ছবি: তারকনাথ মুখোপাধ্যায়
আজ নীরববাবুর মৃত্যুদিন। তাই ভোরে উঠে মর্নিং ওয়াকে যাওয়ার নাম করে পূর্ণ শান্তিময় ও পরম পবিত্র মৃত্যুমুহূর্ত রচনা করতে বেরিয়ে পড়েছেন বাড়ি থেকে। যাওয়ার আগে মানিব্যাগটা ভাল করে দেখে নিয়েছেন কোনও কাগজপত্র আছে কি না, যাতে তাঁর পরিচয় পুলিশে জেনে যায়, তাঁর সৎকারের জন্য বাড়ির লোককে ডেকে আনে।
ছোটবেলা থেকেই জ্যোতিষচর্চার উপর নীরববাবুর ঝোঁক। গ্রহ-নক্ষত্র বিচারের পাশাপাশি করতল, সংখ্যাতত্ত্বও গুলে খেয়েছেন। নিজের ভাগ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, কোনও ভাবেই তেষট্টি বছরের গাঁট পেরোতে পারবেন না।
তাই ষাট হতেই রোজ সকালে উঠে নিয়ম করে টেস্ট করেছেন চোখের উপরের পাতায় বুড়ো আঙুল চাপলে নীচে জ্যোতির্বলয় দেখা যাচ্ছে কি না। যদি দেখা না যায় এবং তার সঙ্গে ডান হাত মুঠো করে কপালে রেখে যদি দেখেন কব্জির তলাটা সরু হতে-হতে আলাদা হয়ে গিয়েছে, তা হলেই বুঝবেন আজ-কালের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু অবধারিত।এ পরীক্ষা বছরদুয়েকের উপর চলছে।
ক
িন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, সে সব লক্ষণ ছাড়াই মাস আটেক আগে হঠাৎ এক দিন মর্নিং ওয়াক থেকে ফিরে তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। বাড়ির লোকেরা ডাক্তারবাবুকে ডেকে ওঠার আগেই সব শেষ।
কিন্তু শেষ হয় শরীর। মন নয়। চোখ দিয়ে কি মানুষ দেখে? না কান দিয়ে শোনে? প্রাণ থাকলে ওগুলো লাগে। প্রাণ গেলে ঝামেলা শেষ। ভায়া-মিডিয়া ছাড়াই চ্যানেল সাফ।
তাই অন্য দিনের চেয়ে সে দিন নিজেকে বেশিই স্পষ্ট করে দেখছিলেন। সঙ্গে তাঁর দেহ আঁকড়ে কান্নায় ভেঙে-পড়া নিকটজনদেরও। ডাক্তার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে চলে যাওয়ার পরে কাঁদতে-কাঁদতে তাঁকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার আগে এক জন সকলের চোখের আড়ালে কী নিখুঁত ভাবেই না তাঁর হাতের সোনার আংটিটা সরিয়ে ফেলল, তা-ও দেখলেন। আর এক জন প্যান্টের পকেট থেকে কায়দা করে মানিব্যাগটাই হাতিয়ে নিল।
“মরার আর টাইম পেল না!” জামাইদের এক জনের চাপা গলার গজগজানি শুনলেন, “আজই অফিসে জরুরি মিটিং। কাজের বারোটা!”
ছেলের মনের কথাও কানে এল। বলছে, “বাবা ভাল ঘরটা আটকে রেখেছিল। মাকে নীচে পাঠিয়ে এ বার হাত-পা ছড়িয়ে থাকা যাবে।”
ভেবেছিলেন শুনবেন না, খোদ জীবনসঙ্গিনী মালবিকার মনের কথাও শুনে ফেললেন, “এখন থেকে পেনশনের অর্ধেকটা আমার নামেই হবে। সহজে হাত খুলত না। সব লকারে গুঁজে রাখত। সব আমার! এখন সব আমার!”
দুই মেয়ে তাঁর। তাদের এক জন মডেলিং করে। সে “বাপি! বাপি!” করে খুব কাঁদছিল। আবার মনে মনে বলছিল, “বাবা মারা গিয়েছে। ফোটোশুটে সুইট স্মাইল দেব কী করে রে বাবা! ক’দিন মুখভার করে থাকতে হবে কে জানে!”
দেখছিলেন আর ইলেকট্রিক শক খাচ্ছিলেন নীরববাবু। হাড়ে হাড়েই টের পাচ্ছিলেন, মুখে যা-ই বলুক, আসলে তাঁকে কেউ ভালবাসে না। আস্ত প্রাণকে নয়, তাঁর কাছে যা আছে, ভালবাসে সেই সব নিষ্প্রাণ বস্তুকেই। যত তাড়াতাড়ি যান তাদেরই মঙ্গল। স্রেফ আবর্জনা ছাড়া আর কিছু নন তিনি।
ভাবনাতেই তীব্র শকের কাজ হয়। বার বার শক খেলে উন্মাদ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে যায়, মরা মানুষ কোন ছার। সত্যিই থেমে-যাওয়া হার্টটা আচমকা সচল হয়ে যায় তাঁর। সাক্ষাৎ মৃত্যুর গ্রাস থেকে বেরিয়ে নাটকীয় ভাবে বেঁচে ওঠেন। শুনে যে পারিবারিক ডাক্তার নাড়ি চেপে, চোখে টর্চ মেরে তাঁকে মৃত ঘোষণা করে ভিজ়িট পকেটে পুরে “যাহ্! একটা পেশেন্ট জন্মের মতো গেল!” বলে হাহাকার করে চলে গিয়েছিল, হাঁপাতে-হাঁপাতে ছুটে আসে।
ডেথ সার্টিফিকেট ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগে অনিচ্ছার ভান করে আবার এক দফা ভিজ়িট পকেটে পুরে গম্ভীর ভাবে রায় হাঁকে, “আ রেয়ার কেস অব নো রিটার্ন ফ্রম ডেথ। কোটিতে একটা হয়। নীরবদা সুস্থ হলে এক দিন আসব। নিয়ার-ডেথ এক্সপেরিয়েন্সের কেস তো চট করে মেলে না। স্টাডি করব!”
প্র্যাকটিস ছেড়ে স্টাডি! রোগীর হুড়োহুড়ি বাড়ানোর ট্যাকটিক্স আর কী! কিন্তু তত ক্ষণে যা এক্সপেরিয়েন্স করার, করে ফেলেছেন নীরববাবু। তৎক্ষণাৎ ঠিক করে ফেলেছিলেন আজ যখন হল না, যা হওয়ার এ বছরের মধ্যে হতেই হবে।
তাই নিজস্ব ট্যাকটিক্সেই স্টাডি করে যখন দেখবেন মৃত্যু ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে তখন কাউকে কিছু না বলে, দেওয়া-নেওয়ার স্বার্থের জগৎ থেকে সব ফেলে-ছড়িয়ে বেরিয়ে পড়বেন। কারও শান্তিভঙ্গ না করে, কারও দিনের রুটিন নষ্ট না করে, সকলের সব সুইট স্মাইল অক্ষুণ্ণ রেখেই এমন জায়গায় চলে যাবেন, বাড়ির লোকে হাজার মাথা খুঁড়লেও তাঁর ট্রেসই করতে পারবে না। সে জায়গা অবশ্য ঠিক করাই আছে তাঁর।
আজই সেই দিন। তাঁর জন্মক্ষণ বিকেল পাঁচটা তিন। তার পরেই তেষট্টি ছেড়ে চৌষট্টিতে পড়ে যাবেন। তাও শরীর পুরো ফিট দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে সকালে উঠে টেস্ট করতে গিয়ে হাঁপ ছাড়েন। তাঁর জ্যোতিষচর্চা বৃথা যায়নি। চোখের উপরের পাতায় চাপ দিচ্ছেন, সূর্যের দেখা নেই। কপালে হাত মুঠো করে চেয়ে কী অভ্রান্ত ইঙ্গিত, দেখলেন কব্জিও সরু হতে-হতে ভেঙে দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। তার মানে আর দেরি নেই। যতই শরীর ফিট থাকুক, যে ভাবেই হোক তার মধ্যেই তাঁর নিশ্চিত মৃত্যু।
কাজেই বেরিয়ে পড়েছেন নীরববাবু। স্টেশনে এসে ধরেছেন ট্রেন। ট্রেনে ঝাড়গ্রাম। সেখান থেকে বাস ধরে বেলপাহাড়ি। সেখানে কুখ্যাত জঙ্গলের ছড়াছড়ি। গাছেরা দল বেঁধে মাথাচাড়া দিয়ে একটা অন্যটার গায়ে ঢলাঢলি করছে। বনপথ ছেড়ে কিছুটা গিয়ে নিশ্ছিদ্র আগাছা-ঘেরা স্থান বেছে জাস্ট শুয়ে পড়া। পাটোয়ারি-বুদ্ধির পৃথিবী থেকে সাচ্চা ভালবাসার মহাজগতে। জ্যোতিষচর্চাও তো সেখানকারই প্রোডাক্ট। তাঁর গণনা কি মিথ্যে হয়?
মোটামুটি ঘণ্টা ছয়েকের মধ্যে নীরববাবু তাঁর গন্তব্যে পৌঁছে গেলেন। বেলপাহাড়ি থেকে অটোরিকশা ভাড়া করে চলে গেলেন গভীর জঙ্গলে। কয়েক বছর আগে এখানেই ভয়াবহ ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে এক জওয়ানের মাথার খুলি উড়ে আটকে গিয়েছিল গাছের ডালে।
ভাড়া মিটিয়ে অটো ছেড়ে চার পাশটা দেখে মনে মনে ‘ফার্স্ট ক্লাস!’ বলে পিচের ছাল উঠে পাথর বেরিয়ে-পড়া রাস্তা ছেড়ে ঢুকে গেলেন ভিতরে। ঘন জঙ্গল ঠেলে এগোতে লাগলেন। লোকজন দূরে থাক, এত গাছ, কারও ডালপালা নড়ছে না। হাওয়া পর্যন্ত থেমে গিয়েছে। পাখির ডাকও নেই। গ
াছেরা মানুষ না হলেও তাদের মহাজাগতিক সেন্স প্রখর। নিয়ার-ডেথ এক্সপেরিয়েন্সের তোয়াক্কা ছাড়াই, কান-চোখ ছাড়াই সব কিছু দেখে, শুনে ফেলে সকলের সব মনের কথা। ঠিক টের পেয়েছে দুয়ারে আরও এক মৃত্যু উপস্থিত। আসন্ন মৃতের ছেড়ে-যাওয়া কাঁথাকানির দিকে ফিরেও না চেয়ে সাচ্চা ভালবাসায় বুনে শোকের আবহ রচনা করে নীরব। স্তব্ধ।
নীরববাবু “থ্যাঙ্কস! আই রিয়েলি লাভ ইউ অল!” বলে অরণ্যকে কমপ্লিমেন্ট দিয়ে মৃত্যুকেও এক দফা প্রণাম ঠুকে বসলেন। ভাগ্যিস এক বার প্রায় মরেই গিয়েছিলেন! নইলে এই ভাবে একান্ত অনুচ্ছিষ্ট, সবচেয়ে পবিত্র ও পরোপকারী মৃত্যুর প্ল্যানটা মাথাতেই আসত না তাঁর!
মিনিট পনেরো হাঁটতেই নীরববাবু পছন্দসই একটা জায়গা পেয়ে গেলেন। বড় বড় শালগাছে চার দিক আঁধার। মাঝে আগাছায় ঠাসা মস্ত এক ঝোপ। কষ্ট করেই মাথাটা গলিয়ে গুটিসুটি মেরে ঢুকে গেলেন। ভাল দেখা যাচ্ছিল না। চোখ সইয়ে দেখলেন ঝরা পাতায় নীচটা গদি হয়ে আছে। তাঁকে দেখে কয়েকটা গিরগিটি ছুটে পালাল। পিঁপড়ের পাল চঞ্চল হয়ে তাঁকে শ্রদ্ধাভরে জায়গা ছেড়ে ছড়িয়ে গেল এ দিকে-ও দিকে।
মাথার উপর মাকড়সার জাল। তাতে শুকনো পোকামাকড়ের ভুক্তাবশেষ ও ফেনা-ফেনা শিশির লেগে আছে। মাকড়সা-মাকে ডিস্টার্ব না করে নীরববাবু হামাগুড়ি দিয়ে জায়গা করে টানটান হয়ে শুয়ে ঘড়ি দেখলেন। স
বে চারটে। এখনও এক ঘণ্টার উপর। বোধ হয় বেরোবেন বলে মৃত্যু মহারাজ সাজগোজ করছেন। কিংবা অলরেডি স্টার্ট করেছেন। মহাশূন্য থেকে ডানা মেলে সাঁ-সাঁ করে নেমে আসছেন। কম কষ্ট? তার উপর লোকে মরতে চাইলেও শরীর বেঁকে বসে। কেবলই বেগড়বাঁই করে। ‘না! না!’ করে। রীতিমতো যুদ্ধ করে ঢুকতে হয়। নাহ্, সকলকে যখন সব কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়েই এসেছেন, মহারাজ কী দোষ করলেন? তাঁকে রিলিফ দিলে তবে না তাঁকেও শ্রেষ্ঠ গৌরবময় মৃত্যু উপহার দেবেন।
নীরববাবু লেগে গেলেন কাজে। শরীরকে কড়া করে “শাট ডাউন!” অর্ডার ছেড়ে শ্বাস বন্ধ করে ফেললেন। তার পর মাকড়সার জালের আর ঝোপের পাতার ফাঁকফোকর দিয়ে প্রকাণ্ড এক শাল গাছের মাথার দিকে চেয়ে রইলেন।
কেটে যাচ্ছে সেকেন্ডের পর সেকেন্ড। মিনিট ছেড়ে পরের মিনিট। আকাশে আলোর ছড়াছড়ি। গাছের দল বাতাসের কার্বন ডাই-অক্সাইড আর রোদ্দুর থেকে পাতায় পাতায় রাতের শেষ রসদটুকু চেঁছেপুঁছে নিচ্ছে। বাতাসে মুঠো মুঠো ছড়িয়ে দিচ্ছে টাটকা অক্সিজেন। নীরববাবু অভিমানরুদ্ধ স্বরে তাদের অবিরাম কৃতজ্ঞতা নিবেদন করে শরীরকে সমানে শাট ডাউন কমান্ড পাঠাচ্ছেন।
কিন্তু শাট ডাউন দূরে থাক, শরীরের যা চিরকালের রোগ, সেই প্রাণ আঁকড়ে থাকার বদমাইশি জুড়েছে। ফেটে যাচ্ছে বুক। ফুসফুস আঁকুপাকু করে চিৎকার জুড়েছে, ‘একটু বাতাস! একটু বাতাস!’
“শাট আপ!” বলে পাছে দুষ্টু অক্সিজেন ঢুকে যায়, হাত দিয়ে নাক-মুখ শক্ত করে টিপে নীরববাবু মৃত্যুর কাছে প্রার্থনা জানালেন, “যতই শরীর ব্যাটা কষ্ট পাক, আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না স্যর। চলে আসুন প্লিজ়। আই অ্যাম রেডি।”
কিন্তু নীরববাবু এক বার মৃত্যুমুখ থেকে ফিরেছেন, এ বার আর মৃত্যু সহজ হল না। সাড়া পর্যন্ত জাগল না তাঁর। তবে কি আগের বারেই মৃত্যুর ফাঁড়া কেটে গিয়েছে? স্বার্থকুটিল পৃথিবীতে আরও আরও অনেক দিন অপমান-বিড়ম্বিত জীবন নিয়ে খুঁড়িয়ে বেঁকে দুমড়ে বাঁচতে হবে?
ভয়ে-আতঙ্কে আপনিই হাত খসে পড়ল নীরববাবুর। উন্মুক্ত হয়ে গেল নাক। সঙ্গে সঙ্গে উদ্ভিদে উদ্ভিদে পরিব্যাপ্ত অক্সিজেনের সমুদ্রে যেন সুনামি উঠল। ঝাঁপিয়ে পড়ে নীরববাবুর সর্ব শরীরে আনন্দের সঙ্গে ছড়িয়ে হাততালিতে ফেটে পড়ল। ফিসফিস করে বলল, “মিছিমিছি কার্বন ডাই-অক্সাইডের সিলিন্ডারটা নষ্ট করছিলেন কেন? খাবার রাঁধতে লাগে যে আমাদের। মরে যাবেন বললেই হল! এত কাল অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখলাম কেন? শুধু নিজের কথাই ভাববেন?”
নীরববাবু ধড়মড় করে উঠে বসলেন। ভেবেছিলেন তিনি মরলে সকলে বাঁচে। নিজেকে ভেবেছিলেন আবর্জনা। এখন তো দেখছেন, কোনওটাই নয়। কোথাও না কোথাও সামান্য হলেও অমূল্য। চোখ খুলে গেল তাঁর। তার পর ঝোপ থেকে বাইরে বেরিয়ে বোকাই বনে গেলেন। চোখের উপরের পাতায় বুড়ো আঙুলের চাপও দিতে হল না, নিজের চোখেই দেখলেন, বনের এক কোণে পশ্চিম আকাশে জ্বলজ্বল করছে লাল টকটকে বিদায়ী জ্যোতির্বলয়।
মহা ভুল করছিলেন। তার স্টাডি ভুল রেজ়াল্টই দেখিয়েছে। বেকার আসা হয়েছে এখানে।
*****
বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হল নীরববাবুর। সকাল থেকে আস্ত একটা লোক বেমালুম উধাও। তত ক্ষণে বাড়ির লোক ছোটাছুটি, ফোনাফুনি আর কান্নাকাটি করে থানায় হাঁটা লাগাবে কি না ভাবছে। নীরববাবুকে দেখে মালবিকা ছুটে এসে চেঁচিয়ে উঠলেন, “কোথায় গিয়েছিলে? না বলেকয়ে কোথায় গিয়েছিলে?”
মনের ভার কেটে গিয়েছে নীরববাবুর। নিজের মূল্য বুঝেছেন। বললেন, “খুঁজতে।”
“কী? কাকে?”
“আমাদের সকলকে। আমাদের সম্পর্কগুলোকে,” নীরববাবু গম্ভীর মুখে বললেন, “গিয়ে দেখলাম মানুষের ফুসফুস বাসা বেঁধে বসে আছে গাছের পাতায়। গাছেদের খিদেও আমাদেরই ফুসফুসকে তাক করে বসে আছে। এ তো শুধু দেওয়া-নেওয়া নয়, অপূর্ব বিনিময়। সকলে মিলে সুন্দর করে জীবন হয়ে বেঁচে থাকা। তাই গাছ কাটতে নেই। জড়িয়ে রাখতে হয়।”
মালবিকা কিছুই বুঝতে পারলেন না। অবাক হয়ে চেয়ে আছেন দেখে নীরববাবু মুচকি হাসলেন, “বিয়ের সময় এক বার অঙ্গুরীয় বিনিময় করেছি। এ বার যে বিনিময় বাকি আছে, যা হচ্ছে না বলে জীবনটা সুন্দর হয়েও হচ্ছে না তোমার, চলো সেটাই পূর্ণ করে দিই। এসো আমার সঙ্গে!”
যে ডান হাতের কব্জি কাটা দেখেছিলেন, গণনার মধুর ভুলে তা দিয়েই মালবিকার হাত চেপে তাঁকে টানতে-টানতে নীরববাবু চলে গেলেন নিজের ঘরে। চাবি দিয়ে আলমারি ও লকার খুলে বললেন, “সব আমার? নাও তোমার করে নাও। আমাকে মুক্তি দাও।”
এত ক্ষণে বুঝলেন মালবিকা। “না! না!...” করে আর্তনাদ করে নিজেই গাছ হয়ে গেলেন। নীরববাবুকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy