পালাবদল: সশস্ত্র মিজো গ্রামপ্রধানদের সঙ্গে কর্নেল টি এইচ লেউইন। ডান দিকে, শিশু বয়সে মেরি উইনচেস্টার
ফেয়ারওয়েল পার্টি শেষ। ছ’বছরের ছোট্ট মেয়েটা নার্সের হাত ধরে বাগানে হাঁটছিল। হঠাৎই অস্থির হয়ে উঠল আস্তাবলের ঘোড়াগুলো। দূরে কোথাও চিৎকার শোনা যাচ্ছে। কারা যেন দৌড়চ্ছে। সিঁদুরে মেঘ দেখে ছ’বছরের মেরি উইনচেস্টারকে টান মেরে বাংলোর দিকে দৌড় লাগালেন নার্স। পথেই বাবা জেমস উইনচেস্টারের সঙ্গে দেখা। হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে এসে মেয়েকে জাপটে ধরেই পালানোর উদ্দেশ্যে আস্তাবলে বাঁধা ঘোড়ার দিকে দৌড় লাগিয়েছিলেন জেমস। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ততক্ষণে আলেকজান্ডারপুর চা বাগানের দরজা ভেঙে ঢুকে পড়েছে লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা হাউলং হানাদারেরা। পিছন থেকে মাথায় কোপ। মুখ থুবড়ে পড়লেন জেমস। তখনও আঁকড়ে ধরে রয়েছেন মেরিকে। এর পর পিঠ ফুঁড়ে দিল গাদাবন্দুকের তপ্ত সিসে। কোল থেকে আদরের মেয়েকে যখন কেড়ে নিচ্ছিল হানাদারের দল, অস্ফুটে শেষ বারের মতো জেমস বলতে পেরেছিলেন, ‘ঈশ্বরই জানেন তোর ভাগ্যে কী আছে!’ ওই দিন শুধু একটা বাচ্চা মেয়ের নয়, হয়তো একটা ভবিষ্যৎ রাজ্যের ভাগ্যই লেখা হয়েছিল আলেকজান্ডারপুরের রক্তভেজা মাটিতে।
স্কটিশ বাগান ম্যানেজার জেমস প্রেমে পড়েছিলেন বাগানে কাজ করা মণিপুরি মেইতেই তরুণীর। তাঁর গর্ভেই মেরির জন্ম। আইনত অবৈধ সন্তান হলেও আদরের মেরিকে নিজের পরিচয় ও পদবিতেই বড় করছিলেন জেমস। মেয়ে ছ’বছরে পা দিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এই পাহাড়-জঙ্গলের দেশে মেয়েকে ফেলে রাখলে হবে না। তাকে পড়াশোনা করতে পাঠাবেন ব্রিটেনে। আদরের ধন কাছছাড়া হবে, তাই বন্ধু জর্জ সেলারের চা বাগানে ১৮৭১ সালের ২৩ জানুয়ারি মেয়ের ফেয়ারওয়েল পার্টির আয়োজন হয়েছিল। পানভোজনের শুরুতে বাবা-মেয়ে স্বপ্নেও ভাবেনি আজই তাঁদের শেষ দেখা। আরও অনেক বদল, অনেক ইতিহাসের বীজও পোঁতা হয়ে গিয়েছিল সেই অভিশপ্ত দিনে। অজান্তেই তৈরি হয়েছিল আজকের খ্রিস্টান ও সুশিক্ষিত মিজোরামের ভিত।
তখনও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন চলছে। ১৮২৪ সালে প্রথম ইংরেজ বনাম বর্মিদের যুদ্ধে বর্মিদের অসম থেকে হঠালেও অসমকে পুরোপুরি বাগে আনার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে দক্ষিণের লুসাই পাহাড়ের দুর্ধর্ষ থাডো ও পিট্টু কুকিদের দমন করা হয়ে পড়েছিল দুঃসাধ্য। ১৮৪৫-এর পর থেকে সিলেট-কাছাড়ে কুকি হানা হয়ে পড়ে রোজকার ঘটনা। ব্রিটিশ কলোনিগুলিতে পাহাড়ি হানাদারদের আক্রমণে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ মারার ঘটনা লিপিবদ্ধ রয়েছে সিলেটের ম্যাজিস্ট্রেটের রিপোর্টে। ১৮৪৯ সালে সিলেট লাইট ইনফ্যান্ট্রির কম্যান্ডার ও খাসিয়া হিলের এজেন্ট কর্নেল লিস্টারকে শীতকালে পাঠানো হয় কুকি দমনে। তিনি মুল্লা গ্রাম পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে, প্রায় ৪০০ জন বন্দিকে মুক্ত করতে পারলেও হানাদারদের ধরতে পারেননি। এর পর ১৮৬৮-৬৯ সালে ফের লুসাই পাহাড়ের হানাদারেরা কাছাড়, মনিয়রখালে হানা দিয়ে অনেক চা বাগান ধ্বংস করে, অনেককে বন্দি করে নিয়ে যায়। ফের অভিযান চালায় ইংরেজরা। কিন্তু কর্নেল জেমস নাটালের নেতৃত্বে তিন কলাম সেনা পাঠিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয় ইংরেজ বাহিনীকে।
বলপ্রয়োগ বিফল হওয়ায় সাহসে ভর করে ১৮৭০ সালে কাছাড়ের জেলাশাসক এডগার নিজেই কয়েক জন পুলিশ ও সার্ভেয়ার মেজর ম্যাকডোনাল্ডকে সঙ্গে নিয়ে সীমানা পেরিয়ে লুসাই পাহাড়ে ঢোকেন। বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে লুসাইদের কাছে টানতে চাইলেও ইংরেজদের বিশ্বাস করেননি পাহাড়িরা। ফের ব্যর্থতা। শুরু পরপর আক্রমণ।
১৮৭১ সালের ২৩ জানুয়ারির যে ঘটনা শুরুতেই বলা হল, ওই দিন লুসাই যোদ্ধাদের প্রধান বেংখুয়াইয়ার নেতৃত্বে ২০০ জন হাউলং যোদ্ধা আলেকজান্ডারপুর ছাড়াও হানা দেয় আইনারখালে। খুন করে ২৫ জনকে। বন্দি হয় ৩৭ জন। এর পর জেমসকে মেরে মেরিকে ছিনিয়ে নেয় তারা। পাশের কাটলিচেরা বাগানে হানা দিলেও বাগানমালিকরা কোনওক্রমে তাদের তাড়ান। পরের দিন আক্রমণ চলে খোদ পুলিশের উপরে। মনিয়ারখালের লড়াইয়ে ছ’জন পুলিশ ও অর্ধশতাধিক হানাদার মারা যায়। ২৭ জানুয়ারি তারা হানা দেয় নন্দীগ্রামে। হত্যা করে ১১ জনকে। ফোর্থ নেটিভ ইনফ্যান্ট্রির সৈন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে তাদের আরও ২৫ জন মারা যায়। ফেব্রুয়ারিতে ঝালনাচেরা বাগানে ফের আক্রমণ ও হত্যা।
দলের অনেক সদস্যকে হারিয়ে শ্রান্ত লুসাই যোদ্ধারা ফেরার পথ ধরে। বন্দিদের অধিকাংশই রাস্তায় হয় মারা পড়ে বা খুন হয়। কিন্তু কেন কে জানে ছোট্ট মেরিকে কিছু করতে দেননি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গোষ্ঠী সাইলাম-এর প্রধান বেংখুয়াইয়া। চেহারায় বাবার ধারা পাওয়া মেরি যখন প্রথম লুসাই গ্রামে পৌঁছায় গ্রামের অনেকেই চমকে যায়। এমন ঝাঁকড়া চুল, নীল চোখের ফুটফুটে মেয়ে কখনও দেখেনি তারা। তাই মেরির আগমনে মদে-মাংসে উৎসব পালিত হয় সেই রাত্রে। বন্দি হয়ে এলেও মেরিকে কার্যত আদরে মাথায় করে রাখা হয়েছিল। নাম বুঝতে না পেরে নতুন নাম দেওয়া হয় ‘জ়োলুটি’। মানে হল, পাহাড় পার করে ঢোকা কন্যা। বেংখুয়াইয়া তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত মহিলা, গাঁওবুড়ার স্ত্রী লুয়াঙ্গির হাতে জ়োলুটির আদরযত্নের ভার তুলে দেন। সর্বক্ষণ পাশে থেকে, খেলনা, পোশাক বানিয়ে দিয়ে জ়োলুটিকে প্রায় রাজকন্যার মতোই রেখেছিলেন লুয়াঙ্গি। জ়োলুটিও দ্রুত তার আগের জীবন ভুলে পাহাড়ি জনজাতিকে আপন করে নেয়। এমনকী তার নিজের ভাষাও ভুলতে থাকে।
এ দিকে ইংরেজরা বসে ছিল না। মেরিকে অপহরণের পরেই লুসাই পাহাড়ে পুরোদস্তুর প্রত্যাঘাতের সিদ্ধান্ত হয়। আট মাসের মাথায়, ১৮৭১ সালের ৮ অক্টোবর শুরু হয় ‘লুসাই এক্সপিডিশন’। সুশিক্ষিত, অস্ত্রধারী বিরাট বাহিনীর সামনে একে একে মিজো গ্রামের পতন হতে থাকে। চিটাগং হিল ট্র্যাক্টসের সুপারিন্টেন্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট কর্নেল টি এইচ লেউইন প্রথমে ১৫০ জন সৈন্য নিয়ে ত্লাবুংয়ে ঘাঁটি তৈরি করেন। তৈরি হয় দুর্গ। সেখান থেকে চলতে থাকে উপর দিকে অভিযান। ১৮৭২ সালের ২১ জানুয়ারি, মেরির অপহরণের প্রায় এক বছরের মাথায় ইংরেজ সেনা সাইলামে প্রবেশ করে। দুর্ধর্ষ লুসাই যোদ্ধারা লড়াই শুরু করলেও বুঝতে পারে ইংরেজদের আগ্নেয়াস্ত্রের সামনে তাদের লড়াই বেশি ক্ষণ টিকবে না।
গুলির লড়াই শেষ। কিন্তু যার জন্য এত রক্তপাত, সেই মেরি কোথায়? মেরিকে উদ্ধার করার মুহূর্ত নিয়ে দু’রকমের গল্প রয়েছে।
খোদ লেউইন লিখেছেন, বেংখুয়াইয়ার ঘরের সামনে গাছের গুঁড়ির উপরে বসেছিল মেরি। পরনে নীল চটের পোশাক। ওই বয়সেই মুখে ধোঁয়া ওড়ানো পাইপ। আশপাশে ভয়ে দৌড়োদৌড়ি করতে থাকা জনজাতি ছেলেমেয়েদের, তাদের ভাষাতেই নির্দেশ দিচ্ছিল মেরি। একেবারে রানির মতোই। ইংরেজ সেনাদের দেখে সে মোটেই খুশি হয়নি। ততদিনে তার ভাষাও বদলে গিয়েছে। শেষে মিষ্টি লজেন্সের লোভ দেখিয়ে তাকে জোর করে ধরে আনা হয়।
আবার সাইলামের বাসিন্দাদের ভাষ্য, জ়োলুটি ততদিনে পুরোপুরি লুসাই হয়ে গিয়েছিল। ইংরেজদের দেখে সে ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। এ দিকে জ়োলুটিকে না ছাড়লে গ্রাম ধ্বংস করে দেবে ইংরেজরা। তাই বাধ্য হয়ে লুয়াঙ্গি জঙ্গলে কাঠ কুড়োতে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে আদরের জ়োলুটিকে সঙ্গে করে একটি ঝর্নার পাশে নিয়ে যান। সেখানে ঘাপটি মেরে থাকা ইংরেজ সৈন্যরা জোর করে মেরিকে পাকড়াও করে।
উদ্ধারের পরেই মেরিকে কলকাতা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সোজা স্কটল্যান্ডে। সেখানে ঠাকুরদা, ঠাকুমার কাছে বড় হতে থাকে মেরি।
এ দিকে সেই যে লুসাই পাহাড়ের ত্লাবুংয়ে তৈরি হল ইংরেজদের প্রথম দূর্গ তাকে ঘিরে কিন্তু জমে উঠল ব্যবসা-বাণিজ্য। লেউইন মিজো প্রধানের সঙ্গে সন্ধি করার পরে রাঙামাটি থেকে তাঁর সদর তুলে আনেন ত্লাবুংয়ে। আরও কপাল খোলে ত্লাবুংয়ের। কোল ঘেঁষে বইছে কর্ণফুলি নদী। তাই সাউথ লুসাই হিলের অধীনে ত্লাবুং মিজোরাম ও চট্টগ্রামের মধ্যে অন্যতম প্রধান নদীবন্দর হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, এই ত্লাবুং হয়েই লুসাই পাহাড়ে পাড়ি দেওয়া শুরু করেন মিশনারির দল। খ্রিস্টান ধর্মের গোড়াপত্তনে তাই ত্লাবুংয়ের ভূমিকা অনেক। মেরিকে রক্ষণাবেক্ষণের ভার ছিল যে লুয়াঙ্গির উপরে, তাঁর স্বামীই সেখানে প্রথম খ্রিস্টধর্ম নেন। ধর্মের হাত ধরেই ঢোকে ইংরেজি ভাষা।
আক্রমণকারী হয়ে ঢুকলেও লেউইন কিন্তু মিজোরাম ও সেখানকার মানুষকে ভালবেসে ফেলেছিলেন। কার্যত তিনিই প্রথম ইংরেজ যে লুসাই যোদ্ধাদের মনে জায়গা করে নেন। সুপারিন্টেন্ড্যান্ট থেকে চিটাগংয়ের ডেপুটি কমিশনার হওয়া লেউইনকে আদর করে তাঁকে ‘থাংলিয়ানা’ (সুবিখ্যাত) নাম দিয়েছিল লুসাইরা। ১৮৭৪ পর্যন্ত সেই দায়িত্বে থাকার পরে ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে যান। কিন্তু ভারতের টান এড়াতে পারেননি। পরের বছরই কোচবিহারের জেলাশাসক হয়ে ফেরেন। পরে অবসর নেন দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক হিসেবে। স্বদেশে ফিরে তিনি বই লেখেন- ‘আ ফ্লাই অন দ্য হুইল, অর, হাউ আই হেল্পড টু গভর্ন ইন্ডিয়া’। জন হোয়াইটহেডের লেখা তাঁর জীবনকাহিনির নাম হিসেবেও বেছে নেওয়া হয়েছে মিজো পাহাড়ের ডাকনামটাই- ‘থাংলিয়ানা- অ্যামঙ্গস্ট ওয়াইল্ড ট্রাইব্স অন ইন্ডিয়াস নর্থ-ইস্ট ফ্রন্টিয়ার’। ইংল্যান্ডের অ্যাবিঞ্জারে ১৯১৬ সালে মারা যান থাংলিয়ানা। কিন্তু তাঁকে ভোলেননি মিজোরা। তাঁর স্মৃতিফলক থাংলিয়ানা লুং আজও রয়েছে ত্লাবুংয়ে।
নদীর জলের সঙ্গেই বছর গড়াতে থাকে। বর্তমানে লুংলে জেলার অধীনে থাকা এই ছোট্ট শহরের জনসংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজার। অধিকাংশই মিজো এবং বাংলাদেশ থেকে আসা চাকমা জনজাতির মানুষ। স্বাক্ষরতার হার প্রায় ৯৩ শতাংশ। ১৮৭১ সালে যে স্থানে ভর দিয়ে ইংরেজরা লুসাই পাহাড় দখল করেছিল, স্বাধীনতাপ্রিয় মিজোরা এখন তাদের শিক্ষার প্রসার ও ধর্মবিস্তারের অন্যতম আঁতুড়ঘর হিসেবে সেই শহরকে মনে রেখেছে। সে বছর এই নভেম্বর মাসেই লেউইন ত্লাবুংয়ে দূর্গ গড়েন। তাই এই ২০২১-এ ত্লাবুংয়ে মানুষ শহরের দেড়শো বছর পূর্তির উৎসব শুরু করেছেন। তৈরি হয়েছে লুসাই অভিযান ও মেরিকে উদ্ধারের কাহিনি নিয়ে মিউজ়িক ভিডিয়ো। রাস্তায় চলছে দেড়শো বছরের জন্মজয়ন্তীর শোভাযাত্রা। মাঠে চলছে নাচে-গানে জন্মদিন পালন।
যার জন্য এত কাণ্ড, আমাদের সেই ছোট্ট মেরি গেল কোথায়?
রয়্যাল মুরে কলেজে পড়ার সময়ই মেরির আলাপ হয় হ্যারির সঙ্গে। বিয়ের পরে লন্ডন পাড়ি। সেখানে স্কুলে প্রধান শিক্ষিকার চাকরি পান মেরি। ১৯৫৫ সালে মারা যান মেরি ওরফে লুসাই পাহাড়ের জ়োলুটি। ততদিনে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের পরে মহারানির শাসন এসেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে স্বাধীন হয়েছে ভারত। লুসাই পাহাড় হয়েছে মিজোরাম। কিন্তু পাহাড়ে থামেনি বিদ্রোহ। ১৯৫৯-৬০ সালের দুর্ভিক্ষের জেরে লালডেঙ্গার নেতৃত্বে গেরিলা লড়াইয়ের নতুন অধ্যায় শুরু। যার সমাপ্তি ১৯৮৭ সালে মিজো চুক্তি ও
পৃথক মিজোরাম রাজ্য তৈরির মধ্যে দিয়ে। অবশ্য সে এক অন্য গল্প।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy