Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Short story

Short story: চা

প্রশ্ন তো অনেক। কিন্তু আর কোনও উত্তর না খুঁজে চোখ বন্ধ করে ফেললেন কর্ণ সেন। তার পর গভীর শ্বাস টেনে চায়ের কাপে দ্বিতীয় চুমুক দিলেন।

ছবি: রৌদ্র মিত্র।

ছবি: রৌদ্র মিত্র।

চিত্রালী ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৪২
Share: Save:

থরো চেক-আপের সমস্ত রিপোর্টে দ্রুত চোখ বোলাতে বোলাতে ডক্টর সোম গম্ভীর ভাবে ব্রহ্মাস্ত্রটা নিক্ষেপ করে দিলেন, “চা খাওয়াটা একেবারে বন্ধ করুন এ বার।” উল্টো দিকে উদ্বিগ্ন মুখে বসে থাকা কর্ণ সেন যে তখন প্রকৃতই অভিশপ্ত কর্ণের মতো মোক্ষম সময়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সমস্ত কৌশল ভুলে গিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে আছেন, তা খেয়ালই করলেন না ডাক্তারবাবু।

“চায়ে চিনি খান?” দ্বিতীয় তির।

“হ্যাঁ, মানে চায়ে তো অল্প চিনি...” কর্ণ সেন বিড়বিড় করে কিছু একটা বলতে যেতেই ডক্টর সোম বলে উঠলেন, “চলবে না। চায়ে চিনি দুধ সব বন্ধ করতে হবে। জানি অনেকের মতো আপনিও বলবেন, তা হলে আর চা খেয়ে কী লাভ? তাই বলছি, চা খাওয়াটাই বন্ধ করুন... ড্রিঙ্ক নিশ্চয়ই করেন না এই বয়সে?”

তৃতীয় তির নিক্ষিপ্ত হতেই কর্ণ সেন রুখে উঠলেন। বেশ স্পষ্ট স্বরে বললেন, “মাঝেমধ্যে বন্ধুরা একত্র হলে তো একটু-আধটু তো চলেই।”

“সর্বনাশ! এই বয়সে আবার ও সব কেন!”

“মানে! কী হয়েছে আমার? খুব সিরিয়াস কিছু কি?”

ডক্টর সোম মুচকি হেসে বললেন, “বয়স হয়েছে আপনার, আর বয়স হলেই যে অসুখগুলো আক্রমণ করে তার প্রায় সবগুলোই ধরিয়েছেন। হাইপ্রেশার, শুগার, ক্রিয়েটিনিন লেভেলে গন্ডগোল, লিভারটিও তেমন সুবিধের নয়। তবে খুব ভয় পেয়ে যাওয়ার মতো কিছু হয়নি এখনও, সবই বর্ডারলাইনের ধারেকাছেই আছে। এখন থেকে ধরাকাটে থাকলে ভাল থাকবেন, নয়তো...” বলে চুপ করে গিয়ে দ্রুত হাতে প্রেসক্রিপশন লিখে কাগজটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “এই এক, দুই, তিন নম্বরের ওষুধগুলো দু’বেলা একটা করে খাবেন আর চার নম্বরটা ঘুম না হলে। ওটা অপশনাল। এক মাস পর রিপোর্ট করবেন আমাকে।”

প্রেসক্রিপশনটা হাতে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার পর জোরে একটা শ্বাস নিলেন কর্ণ সেন, তার পর হাঁটতে শুরু করলেন বড় রাস্তা ধরে। অটো বা টোটোয় চড়তে আর ইচ্ছে করল না। আজ নিজের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া দরকার, তাই হাঁটাই ভাল। বোঝাপড়া বলতে, এর পর কী করবেন তিনি। ডাক্তারের পরামর্শ মতো সব কিছুর সঙ্গে সাধের চা-টাও বন্ধ করে দেবেন, নাকি চিনি-দুধ ছাড়া ওই ঘোড়ার ইয়ে... জিভ কাটলেন কর্ণ সেন। ছেলে-বৌমার চাপে পড়ে থরো চেক-আপ করাতে গিয়ে কী সমস্যাতেই না পড়েছেন! আরে বাবা, এই বয়সে ডাক্তারের কাছে গেলে কিছু না কিছু অসুবিধে তো বেরিয়ে আসবেই! সব নাকি বর্ডারলাইনের কাছে আছে, যত্তসব... বিড়বিড় করলেন উনি। এই বয়সে বর্ডার পেরিয়ে একটু আক্রমণ না হলে শরীর মৃত্যুর দিকে এগোবে কী করে? ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলেন বাজারের দিকে।

ছোট্ট আনস্মার্ট মোবাইলটা বার করে সময় দেখলেন। রাত ন’টা। অতএব প্রতিদিন যে দোকানটার সামনে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন, সেখানে আর কেউ নেই। বুড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির কড়া নির্দেশে রাত সাড়ে আটটার মধ্যে লেজ গুটিয়ে পালায় সব। যাঁদের গিন্নি এখনও বর্তমান, তাঁদের তবু হম্বিতম্বির একটা জায়গা আছে, কর্ণ সেনের সে সুযোগও নেই। তিন বছর হল গত হয়েছেন তিনি। ছেলেকে কিছু বলতে গেলেই বলে, “এখন বুড়ো হয়েছ, আমাদের কথা শুনে চললে ক্ষতি কী? আমরা তো তোমার ভালই চাই না কি?”

এর পর কি আর কথা চলে? কর্ণ সেনও চুপ করে গেছেন। ডানা-ছাঁটা পাখির মতো খাঁচার নির্দেশ মেনে নিয়েছেন। তা বলে চায়ের ওপর কোপ! ওই একটি সাধই তো টিকে আছে এখনও। দারুণ ফ্লেভারের দার্জিলিং টি, হাল্কা দুধ আর চিনি দিয়ে, দু’বেলা দু’কাপ। সেটুকুও এ বার ছাড়তে হবে! ভাবতে ভাবতেই বাড়ি ফিরে মনখারাপ নিয়ে না খেয়েই শুয়ে পড়লেন।

পরদিন ভোর-ভোর উঠে রোজকার মতো খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে ব্যালকনির চেয়ারটায় বসতেই অনু চা নিয়ে এল। এ সময়টা খুব উপভোগ করেন কর্ণবাবু। শীতের সময়। অল্প অল্প রোদ এসে পড়েছে পায়ের কাছে। বৌমা রিমঝিমের লাগানো নানা জাতের পাতাবাহারের উপরে আলো পড়ে ঝলমল করছে। সে সবে চোখ বুলিয়ে চায়ে প্রথম চুমুকটা দিতে গিয়ে থমকালেন। কাজের মেয়েটা তখনও দাঁড়িয়ে।

কর্ণ সেন দেখলেন, তার প্রিয় ট্রান্সপারেন্ট কাচের টি-মগে গরম জলের মধ্যে একটা টি-ব্যাগ ডোবানো। উনি অনুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী এটা?”

অনু হেসে বলল, “গিরিন টি। বৌদি বলেছে আজ থেকে এই চা খেতি হবে তোমারে। ও সব দুধ-চিনি চলবেনি, ডাগদারের বারুন।”

কোনও কথা না বলে খানিকটা দ্বিধা নিয়ে, মগটা তুলে প্রথম চুমুকটা দিতেই অনু হেসে বলল, “ভাল?”

কর্ণ সেন ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে বললেন, “ঠিক আছে, তুই যা,” বলে কাগজটা মুখের ওপর তুলে পড়ার ভান করলেন।

অনু তবু কিছু ক্ষণ অহেতুক দাঁড়িয়ে থেকে নিজের কাজে চলে যেতেই কাগজের আড়াল সরিয়ে ফের তাকালেন মগটার দিকে। মুখে তখনও প্রথম চুমুকের অনভ্যস্ত বিস্বাদ। আর মনে রাগ-দুঃখ-অভিমানের এক জটিল সংমিশ্রণ। সেই ফ্লেভার-সমৃদ্ধ দার্জিলিং চায়ের বদলে এই অপেয়টি তা হলে বরাদ্দ হল তাঁর জন্য! বৌমা না জানুক, ছেলেটা তো জানে তার বাবা চা নিয়ে কতটা সেনসিটিভ! এই বয়সেও কত দূর থেকে তিনি তাঁর সাধের চা কিনে আনেন! অনুও দেখেছে সে সব, তবু এ ভাবে...

কর্ণ সেন গুম মেরে বসে থাকলেন কিছু ক্ষণ। তার পর ঠান্ডা মাথায় চায়ের মগটা তুলে সামনের পাতাবাহারের টবটায় ধীরে ধীরে ঢেলে দিয়ে ঘরে ঢুকে শালটা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে যেতে গিয়ে থামলেন। খুব শান্ত গলায় ডাকলেন, “রিমঝিম...রিমঝিম...”

ডাক শুনে বৌমার বদলে অনুই দৌড়ে এসে বলল, “বৌদি তো বাথরুমে, কিছু বলবে?”

“তোর বৌদিকে বলে দিস, আমি একটু বেরোচ্ছি।”

“এ সময় তো তুমি কোনও দিন বেরোও না মেসো!”

“এখন থেকে বেরোব, ডাক্তারবাবু বলেছেন...” বলে কর্ণ সেন ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন।

কোথায় যাবেন তা এখনও পরিষ্কার নয়। শুধু নিজেকে সংযত করার জন্য হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে গৌড়ীয় মঠ ছাড়িয়ে ত্রিকোণ পার্কে এসে দাঁড়ালেন। দেখলেন, এই শীতের মধ্যেও কত জন শরীরচর্চায় ব্যস্ত। তাঁর মতো বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও হাঁটছেন দ্রুতবেগে। দেখতে দেখতে মুচকি হাসলেন। শরীর নিয়ে ওঁর কোনও দিনই তেমন মাথাব্যথা নেই, উনি চিরকাল ব্যতিব্যস্ত ওঁর মন নিয়ে। আর আজকের ওই গ্রিন টি-পর্ব সেই মনের উপরে এক তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। মনে হয়েছে, তাঁর জীবন থেকে স্বাদ আর মিষ্টতা বিদায় নিল বুঝি। কিন্তু কাকে বোঝাবেন এ সব? বন্ধুরা শুনলে হাসবে। বলবে, ‘এ তোমার বাড়াবাড়ি কর্ণ। তোমার সুস্থতা নিয়ে ছেলে-বৌ কত ভাবে বলো তো! তোমার তো খুশি হওয়া উচিত!”

এ সব তত্ত্বকথা শুনতে আজ আর ভাল লাগছিল না, তাই বাজারের দিকে ওঁদের নির্দিষ্ট আড্ডায় না গিয়ে উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করলেন।

এ দিকটা বড় একটা আসেন না কর্ণ সেন। বলা ভাল এড়িয়ে যান। এ তাঁর অতীতের পথ। এক সময় রোজ এক বার করে এই পথ দিয়ে না গেলে তাঁর মন কেমন করত। কিন্তু কোনও এক সময় থেকে এ পথ তিনি সতর্ক ভাবেই এড়িয়ে গেছেন। এই দিঘির ধার, মোরামের রাস্তা, রেল কলোনির মাঠ, দীনবন্ধু পাঠাগার— এ সবের সঙ্গে পত্রালি নামটাও যে এসে পড়তে পারে সামনে, তাই এত আয়োজন, এত প্রাচীর নির্মাণ। কিন্তু আজ যে কী হল, সেই পত্রালিদের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন একেবারে! প্রায় চার দশকেরও কিছু বেশি বছর পর।

এত দিন পরেও সেই একই রকম আছে বাড়িটা। শুধু রং হয়েছে নতুন করে, আর দোতলার জানলাগুলোতেও নীলের বদলে নেটের পর্দা উঠেছে। হাওয়ায় উড়ছে পর্দা। হঠাৎ অকারণেই মনে হল, পত্রালি কি এখনও ওখানেই থাকে? আর সেই অনুষঙ্গে মনে পড়ে গেল ওর বাড়িয়ে দেওয়া প্রথম চায়ের কাপটার কথা। তখন ওদের বাড়ি প্রায়ই যেতেন উনি, পত্রালির দাদার বন্ধু হিসেবে। ডব্লুবিসিএস-এর প্রস্তুতি চলছিল দু’জনের। আড্ডাও চলত ফাঁকে ফাঁকে, আর রোজই অপূর্ব ফ্লেভার-সমৃদ্ধ দু’কাপ চা আসত ভিতর থেকে। অল্প দুধ আর চিনি দিয়ে স্পেশ্যাল দার্জিলিং টি। সেই স্বাদে মজে উঠত মন। এক দিন থাকতে না পেরে জিজ্ঞেসই করে ফেলেছিলেন, “কে করেন রে চা-টা? নিশ্চই মাসিমা? অপূর্ব স্বাদ রে! এই চায়ের জন্যই রোজ তোদের বাড়ি আসা যায়।”

অমিত হাসতে হাসতে বলেছিল, “মা নয় রে, সে এক জন রায়বাঘিনি আছে আমাদের বাড়ি, দেখবি?” বলেই বন্ধুকে অপ্রস্তুত করে ডেকে উঠেছিল, “অলি... এই অলি... এক বার আয় তো!” বলতেই ভারী পর্দা সরিয়ে উঁকি দিয়েছিল সুন্দর পানপাতার মতো একটা মুখ, গালে টোল, চোখে অদ্ভুত দুষ্টু একটা আলো। দেখেই এক ঝটকায় ভাল লেগে গিয়েছিল কর্ণ সেনের। বেশ কিছু ক্ষণ হাঁ করে বোকার মতো তাকিয়ে ছিলেন ওর দিকে। মেয়েটি ফিক করে হেসে পর্দা দুলিয়ে চলে যেতেই সংবিৎ ফিরেছিল।

ওঁর অবাক হওয়া মুখ দেখে অমিতই হেসে বলেছিল, “আমার বোন, অলি, মানে পত্রালি। ভীষণ মেজাজি। দুমদাম যা ইচ্ছে তা-ই করে ফেলে মার কাছে বকুনি খায় বটে, কিন্তু চা-টা বেড়ে করে। সকলেই ওর চায়ে মুগ্ধ।”

সেই স্বাদ আজও লেগে আছে মুখে। আর মন? সে যে তার পর থেকে কত বার দেখতে চেয়েছে
ওই পানপাতাকে তার ইয়ত্তা নেই, কিন্তু দেখা হয়নি আর। প্রতিদিন চায়ের স্বাদে ভালবাসার ফ্লেভার গভীরতর হয়েছে।

তার পর হঠাৎ করেই এক দিন থেকে চা আসা বন্ধ হয়ে গেল! দু’-চার দিন পর থাকতে না পেরে অমিতকে জিজ্ঞেসই করে ফেললেন, “ব্যাপার কী?”

“অলির বিয়ে ঠিক হয়েছে রে!” খুব উত্তেজিত ভাবে জবাব দিয়েছিল অমিত।

“বিয়ে!” কর্ণ সেনের মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে যেতেই অমিত অবাক হয়ে বলেছিল, “কেন? তোর আপত্তি আছে না কি?”

“না, না, সে কী কথা! আসলে হুট করে সব ঠিক হয়ে গেল, তাই...”

“ও, তাই বল...” হেসে উঠেছিল অমিত।

সে দিন থেকে কত দিন যে অস্থির লেগেছিল! পালিয়ে বেড়িয়েছিলেন অমিতের থেকে, পাছে ধরা পড়ে যান। বাথরুমের আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ পর্যবেক্ষণ করতেন প্রতিদিন। কিছু বোঝা যাচ্ছে না তো! প্রেমিকের কোনও রেখা কি ঠেলে বেরিয়েছে? শেষে বিলাসপুরে চাকরির ব্যবস্থা হয়ে যেতে পালিয়ে বেঁচেছিলেন। সময় থাকতে যে সাহস করতে পারেননি, অসময়ে সে সাহস দেখানোর আর মানে খুঁজে পাননি কর্ণ সেন। নিজের মনটাকে লুকিয়ে পালিয়েই গিয়েছিলেন এক রকম।

সেই তাদের বাড়ির সামনে আজ এত দিন পর কেন এসে দাঁড়িয়েছেন কাঙালের মতো? তিনি কি আসলে আসতে চাননি! বিশ্বাসঘাতক পা-দুটোই কি অবচেতনের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে এই কাণ্ড ঘটাল!

মনে হতেই মুখ নামিয়ে ফেরার পথে পা বাড়ালেন কর্ণ সেন, তখনই কেউ ডাকল, “কর্ণবাবু...”

“কে?” ঘুরে তাকালেন উনি। একটি ছেলে। বছর বাইশ-তেইশ।

“আমাকে ডাকছ?” কর্ণ সেন জিজ্ঞেস করলেন।

“হ্যাঁ, এক বার আসবেন?”

“কোথায়!”

“আমাদের কাফেতে। নতুন খুলেছি।”

কর্ণ সেন অবাক হয়ে বাড়িটার দিকে তাকাতেই দেখলেন, দরজার ওপর বড় একটা গ্লো-সাইন বোর্ড। লেখা ‘সেনসেশন’। কী কাণ্ড! এত ক্ষণ খেয়ালই করেননি।

“কিন্তু আমাকে তুমি কী করে...” বলতেই ছেলেটি হাসল। বলল, “চিনি। আসুন না এক বার।”

কর্ণ সেন বোঝা না-বোঝার মধ্যেই পা বাড়ালেন, ছেলেটির অনুরোধ রাখতে।

ভিতরটা সুন্দর ঝুলন্ত আলোয় সাজানো। মেরুন কার্পেটের ওপর সুসজ্জিত টেবিল-চেয়ার, ন্যাপকিন-স্ট্যান্ড, ম্যাট। সাউন্ড বক্সে মৃদু এলভিস প্রিসলি।

ছেলেটি একটা চেয়ার টেনে সৌজন্য দেখাল, “প্লিজ়।”

বসলেন কর্ণ সেন। মেনু কার্ড বাড়িয়ে দিল ছেলেটা।

কর্ণ সেন হেসে বললেন, “না, না, এখন কিছু নয়, শুধু এক কাপ চা খেতে পারি।”

“বেশ,” ছেলেটি চলে গেল অন্তরালে আর অমনি উনি ফিরে তাকালেন অতীতে। এটাই তো সেই বাইরের ঘরটা! কত পাল্টে গেছে! ‘সেনসেশন’ নামটা এখন দিব্যি মানিয়েছে। মানুষও যদি এ রকম ভোল বদলে নতুন হতে পারত! ভাবনার মধ্যেই দেখলেন, ছেলেটি সুদৃশ্য চায়ের কাপ হাতে বেরিয়ে আসছে ভেতর থেকে। সুন্দর একটা ট্রে-র ওপর সোনালি বর্ডার দেওয়া সাদা কাপ-ডিশ। দেখে খুশি হলেন।

মুখ নামিয়ে চায়ে চুমুক দিতেই চমকে উঠলেন তিনি! চল্লিশ বছর আগের সেই স্বাদ! এও কি সম্ভব!

কর্ণ সেন জিজ্ঞাসু চোখে মুখ তুলতেই দেখলেন, পর্দা দু’হাতে চেপে ধরে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন দূরে, তাঁর পানপাতার মতো মুখে বয়সের বলিরেখা, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। মুখের সেই হাসি আর টোল আকর্ষণহীন, কিন্তু চায়ের সেই স্বাদ আজও এক রকম! দৃষ্টিবিভ্রম? মায়া? অলীক? তার কি এখন এখানে থাকার কথা? তার যে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল? বেড়াতে এসেছে?

প্রশ্ন তো অনেক। কিন্তু আর কোনও উত্তর না খুঁজে চোখ বন্ধ করে ফেললেন কর্ণ সেন। তার পর গভীর শ্বাস টেনে চায়ের কাপে দ্বিতীয় চুমুক দিলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Short story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy