশ বুঝতে পারছে অহনা।
“তোমার কাজ কি হয়ে গেছে?”
সুজয়ের প্রশ্নে চমক ভাঙে অহনার, “কেন বলো তো?”
“না, মানে ওয়াই-ফাইটা বড্ড স্লো, লোড বেশি পড়ছে বলেই হয়তো এই অবস্থা। আমার একটা জরুরি মিটিং আছে। কোম্পানির এমডি, সিইও সকলে থাকবেন। যদি খুব প্রবলেম না হয়, কিছু ক্ষণের জন্য একটু অফ হবে?”
অহনা বরাবরই নির্বিবাদী। জোর করে কিছু দাবি করা একেবারেই ওর স্বভাববিরুদ্ধ। করছিল একটা জরুরি কাজই, ইন্টারনেটের সাহায্যও লাগছিল কিছু ইনফর্মেশন জোগাড় করতে। তবে কাজটা একটু পরে করলেও চলবে। বিনা দ্বিধায় সুজয়ের কথা মেনে
নিল অহনা।
“রাগ করলে না তো?” সুজয় জিজ্ঞেস করল।
“কী যে বলো!” এক গাল হাসি দিয়ে অহনা ল্যাপটপ বন্ধ করতে উদ্যত হল।
“আর কাজ করবে না?”
“তুমি মিটিং সেরে নাও, আমি পরে বসব। দেখি, মায়ের যদি কিছু দরকার হয়।”
বৌয়ের উদারতাকে গভীর চোখে সমাদর জানাল সুজয়।
অহনা বড্ড বেশিই ভাল। সেটাই যত সমস্যার কারণ। সুজয় বুঝতেও পারে না, মেয়েটার কোনটা ভাল লাগে আর কোনটা মন্দ। কোন কথায় যে অভিমান হয়, বোঝা খুব কঠিন। অহনা মুখরা হলে সুজয় বোধ হয় বেঁচে যেত। সবটাই যে বিনা প্রশ্নে ছেড়ে দেয়, তার সঙ্গে কিসের যুদ্ধ?
“কিছু কাজ আছে মা?” নীচের তলায় শাশুড়ির কাছে এল অহনা।
“ওহ! তুমি এসেছ যখন ভালই হয়েছে, দেখো না বৌমা, আমি আর তো পেরে উঠছি না! ক’দিন যে এ ভাবে টানতে হবে! রান্নার লোক না এলে এ ভাবে চালানো আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। তাড়াহুড়োয় হাতটা পুড়িয়ে ফেললাম। এ দিকে সুজুর খাওয়ার সময় হয়ে গেল। এখনও আমার মাছ রান্না হয়নি। এসে খাবার না পেলে তো কুরুক্ষেত্র বাঁধাবে!”
অহনা হেসে বলল, “তুমি ওই ঘরে বসে চুপচাপ টিভি দেখো। আমি এক্ষুনি বাকিটা করে ফেলছি। ও
এলে আমি খেতে দিয়ে দেব। চিন্তা কোরো না।”
প্রতিভাদেবী প্রসন্ন হয়ে ভিতরের ঘরে চলে গেলেন।
অহনা বড় ভাল মেয়ে। সকলের খেয়াল রাখে। সাত চড়ে ওর রা নেই। সুজুর বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিভাদেবীর প্রতি অহনার যত্ন আরও যেন বেড়ে গেছে। এত দিন এ বাড়িতে কোনও রান্নার লোক ছিল না। অহনাই জোর করে সুজয়কে বলে সে ব্যবস্থা করে দিয়েছে। শুধু একটা ব্যাপারই প্রতিভাদেবী হজম করতে পারেন না। সেটা হল অহনার চাকরি। কী যে দরকার ওর চাকরি করার! বাড়িতে কোনও কিছুর কোনও অভাব নেই। সুজু যা রোজগার করে, তাতে ওদের বিলাসিতায় কোনও কমতি হয় না। সুজয়ের মুখ চেয়ে ব্যাপারটাকে মেনে নিয়েছেন প্রতিভাদেবী। কিন্তু, মাঝে মাঝেই এই অস্বস্তিটা খোঁচা দেয়। কী যে আনন্দ পায় আজকালকার মেয়েরা চাকরি করে, কে জানে বাবা! দরকার না হলেও ‘চাকরি করতে যাচ্ছি’ এটা যেন খুব অহঙ্কারের বিষয়! তাঁদের সময় তো এ সব ছিল না। বিয়ের পরে সটান সংসারে মন দাও, ছেলেপুলে মানুষ করো, সকলের সেবাযত্ন করো, এটাই তো মেয়েদের সাজে! স্বামী যেটুকু রোজগার করে আনছে, তাতেই মানিয়ে-গুছিয়ে চলো। আজকাল এদের চাহিদারও অন্ত নেই, তার পিছনে ছোটারও বিরাম নেই। যাক গে, যা ভাল বোঝে করুক।
এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সুজুর গলা কানে এল। মনে হয় খেতে নেমেছে। প্রতিভাদেবী বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে। যা ব্যস্ততার চাকরি সুজুর, এই সময়টুকুই পাওয়া যায় দু’টো কথা বলার জন্য।
“খেতে বসেছিস বাবা?”
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল সুজয়, “তোমার না কি হাত পুড়ে গেছে?”
“ওই একটু...”
“কত বার বলেছি তাড়াহুড়ো কোরো না! বয়স হচ্ছে তোমার!”
“তোর খাবার সময় হয়ে যায় যে, তখন সব সাজানো না পেলে তো বাড়ি মাথায় করিস! কী করে শান্ত হয়ে কাজ করব? বয়স তো হচ্ছে সত্যি সত্যিই। রান্নার লোক ছাড়া এ ভাবে কি পারা যায়?”
“মা, অসুবিধে তো অনেকেরই হচ্ছে, ক’টা দিন একটু ধৈর্য ধরো। অহনা তো বাড়িতেই আছে এখন, ওকে বোলো, ও তোমায় হেল্প করবে। ওর চাকরির তো এত চাপ নেই…”
“তা অমন চাকরি করা কেন বাপু সেটাই তো বুঝি না,” মৃদু স্বরে অনুযোগ জানালেন প্রতিভাদেবী।
মা-ছেলের শেষ কথাগুলো কি একটু ধাক্কা মারল কানে? মাছের ঝোল বাটিতে বাড়তে বাড়তে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল অহনা। সুজয়ের তো ওর চাকরি নিয়ে কোনও দিন কোনও আপত্তি ছিল না! ও-ই তো বরং বার বার বলত, “চাকরি ছাড়ার কথা ভাববেও না। এখন যে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা, দু’জনের চাকরি করাটা মাস্ট। বাকি সব কিছু সেই মতো অ্যাডজাস্ট হয়ে যাবে।”
কিন্তু আজ সুজয়ের কথাটা এত ঘুরপাক খাচ্ছে কেন মনে? অহনা বোঝে, তার চাকরিটা খুব একটা কদর পায় না সুজয়ের কাছে। তেমন গ্ল্যামারাস কোনও ব্যাপার নেই। ছোট কোম্পানি। মাস গেলে কিছু টাকা ঢোকে অ্যাকাউন্টে, এই যা। তবে সুজয় কোনও দিনই অহনাকে চাকরি ছাড়ার কথা বলেনি। বিয়ের আগেও নয়, এখনও নয়। কেবল বলেছে, মাকে হেল্প করার কথা। নাহ, অহনা একটু বেশিই
ভেবে ফেলেছে।
মাছের বাটি সুজয়ের কাছে দিয়ে শাশুড়িমাকে বলল, “তুমি বলবে মা, তোমার যখন যেমন প্রয়োজন হবে। আমি ঠিক সময় বার করে ফেলব। ক’টা দিনের তো ব্যাপার। আরতি এলেই সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে।”
কিছু বলতে গিয়েও প্রতিভাদেবী চুপ করে গেলেন। ছেলে-বৌয়ের হাতে সংসার, তারা যেমন বলবে তেমনই হবে। উনি মানে মানে বিদায় নিতে পারলেই হয়।
“সুজুর হলে আমাদের খাবারটাও বেড়ে ফেলো বৌমা,” বলে ভিতরে যেতে উদ্যত হলেন প্রতিভাদেবী।
অহনা এটা ভাল ভাবেই জানে, প্রতিভাদেবীর সব অসন্তোষের মূলে ওর চাকরি। অহনা এ বাড়িতে আসার প্রথম দিন থেকে এই নিয়ে একটা অশান্তি তাঁকে গ্রাস করেছিল। একমাত্র ছেলের বৌ চাকরি করবে, এটা মেনে নিতে পারছিলেন না কিছুতেই। বৌয়ের চাকরির বিষয়ে সুজয়ের সুপ্ত সম্মতি দেখে তিনি আর কথা বাড়াননি। কিন্তু মাঝে মাঝেই নানা কথাপ্রসঙ্গে শাশুড়ির মনোভাব অহনা টের পায়। সুজয়ের বাবা যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন প্রতিভাদেবী নানা কাজে ব্যস্ত থাকতেন, সময় হু-হু করে কেটে যেত। শ্বশুরমশাই মারা যাওয়ার পর থেকে অহনার চাকরি নিয়ে তাঁর এই অস্থিরতা যেন বেড়েছে। প্রায় সারা দিনই বাড়িতে একা থাকেন প্রতিভাদেবী। কথা বলার সঙ্গী বলতে রান্নার মেয়ে আরতি। সুজয় আর অহনাকে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে হয় অফিসের জন্য। অহনা ফেরে আগে। শরীর ক্লান্ত থাকলেও, কিছুটা সময় শাশুড়িমাকে দেয় সে। একা মানুষ, তাঁকে ভাল রাখার দায়িত্ব অহনারও কম নয়।
মায়ের কথা খুব মনে পড়ে অহনার। অহনা তখন কলেজে। দুম করে এক দিন মা খুব অসুস্থ হয়ে রাতারাতি হাসপাতালে ভর্তি হল। সেই যে গেল, আর বাড়ি ফিরে এল না। নিজের প্রতি অযত্নে শরীরটাকে পুরো ঝাঁঝরা করে তুলেছিল। ডাক্তার জানিয়েছিলেন, লিভার কিডনির বেশির ভাগ অংশই ড্যামেজ হয়ে গেছিল। এতটাই ক্রিটিকাল স্টেজে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল যে, তাঁদের আর কিছুই করার ছিল না।
মাকে শরীরের যত্ন নেওয়ার কথা বললেই বলত, “আমার যা হওয়ার হয়েছে। এ বার তাঁর ডাক আসবে, চলে যাব। তুই মন দিয়ে পড়াশোনা কর। বাইরের দুনিয়াটা দেখ। আমার মতো সারা জীবন ঘরবন্দি হয়ে থাকিস না।”
বাবা কাছাকাছি থাকলে চশমার আড়াল থেকে একটা অদ্ভুত হাসি দিত, তার পর মাকে বলত, “বিয়ের পর যখন বলেছিলাম পড়াটা চালিয়ে যাও, তখন তো খুব গিন্নি হয়ে উঠেছিলে। সংসারই আমার সব ইত্যাদি কত না ডায়লগ! তা এখন বুঝতে পারছ তো, সিদ্ধান্তটা কতটা ভুল ছিল?”
মা ঝাঁঝিয়ে উঠত, “তুমি তো বলেই খালাস! এত বড় গুষ্টির হেঁশেল সামলে পড়াশোনা করব! চাট্টিখানি কথা! বিয়ে না করলে আজ দেখতে কত উন্নতি করে ফেলতাম।”
“সেই সেই…” বলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠতেন সুধীরবাবু। অহনাও যোগ দিত
সেই হাসিতে।
মা চলে যাওয়ার পর বাবাও কেমন জড়োসড়ো হয়ে গেল। অহনাকে যেন আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরলেন সুধীরবাবু। স্ত্রীর অপূর্ণ স্বপ্নগুলো মেয়ের মধ্য দিয়ে যেন সার্থক হয়, এটাই শেষ বয়সে হয়ে উঠেছিল সুধীরবাবুর ধ্যানজ্ঞান। হলও তাই। কলেজ শেষ করেই চাকরি পেল অহনা।
খাবার টেবিলে বসে শাশুড়ি-বৌয়ের অনেক গল্পই হয়। পাড়ার পজ়িটিভ কেসের খবর থেকে বিশ্বের এই টালমাটাল অবস্থা... কিছুই বাদ পড়ে না। আজ কেন কে জানে, প্রতিভা দেবীর মুখ গোমড়া। বসেই খাওয়ায় মন দিলেন তিনি। কোনও রকমে খাওয়া সারতে পারলেই যেন বেঁচে যান! অহনা ভাল করেই জানে, এই বিষণ্ণতার কারণ তার চাকরি। আরতির ফিরে আসা যে সমাধান নয়, তা অহনা বোঝে। প্রতিভাদেবীর সারা জীবনের অপ্রাপ্তিগুলো তাঁকে কিছুতেই শান্তি পেতে দেয় না। তাই অহনাকে চাকরি করতে দেখাও তাঁর পক্ষে সহজ নয়। যে মানুষ সারা জীবন পায়ে শিকলের যন্ত্রণা অনুভব করেছে, তার কাছে মুক্তির কী অর্থ? মেয়েদের স্বাধিকার-টাধিকার ওঁর কাছে নিছকই গালভরা গল্পকথা।
অহনা পরিবেশ হালকা করার জন্য বলে, “মা, এই মহামারি সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে কী সাংঘাতিক প্রভাব ফেলছে জানো না, কত লোক যে চাকরি হারাবে! কত যে বেকার বাড়বে! ছোট বড় সব কোম্পানিই এখন মারাত্মক একটা ক্রাইসিসের মধ্যে আছে। আমাদের কোম্পানিতেও কী হয়...”
অহনার কথা শেষ না হতেই প্রতিভাদেবী বলে বসলেন, “সে ভাগ্য কি আর আছে আমার!” বলেই জিব কাটলেন।
“মা!” অহনা এ বার আর না হেসে পারল না।
পরিবেশটা মুহূর্তে বদলে গেল। অহনা হালকা বোধ করে।
মানুষের জীবনে এক-একটা মুহূর্ত আসে, যখন সব হিসেব গুলিয়ে যায়। অহনা-সুজয়ের জীবনেও সেই মুহূর্তটা এল। রাত্তিরে খাবার টেবিলে সুজয় জানাল, কোম্পানি তাকে রেজ়িগনেশন দিতে বলেছে। মার্কেট ড্রাই হয়ে গেছে। বিপুল ফিনানশিয়াল লোড কোম্পানি আর নিতে
পারছে না। ফলে হাই স্যালারিড এমপ্লয়িদের অনেকের কাছেই ইস্তফা চেয়েছে কোম্পানি। সুজয় তাদের মধ্যে এক জন।
প্রতিভা দেবীর পক্ষে এই সংবাদ সহ্য করা সম্ভব হয়নি। তিনি স্থবির হয়ে বসে রইলেন টেবিলে। অহনা দমে যায়নি, “সব ঠিক হয়ে যাবে, চিন্তা কোরো না,” বলেছিল সুজয়কে। সুজয় মনে মনে জানত, এত সহজে সব ঠিক হওয়ার নয়। তিনটি মানুষ বেশ কিছুটা সময় কাটাল নীরবে। কে কাকে সান্ত্বনা দেবে, তা স্থির করতে করতেই রাত কাবার হয়ে গেল।
সারা রাত তোলপাড় হয়েছে তিন জনের মনে। সকালের আলোয় সে বিপর্যয়ের ছবি আরও স্পষ্ট হয়ে এল। সুজয়ের চোখ থেকে নেমে যাচ্ছে কোম্পানির গুরুভার। অহনা এখনও দমে যায়নি। ল্যাপটপ নিয়ে বসল কাজে। প্রতিভা দেবী তলিয়ে গেলেন সংসারে।
ল্যাপটপ খুলে অহনা ভাবে, সুজয় হার মেনে যাওয়ার ছেলে নয়। ঠিক লড়াই করে নেবে। এই ক্রাইসিস তো অপ্রত্যাশিত। এতে কারও হাত নেই। একটু সময় লাগবে, এই যা।
প্রতিভা দেবীর ডাকে চমক ভাঙে অহনার, “মা… কিছু বলবে?”
সে মুখ তুলে দেখে প্রতিভা দেবীর হাতে জলখাবারের থালা। চোখে করুণ আর্তি।
“না খেলে কাজ করবে কী ভাবে?” বললেন প্রতিভাদেবী।
অহনার শ্বাস আটকে এল, চোখে অবরুদ্ধ কান্না। পায়ে শিকলের যন্ত্রণা বেশ টের পাচ্ছে সে-ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy