Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প

চক্রব্যূহের দরজা

সামনের স্ট্রেচারে শোয়া লোকটার মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে। বুকেও ভাল আঘাত। চোখ বন্ধ, দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হাতখানা একপাশে নিঃসাড় পড়ে আছে। তবু কী অদ্ভুত জীবনীশক্তি লোকটার, ওই অবস্থাতেই অদৃশ্য প্রতিপক্ষের উদ্দেশে অবিরল খিস্তি করে যাচ্ছে।

ছবি: পিয়ালী বালা

ছবি: পিয়ালী বালা

অরুণ কর
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০১
Share: Save:

বাইরে হইচই শুনে অনিরুদ্ধর বুক কেঁপে উঠল। হাতটাও কি কাঁপল একটু? অস্ত্রোপচারের সময় এক জন সার্জনের হাত কাঁপলে যে কী মারাত্মক পরিণতি হতে পারে, সে কথা অনিরুদ্ধর অজানা নয়। নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত রেখে দ্রুত হাতে স্টিচ করতে লাগল সে। বাচ্চাটার শ্বাসনালির নীচের দিকে সেফটিপিনটা আড়াআড়ি আটকে ছিল। রাজীবদা না থাকলে হয়তো এই অপারেশনটা নিজে হাতে করতে সাহস করত না। অ্যানাস্থেসিস্ট রৌনকের চোখেমুখেও আতঙ্ক ফুটে উঠেছে। গোলমালের শব্দ শুনে ও বাইরে গেল পরিস্থিতি দেখতে।

সামনের স্ট্রেচারে শোয়া লোকটার মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে। বুকেও ভাল আঘাত। চোখ বন্ধ, দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হাতখানা একপাশে নিঃসাড় পড়ে আছে। তবু কী অদ্ভুত জীবনীশক্তি লোকটার, ওই অবস্থাতেই অদৃশ্য প্রতিপক্ষের উদ্দেশে অবিরল খিস্তি করে যাচ্ছে।

লোকটাকে ওটি-তে আনতেই রাজীবদা অনিরুদ্ধর উপরে বাচ্চাটার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে ওকে নিয়ে পড়ল। ভাল করে পরীক্ষা করে বলল, ‘‘এর যা অবস্থা, আমি একা কতটা কী করতে পারব বুঝতে পারছি না। ডাক্তার পাকড়াশিকে বরং একটা এমার্জেন্সি কল দেয়া যাক, কী বলিস?’’

স্ট্রেচারের লোকটার শরীর থেকে যে ভাবে রক্তক্ষরণ হয়েছে, তাতে দ্রুত অপারেশন করে রক্ত দেওয়া প্রয়োজন। এই মুহূর্তে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সার্জন এলেও এই রুগিকে বাঁচানো যাবে কি না সন্দেহ। তবু যত ক্ষণ শ্বাস, তত ক্ষণ আশ। অনিরুদ্ধ আড়চোখে এক বার লোকটাকে দেখে নিল। ডাক্তার পাকড়াশিকে কল দিতে বলে রাজীব যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রাইমারি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে লেগে পড়ল।

একটু আগে মেডিসিনের অতনুদা ওয়ার্ডে গিয়েছেন। তিনি ফিরে এলে একটু ভরসা পাওয়া যেত। রাজীবদা গ্লাভস হাতে পরেও কী যেন ভাবছে। রাজীবদাকে এত নার্ভাস কখনও দেখেননি অনিরুদ্ধ। রাজীব অনিরুদ্ধর কলেজেরই, বছর পাঁচেকের সিনিয়র। এই বয়েসেই সার্জারিতে বেশ হাত পাকিয়েছে।

বাইরের কোলাহল যে ভাবে বাড়ছে, তাতে রুগির উন্মুক্ত পাঁজরের খাঁজে থাকা বেলুনটা যদি চুপসে যায়, তা হলে কী যে ঘটবে, সেটা কল্পনা করেই অনিরুদ্ধের হাত-পা পেটের মধ্যে সেঁধিয়ে যাচ্ছে।

ওটি-র মধ্যে থেকেই অনিরুদ্ধ টের পাচ্ছে, বাইরে জমায়েত বাড়ছে। তাদের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর, দেবভাষার আস্ফালন, দরজার সামনে লাঠিসোঁটার আওয়াজ এবং মুহুর্মুহু ‘গিলেদা জিন্দাবাদ’ ধ্বনিতে বাদলা রাতেও অনিরুদ্ধ কুলকুল করে ঘামতে শুরু করল।

স্ট্রেচারের উপর চিত হয়ে পড়ে থাকা ‘গিলেদা’ যে নেতা গোছের কেউ, প্রথম থেকেই তা টের পেয়েছিল অনিরুদ্ধ। কারণ ওর প্রলাপের মধ্যে মাঝে মাঝেই ‘ইলেকছান’, ‘ঝান্ডা’, ‘ছিন্ডিকেট’, ‘বখরা, দানা’— প্রভৃতি রাজনৈতিক শব্দগুচ্ছ বেরিয়ে পড়ছিল। তবে ভেবেছিল, নেতা হলেও নিশ্চয়ই খুব বড় দরের নয়। না হলে বাইপাসের ধারে চোখ-ধাঁধানো নিয়ন বাতি-জ্বলা সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতালগুলো থাকতে বোমা খেয়ে মাঝরাত্তিরে এই সরকারি হাসপাতালে মরতে আসবে কেন!

এ সব কেসে পুলিশকে ইনফর্ম করা দরকার। হাসপাতালের মধ্যে অবশ্য একটা পুলিশ আউটপোস্ট আছে। সম্প্রতি এমার্জেন্সির বাইরে এক জন কনস্টেবলও মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু গোলমালের গন্ধ পেলেই সে ভদ্রলোক ঢাল-তরোয়ালহীন কন্ট্রাকচুয়াল সিকিয়োরিটির উপর ‘বুঁদির গড়’ রক্ষার দায়িত্ব অর্পণ করে জরুরি কাজে সটকে পড়েন। আজও যথারীতি তিনি কেটে পড়েছেন দেখে অনিরুদ্ধ বুঝেছে, সামনে বিপদ।

রুগির হেঁচকি শুরু হয়েছে। বাইরের স্লোগানের তেজ ক্রমশ বাড়ছে। অনিরুদ্ধর শঙ্কা বাড়ছিল। এত ক্ষণে নিশ্চয়ই পার্টি অফিসে খবর পৌঁছে গিয়েছে। ‘গিলেদা’কে নিয়ে ওটি-তে ঢুকে পড়ার আগে দেখে এসেছে, কয়েক জন উটকো পেশেন্ট বাইরে অপেক্ষা করছে। সবই অজানা জ্বরের কেস।

এ দিকে মেট্রন ভদ্রমহিলা বার দুয়েক এসে মুখঝামটা দিয়ে গিয়েছেন। এমনিতে ভদ্রমহিলা খারাপ নন। বিশেষ করে অনিরুদ্ধের মতো ছেলে-ছোকরা ডাক্তারকে মাতৃসুলভ স্নেহের চোখেই দেখেন। কিন্তু নতুন পেশেন্ট পাঠালে মাথায় করে রাখা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না, সে কথাটাই স্মরণ করাতে এসেছিলেন।

কিন্তু এই মুহূর্তে অনিরুদ্ধ বাইরের কোনও কিছুতেই মন দিতে পারছিল না। একমনে স্টিচ শেষ করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকাল। যাক, আপাতত বাচ্চাটা বিপদ থেকে মুক্ত!

হঠাৎ দরজা ঠেলে এক জন লোক ঢুকে চিৎকার করে উঠল, ‘‘এই জানোয়ার, ডাক্তার কোথায়?’’

আকণ্ঠ গিলে এসেছে লোকটা। মুখ খুলতেই ঘরের মধ্যেটা অ্যালকোহলের গন্ধে ভরে উঠল। অনিরুদ্ধ চিরকালই নির্বিরোধী ভীতু সম্প্রদায়ের মানুষ। সে ভয়ে ভয়ে রাজীবের দিকে তাকাল।

লোকটা আবারও চিৎকার করে উঠল, ‘‘কী হল? কথা কানে যাচ্ছে না? ডাক্তার কোথায়?’’

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রাজীব আমতা আমতা করে বলল, আমরা পেশেন্টকে দেখছি। তা ছাড়া সিনিয়র-সার্জনকেও কল দেয়া হয়েছে, এখুনি এসে পড়বেন।

‘‘আবে... কল দেওয়া হয়েছে মানে কী? এমার্জেন্সিতে সিনিয়র সার্জন নেই কেন? আধ ঘণ্টা হল, পেশেন্ট আনা হয়েছে, এখনও কোনও ইম্প্রুভমেন্ট নেই, আর সিনিয়র সার্জন বৌকে নিয়ে ঘুমুচ্ছে? গিলেদার যদি কিছু হয়ে যায়, তোদের সব ক’টাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারব। কাকে নিয়ে এসেচি জানিস? আমাদের লিডার, তাজা লিডার!’’

হঠাৎ রৌনক দরজা খুলে মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে ইশারায় অনিরুদ্ধকে ডাকল। তার পর ফিসফিস করে বলল, ‘‘সুপার কথা বলতে চাইছেন।’’ অগত্যা দরজায় দাঁড়িয়েই ফোনটা কানে ধরল অনিরুদ্ধ।

ভীষণ উত্তেজিত সুপারের গলা, ‘‘নিতাই নস্কর নামে কাউকে কি এমার্জেন্সিতে আনা হয়েছে?’’

অনিরুদ্ধ মারমুখী লোকটার দিক থেকে চোখ সরাতে পারছিল না। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘‘না, মানে ওই নামে তো... ’’

অনিরুদ্ধের কথা শেষ না হতেই সুপার ধমকে উঠলেন, ‘‘কী বলছ তুমি? এখনই এমপি সাহেব হেলথ সেক্রেটারিকে ফোন করেছিলেন। হেলথ সেক্রেটারি স্বয়ং জানতে চাইছেন, বিশিষ্ট সমাজসেবী নিতাই নস্কর বোম ফেটে আহত হয়েছেন।’’

অনিরুদ্ধ ঘাবড়ানো গলায় বলল, ‘‘হ্যাঁ স্যর, তবে ওঁর নাম তো গিলেদা।’’

‘‘তোমার মাথা! পেশেন্টের অবস্থা কেমন? অপারেশন শুরু হয়েছে? কী বলছ? ডাক্তার পাকড়াশি এখনও পৌঁছননি? রাজীব কী করছে? ইরেস্পনসিবল ফুলস! আচ্ছা আমি আসছি।’’

অনিরুদ্ধ ভয়ার্ত চোখে এক বার মারমুখী যুবককে দেখে নিল। তার পর বিনীতভাবে হাতজোড় করে বলল, ‘‘দাদা, আপনি দয়া করে একটু বাইরে অপেক্ষা করুন। দেখছেন তো, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। সিনিয়র সার্জন ডাক্তার পাকড়াশিও এখনই এসে পড়বেন।’’

‘‘অ্যাই মাথামোটা, তুই আমাকে বাইরে যেতে বলছিস কোন সাহসে? জানিস, আমি কে? মেরে এই হাসপাতালের মেঝেয় তোকে পুঁতে দিতে পারি।’’

মেডিকেল সায়েন্স পড়াবার সময় সব ছাত্রকে যে মন্ত্রগুপ্তিটা শেখানো হয়, সেটা হল, যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখা। অনিরুদ্ধ যতটা সম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে অনুত্তেজিত কন্ঠে বলল, ‘‘কেন চিনব না দাদা? আমি শুধু আপনার পেশেন্টের ভালর জন্যে আপনাকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলছি। আমাদের মারলে যদি আপনার পেশেন্ট সুস্থ হয়, তা হলে নিশ্চয়ই মারবেন। কিন্তু পেশেন্টের ক্ষতি হোক, এটা নিশ্চয়ই আপনি চান না?’’

লোকটা এক বার শীতল চোখে ওদের দু’জনকে মেপে নিল। তার পর হিসহিসে গলায় বলল, ‘‘বেশ, তুই যখন বলছিস, আমি আপাতত বাইরে যাচ্ছি। কিন্তু গিলেদার যদি কিছু হয়ে যায়...’’

লোকটা বেরিয়ে যাওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ডাক্তার পাকড়াশি এলেন। ছোট বাচ্চাটাকে তত ক্ষণে বেডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাকড়াশি ওদের দু’জনেরই শিক্ষক। স্যর ঢুকতে রাজীব সরে দাঁড়াল। অনিরুদ্ধ দেখল, রুগির হৃৎপিণ্ডের সঙ্কোচন-প্রসারণ স্তিমিত হয়ে এসেছে। পাকড়াশি আর দাঁড়ালেন না। থমথমে মুখে বেরিয়ে গেলেন।

অনিরুদ্ধর শিরদাঁড়া বেয়ে হিমেল স্রোত নেমে গেল। বাইরে উন্মত্ত জনতার ‘গিলেদা জিন্দাবাদ’ ধ্বনি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। অনিরুদ্ধ বুঝতে পারছিল, যে কোনও মুহূর্তে জনপ্লাবন ওদের উপরে আছড়ে পড়বে। রাজনীতির মারপ্যাঁচে চিকিৎসকরা সাধারণ মানুষের কাছে এখন গণশত্রু।

ভীত বিহ্বল অনিরুদ্ধর হাতখানা ধরে হ্যাঁচকা টানে বাইরে বার করে আনল রাজীব। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। ওরা বেরোতেই ওদের উপরে এক দল লোক হিংস্র পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল।

ভিড়ের মধ্যে থেকে এক জন চেঁচিয়ে বলল, ‘‘মার শালাকে। এটাই গিলেদাকে ফেলে রেখে আমাকে বাইরে আসতে বলেছিল।’’

ইতিমধ্যে হাসপাতালের এমার্জেন্সি ওয়ার্ড রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে। একের পর এক চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটার, রেজিস্টার সব আছড়ে পড়ছে মাটিতে। ঝনঝন করে ভেঙে পড়ছে জানালার কাচ।

ঘাড় ঘুরিয়ে রাজীবের কী হল তা দেখার সুযোগ পেল না অনিরুদ্ধ। শরীরের উপরে বৃষ্টির মতো এলোপাথাড়ি কিল-চড়-লাথি-ঘুসি নেমে আসতে লাগল। তীব্র যন্ত্রণায় শরীর ক্রমশ অসাড় হয়ে আসতে লাগল। মা-বাবার মুখ এক বার মনের পর্দায় ভেসে উঠেই আবার মিলিয়ে গেল। মা-বাবার খুব গর্ব ছিল অনিরুদ্ধকে নিয়ে। বরাবর ভাল রেজ়াল্ট, জয়েন্টে প্রথম দিকে ছিল সে। এমবিবিএস-এ গোল্ড মেডেল। মা-বাবার খুব ইচ্ছে ছিল, পোস্ট গ্রাজুয়েশনটা এইমস থেকে করানোর।

অনিরুদ্ধ আর ভাবতে পারছিল না। সে কি মারা যাচ্ছে? তার চেতনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছিল। হঠাৎ মনে হল, মাথায় খুব ভারী এবং কঠিন কিছু আছড়ে পড়ল। তার পর চরাচর জুড়ে শুধু অন্ধকার।

প্রথম জ্ঞান ফিরতে অনিরুদ্ধ বুঝে উঠতে পারছিল না, সে জেগে আছে না স্বপ্ন দেখছে। চোখ খোলার চেষ্টা করেও খুলতে পারল না। খুব অবাক হল অনিরুদ্ধ। তবে কি সে মরেনি? সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা, মাথায় যেন খুব ভারী একটা বস্তা চাপানো হয়েছে, নড়াবার জো নেই। ভাবতে ভাবতেই আবার ঘুমিয়ে পড়ল অনিরুদ্ধ। বেশ কয়েক দিন পরে প্রথম যখন চোখ খুলতে পারল, আবছা দৃষ্টিতে দেখল, মা-বাবা খুব উদ্বিগ্ন মুখে সামনে একটা টুলে বসে আছে। বাবার শুকনো মুখ, চোখ গর্তে ঢুকে গেছে, মুখে কাঁচাপাকা লম্বা দাড়ি। মা যেন শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।

আস্তে আস্তে টের পেল, ডান হাতে মাল্টিপল ফ্রাকচার, চোয়ালের হাড় ভেঙেছে, বাঁ চোখের নীচে ক্ষতটা বেশ গভীর, মাথার হাড়ে চিড়। নিজে ডাক্তার হয়েও বুঝে উঠতে পারল না, সেরে উঠতে কত দিন লাগবে ।

ধীরে ধীরে শরীর সেরে উঠছিল বটে, কিন্তু অনিরুদ্ধর মনের ক্ষত গভীরতর হচ্ছিল। মানুষের প্রাণ বাঁচানোর ব্রত যে কখনও নিজের পক্ষে এমন প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, এ কথা সে কখনও কল্পনা করেনি। সব চেয়ে বড় আতঙ্কের ব্যাপার, চিকিৎসকদের সম্পর্কে সামাজিক এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। ডাক্তাররা সবাই যেন অর্থলোলুপ দানব! চিকিৎসকদের প্রতি দৈনন্দিন অসহিষ্ণুতাই তার প্রমাণ। দু-চার জন অর্থপিশাচ মানুষ সব পেশাতেই আছেন, ডাক্তারিও নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু তাই বলে গোটা চিকিৎসক সমাজকে দেগে দেওয়ার এই প্রবণতা কী বিপজ্জনক, অনিরুদ্ধ নিজের জীবন দিয়ে তা উপলব্ধি করছে।

নিজের সঙ্গে ক্রমাগত লড়াই করতে করতে অবশেষে অনিরুদ্ধ একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্যে যদি কেরানির চাকরি কিংবা ছোট দোকানদারিও করতে হয়, পেশা হিসেবে সে আর ডাক্তারিতে থাকবে না। বিকেলে বাবা-মা দেখা করতে এলে পর দিন আসার সময় কিছু জিকে আর কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের বই কিনে আনতে বলে দিল।

পর দিন মোবাইল-নেটে সর্বভারতীয় স্তরে কী কী পরীক্ষা দেওয়া যায় খুঁজতে লাগল। বিকেলের দিকে হয়তো একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ মনে হল, কাছাকাছি কেউ যেন বলছে, ‘‘মা, আঙ্কল তো ঘুমুচ্ছে।’’

কোনও শিশুর কন্ঠস্বর। অনিরুদ্ধ ঘুম-ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখল, ওর মাথার কাছে এক দেবশিশু। চোখ আর একটু ধাতস্থ হতে মুখটা মনে পড়ে গেল। সে দিনের গলায় সেফটিপিন-আটকানো সেই বাচ্চাটা।

অনিরুদ্ধকে তাকাতে দেখে মিষ্টি হেসে সে বলল, ‘‘তোমার বুঝি খুব লেগেছে আঙ্কল?’’

অনিরুদ্ধ হাত বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে এক বার ছুঁতে চাইল। ওর মনে হল, এক জন চিকিৎসক হিসেবে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে ওই ছোঁয়াটুকু এই মুহূর্তে খুব জরুরি।

অন্য বিষয়গুলি:

Short Story Arun Kar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy