Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Chanchal Ghosh

চোর

ক্লাবের সেক্রেটারি অভয় ঘোষালের ছেলের মোবাইল ফোন পাওয়া যাচ্ছে না। দামি ফোন। সম্ভবত প্রতিমা তুলতে যাওয়ার সময় তাড়াহুড়োয় পড়ে গেছে, খেয়াল করেনি। তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও না পাওয়ায় সন্দেহ গিয়ে পড়ে জবার মা-র ওপর।

ছবি: মহেশ্বর মণ্ডল।

ছবি: মহেশ্বর মণ্ডল।

চঞ্চল ঘোষ
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

জবার মায়ের মুখকে ভয় পায় না এমন মানুষ গ্রামে কমই আছে। আট থেকে আশি সকলেই সচেতন ভাবে বুড়ির সংস্রব এড়িয়ে চলে। অথচ সত্তরোর্ধ্ব এই বিধবার না আছে লোকবল, না আছে অর্থবল। আক্ষরিক অর্থেই একা। গ্রামের এক প্রান্তে রাস্তার ধারে টিনের চালের দু’কামরার ঘর, মাটির দেওয়াল। সামনে এক ফালি উঠোন, বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা। বিগত প্রায় চল্লিশ বছর শ্বশুরের এই ভিটে একা পাহারা দিচ্ছে জবার মা।

জবার মা-র বয়স যখন তিরিশের আশপাশে, স্বামী মারা যান। একমাত্র মেয়ে জবা তখন পাঁচ বছরের। শ্বশুরের জমি-জায়গা ভালই ছিল। দুই দেওর সিংহভাগ দখলে নিলেও বিধবা বৌদিকে বিঘেদুই জমি আর পৈতৃক ভিটেটুকু দিয়েছিল। তাতে মা-মেয়ের মোটামুটি চলে যাচ্ছিল। বছরপাঁচেকের মধ্যে দ্বিতীয় বার ছন্দপতন ঘটল জবার মা-র জীবনে। জবাও চলে গেল অকালে। ভোরবেলা প্রাতঃকৃত্য করতে গিয়েছিল বাঁশবাগানে। সাপের গায়ে পা তুলে দেয়। চার দিন যমে-মানুষে টানাটানির পর ফুটফুটে জবা হার মানে।

সময় অনেক কিছুই ভুলিয়ে দেয়। এক সময় জবার মা-ও মেয়ের মৃত্যুশোক অনেকটা কাটিয়ে ওঠে। কিন্তু জীবনযাপনের ধরন বদলে যায়। প্রচণ্ড শুচিবায়ুগ্রস্ত হয়ে উঠল। ভোররাতে উঠে পড়ত, তার পর কয়েক ঘণ্টা ধরে চলত ঘরদোর ধোয়া-মোছা। এমন ঘটনাও ঘটেছে, চাঁদনি রাত, ক’টা বাজে বুঝতে না পেরে জবার মা রাত দু’টোর সময় উঠে ঝাঁটপাট শুরু করে দিয়েছে! এই রাত-থাকতে উঠে পড়া অভ্যেস থেকে জন্ম নিল এক অদ্ভুত নেশা— চুরি করা। বড় কিছু নয়, ছোটখাটো প্রয়োজনীয় এমনকি অপ্রয়োজনীয় জিনিসও চুরি করতে লাগল জবার মা।

অবশ্য চুরি বলতে সোনাদানা বা তেমন দামি কিছু কোনও দিন চুরি করেনি বুড়ি। পাড়ায় কারও হয়তো বাড়ি তৈরি হচ্ছে, রাস্তার ধারে ইট, বালি পড়েছে। পাঁচ-সাত হাজার ইটের মধ্যে থেকে খান দশ-পনেরো ইট কিংবা এক লরি বালির মধ্যে থেকে দু-চার বালতি বালি সুযোগ বুঝে সরিয়ে দেয়। মজার ব্যাপার হল, সেগুলো সে রকম কোনও কাজেও লাগায় না। শুধুই জমা করে রাখে। ভোরবেলা ফুল তোলার অছিলায় বেরিয়ে কারও বাগান থেকে দুটো ঝিঙে, কারও বাগান থেকে চারটে ঢেঁড়শ তুলে নিয়ে কোঁচড়ে ঢুকিয়ে নেয়। ফুলও তোলে। ভুল করে কেউ কোনও জিনিস পুকুরঘাটে কিংবা অন্য কোথাও ফেলে এলে তা সাধারণত আর ঘরে ফেরে না। জবার মা-র সন্ধানী চোখ ঠিক তার ওপর পড়ে। সে সেফটিপিনই হোক আর পিতল বা কাঁসার ঘটিই হোক। কাজে লাগুক না লাগুক, বুড়ি কুড়িয়ে আনবেই।

ব্যাপারটা এক সময় গ্রামের মানুষের কাছে গোপন রইল না। কিন্তু যে হেতু ছোটখাটো জিনিস এবং চোর জবার মা, তাই আড়াল-আবডালে আলোচনা করলেও কেউ তাকে ঘাঁটাতে চাইত না। সকলেই জবার মা-র কর্কশ জিভকে ভয় পায়। বুড়ির মুখে কিছুই আটকায় না। অনেকেরই বিশ্বাস, ঝগড়ার সময় জবার মা-র মুখনিঃসৃত অভিশাপ অনেক সময়ই বাস্তব রূপ পায়। তাই স্বামী-সন্তানের মঙ্গল বজায় রাখতে মহিলারা সচরাচর জবার মা-র সঙ্গে বাদানুবাদে যেতে চায় না। পুরুষরাও আত্মসম্মান বজায় রাখতে তাকে এড়িয়েই চলে। যার কারণে, সকলেই জানে জবার মা চোর, তবুও তাকে হাতেনাতে ধরার উৎসাহ কেউ কোনও দিন দেখায়নি।

কিন্তু আজ বোধহয় জবার মা-র বিধি বাম। দুর্গামন্দিরের সিঁড়িতে এক ধারে বসে বুড়ি ঠাকুর রং করা দেখছিল। নানা বয়সি মানুষের কলরোলে মুখরিত মন্দির প্রাঙ্গণ। সকলের মধ্যে জবার মা-ই বয়োজ্যেষ্ঠা। বয়সের ভারে তার দেহ সামান্য ঝোঁকা। সর্বক্ষণের সঙ্গী লাঠিটা পাশে শোওয়ানো। কাল মহাষষ্ঠী। প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। কুমোর শেষ বারের মতো মা দুর্গা আর তার ছেলেমেয়েদের ওপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে ক্লাবের ছেলেদের বললেন ঠাকুর মন্দিরে তুলে দিতে।

একচালা প্রতিমা। বেশ ভারী। অনেককেই হাত লাগাতে হল। ‘দুর্গা মা কী জয়’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠল পূজাপ্রাঙ্গণ। জবার মা উঠে দাঁড়িয়ে হাত দুটো কপালে ঠেকিয়ে স্বগতোক্তির সুরে বলল, “মা, মা গো… মুখ তুলে তাকাস মা।” পাশ ফিরে একটা সিঁড়ি নামতেই কালো মতো চৌকো একটা বস্তু জবার মা-র নজরে পড়ল। চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠল। চকিতে চার পাশে এক বার চোখ বুলিয়ে নিল। সকলের অলক্ষ্যে টুক করে তুলে নিয়ে কোঁচড়ে পুরে ঠকঠক করে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল বুড়ি।

বস্তুটা অনেকের হাতে দেখেছে জবার মা, কানে দিয়ে কথা বলে। কিন্তু কোনও দিন হাতে নিয়ে দেখেনি কিংবা কথাও বলেনি। বাড়িতে এসে ঘরে দরজা দিয়ে কোঁচড় থেকে সন্তর্পণে জিনিসটা বার করে। কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। সাত-পাঁচ ভেবে বিছানার তলায় লুকিয়ে রাখে।

হইচই শুরু হল দুপুরের পর। ক্লাবের সেক্রেটারি অভয় ঘোষালের ছেলের মোবাইল ফোন পাওয়া যাচ্ছে না। দামি ফোন। সম্ভবত প্রতিমা তুলতে যাওয়ার সময় তাড়াহুড়োয় পড়ে গেছে, খেয়াল করেনি। তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও না পাওয়ায় সন্দেহ গিয়ে পড়ে জবার মা-র ওপর। সকাল থেকে দুর্গামন্দিরের সিঁড়িতে বসে ছিল বুড়ি।

হইহই করে পাড়ার ছেলে-বুড়ো, মেয়ে-পুরুষ দল বেঁধে হাজির হয় জবার মা-র বাড়ি। আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে। জবার মা তখন উনুন ধরিয়ে সবেমাত্র ভাত বসিয়েছে। এক সঙ্গে এত মানুষকে দেখে বিপদের গন্ধ পায়। ভিতরে ভিতরে ঘামতে থাকে। তবুও কণ্ঠস্বরে পরিচিত রুক্ষতা এনে জিজ্ঞাসা করে, “এখানে কী দেখতে এসেছিস সব?”

“দুর্গাতলা থেকে একটা ফোন কুড়িয়েছ?” অভয় ঘোষাল জানতে চায়।

“ফোন? সে আবার কী? না আমি ফোন-টোন কিছু কুড়োইনি,” ঝাঁঝিয়ে ওঠে জবার মা।

উত্তেজিত হয়ে ওঠে জনতা। নানা জন নানা মন্তব্য করতে থাকে। অভয় ঘোষাল সকলকে থামিয়ে বলে, “ঠাকুমা, যদি নিয়ে থাকো বলো। আমরা কিন্তু ঠিক বার করব। দরকার হলে তোমার ঘরে ঢুকে দেখব।”

“ঢোক না ঘরে, দেখি কত সাহস! ঠাকুরতলায় তো হাজার খানেক মেয়ে-মদ্দ ছিল, সবাইকে ছেড়ে আমাকে ধরলি কেন? দুব্বলের পেছনে বাঁশ দিতে ভাল লাগে, না? একটা কথা জানবি, যার কেউ নেই তার ভগবান আছে। কিচ্ছু করতে পারবিনি!” স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে প্রথমেই আক্রমণাত্মক জবার মা।

উপস্থিত মেয়ে-পুরুষ আবার হইহই করে ওঠে। পাশে সকলকে পেয়ে সকলেই যেন আজ সাহসী হয়ে উঠেছে। ভিতরের রাগ, ক্ষোভ এক এক করে উগরে দিচ্ছে। ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ এক জন বলল, “আর এক বার কল কর তো।” অভয় ঘোষাল নিজের ফোন থেকে কল করে। সমবেত চিৎকার, চেঁচামেচি আস্তে আস্তে থেমে যায়। জবার মা-র উঠোনে শ্মশানের স্তব্ধতা। সকলেই উৎকর্ণ। হকচকিয়ে যায় জবার মা। সকলে হঠাৎ চুপ করে গেল কেন! এ দিক-ও দিক তাকাতে থাকে।

রিংটোনের মৃদু আওয়াজ ভেসে আসছে। এক এক করে প্রত্যেকের মুখ ঘুরে গেল ঘরের দিকে। কোন ঘর থেকে বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু ঘরের ভিতর থেকেই আওয়াজটা আসছে। মুহূর্তের মধ্যে নৈঃশব্দ্য পরিণত হল রণহুঙ্কারে। যুদ্ধজয়ের উল্লাসে ফেটে পড়ল জনতা।

সকলেই এক সঙ্গে ঘরে ঢুকতে চায়। অভয় ঘোষাল বাধা দিয়ে বলে, “ছেলেরা নয়, মেয়েরা দু’-তিন জন ঘরে ঢুকে দেখো কোথায় আছে।”

তিন-চার জন মহিলা সিঁড়ি দিয়ে রোয়াকে উঠতে যায়, তাদের মধ্যে অভয় ঘোষালের বৌও রয়েছে। জবার মা মরিয়া হয়ে শেষ চেষ্টা করে। সিঁড়ির মুখে তাদের পথ আটকে দাঁড়ায়। বুড়ি যেন মনে মনে পণ করেছে, মরার আগে মরবে না।

“খবরদার! যে ঘরে ঢুকবি তার কোল শূন্য হবে, ভাতার-বেটা শ্মশানে যাবে। আমার কেউ নেই বলে…”

আরও কী সব বলতে চাইছিল জবার মা। কিন্তু উন্মত্ত জনতার কোলাহলে তা চাপা পড়ে গেল। বুড়িকে ঠেলে ফেলে দিয়ে বন্যার জলের মতো ছেলে-বুড়ো সকলে ঘরে ঢুকে পড়ল।

ঘণ্টাখানেক ধরে চলল তল্লাশি। ফোন তো পাওয়া গেলই, পাওয়া গেল আরও কত কী! কত মানুষের কবেকার হারিয়ে যাওয়া কত জিনিস! সব জবার মা-র দুই ঘরে এত দিন বন্দি ছিল। কেউ দশ বছর আগে বাড়ি তৈরির সময় ব্যবহৃত ইট খুঁজে পেল বুড়ির খাটের তলায়। কেউ পুকুরঘাটে হারিয়ে যাওয়া সাঁড়াশি দেখতে পেল বুড়ির বাসনের তাকে। এমনকি এক কোণে এক টিনের বাক্সের ওপর কতগুলো পুরনো জুতোও সযত্নে তুলে রাখা আছে! কার জুতো কে জানে!

যে যা ইচ্ছা বলতে লাগল জবার মাকে। কত রকম কটূক্তি! সকলেই যেন বুড়িকে তার প্রাপ্য সুদে আসলে ফিরিয়ে দিতে চাইছে। কেউ কেউ নিজের জিনিস চিনতে পেরে সঙ্গে করে নিয়েও গেল। পরাজিত, বিধ্বস্ত জবার মা উঠোনের এক ধারে উবু হয়ে বসে যে যা বলছে চুপ করে শুনে যাচ্ছে। কোনও প্রতিবাদ নেই। জীবনে এই প্রথম বার! চোখমুখের অভিব্যক্তিতে বোঝা যাচ্ছে না মনের মধ্যে কী চলছে।

ভিড় পাতলা হতে হতে এক সময় সবাই চলে গেল। চারপাশে ধ্বংসের ছবি। সামনের বেড়াটা ভেঙে দিয়ে গেছে। ভাতের হাঁড়িটা উনুনের পাশে উল্টে পড়ে রয়েছে। হাতড়ে হাতড়ে লাঠিটা খুঁজে তাতে ভর দিয়ে কোনও রকমে উঠে দাঁড়াল জবার মা। সারা গায়ে ব্যথা। কনুইয়ে এক জায়গায় কেটে গেছে, সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। আস্তে আস্তে সিঁড়ির নীচের ধাপটায় গিয়ে বসল।

সন্ধে নামছে। আজ আর তুলসীতলায় প্রদীপ দেখাতে কিংবা শাঁখ বাজাতে ইচ্ছে করছে না জবার মা-র। দু’হাঁটুর মধ্যে থুতনিটা রেখে চুপ করে বসে রইল। কত ক্ষণ বসে ছিল খেয়াল নেই। হঠাৎ কার পায়ের শব্দে চমকে ওঠে।

“কে রে, কে ওখানে?”

“আমি গো ঠাকুমা, আমি পারুল,” বলতে বলতে পারুল সামনে চলে এল। পারুল অভয় ঘোষালের বৌ। এ পাড়াতেই বাপের বাড়ি।

“তা তুই কি আবার মারতে এলি? এই তো তোর ভাতার গ্রামসুদ্ধু লোক নিয়ে এসে মেরে গেল,” অভিমান ঝরে পড়ে বুড়ির কথায়।

“রাগ করছ কেন? তুমি তো প্রথমেই ফোনটা দিয়ে দিতে পারতে। তা হলে এত কাণ্ড হত না।”

চুপ করে থাকে জবার মা। পারুল জবার মা-র পাশে বসে বলে, “সারা দিন তো কিছু খাওনি। দু’মুঠো ভাত রেখে গেলাম, খেয়ে নিয়ো।”

“জুতো মেরে গরু দান করতে এসেছিস? যা তোর ভাত নিয়ে যা,” হাত দিয়ে ঠেলে ভাতের থালাটা সরিয়ে দেয় বুড়ি।

পারুল জবার মা’র হাত দুটো ধরে কাতর গলায় বলে, “আমার মাথা খাও, রাগ কোরো না।”

জবার মা কিছুটা যেন নরম হল। পারুল এমনটাই চাইছিল। একটু সময় নিয়ে মৃদুক‌ণ্ঠে বলল, “তোমার কাছে একটা জিনিস চাইতে এসেছি, ঠাকুমা। আমাকে কিন্তু দিতে হবে।”

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে জবার মা। দ্বিধা জড়ানো গলায় পারুল বলে, “তোমার ঘরে ছোটদের যে লাল জুতোজোড়া দেখলাম…” গলা বুজে আসে পারুলের। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।

কিছু বুঝতে না পেরে জবার মা পারুলের মুখের দিকে খানিক তাকিয়ে থেকে বলে, “কাঁদছিস কেন? ওগুলোও কি তোদের না কি? ওগুলো বড়পুকুরের পাড়ে পড়ে ছিল। আমি তো চুরি করিনি।”

কান্নাভেজা গলায় পারুল বলল, “হ্যাঁ, ও দুটো আমার ছোটটার… আমি বলছি না, তুমি চুরি করেছ। তুমি সেদিন কুড়িয়ে রেখেছিলে বলেই তো আজ পেলাম।”

“তোর যে ছেলেটা জলে ডুবে মরে গেল, তার?”

বছরপাঁচেক আগে অভয় ঘোষালের বছর সাতেকের ছোট ছেলে খেলতে খেলতে কী ভাবে পুকুরে পড়ে যায়। সাঁতার জানত না। যখন জানা গেল, সব শেষ।

খানিক চুপ থেকে আপন মনে বুড়ি বলতে থাকে, “আহা, ছেলে তো নয় যেন রাজপুত্তুর! ভগবানের কী বিচার কে জানে…”

কান্নায় ভেঙে পড়ে পারুল। মাথায় হাত রেখে জবার মা বলে, “কাঁদিসনি। আমার জবাটার মুখখানাও তো… ঠিক যেন লক্ষ্মী ঠাকুর… বাপ-ঝি দুজনেই ফাঁকি দিয়ে চলে গেল! তারা থাকলে আজ…” গলা ধরে এল, আর কথা বলতে পারল না বুড়ি। অনেক ক্ষণ পর আপন মনে বলে, “ভগবান ভাল ফুলগুলোই আগে তুলে নেয়। যা সব ভাল সবেতেই তার দরকার। আর চোর শুধু জবার মা।”

পশ্চিম আকাশে পঞ্চমীর চাঁদ। এক চিলতে জ্যোৎস্না এসে পড়েছে রোয়াকে। দূরে দুর্গাতলা থেকে ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসছে। অনেক, অনেক দিন পর জবার মা-র শুকিয়ে যাওয়া দু’চোখ বেয়ে অঝোরে ধারা নামল। দু’হাঁটুর মধ্যে মাথা গুঁজে নীরবে কাঁদতে লাগল। গ্রামের অন্য সব মানুষের মতো বুড়ি নিজেও ভুলে গিয়েছিল, তার ভিতর এত কান্না জমে আছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Chanchal Ghosh Short story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy