Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mount Everest peak

আজকাল পর্বতারোহণের অনেকটাই যেন প্রতারণা

পাহাড়কে ভালবেসে পাহাড়ি পথে হাঁটার নামই পর্বতারোহণ। অথচ আজ টার্গেট শেষ করে রেকর্ড গড়তে হেলিকপ্টারের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। সামিটে পৌঁছে সমাজমাধ্যমে সেলফি দেওয়াটাই মূল লক্ষ্য।

আরোহী: পর্বতের পথে জামলিং নোরগে।

আরোহী: পর্বতের পথে জামলিং নোরগে।

স্বাতী মল্লিক
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪১
Share: Save:

সেই কোন ছেলেবেলায় লক্ষ করেছিলেন, তাঁর বাবা যেন শুধু এক জন বাবা নন, আরও বেশি কিছু। যেন কোনও হিন্দি ছবির হিরো! রাস্তায় বেরোলে সকলে তাঁকে সেলাম ঠোকেন। দার্জিলিঙের বাড়ি বয়ে এসে বাবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে যান বড়সড় লোকেরা। এক সঙ্গে ছবিও তুলতে চান। অমায়িক, সাদাসিধে, মাটির মানুষ বাবা হাসিমুখেই সব আবদার মেটান। এর পর বছর আটেক বয়সে পৌঁছে বুঝেছিলেন, প্রথম মানুষ হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বিন্দু ছুঁয়ে এসে ইতিহাস তৈরি করেছেন তাঁর বাবা— তেনজিং নোরগে। ছ’-ছ’বার বিফল হয়ে ফিরে আসার পরে সপ্তম বারের অভিযানে কী ভাবে, কতটা কৃচ্ছ্রসাধন-মনোবল-কষ্টভোগের পরে তেনজিং ও তাঁর সঙ্গী এডমন্ড হিলারিকে সেই অধরা শীর্ষে পৌঁছনোর অনুমতি দেন সাগরমাতা— ছেলেবেলায় বাবার মুখে সেই গল্প বড় প্রিয় ছিল বড় ছেলে জামলিং নোরগের। শুনতেন, কী ভাবে সাগরমাতার চুড়োয় দাঁড়িয়ে প্রকৃতির কাছে প্রার্থনা করে, দেবতাকে তুষ্ট করতে ক্যান্ডি রেখে এসেছিলেন বাবা। কী ভাবে তাঁর পতাকা ধরে দাঁড়ানোর প্রথম সামিট-ছবি ক্যামেরাবন্দি করে নিয়েছিলেন সঙ্গী হিলারি। এর পর থেকেই বাড়িতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা সেই অভিযানের ছবি, স্মৃতিগুলোয় পরম মমতায় হাত বোলাতেন জামলিং। বাবার মতোই এক দিন তিনিও এভারেস্টের শীর্ষে গিয়ে দাঁড়াবেন— সেই স্বপ্নের বীজ বপন শুরু হয়ে গিয়েছিল সেই ছেলেবেলাতেই।

আর এখন? সেই অভিযান আর এই সময়ের মাঝে ৭০ বছরের ব্যবধান। এর মধ্যেই বদলে গিয়েছে প্রায় সব কিছু। পর্বতারোহণ এখন গতিময়, রেকর্ডসর্বস্ব। এভারেস্ট মানে এখন পর্যটন, ট্র্যাফিক জ্যাম! আজ হিমালয়ের আকাশে হেলিকপ্টার ওড়ে শুধু মালপত্র আনা-নেওয়া বা উদ্ধারকাজে সাহায্য করতে নয়, রেকর্ডের হাতছানিতে ছোটা ‘ক্লায়েন্ট’কে এক শৃঙ্গের হাই ক্যাম্প থেকে অপর শৃঙ্গের হাই ক্যাম্পে পৌঁছে দিতে! যাতে সময় ‘নষ্ট’ না হয়। কলকাতার পাঁচতারা হোটেলের কফি শপে বসে সে প্রসঙ্গ উঠতেই রীতিমতো উত্তেজিত তেনজিং-পুত্র— “এ তো সাফল্যের শর্টকাট রাস্তা ধরা! এটা পাহাড়ের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কী?”

১৯৫৩ সালের ২৯ মে। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তৈরি হয়েছিল পর্বতারোহণের গগনচুম্বী ইতিহাস। বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের শীর্ষে সেই প্রথম পৌঁছে গিয়েছিলেন কোনও মানুষ— দার্জিলিংবাসী তেনজিং ও নিউ জ়িল্যান্ডবাসী হিলারি। তেনজিং ও হিলারি— এই দু’টি নামকে চিরজীবনের মতো একসূত্রে মিলিয়ে দিয়েছিল ‘এভারেস্ট’। একে অপরের ভাষা না বুঝতে পারলেও এতটুকু অসুবিধা হয়নি তাঁদের। সেই বন্ধুত্ব অটুট ছিল আজীবন। সখ্য এখনও রয়েছে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে।

সেই ইতিহাস তৈরির বারো বছর পরে তেনজিং ও তাঁর তৃতীয় স্ত্রীর কোল আলো করে আসে প্রথম পুত্রসন্তান জামলিং। ছোট থেকেই বাবার সঙ্গে ট্রেকে যেতে ভালবাসতেন। স্কুলে ক্লাসে বসে থাকার ‘বোরিং’ দিনগুলোর চেয়ে বাবার হাত ধরে সিকিমের পাহাড়ে ট্রেক করতে যাওয়া ঢের বেশি পছন্দের ছিল। কারণ, সেখান থেকেই তাঁর কচি মনে পাহাড়প্রেমের শুরু। “বাবা হাতে ধরে ট্রেকিংয়ে নিয়ে যেতেন। রক ক্লাইম্বিং শিখিয়েছিলেন। যাতে অন্যের প্রতি বিশ্বাস জন্মায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ে। তবে আমাদের পাহাড়ে পাঠানোর ইচ্ছে তাঁর কোনও দিনই ছিল না। বদলে পাহাড় থেকে দূরে পড়তে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তবু কোথাও যেন তিনি ঠিক জানতেন, আমি এক দিন পাহাড়ের কাছে ফিরবই।” আমেরিকায় পড়াশোনা শেষ করে আর সেখানে মন টেকেনি তরুণ জামলিংয়ের। হিমালয়ের অমোঘ টানেই ঘরে ফিরে আসেন তিনি।

সে দিনের সঙ্গে অবশ্য আজকের এভারেস্টের মিল পান না তিন কন্যার পিতা জামলিং। এভারেস্টে আজ এসেছে প্রযুক্তি, পরিকাঠামো, ফিক্সট রোপ। এসেছে লাক্সারি পরিষেবা, হেলিকপ্টার। সেই সঙ্গে চোরাবালির মতো ঢুকে পড়েছে ব্যবসা, নাম কামানোর চেষ্টা, এভারেস্ট-পর্যটন। এত বছরের পর্বতারোহণের ইতিহাসে গত বছরেই সর্বোচ্চ মৃত্যু (১৭) দেখেছে এভারেস্ট। “এর প্রধান কারণ অনভিজ্ঞতা। আর, শুধুমাত্র অর্থ থাকলেই বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির এভারেস্টের মাথায় চড়িয়ে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। পাহাড়ে চড়ার ন্যূনতম দক্ষতা না থাকলে কাউকে যে আট-হাজারি পথে নিয়ে যাওয়া হবে না— এই কথাটাই আজ আর কেউ বলে না। এমনকি, নেপাল সরকারও নয়।” খানিক বিষণ্ণ শোনায় ষাট ছুঁই-ছুঁই মানুষটির গলা।

গত কুড়ি বছরে নেপালে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে পর্বতারোহণ সংস্থা। ফলে আরোহীরাও এভারেস্ট যেতে রীতিমতো ‘শপিং’ করেন। ভাবটা এমন— ‘আমাদের তো বেশি টাকাপয়সা নেই, তাই তোমরা কে কত কম টাকায় এভারেস্টে নিয়ে যেতে পারবে?’ সুযোগ বুঝে এই সব ‘গরিব’ আরোহীদের পকেটে পুরতে টাকার অঙ্ক ক্রমশ কমাতে থাকে আয়োজক সংস্থাগুলি। ৬০ হাজার ডলার, এমনকি ৩০ হাজার ডলারেও এভারেস্টে চড়িয়ে দেওয়ার ‘প্রতিশ্রুতি’ দেয় বহু আয়োজক সংস্থা। ফলশ্রুতি, ট্র্যাফিক জ্যাম। প্রাণ দিয়ে যার খেসারত দিতে হয় কিছু আরোহীকে।

শিশুবয়সে জামলিং, বাবা এভারেস্ট-জয়ী তেনজিং নোরগের সঙ্গে।

শিশুবয়সে জামলিং, বাবা এভারেস্ট-জয়ী তেনজিং নোরগের সঙ্গে।

এভারেস্টের বুকে প্রিয়জনের মৃত্যু অবশ্য খুব কাছ থেকে দেখেছেন তেনজিং-পুত্র। সেই ১৯৯৬ সালে। যে বছর নিজের স্বপ্ন সত্যি করতে অবশেষে পা বাড়িয়েছিলেন এভারেস্টের পথে। তখন তরুণ বয়স জামলিংয়ের। কথা ছিল, আইম্যাক্স ক্যামেরায় তুলে রাখা হবে সেই অভিযানের মুহূর্ত। যা থেকে আমেরিকায় তৈরি হবে আস্ত সিনেমা। কিন্তু কে জানত, এভারেস্টের বুকে সেই বছরটিই হবে ‘কুখ্যাত’! মাত্র একটি অভিশপ্ত রাত প্রাণ কেড়ে নেবে আট জন আরোহীর! সে বছরের মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াবে বারোয়! ক্যাম্পে বসেই জামলিংরা ওয়াকি-টকিতে শুনবেন, স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে বরফের বুকে একা পড়ে থাকা বিখ্যাত পর্বতারোহী রব হল ও তাঁর সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর শেষ কথোপকথন। চোখের জল সে দিন বাধা মানেনি কারও। এমন মর্মান্তিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে হবে, কে ভেবেছিল! তবে হাল ছাড়েননি জামলিংরা। বাকি সব দল সে বছরের মতো অভিযান বাতিল করে ঘরে ফিরে গেলেও রয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। কয়েক দিন পরে ভারী আইম্যাক্স ক্যামেরা কাঁধে, সামিটের পথে সাউথ কলে পৌঁছে দেখতে পেয়েছিলেন নিথর পড়ে থাকা রবের দেহ। তবে সে দৃশ্য দেখার জন্য মানসিক প্রস্তুতি তাঁদের ছিলই। জানতেন, ঠিক কোথায় কোথায় পৌঁছলে দেখতে পাবেন রব, স্কট ফিশারের দেহ। সে দিন রবের আঙুল থেকে তাঁর বিয়ের আংটিটা খুলে নিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু, জামলিংয়েরই এক সহযাত্রী। রবের স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেবেন বলে। এর পরে প্রাণহীন বন্ধুদের জন্য প্রার্থনা করে ফের এগিয়ে চলা। এখানেই শেষ নয়। গত বছরেও যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এভারেস্টের বুকে, তার মধ্যে রয়েছেন জামলিংয়ের সম্পর্কে দুই ভাইও। তাঁদের কথা বলতে বলতে গলা বুজে আসে তাঁর।

তাই গজিয়ে ওঠা সংস্থার সস্তায় এভারেস্ট অভিযানের আয়োজন নিয়ে আপত্তির যথেষ্ট কারণ দেখছেন জামলিং। তাঁর মতে, কম পয়সার অভিযানে সস্তার পরিষেবার সঙ্গে নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও আপস করা হয় প্রতিনিয়ত। অনেক সময়ে যথেষ্ট সংখ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডারও নিয়ে যাওয়া হয় না কম-দামি ‘ক্লায়েন্ট’-এর জন্য। উপরের ক্যাম্পে তাই বাড়ে চুরির সংখ্যা! যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন সিলিন্ডার না এনে অপরের সিলিন্ডার চুরি করার একাধিক ঘটনা ঘটেছে গত কয়েক বছরে, যা অন্যের প্রাণ চুরি করারই শামিল। জামলিং বলছেন, “এই প্রবণতা অবশ্য সেই ১৯৯৬ সালেও ছিল। তাই উপরের ক্যাম্পে সমস্ত সিলিন্ডার, যন্ত্রপাতি নিজেদের তাঁবুতে ঢুকিয়ে রেখে আমরা তালা
মেরে যেতাম!”

আর বাকি প্রবণতা? সবচেয়ে কম সময়ে ১৪টি আট-হাজারি শৃঙ্গজয়ের রেকর্ড তৈরির হাতছানি? এক সিজ়নে একাধিক শৃঙ্গ ছুঁতে হেলিকপ্টারে দৌড়ে বেড়ানো? নেপালি পর্বতারোহী নির্মল পূরজা সাত মাসে ১৪টি আট-হাজারি শৃঙ্গজয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। তার পরের বছরেই পর্বতারোহণের আকাশে ধূমকেতুর মতো এলেন নরওয়ের ক্রিস্টিলা হ্যারিলা। পূরজার রেকর্ডটাই মাত্র তিন মাসে করে দেখানোর শপথ নিলেন! গত বছর নেপালের আট-হাজারি পথে আক্ষরিক অর্থেই উড়ে বেরিয়েছেন এই কন্যা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আট-হাজারি চুড়ো ‘করায়ত্ত’ করতে হেলিকপ্টারের সাহায্য নিয়ে রেকর্ড গড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছেন তিনি।

“প্রকৃতিকে, পাহাড়কে ভালবেসে পাহাড়ি পথে হাঁটার নামই হল পর্বতারোহণ। এটা কোনও প্রতিযোগিতার জায়গা হল? অথচ আজ নিজেদের টার্গেট সহজে শেষ করে রেকর্ড গড়তে হেলিকপ্টারের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। যেন পাহাড়কে ভালবেসে নয়, সামিটে পৌঁছে সেলফি তুলে সমাজমাধ্যমে দেওয়াটাই মূল লক্ষ্য। সেই জন্যেই যেনতেনপ্রকারেণ শীর্ষে পৌঁছনো।”— সমালোচনার সুরে বলছেন তেনজিং-পুত্র। সাম্প্রতিক এই ‘ট্রেন্ড’কে তাই পর্বতারোহণ আখ্যা দিতেই রাজি নন তিনি।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মনুষ্যজাত দূষণের যে পরিণাম দেখছেন হিমালয়ের বুকে, তাতে মন ভাল নেই জামলিংয়ের। ঐতিহাসিক এভারেস্ট অভিযানের যে সব ছবি সযত্নে রাখা আছে তাঁর সংগ্রহে, তাদের মধ্যে এভারেস্টের বেশি উচ্চতার ক্যাম্পের সেই নির্মল, বরফঢাকা ছবি এখন স্বপ্ন। এখন সেখানে স্তূপ হয়ে পড়ে থাকে ফাঁকা সিলিন্ডার, আবর্জনা, ছেঁড়া তাঁবু। সবচেয়ে চিন্তার বিষয় মনুষ্যজাত বর্জ্যের দূষণ। আগে বেস ক্যাম্পেও শৌচাগার বলে কিছু ছিল না। তবে এত দিনে সেখানে শৌচকর্মের জন্য বড় বড় ড্রামের ব্যবস্থা রয়েছে। সেই ড্রাম ভর্তি হয়ে গেলে তাতে তালা দিয়ে, তুলে নিয়ে গিয়ে নীচের লোকালয় গোরক্ষশেপে রেখে আসেন শেরপারা। কিন্তু উপরের ক্যাম্পগুলির অবস্থা শোচনীয়। “ক্যাম্প ১, ক্যাম্প ২ থেকে প্রায় ১২ হাজার মানুষের বর্জ্য নেমে আসছে হিমবাহের সঙ্গে। দূষণের পরিমাণটা ভাবুন!”— বলছেন তিনি।

প্রকৃতিও হাত গুটিয়ে বসে নেই। সেও তার আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছে, যা চিন্তা বাড়িয়েছে পর্বতারোহণ মহলে। গত বছর ছিল এভারেস্টের শীতলতম মরসুম। বছরের পর বছর এভারেস্টে যাওয়া, পোড়-খাওয়া শেরপারাও সে বার জানিয়েছিলেন, এভারেস্টে এত ঠান্ডা আগে কখনও দেখেননি। ফলে এভারেস্ট চড়তে যাওয়া অনেকেই সে বার ফ্রস্টবাইটের শিকার হন। জামলিং নিশ্চিত, আগামী বছরগুলিতেও আবহাওয়ার এ-হেন খামখেয়ালিপনা চলতে থাকলে ‘সামিট উইন্ডো’র (অর্থাৎ শীর্ষে যাওয়ার জন্য ভাল আবহাওয়াযুক্ত দিন) সময়ও আরও কমে আসবে। অথচ এভারেস্ট চড়ার সিজ়নের সময়ে যে খুব বেশি হেরফের করা যাবে, তা-ও নয়। এগোলে বেশি ঠান্ডা, পিছোলে বর্ষার ভ্রুকুটি। ফলত, আরও ট্র্যাফিক জ্যাম। আরও মৃত্যুর আশঙ্কা।

গত বছর তেনজিং-হিলারির এভারেস্ট জয়ের ৭০ বছর পূর্তিতে আরও এক বার নেপালে এক ফ্রেমে দেখা গিয়েছিল ওই দুই পরিবারকে। জামলিংয়ের তিন মেয়ের কারও পর্বতারোহণের প্রতি আকর্ষণ নেই। তবে ছোট মেয়ে মাঝেমধ্যে ট্রেকে সঙ্গ দেন বাবাকে। এভারেস্ট দিবসের অনুষ্ঠানে জামলিংয়ের হাত ধরে নেপালে হাজির ছিলেন তিনিও। আর ছিলেন স্যর হিলারির ছেলে পিটার ও পৌত্র আলেকজ়ান্ডার। জামলিংয়ের মতো বার দুয়েক এভারেস্টের শীর্ষ ছুঁয়ে এসেছেন পর্বতারোহী পিটার। পাহাড়ে চড়ার ঝোঁক রয়েছে পিটার-পুত্রেরও। এমনিতে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ফোনে কথা হয় জামলিং-পিটারের। গত বছর ৭০ বছর উদ্‌যাপনে দু’জনে পৌঁছে গিয়েছিলেন লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসেও, রাজা চার্লসের সঙ্গে দেখা করতে। সেই অভিজ্ঞতার কথা জিজ্ঞেস করতেই শিশুর মতো উৎফুল্ল প্রৌঢ়। জানালেন, পনেরো মিনিট সময় বরাদ্দ থাকলেও, টানা ত্রিশ মিনিট তাঁদের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছেন রাজা চার্লস। জানতে চেয়েছেন অভিযানের কথা, শেরপাদের কথা। শেরপাদের উন্নয়নে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

তবে এত কিছুর মধ্যেও একটাই কথা কুরে কুরে খায় এই প্রবীণ পর্বতারোহী ও মোটিভেশনাল স্পিকারকে। “এভারেস্টে সে সময়ে ব্রিটিশরা অভিযান চালিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত শীর্ষে পৌঁছেছিলেন এক জন ভারতীয়। এটা কিন্তু ব্রিটিশরাও ঠিক হজম করতে পারেনি। অথচ ইতিহাস তৈরি করা সেই মানুষটি আজও ভারতরত্ন পেলেন না!”— বলছেন জামলিং।

তবে কোনও কিছু নিয়ে বেশি ক্ষণ মন খারাপ করা ধাতে নেই তাঁর। জাত পর্বতারোহীরা বোধহয় এমনই হন! যা-ই ঘটে যাক, তাঁদের এগিয়ে যেতে হয় সামনের দিকে। দার্জিলিঙের বাড়িতে শান্ত, নিরুপদ্রব জীবন যাপন করা এই প্রৌঢ় তাই আজও মার্চ-এপ্রিল এলেই বেরিয়ে পড়েন সিকিম বা নেপালের ট্রেকিং রুটে। ওই ক’টা মাস বাড়িতে তাঁর দেখা মেলা ভার। পাহাড়ের পথে হেঁটে বেড়ানোতেই তাঁর ‘প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি’। হিমালয় যে তাঁর রক্তে। তার টান এ জীবনে এড়াতে পারলেন কোথায়!

অন্য বিষয়গুলি:

Tenzing Norgay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy