২০১১ সালের ১৬ আগস্ট। প্যারিস থেকে ডাবলিনগামী একটি বিমানের যাত্রী ছিলেন দেপার্দিউ। টেক-অফের তখন আর সামান্যই বাকি। সে সময় হঠাৎই খুব জোর পেয়ে যায় তাঁর! কিন্তু বিপত্তিটি ঘটে বিমান-সেবিকা শৌচালয়-গামী হন্তদন্ত দেপার্দিউ-এর পথ আটকালে। যেতে নাহি দিব! প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এর পরই দেপার্দিউ চিৎকার করতে থাকেন — ‘আমার হিসি পেয়েছে, আমার হিসি পেয়েছে!’ পেলব কণ্ঠেই, কিন্তু কড়া নির্দেশে তাঁকে নিদেনপক্ষে টেক-অফ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়। এমতাবস্থায় টয়লেট যেতে বাধা-পাওয়া দেপার্দিউ আর লেট করেননি। অম্লান বদনে সরাসরি নাকি বিমানের মেঝেতেই তাঁর যা করার করে দেন!
বিমানের বাকি যাত্রীদের মধ্যে তখন হইহই রব। কারও নাকে রুমাল, কারও চোখ কপালে, কেউ হেসে কুপোকাত। বিমানকর্মীরা স্তম্ভিত। তাঁরা তৎক্ষণাৎ অভিযোগ জানান, ‘জনৈক’ ব্যক্তি সিট ছেড়ে উঠে বিমানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছেন। ফলে রানওয়ে থেকে বিমানটি আবার ফিরিয়ে আনতে হয়। দেপার্দিউকে অবিলম্বে বিমান ছেড়ে নেমে যেতে বলা হয়। বিমান ধুয়ে-মুছে সাফ করে ছাড়তে সে রাতে পাক্কা আরও দু-ঘণ্টা দেরি হয়।
এ ঘটনা নিয়ে দেপার্দিউ-এর বন্ধুদের বক্তব্য অবশ্য ছিল বেশ আলাদা। মিডিয়াকে তাঁরা বলেন, দেপার্দিউ মোটেও কোনও অসভ্য আচরণ করেননি, অসুস্থতার কারণে বাধ্যতই তিনি ভিজিয়ে ফেলেছেন। তাও মেঝেতে নয়, সহযাত্রী ও সহ-অভিনেতা ‘অ্যাসটেরিক্স’ এডোয়ার্ড বেয়ার-এর কাছ থেকে একটি বোতল নিয়ে তার ভেতরেই নাকি কাজ সারেন। তবে কিনা, ওইটুকু পুঁচকে বোতল অতটা ধারণ করতে পারেনি, অগত্যা দু-চার ফোঁটা উপচে পড়েছে। গোটা ব্যাপারটিতে যথাসম্ভব আড়াল-আবডালও নাকি বজায় রাখার চেষ্টা করেন দেপার্দিউ। এমনকী নিজ-হাতে কার্পেট সাফ করতেও উদ্যত হন। আর প্রত্যদর্শীরা অনেকে বলেছেন, তখন ঘোর মদ্যপ অবস্থাতেই ছিলেন ফরাসি অভিনেতা। কমিক্সের ওবেলিক্সকে শক্তিবর্ধক জাদু-পানীয় ঘুণাক্ষরেও দেওয়া হয় না বটে, কিন্তু বাস্তবের দেপার্দিউ নিজেই তো বলে থাকেন, দিনে অন্তত পক্ষে পাঁচ-ছ বোতল ওয়াইন না হলে তাঁর চলে না। কাজেই প্রকৃতির ডাক যে তাঁর কাছে প্রবলতর হবে, সন্দেহ কী! উলটে এই ঘটনার জেরে পর দিনই ওই ফরাসি বিমান সংস্থাকে প্রচার করতে হয় : ‘সব যাত্রীদের মনে করিয়ে দিতে চাই, আমাদের বিমানে শৌচালয়ের সব রকম বন্দোবস্ত আছে।’
দেপার্দিউ-এর কেচ্ছার ইতিবৃত্ত অবশ্য মূত্রত্যাগেই শেষ নয়। ফরাসি সরকার বিত্তশালীদের জন্য করের হার বাড়ানোর পথে হাঁটা মাত্রই তিনি দেশ ছেড়ে হাঁটা লাগিয়েছেন। প্রথমে বেলজিয়াম, তার পর রাশিয়া। তাঁকে নাগরিকত্ব দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিনিময়ে দেপার্দিউও পুতিন-বিরোধীদের এক হাত নিয়েছেন। ফ্রান্সের একাংশের বক্তব্য, শুধু টাকা বাঁচাতে যে লোকটা দেশ ছাড়তে পারে, সে দেশদ্রোহী। দেপার্দিউ বলছেন, আজও তিনি ফ্রান্সকে ভালোবাসেন; কিন্তু নিজেকে বিশ্বনাগরিক হিসেবেই দেখতে চান। হয়তো তা প্রমাণ করতেই, এ বছর আবার রাশিয়া ছেড়েছেন!
অনেকের কাছে অবশ্য, তাঁর বিমানে মূত্রত্যাগ, আর ট্যাক্সের ভয়ে কোটিপতি হয়েও অম্লানবদনে দেশত্যাগ, একই কথা বলে— তিনি নীতিহীন ও অন্যের প্রতি অনুভূতিহীন মানুষ। অন্যের অনুভূতি নকল করে সেরা অভিনেতার শিরোপা পাওয়া লোকের পক্ষে এ খুব গৌরবের কথা নয়!
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি
দেশে অপরাধপ্রবণতা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেশের প্রতিটি শহর, গ্রামকে সিসিটিভির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে দেশের প্রতিটি থানা থেকে ২৪ ঘণ্টা নজর রাখা সম্ভব হবে। সিসিটিভির পরদায় কোনও অসামাজিক কাজকর্ম ফুটে উঠলেই সংশ্লিষ্ট থানা তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নেবে। প্রতিটি অফিস, আদালত, পার্ক, যানবাহনে সিসিটিভি লাগানো হবে। সিসিটিভির কানেকশন কেব্ল টিভির নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাড়িতে বসেও দেখা যাবে। স্বামী-স্ত্রীরা পরস্পরের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে পারবেন। এর জন্য সন্দেহপ্রবণ স্বামী-স্ত্রীদের সংগঠন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু এই প্রকল্পের জোর বিরোধিতা করেছে ‘টিন এজার লাভার্স ফোরাম’। তারা বলেছে, এর ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতা বলে কিছু থাকবে না। বাড়িতে বসে অভিভাবকরা ২৪ ঘণ্টা নজর রাখলে তাদের উদ্দাম প্রেমে বাধা পড়বে, তা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। তারা হুমকিও দিয়েছে, তাদের প্রেম এবং পার্টি করাকে সিসিটিভির আওতা থেকে বাদ না দিলে তারা দেশ জুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে এবং কোর্টে মামলা করবে। তাদের বক্তব্যকে সমর্থন করে এগিয়ে এসেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। বুদ্ধিজীবীরাও বলছেন, অপরাধ কমানোর জন্য মানুষের মৌলিক অধিকারে থাবা বসানো যায় না। প্রধান বিরোধী দল বলছে, আসলে এই সিসিটিভি সরকারের নজরদারির কাজে লাগবে। সরকারের প্রতি মানুষের মনে প্রবল বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তাই সরকারও ভয়ে আছে। ইচ্ছে করেই তারা গোটা দেশটাকে সিসিটিভি-তে ছেয়ে দিচ্ছে, যাতে ভাবী কোনও বিদ্রোহ বা সংগঠিত আন্দোলনের আঁচ আগেই পেয়ে যাওয়া যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য জানিয়েছে, এই সব সমালোচনাকে তারা পাত্তাই দিচ্ছে না, আর মাস কয়েকের মধ্যে সারা দেশে অপরাধের হার হু-হু করে কমে এলেই, নিন্দুকদের আপত্তিও কমে আসবে।
লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা:
টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১।
অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy