Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প
Short story

নকশিকাঁথার উঠোন

কারিগর প্রায় সবই মেদিনীপুর, ডেবরা অঞ্চলের। তার বাইরের লোক খুব কম। এই যেমন সুধন্য বণিক।

ছবি: মহেশ্বর মণ্ডল

ছবি: মহেশ্বর মণ্ডল

বিপুল দাস
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:০৫
Share: Save:

ঘুম ভেঙে গেল সুধার। ভোরবেলার প্রথম পাখির ডাকেই ঘুম ভাঙল তার। আজকাল ঘুমের বড় ব্যাঘাত হচ্ছে ওর। বুড়োবুড়িদের ঘুম কমে যায়, সেটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু গেরস্ত ঘরের একুশ বছরের ভরযুবতী বৌয়ের রাতে ঘুম হয় না— এ কেমন কথা! গাঁ-গঞ্জে এক বার এ কথা পুকুরপাড়ে গিয়ে পড়লে জলে ঘূর্ণি উঠবে। তার পর কথা প্যাঁচ খেতে খেতে কলস ভরে লোকের ঘরে যাবে। এ ঘর সে ঘর হয়ে অন্য পুকুরের ঘাটে গিয়ে উঠবে। তার পর সেখান থেকে আলপথ ধরে মেঠোপথ ছুঁয়ে এক বার পিচের সড়ক ধরে ফেললে লোক জানাজানির আর কী বাকি রইল। কথাটা একটু অস্বাভাবিক তো বটে।
গত মাঘের উনিশে নতুন বৌ ঘরে আনল সুধন্য বণিক। মাত্র সাত দিন সংসার করেই সুধন্য ছুটল তার কাজের জায়গায়। সোনার কাজের ওস্তাদ কারিগর সে। বিয়ের মরসুম চলছে, কাজের চাপ খুব। মূল নকশাদার সুধন্য। সে না থাকা মানে মালিকের মাথায় হাত। জোর করেই বিয়ের জন্য দু’দিনের ছুটি আদায় করেছে সে। কিন্তু মালিকও জানে, সুধন্যও জানে, এখানে দু’দিন মানে মিনিমাম পাঁচ দিন তো বটেই।


দশ ফুট বাই দশ ফুটের খুপরি ঘর। সেখানে বসে মাথা নিচু করে টানা কাজ করে চলেছে কয়েক জন মানুষ। মানতাসা হোক, সীতাহার হোক বা বাউটি— পুরোটা একা কেউ করে না। কাজের ভাগ আছে। সূক্ষ্ম হাতে তৈরি হয়ে চলেছে ঝুমকো, আংটি। অন্তত সাত জনের হাত ঘুরে তৈরি হয় একটা গয়না। প্রথমে থাকে গালাইয়ের লোক। তার পর তার টানার কারিগর, তার পর পিস-কাটাই, তার পর আসল কাজ ‘গড়িৎ’ কারিগরের। এর পর যথাক্রমে আসে পালিশ কারিগর, মিনার কারিগর, ফস্টিং কারিগর। সম্পূর্ণ হয় একটা অলঙ্কার। সুধন্য এ সব বুঝিয়েছিল তার নতুন বৌকে। সুধার হাতের বালার প্যাঁচে আঙুল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এ সব বলার সময়, নতুন কোনও নকশা তোলার সময় তার যেমন উত্তেজনা হয়, তার শরীর সে রকম দৃঢ় হয়ে উঠছিল।


কারিগর প্রায় সবই মেদিনীপুর, ডেবরা অঞ্চলের। তার বাইরের লোক খুব কম। এই যেমন সুধন্য বণিক। ছিল উত্তর বাংলার মফস্‌সল শহরের ছোট কারিগর। জামাইবাবুর দোকানে সারা দিন ঘাড় গুঁজে ঠুকঠাক করত। ছোট দোকান, বেশি মারপ্যাঁচের নকশার কাজ হলে কাজ ফিরিয়ে দিত প্রহ্লাদ বসাক। প্রহ্লাদ নিজে, শালা সুধন্য আর পুরনো কারিগর শঙ্কর— এই তিন জন মিলে সামলাত। গালাই, পান ধরানো, তার টানা, চাদরের কাজ— এ সব সুধন্য ভালই শিখে নিয়েছিল। কিন্তু মিনাকারি, জড়োয়া বা ফিলিগ্রির কাজের অর্ডার প্রহ্লাদ নিত না। খুব চেনাজানা গাহেক সাধাসাধি করলে শিলিগুড়ি থেকে করিয়ে এনে দিত। সাধারণ নকশার কাজ শঙ্কর ভালই করত। অনেক সময় সুধন্য নিজের হাতের কাজ ফেলে শঙ্করের ডিজ়াইন তোলার কায়দা দেখত। দেখতে দেখতে তার যেন নেশা ধরে যেত। তার হাত নিশপিশ করত। তার মাথার ভেতরে নতুন লতাপাতার জন্ম হ’ত। এ ভাবেই এক দিন সে শঙ্করের তোলা নকশার ওপর বিশেষ কারিগরি করতে গিয়ে জামাইবাবুর ঘাড়ধাক্কা খায়। অথচ সে শিয়োর, তার মাথায় যে নকশাটা ছিল, সেটা অনেক বেশি সুন্দর। হতে পারে শঙ্করদা পুরনো কারিগর, কিন্তু সুন্দর সম্পর্কে তার আইডিয়া নেই। ধূপগুড়ির এক বর্ষণমুখর সকালে দিদির কাছে ধানাইপানাই করে কিছু টাকা, পরে ফাঁক বুঝে দোকানের কিছু ক্যাশ তছরুপ করে আলতাডাঙা থেকে সরে পড়ল। তার কপালের নকশা সে নিজেই বানাবে। কলকাতায় বৌবাজারের সোনাপট্টিতে বেশ কিছু দিন ঘোরাঘুরি করে শেষমেশ নবীনচাঁদ বড়াল লেনের এক দোকানে সুযোগ পেল। কাজ সে যতটুকু জানত, নিখুঁত জানত। মালিক ভরসা পেল কিছু দিন কাজ দেখে। এই প্রথম মেদিনীপুর বা পিংলার বাইরের কারিগর তার দোকানে ঢুকল। দেখা যাক। ছেলেটার বয়স অল্প, কাজ শেখার আগ্রহ আছে। দরকার হলে দুলাল দে তাকে নিজে হাতে মিনাকারি শেখাবে। এ পট্টিতে নিখুঁত মিনাকারির কাজ খুব কম কারিগর পারে।


দু’দিনের জায়গায় সাত দিন কাটিয়ে নতুন বৌকে রেখে কাজে ফিরে গেল সুধন্য। গত আট বছরে সে পয়সা জমিয়েছে। মনোযোগ দিয়ে কাজ শিখেছে। দুলাল দে-র বিশ্বস্ত কর্মচারী হয়ে উঠেছে। বৌবাজারের এই সোনাপট্টিতে কারিগর হিসেবে তার বেশ সুনাম হয়েছে। জটিল লতাপাতার ডিজ়াইনের জন্য তার কাছে বাইরের কাজও আসে। হাতে মোটামুটি কিছু ক্যাশ জমলে সে এক দিন ফিরে গিয়েছিল জামাইবাবুর কাছে। তার মনের ভেতরে একটা অপরাধবোধ সব সময় কুটকুট করে কামড়াত। রীতিমতো যুবক সুধন্যকে দেখে তার দিদি ছোটভাইকে বুকে জড়িয়ে ধরায় চোখে জল এসে গেল সুধন্যর। সন্ধেবেলা প্রহ্লাদ বসাক তার দোকানে তালা মেরে বাড়ি ফিরে দেখল, ঘরের খাটে বসে ভাইবোন গল্প করছে। অপরাধবোধ প্রহ্লাদেরও ছিল। ভেতরের খবর ক’জন রাখে। আলতাডাঙার সবাই জানে শালাকে মেরে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে প্রহ্লাদ বসাক।
উঠে গিয়ে জামাইবাবুকে প্রণাম করল সুধন্য।
“কোথায় থাকা হয় এখন?”
প্রহ্লাদের ভাববাচ্য শুনে মুচকি হাসল বৌ আরতি, সুধন্যর দিদি। ভাববাচ্যে কথা বলেছে যখন, গাড়ি লাইনেই আছে। এর পর গড়গড়িয়ে চলবে। মানুষটাকে তার চেনা। ওপরে হম্বিতম্বি, ভেতরে নরম। সুধন্য চলে যাওয়ার পর ভেঙে পড়েছিল। আরতিই সান্ত্বনা দিয়েছিল, কারিগর কি আর পাওয়া যাবে না।
মাথা নেড়ে প্রহ্লাদ বলেছিল, “ওকে কারিগর বোলো না, তার চেয়ে বেশি ছিল। সে তুমি বুঝবে না। ওর একটা শিল্পী মন আছে, কিন্তু বড় চঞ্চল। এ সব সূক্ষ্ম কাজে ধীর স্থির না হলে চলে না। টাকা নিয়েছে বলে আমার আফসোস নেই, কিন্তু একটা থাপ্পড় মেরেছি বলে তুই বেইমানি করবি! কত স্বপ্ন ছিল। তোকে নিজে হাতে মিনাকারি শেখাতাম!”

জামাইবাবুর প্রশ্নের উত্তরে সুধন্য বলল, “কলকাতায়। বৌবাজারে, নবীনচাঁদ বড়াল লেন। বড় দোকান।”
“হুঁ। কাজ শিখেছিস? নকশাকাটা শিখেছিস?”
“হুঁ।”
“শোন, যেখানে আছিস, জায়গাটা ভাল নয়। চোখকান খোলা রেখে চলিস।”
“শোনো, এ বার আমি ভাইয়ের বিয়ে দেব। তুমি মেয়ে দেখো। লক্ষণটক্ষণ মেলাতে হবে না, মোটামুটি ঘরোয়া কাজের মেয়ে হলেই চলবে,” বলে ওঠে দিদি।
“জামাইবাবু, একটা কথা ছিল। আমি ঘোর অন্যায় করেছি। তার সামান্য প্রায়শ্চিত্ত করতে দিন।”
সামনে এসে নিচু হয়ে প্রহ্লাদ বসাকের পায়ে হাত দিয়ে আর এক বার প্রণাম করল সুধন্য। দিদিকেও প্রণাম করল। পকেট থেকে একটা ভেলভেটের কৌটো বার করে একটা পোখরাজ-বসানো আংটি পরিয়ে দিল দিদির হাতে। “ভাই!” বলে ফুঁপিয়ে উঠল তার দিদি। অন্য পকেট থেকে একটা খাম বার করে জামাইবাবুর পায়ের কাছে রাখল সুধন্য।
“কী এটা?” ভুরু কুঁচকে খামের দিকে তাকাল প্রহ্লাদ।
“তেমন কিছু নয়। সামান্য কিছু টাকা আছে।”
“কত?”
“চল্লিশ হাজার। এটা রাখুন আপনি। না বলবেন না।”
কিছু ক্ষণ চুপ করে রইল প্রহ্লাদ বসাক। মৃদু হাসি ফুটল তার ঠোঁটে।
“আংটিটা কি তোর হাতের কাজ?”
“হ্যাঁ, পুরোটা আমার হাতে গড়া দিদির জন্য।”
“দেখি এক বার।”
আংটিটা হাতে নিয়ে অনেক ক্ষণ ধরে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখল প্রহ্লাদ বসাক। তার চোখদু’টো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বোঝা যায় সেখানে বিশুদ্ধ আনন্দ খেলা করছে।

*****
প্রথম কিছু দিন প্রতি মাসে বাড়ি আসত সুধন্য। দু’-তিন দিন থেকে নতুন বৌ সুধার আকাঙ্ক্ষার আগুন দ্বিগুণ জ্বালিয়ে ফিরে যেত। আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইত সুধা। নতুন বৌ ছেড়ে অনেক কষ্টে ফিরে যেত সুধন্য। সুধন্যকে ঠিক বুঝতে পারত না সুধা। নতুন বৌয়ের সঙ্গে যেমন প্রেম, আদর, ভালবাসা স্বাভাবিক— মনে হত সুধন্যর যেন সেই তাপ একটু কম। বরং রাতে সুধার শাড়ি-ব্লাউজ় খুলে খোলা পিঠে আঙুল দিয়ে জটিল লতাপাতার নকশা আঁকতে তার আগ্রহ বেশি ছিল। আর, সুধা আশ্চর্য হয়ে যেত, নকশা যত মারপ্যাঁচের হত, তত যেন সুধন্যর শরীর জেগে উঠত। এমনকি, সুধার পিঠের নরম মাংসে নখ দিয়ে ক্ষত তৈরি করে যেন সুধন্যর পরম তৃপ্তি হত। যেন লকেটে পাথর বসাচ্ছে। আশ্চর্য মানুষ, সুধা ভাবত। ব্যথা দিয়ে তার সুখ হয়।
প্রত্যেক বারই যাওয়ার সময় সুধন্য বলে যেত, আর দু’তিন মাস পরই সুধাকে নিয়ে যাবে। কাছাকাছি ঘরের সন্ধানে আছে। ফিরে যাওয়ার পর সুধন্য কিছু দিন পরই জানায় যে, সে একটি আলাদা ঘর ভাড়া করবে এবং তার ‘জানু’কে নিয়ে যাবে। কিন্তু সস্তায় নতুন ঘর পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলত সুধার যাওয়া ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছিল। প্রায় এক বছর বাদে সুধন্যর ফোন আসা কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে গেল। জানা যায় যে, উক্ত ফোন এখন পরিষেবা সীমা কে বাহার। তার খবর জুলফিকার, আব্বাস কিংবা নদেরচাঁদ— কেউ দিতে পারল না। সুধন্য বণিক পুরো ভ্যানিশ হয়ে গেল। শেষে এক বছরের ওপর তার কোনও খবর না পেয়ে প্রহ্লাদ নিজেই উদ্যোগ নিল তাকে খুঁজে বার করার। লাভ হল না কিছু। বৌবাজারের সেই দোকানের কাজ সুধন্য ছেড়ে দিয়েছে। কেরলে খুব বড় দোকানে সে কাজ পেয়ে চলে গেছে। রোজগার অনেক বেশি। সুধার কাছে ফোন ছিল। সুধন্যর নম্বরও ছিল। প্রহ্লাদ বসাকের কাছেও ছিল। প্রথম প্রথম সুধার সঙ্গে প্রায়ই কথা হত। সুধার নম্বর সে ‘জানু’ নামে সেভ করেছিল। তার পর সুধন্যই এক দিন ঘন ঘন ফোন করতে বারণ করল। কাজের অসুবিধে হয়। তার পর এক সময় সে আর ফোন ধরত না। তখন থেকেই সুধার রাতের ঘুম নষ্ট হল। শোয়ার পর একটু ঘুম হত, তার পর আর ঘুম আসত না। ভোরের দিকে ইচ্ছে করত পুকুরে গিয়ে ভাল করে স্নান করতে। সমস্ত শরীর দিয়ে যেন আগুনের স্রোত বয়ে যেত।
তার পর এক দিন ভোরে সুধন্যর দিদি আরতি খেয়াল করল, আজ বেলা হয়ে গেছে, কিন্তু সুধার উঠোন ঝাড়ু দেওয়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। কে জানে জ্বরজারি হল কি না, বিছানা ছেড়ে ওঠার ক্ষমতা নেই হয়তো। এমন পোড়াকপাল মেয়েটার, স্বামীর সোহাগ কাকে বলে বুঝলই না। বলিহারি সুধন্যকেও। সুন্দরী নতুন বৌ ফেলে তোর লতাপাতার নকশাকাটার নেশাই বড় হল। এ কেমন শিল্পী!
দরজা খুলে বাইরে তাকাতেই চমকে উঠল আরতি। উঠোনে পা ছড়িয়ে ও কে বসে রয়েছে। সুধাই তো, কিন্তু এ কোন সুধা! কেমন করে তার বিশাল এক ঢাল চুল শ্রাবণের বাদুলে মেঘের মতো ফুলেফেঁপে উঠল! চোখদু’টো যেন পাকা করমচা। চোখের তারা বনবন ঘুরছে। বুকের কাপড় সরে গিয়ে ভারী বুক দু’টো এমন তীক্ষ্ণতায় জেগে উঠেছে, যেন এখনই ওই পাহাড়-চূড়া থেকে আগুন বেরোতে শুরু করবে। ভূমিকম্পে দুলে উঠবে নয়াপট্টি, সুভাষনগর, মহিষবাঁধ। সৃষ্টি বুঝি রসাতলে যাবে সুধার দুই বুকের প্রহারে।
খিলখিল করে সুধা হেসে উঠতেই এই প্রথম ওরা অবাক হয়ে দেখল, সুধার সামনের দাঁতগুলো অসম্ভব ধারালো। এখন সে যে কোনও জিনিস টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলতে পারে রাতের ধান চুরি-করা ইঁদুরের মতো। ওদের দু’জনেরই শরীর শিরশির করে উঠল। দু’জনেরই ইচ্ছে করছিল হাত দিয়ে গলা ঢাকা দিতে।
সুধা এ বার দু’টো হাত মাথার ওপরে তুলে করতলের এমন মুদ্রা করল, স্পষ্টই বোঝা যায় সাপের ফণা। তার পর সে দুলতে শুরু করল। মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে ফোঁসফোঁস শব্দ করে, আর মাথা ঝুঁকিয়ে অদৃশ্য শত্রুকে ছোবল মারতে থাকে। প্রহ্লাদ আর আরতি নিরাপদ দূরত্বে সরে গেল।
এ পর্যন্ত তা-ও মানা যায়, কিন্তু এর পর সুধা যে সব শব্দ উচ্চারণ করতে শুরু করল, সেগুলো এ পাড়ায় শোনা যায় বটে, কিন্তু কেউ বলতে পারবে না পাড়ার কোনও মেয়েছেলে কখনও সে সব উচ্চারণ করেছে। যৌনক্রিয়া-সম্পর্কিত কিছু শব্দাবলি, যা প্রহ্লাদও কোনও দিন শোনেনি। সহ্য করতে না পেরে ছিটকে ঘরে ঢুকে পড়ল প্রহ্লাদ।
পরে প্রহ্লাদ অনেককে বলেছিল, সে সব খারাপ কথা বলার সময় সুধার চোখ দিয়ে যেন আগুনের হলকা বেরোচ্ছিল। আর ফোঁসফোঁসানি দিয়ে সে নিশ্চয় সবাইকে বোঝাতে চেয়েছিল, মা বিষহরী পাড়ার ভেতরে কোনও অসৈরণ পছন্দ করছেন না। তার মাহাত্ম্য প্রচারের দায়িত্ব তিনি সুধাকেই দিয়েছেন। শেষের দিকে ঠোঁটের কষ বেয়ে গ্যাঁজলা বেরোতে শুরু করলে আরতি বুঝতে পেরেছিল, এটা অরিজিনাল ভর ওঠা। জালি কেস হলে অটোমেটিক গ্যাঁজলা বেরোত না।
এক সময় ক্লান্ত হয়ে সুধা মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল, ফণা-সহ। যেন ক্লান্তিতে ঘুমিয়েই পড়েছিল। জ্যান্ত নাগিনীর মতো যে ভাবে সে ফণা দুলিয়েছে, তাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ারই কথা। প্রহ্লাদ আর আরতির হতচকিত ভাব তখনও কাটেনি। ওই ফোঁসফোঁসানি কি সত্যি সুধাই করছিল, না কি খালের জল থেকে কোনও সাপ তাদের দাওয়ায় উঠে আড়াল থেকে শব্দ করছিল— ওরা ঠিক নিশ্চিত হতে পারে না।
একটু পরই সুধার ঘুম ভাঙল। সে ভদ্র সভ্য হয়ে বসল। তার পর ঝাঁটা থেকে পোক্ত একটা কাঠি ভেঙে উঠোনে ধুলোর ওপর কী যেন লিখতে শুরু করল। চিঠি না কি! প্রহ্লাদ একটু সামনে গিয়ে দেখল কলকা-পাড়ের লতাপাতার ডিজ়াইন আঁকছে সুধা। আঁকছে আর হাত দিয়ে মুছে দিচ্ছে। কিছুতেই যেন সন্তুষ্ট হচ্ছে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Short story Bengali Short Story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy