Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৫

অচেনা স্রোত

ভেতরটা ছটফট করছে। সমীরণকে বলে এসেছে পনেরো মিনিটের মধ্যে আসছে। ভেবেছিল সেবন্তীকে খুশি করে দিয়ে পনেরো মিনিটের মধ্যে নীচে চলে আসবে। কিন্তু হিসেব উলটে গিয়েছে। মিমির প্রজেক্টের একটু করে না দিয়ে বাইরে যাওয়া যাবে না।

ছবি: পিয়ালী বালা

ছবি: পিয়ালী বালা

কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৫০
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি: কস্তুরী ফোনে প্রিয়তোষের কাছে জানতে চায়, তিনি হোয়াট্‌সঅ্যাপ ব্যবহার করেন কি না, তা হলে ওর লেখা একটা গল্প পাঠাবেন প্রিয়তোষকে। বাজার-ফেরত মলয়ের মুখে সেবন্তী জানতে পারে, গত রোববার সেবন্তীর দিদি-জামাইবাবু শ্রাবন্তী-নীহারের ফ্ল্যাটে একটা মিটিং হয়েছে। মলয় মিনিট দশেকের জন্য বাইরে বেরোতে চায়, সেবন্তী রেগে মলয়কে বলে কম্পিউটার খুলে মেয়ের স্কুলের প্রজেক্ট করতে।

ব্যাজার মুখে মলয় মেয়ের ঘরে ঢুকল। মিমি ছড়ানো বইখাতার সামনে পায়ের নখে নেল আর্টের স্টিকার লাগাচ্ছিল। বলল, ‘‘বাবা, নেটটা পাসওয়ার্ড দিয়ে খুলে দাও।’’ মলয় মেয়েকে পাত্তা না দিয়ে বলল, ‘‘ন্যাকামো করিস না তো! সবই তো জানিস। খোল না!’’

ভেতরটা ছটফট করছে। সমীরণকে বলে এসেছে পনেরো মিনিটের মধ্যে আসছে। ভেবেছিল সেবন্তীকে খুশি করে দিয়ে পনেরো মিনিটের মধ্যে নীচে চলে আসবে। কিন্তু হিসেব উলটে গিয়েছে। মিমির প্রজেক্টের একটু করে না দিয়ে বাইরে যাওয়া যাবে না। মলয় মোবাইলে সমীরণের নাম টাইপ করতে থাকল।

ফোন ধরেই সমীরণ বলল, ‘‘পার্টনার কখন আসছ? ওরা কিন্তু কাছাকাছি চলে এসেছে, ফোন করেছিল।’’

‘‘বাবা, গুগল খুলেছি। কী সার্চ করব? আমার ডায়েরিটা দেখবে?’’ মিমি মলয়ের হাত নাড়িয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল।

‘‘ফোঃ! তোর ডায়েরি,’’ মলয় মিমিকে পাত্তা না দিয়ে বলল, ‘‘পিকচার অব বাবর আকবর যা যা পারিস সার্চ করে ছবি বার করে ডাউনলোড কর।’’

সমীরণ ফোনে বলল, ‘‘মেয়েকে পড়াচ্ছ? তা হলে?’’

‘‘না না আসছি।’’

‘প্লিজ এসো, পার্টনার। জানোই তো, ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে কথাবার্তা আমি কিছুই বলতে পারি না। দরাদরি থেকে এগ্রিমেন্ট ক্লজ, সব তোমাকেই দেখে দিতে হবে।’’

‘‘চাপ নিও না। ম্যায় হুঁ না!’’

‘‘আর একটা খবর আছে। ওরা নাকি প্রিয়তোষ চাটুজ্যের ফ্ল্যাটটাও দেখবে। পার্টনার দেখো, নেপোয় যেন দই না মেরে বেরিয়ে যায়। দরকার হলে তোমায় কিন্তু ভাংচি দিতে হবে।’’

‘‘আসছি, দশটা মিনিট।’’ ফোনটা ছাড়ার চার মিনিটের মধ্যে সোমনাথের মনে হল, দশ মিনিট হয়ে গেল। ছটফট করে উঠে মেয়েকে বলল, ‘‘নে নে অনেক হয়েছে, এ বার দু’টো ছবির প্রিন্টআউট নে।’’

প্রিন্টার থেকে দু’টো ছবি ছেপে বেরল। একটার তলায় উর্দু হরফের আদলে বাবরও লেখা আছে। মলয়ের পছন্দ হল। বেশ চকচকে রঙিন প্রিন্টআউট। সে ছবিদু’টো হাতে নিয়ে সেবন্তীকে দেখিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, ‘‘অনেক খুঁজে খুঁজে দু’টো এক্কেবারে অ্যাপ্ট ছবির প্রিন্টআউট করে দিয়েছি। ও এগুলো চেটাক, আমি চট করে একটু ঘুরে আসছি।’’

সেবন্তী ছবি দেখে ঝাঁঝিয়ে উঠল, ‘‘কিসের ছবি এটা? জোব্বা গায়ে বাবর? ডায়েরিতে কী লেখা, দেখোনি? চোখে কি ঠুলি পরে থাকো? কী দিয়েছে প্রজেক্ট, দেখেছ? ক্লোদ্‌স অ্যান্ড অর্নামেন্টস অব সুলতানেট পিরিয়ড। ম্যাম পরিষ্কার লিখে দিয়েছে, নট মুঘলস। এগজাম্পলে আলাউদ্দিন খিলজি বলা আছে। মেয়েটা তো জিরো পাবেই, পেরেন্ট-টিচার মিটিং-এ আমাকেও কথা শুনতে হবে। কোত্থাও যাবে না এখন। যাও, আলাউদ্দিন খিলজির ছবি বার করে প্রিন্টআউট নাও, তার পর প্রপার রাইট-আপ খুঁজে বার করো। শুধু আলাউদ্দিন খিলজির নয়, ওঁর বেগমদেরও ছবি চাই আমার।’’

‘‘অসাধারণ পেন্টিং!’’ শ্রীতমা দেওয়ালে টাঙানো ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ গলায় বলল, ‘‘কোথা থেকে কালেক্ট করেছেন আংক্‌ল?’’

এক চিলতে মরুভূমি। কয়েক জন বিক্ষিপ্ত মানুষ। চরাচরে উজ্জ্বল হলদে একটা আলো। ওপরে হালকা সাদা মেঘ ছড়ানো বিস্তীর্ণ নীল আকাশ। গোটা আকাশ জুড়ে একটা টকটকে লাল গোলাপ। সেই গোলাপের একটা পাপড়ির ওপর একটা শিশিরের ফোঁটা। ছবিটা নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই প্রিয়তোষের। তা ছাড়া দেওয়ালে ছবিটা দেখতে দেখতে প্রিয়তোষের চোখ সয়ে গিয়েছে। পিকলু এক বার আমেরিকা থেকে কাউকে দেওয়ার জন্য ছবিটা নিয়ে এসেছিল। বিশেষ কাগজে ছাপা ‘লুকস-অরিজিন্যাল’ প্রিন্ট। যার জন্য ছবিটা আনা, তাকে শেষ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। সুতপার এক দূরসম্পর্কের ভাই ছবিটা দেখে শিশিরভেজা লাল গোলাপের বাস্তুশক্তির কথা বলেছিল। কথাটা মেনে সুতপা ছবিটা বাঁধিয়ে এই ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরুমের পশ্চিম দেওয়ালে টাঙিয়ে দিয়েছে।

শ্রীতমা ছবিটা দেখতে দেখতে মুখটা না ঘুরিয়েই নীলেশকে ডেকে বলল, ‘‘অ্যাই দেখো দেখো, সালভাদর দালির ছবি।’’

নীলেশ হাত ঝেড়ে বলল, ‘‘যাঃ! দালি হতেই পারে না। দালির ছবির কোনও সিগনেচার এলিমেন্টই নেই!’’

‘‘আরে দালির ছবি মানেই কী ও রকম অ্যাবস্ট্রাক্ট বাঁকা ঘড়ি বা মোনালিসার গোঁফ থাকবে? আমি বলছি এটা দালির ছবি। নামটা মনে পড়ছে না। দাঁড়াও তোমাকে নেটে দেখিয়ে দিচ্ছি।’’

অচিরেই মোবাইলে নেট ঘেঁটে শ্রীতমা ছবিটার নাম বার করে ফেলল, ‘দ্য মেডিটেটিভ রোজ’।

নীলেশ আর শ্রীতমা। হাসিখুশি জুটি, দেখে মন ভরে যায়। মাত্র পনেরো মিনিটের আলাপে এদের একটা আশ্চর্য বৈশিষ্ট্য চোখে পড়েছে প্রিয়তোষের। যে কোনও জিনিসকে এদের তারিফ করার ক্ষমতা। বিশেষ করে শ্রীতমার। পৌষমেলা থেকে কেনা ফুলদানির কৃত্রিম ফুলগুলো যে জার্মেনিয়ামের অনুকরণ, প্রিয়তোষ জানতেন না। পিকলুর আনা ক্রিস্টালের পেঁচাটা কোন কোম্পানির তৈরি, জানতেন না।

ওরা এসেছে এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নেওয়ার জন্য কথা বলতে। মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের সাবেকি বাড়ি ভেঙে নতুন ঘুপচি ফ্ল্যাটগুলো মাস তিনেকের মধ্যে হয়ে যাবে। প্রিয়তোষও কিছু দিনের জন্য আমেরিকা চলে যাবেন। সুতপা বলেছে, আমেরিকা থেকে ফিরে মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের নতুন ফ্ল্যাটেই উঠবে। পিকলু নিউটাউনের এই ফ্ল্যাটকে ফেলে রাখতে চায় না। ভাড়া দিয়ে দিতে চায়। প্রিয়তোষকে দায়িত্ব দিয়েছে সব ব্যবস্থা করতে।

সব গ্যাজেটসুদ্ধু পুরো ফার্নিশড ফ্ল্যাটই ভাড়া দেওয়া হবে। চুক্তি হবে মাত্র এগারো মাসের। পিকলু আর ওর বউ রোশনি ভাড়াটে খোঁজার ব্যাপারে মাপকাঠি ঠিক করে দিয়েছে। আই-টি সেক্টরে কাজ করা তরুণ দম্পতি হতে হবে। বাচ্চা না থাকলেই ভাল, ওরা রং-পেনসিলে আঁকিবুকি কেটে বড্ড দেওয়াল নষ্ট করে। বাড়ি ভাড়া দেওয়ার একটা অনলাইন এজেন্সিতে সদ্য রেজিস্ট্রেশন করেছে পিকলু। সেখানে ফোন নম্বর দেওয়া আছে প্রিয়তোষের। ইতিমধ্যেই কয়েকটা ফোন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু তিন মাসের আগে ফ্ল্যাটটা পাওয়া যাবে না শুনে তারা আর আগ্রহ দেখায়নি। একমাত্র এরাই সব জেনে রবিবার সকালে ফ্ল্যাটটা দেখতে এল।

নীলেশ-শ্রীতমাদের গত রবিবার আসার কথা ছিল। প্রিয়তোষ অপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওরা আসতে পারবে না বলে জানিয়েছিল। প্রিয়তোষ ভেবেছিলেন, ওরা আগ্রহ হারিয়েছে। তাই আজ সকালে যখন আবার ফ্ল্যাটটা দেখতে আসতে চাইল, প্রিয়তোষ একটু অবাকই হয়েছিলেন।

সুতপা গত রবিবারের আগেই স্কাইপে রীতিমত হাত নেড়ে নেড়ে কয়েকটা জিনিস শিখিয়ে দিয়েছে প্রিয়তোষকে। এক, ভাড়ার কথাবার্তা যখন হবে, তখন যেন ঝর্না ফ্ল্যাটে না থাকে। প্রিয়তোষ সেটা হিসেব করেই গত রবিবারের মতো আজকেও ওদের এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে আসতে বলেছিলেন। দুই, সুতপা শিখিয়েছে, চা-টা খাওয়ানোর কোনও হ্যাপা যেন প্রিয়তোষ না করতে যান। জল খেতে চাইলে শুধু জল দিলেই হবে। প্রিয়তোষ অবাক হয়েছিলেন। মনে হয়েছিল, সুতপা কি ও দেশে গিয়ে ক্রমশ পালটে যাচ্ছে?

প্রিয়তোষ সেই কবে ওদের জন্য বাজার থেকে কোল্ড-ড্রিংকের একটা বোতল নিয়ে এসেছিলেন। ফ্রিজে সে ভাবেই পড়ে আছে। সেটা দেওয়ার একটা অবসর খুঁজতে ওদের বললেন, ‘‘আপনারা পুরো ফ্ল্যাট নিঃসঙ্কোচে ঘুরে দেখতে পারেন। বাড়িতে আমি একাই আছি।’’

শ্রীতমা বলল, ‘‘আপনি কিন্তু সেই আপনি আপনি করে আমাদেরই সঙ্কোচে ফেলছেন।’’

‘‘ঠিক আছে, আসলে একটু সময় লাগে। দেখে নাও সব কিছু, তার পর আমরা কথা বলব।’’

নীলেশ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘আপনাকে ফ্র্যাংকলি একটা কথা বলি। গত রবিবার আসলে আমরা পাশের টাওয়ারেই আর একটা ফ্ল্যাট দেখেছি। সেম টু সেম। কিন্তু...’’

শ্রীতমা নীলেশকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘‘আমি এক বার বারান্দাটা দেখব আংক্‌ল? জাস্ট এমনি। দেখতে ইচ্ছে করছে, এখান থেকে ফ্রন্ট ভিউটা কী রকম।’’

‘‘যাও না! আমার তো বারান্দাটা খুব ভাল লাগে। চমৎকার হাওয়া, নীচের ভিউও খুব সুন্দর।’’ প্রিয়তোষ বললেন।

শ্রীতমা এ বার চোখ বড় বড় করে বলল, ‘‘দেখেছ নীলেশ, আংক্‌ল এ বার পাক্কা সেল্‌সম্যানের মতো কথা বলছেন।’’

প্রিয়তোষ ঈষৎ লজ্জা পেলেন। সেটা খেয়াল করে শ্রীতমা আদুরে গলায় বলে উঠল, ‘‘স্যরি আংক্‌ল। আই ওয়াজ জাস্ট জোকিং। আপনি মাইন্ড করলেন?’’

‘‘না না। আমার এক ভাগনি আছে তোমারই মতো। সব সময় মজা করে। যাও, তোমরা বারান্দাটা দেখে এসো।’’

ওরা বারান্দায় যেতেই প্রিয়তোষ ফ্রিজ থেকে কোল্ড ড্রিংক বার করে দু’টো গ্লাসে ভরে টেবিলে রাখলেন। শ্রীতমা বারান্দা থেকে ফিরে এসে বলল, ‘‘আপনি অ্যাবসলিউটলি কারেকক্ট আংক্‌ল। জেম অব আ ব্যালকনি। আগের ফ্ল্যাটের চেয়ে এই ফ্ল্যাটের ব্যালকনির ভিউটা অনেক ভাল।’’

নীলেশ বলল, ‘‘আমরা তা হলে কথাবার্তাটা সেরে নিই।’’

‘‘এসো, আগে বসে একটু ঠান্ডা খেয়ে নাও।’’

শ্রীতমা বলে উঠল, ‘‘আপনি এ সব করতে গেলেন কেন?’’ তার পর গ্লাসটা তুলে একটা চুমুক দিয়ে বলে উঠল, ‘‘কোলা কিন্তু আমার ফেভারিট। একটু হাই ক্যালোরি, বাট আই রিয়েলি লাইক ইট। আংক্‌ল, আপনার কি পাখির শখ?’’

প্রিয়তোষ অবাক হলেন, ‘‘কেন?’’

‘‘ব্যালকনিতে দেখলাম, একটা ছোট্ট বাটিতে গম আর একটা বাটিতে জল রাখা আছে। আমার মা আমাদের বাড়ির ছাদে পায়রাদের জন্য ঠিক এ রকম করে গম আর জল রাখত।’’

অসাধারণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা মেয়েটার। মনে মনে তারিফ করে প্রিয়তোষ একটু আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়লেন। সেই যে এক রবিবার টিউউ... টিউউ করে ডেকে পাখিটা ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছিল, জীবনের অন্যতম সেরা সকাল ছিল সেটা। পাখিটা যেন বলতে এসেছিল, উঠে পড়ো, আজ তোমার লেখা গল্প বেরিয়েছে কাগজে। পাখিটাকে কিন্তু আর এক দিনও দেখতে পাননি। ওকে ডেকে আনার টোপ হিসেবে বারান্দায় বাটিতে জল আর গম রেখেছেন। হাওয়ায় বাটিটা উলটে বারান্দাময় গম ছড়িয়েছে। ঝর্না বিরক্তি দেখিয়েছে। প্রিয়তোষ তবু বাটিতে ফের গম ভরে রেখেছেন। জল ভরেছেন।

নীলেশ আবার ঘড়ি দেখে উসখুস করে উঠল, ‘‘মিস্টার চ্যাটার্জি, আমরা যদি এই ফ্ল্যাটটাতে ইন্টারেস্টেড হই, কবে থেকে আসতে পারি?’’

প্রিয়তোষ বললেন, ‘‘তোমাকে তো ফোনেই বলেছিলাম, আমি আসলে এই ফ্ল্যাটটার কেয়ারটেকার। তোমাকে আমার ছেলে অভিজিতের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমি ওর স্কাইপ আইডি আর ইমেল, দু’টোই দিয়ে দিচ্ছি। কথা বলে নিও।’’

‘‘ঠিক আছে, কিন্তু টেনটেটিভলি কবে?’’

‘‘ওই তিন মাস...’’ প্রিয়তোষের মোবাইলটা বেজে উঠল। সিএলআই-তে নাম ফুটে রয়েছে কস্তুরী। এর মধ্যে বার তিনেক রাতের দিকে ফোন করেছে মেয়েটা। মেয়েটার বয়স কত দূরে থাক, কোথায় থাকে, তাও জানা হয়নি। কথাবার্তা সাহিত্য ছাড়া অন্য কোন দিকে মোড় নেয়নি। তবে এই ফাঁকা ফ্ল্যাটে মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে যে খারাপ লাগে না, সেটা ভেতরে ভেতরে ক্রমশ অনুভব করছেন প্রিয়তোষ।

‘‘আংক্‌ল, কলটা নিয়ে নিন।’’ শ্রীতমা বলল।

‘‘ঠিক আছে।’’ প্রিয়তোষ ফোনটা ধরলেনও না, কেটেও দিলেন না। বেজে যেতে দিলেন। এক সময় রিংটা বন্ধ হয়ে যেতে স্বস্তি পেলেন।

‘‘তিন মাস হলে আমাদের একটু অসুবিধে। আমরা এখন যে ফ্ল্যাটে আছি, তার কন্ট্র্যাক্ট আর দু’মাস আছে। এক মাসের জন্য বাড়িওয়ালা রিনিউ করবে না। আমাদের অফিস আপনার এই হাউজিং থেকে খুব কাছে বলেই আমরা এত ইন্টারেস্টেড।’’

প্রিয়তোষ বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলেন, ‘‘দেখো, দু’টো ব্যাপার আছে। প্রথমত সেন্ট্রাল ক্যালকাটায় আমাদের সাবেকি বাড়িটার রিকনস্ট্রাকশন চলছে বলে আমি এখানে এসে আছি। সেটা তিন মাসের আগে শেষ হবে কি না, জানি না। আর দ্বিতীয়ত আমি আমেরিকায় ছেলের কাছে যাব। সেই দিনক্ষণটাও এখনও ঠিক হয়নি। আর...’’

প্রিয়তোষ চুপ করে গেলেন। সুতপা বারবার সাবধান করে দিয়েছিল, নতুন জায়গায় অচেনা লোকদের কাছে সব হাঁড়ির খবর না বলতে। সোমনাথ বিশ্বাসের মতো অল্প যে ক’জনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, তাদেরও এত কথা বলেননি। খোলা মনে এদের অনেক কিছু বলে ফেললেন। ভালো লেগে গিয়েছে বলেই হয়তো। বিশেষ করে মেয়েটাকে। অবচেতন মন হয়তো চাইছে, এ বাড়িতে কেউ ভাড়া থাকলে ওরাই থাকুক।

ক্রমশ

অন্য বিষয়গুলি:

Novel Series
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy