Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Buddhist temple

স্ফটিকপাত্রে বুদ্ধের পূতাস্থি নিয়ে শোভাযাত্রা

গন্তব্য ছিল কলেজ স্কোয়ারের শ্রীধর্মরাজিকা চৈত্য বিহার। উদ্দেশ্য পাথরের স্তূপে প্রতিস্থাপন। কলকাতা শহরের এই বৌদ্ধ বিহার অজন্তার ধাঁচে তৈরি। আগামী বৃহস্পতিবার তার শতবর্ষ। কলেজ স্কোয়ারের অনতিদূরে বেলেপাথরে নির্মিত যে দ্বিতল মনোরম সৌধটি নজর কাড়ে সেটিই শ্রীধর্মরাজিকা চৈত্য বিহার।

শরণস্থল: ধর্মরাজিকা চৈত্য বিহারের প্রাচীন উপাসনাকক্ষ।

শরণস্থল: ধর্মরাজিকা চৈত্য বিহারের প্রাচীন উপাসনাকক্ষ।

তড়িৎকান্তি রায়
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২০ ০২:২২
Share: Save:

কলকাতা শহর জুড়ে রয়েছে অসংখ্য মন্দির, মসজিদ, চার্চ, প্যাগোডা। শহরের বৌদ্ধ বিহারগুলি অনেক সময় আমাদের চোখের আড়ালে থেকে যায়। তবু একটিকে এখন মনে করার সময়। একশো বছর আগে প্রতিষ্ঠিত, শ্রীধর্মরাজিকা চৈত্য বিহার। এখানে স্তূপের ভিতরে সসম্মানে রাখা আছে ভট্টিপ্রলুতে সম্রাট অশোকের স্তূপ থেকে পাওয়া গৌতম বুদ্ধের অস্থি। ঠিকানা কলেজ স্কোয়ারের কাছে ৪এ, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট। একশো বছর আগে ২৬ নভেম্বর ১৯২০ তারিখে মহাবোধি সোসাইটির চেষ্টায় এই বিহার স্থাপিত হয়। অজন্তা শৈলীর এই সৌধ ভারতীয় স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। ইতিহাস ও অপূর্ব স্থাপত্যের মেলবন্ধনে সৃষ্ট এই বিহার ২০০৪ সালে কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের তরফে ঐতিহ্যশালী সৌধ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

কলকাতায় বৌদ্ধ বিহারের প্রয়োজনীয়তা প্রথম অনুভব করেছিলেন সিংহলের বৌদ্ধ যুবক অনাগারিক ধর্মপাল (১৮৬৪-১৯৩৩)। ১৮৯১ সালের মার্চ মাস ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের জাগরণের ঊষাকাল। এর মাস দুই আগে, ২২ জানুয়ারি ধর্মপাল বুদ্ধগয়ায় বোধিসত্ত্ব সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্ব লাভের পুণ্যভূমিতে মহাবোধি মহাবিহারের অবস্থা নিজের চোখে দেখতে গিয়েছিলেন। গিয়ে দেখলেন, বৌদ্ধদের পুণ্যতীর্থ শৈবদের দখলে, সেখানে শুধুমাত্র বৌদ্ধদের পূজার অধিকার নেই। ভারতবর্ষে প্রায় আট শতক ধরে লুপ্তপ্রায় বৌদ্ধ ধর্মের পুনর্জাগরণের ইতিহাসে এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ। বৌদ্ধ দেশগুলির মিলিত প্রয়াসে রেঙ্গুন (বর্তমান ইয়াঙ্গন) যাওয়ার পথে মার্চ মাসে সপ্তাহকাল কলকাতায় ছিলেন ধর্মপাল। তখনই তিনি কলকাতায় বৌদ্ধ বিহার তৈরির কথা ভাবেন।

শিকাগো বিশ্ব ধর্মমহাসভায় একটি প্রাচীন বুদ্ধমূর্তির সঙ্গে অনাগারিক ধর্মপাল

বৌদ্ধদের স্বাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ধর্মপালের উদ্যোগে ৩১ মে ১৮৯১ তারিখে কলম্বোতে স্থাপিত হল ‘বুদ্ধগয়া মহাবোধি সোসাইটি’, তিনি হলেন তার সাধারণ সম্পাদক। কাজের তাগিদে ১৮৯২ সালের শুরুতেই সোসাইটির প্রধান কার্যালয় কলকাতায় স্থানান্তরিত হলে বিহার তৈরির বিষয়টি দানা বাঁধার সুযোগ পেল। সোসাইটির নিজস্ব বাড়ি ও বিহারের জন্য জমির সন্ধান চলতে লাগল। অবশেষে ৪এ, কলেজ স্কোয়ারে (বর্তমান বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট) দোতলা বাড়ি-সহ ছ’কাঠা জমি ১৯১৪ সালের জুলাই মাসে ২০,০০০ টাকায় কেনা হল। ধর্মপাল নিজস্ব সঞ্চয় থেকে ১০,০০০ টাকা দিলেন। হনলুলুর মেরি ফস্টার, সোসাইটির বিভিন্ন গঠনমূলক কাজের মহান পৃষ্ঠপোষক, পাঠালেন ৯,০০০ টাকার সমমূল্যের ডলার। বাকি টাকা এল সিংহলের বৌদ্ধদের কাছ থেকে।

কলেজ স্কোয়ারের এই জমিটি ছিল বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের জন্য আদর্শ। গৌতম বুদ্ধের জীবনের শেষ দিনে, কুশীনগরে অন্তিম শয়ানে শায়িত গৌতম বুদ্ধের কাছে শোকার্ত আনন্দ, তাঁর দেহাবশেষ কেমন ভাবে সংরক্ষিত হবে জানতে চাইলে গৌতম বলেছিলেন— ‘হে আনন্দ, তথাগতের শেষকৃত্য চক্রবর্তী রাজাদের যেরূপ করা হয় সেই রূপ করা বাঞ্ছনীয়। চতুঃরাজপথের সংযোগ স্থলে স্তূপ নির্মাণ করা কর্তব্য।’ (মহাপরিনির্বাণ সূত্র)

এখানে গৌতম বুদ্ধের পূতাস্থি সংরক্ষিত হয়েছে স্তূপে, আর সেই স্তূপ-সহ এই বিহার নির্মিত হয়েছে চার রাজপথের সংযোগস্থল, গুরুত্বপূর্ণ কলেজ স্ট্রিট ও হ্যারিসন রোডের (মহাত্মা গাঁধী রোড) চার মাথার মোড়ের একেবারে কাছে। অবস্থানগত ভাবে এই বিহার গৌতম বুদ্ধের সেই ইচ্ছারই অনুসারী।

পরবর্তী ঘটনাক্রম দ্রুত এগিয়ে চলল বিহার তৈরির লক্ষ্যপূরণে। ১৯১৫ সালে সোসাইটি, ভারতীয় আইনে ‘মহাবোধি সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’ নামে পঞ্জিভূত হল। সভাপতি স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক অনাগারিক ধর্মপাল। তত দিনে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের উদ্যোগে গান্ধার-সহ ভারতবর্ষের স্তূপ থেকে কিছু বৌদ্ধ স্মৃতিচিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। ভারত সরকার তখন ভাবছিলেন, কী করে সেগুলি জনসাধারণের দ্রষ্টব্য হিসেবে সংরক্ষণ করা যায়। সেই অনুসারে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল চেম্‌সফোর্ড লিখিত ভাবে সোসাইটিকে কিছু প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাবেই ছিল কলকাতা, সারনাথ ও তক্ষশীলায় জনসাধারণের দর্শনের জন্য উপযুক্ত মন্দির প্রতিষ্ঠা। মহাবোধি সোসাইটি এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি।

সুযোগটিকে কাজে লাগাতে সোসাইটি কলকাতা উচ্চন্যায়ালয়ের বিচারপতি সারদাচরণ মিত্রের সভাপতিত্বে ‘কলকাতা বিহার কমিটি’ গঠন করল। উদ্দেশ্য, এক লক্ষ টাকা সংগ্রহ। আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এলেন হনলুলুর মেরি ফস্টার, বরোদার মহারাজা গায়কোয়াড়, ধর্মপালের মা মল্লিকা হেওয়াভিথর্নে ও পরিবারের সদস্যরা। দানপাত্র ভরে উঠতে দেরি হল না।

অর্থ-সংগ্রহের পাশাপাশি জোর কদমে এগোল অন্যান্য প্রস্তুতিও। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সর্বময় কর্তা স্যর জন মার্শালের তত্ত্বাবধানে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার নির্মাণরীতির সঙ্গে অজন্তার শিল্পস্থাপত্যের মিশেলে তৈরি হল বিহারের নকশা। সৌধের সার্বিক অলঙ্করণের দায়িত্বে ছিলেন কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলের অধ্যক্ষ পার্সি ব্রাউন।

পরিকল্পনার পর ইমারত তৈরির দায়িত্ব পালন করেছিলেন ‘কর অ্যান্ড কোম্পানি’। আকারহীন পাথরে রূপ ফুটে উঠল গোপালদাস প্রেমজির হাতের ছোঁয়ায়। প্রখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার ও ‘ওড়িশা আর্কিটেকচার’-এর লেখক মনমোহন গঙ্গোপাধ্যায় বিনা পারিশ্রমিকে তদারকির দায়িত্ব পালন করেন। বিহার নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯১৮, শেষ হতে প্রায় দু’বছর লাগে। ধর্মপালকে এই সময়ের বেশির ভাগটাই, ১৯১৬ থেকে ১৯১৯, মাতৃভূমি শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার কাজে যুক্ত থাকার অপরাধে ইংরেজ সরকারের আদেশে কলকাতায় নজরবন্দি থাকতে হয়। এই ঘটনা শাপে বর হয়েছিল। বিহার তৈরির পুরো সময়টাই প্রায় তিনি কলকাতায় উপস্থিত থেকেছিলেন। নান্দনিক এই বৌদ্ধবিহারের দ্বার ২৬ নভেম্বর ১৯২০ সালে এক পূর্ণিমার সন্ধ্যায় জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

কলেজ স্কোয়ারের অনতিদূরে বেলেপাথরে নির্মিত যে দ্বিতল মনোরম সৌধটি নজর কাড়ে সেটিই শ্রীধর্মরাজিকা চৈত্য বিহার। সৌধের সম্মুখভাগের (facade) মাঝ বরাবর প্রবেশ পথ, যার দু’পাশে খোদাইয়ে কাজ করা গোলাকার পাথরের স্তম্ভ। স্তম্ভের শীর্ষে আমলক ও বর্গাকার স্তম্ভ-পীঠিকা (abacus), তার ওপর রয়েছে সুন্দর অলঙ্করণে সমৃদ্ধ মাথাল (intel)। এর ওপরেই অজন্তা শৈলীর বিশাল চৈত্য-গবাক্ষ। গবাক্ষের দু’পাশে সামঞ্জস্য রেখে দু’টি করে শোভাবর্ধক খাটো স্তম্ভ। স্তম্ভগুলি অশোক-স্তম্ভের অনুরূপ। এর নীচে মূল প্রবেশদ্বারের দু’দিকে দু’টি অলঙ্কৃত জানালা। স্থানে স্থানে সারিবদ্ধ ছোট ছোট চৈত্য-গবাক্ষের অনুকরণে দৃষ্টিনন্দন খোদাইয়ের কাজ। সব শেষে স্থাপত্যের শীর্ষে ত্রিরত্ন-খচিত মুকুটের মতো চৈত্য-গবাক্ষের রেখারূপ।

এটি মূলত ‘চৈত্য বিহার’। বিহারে প্রবেশদ্বারের পর বাঁ দিকে দোতলায় উপাসনাকক্ষে যাওয়ার সিঁড়ি। নীচের তলায় বিখ্যাত সভাগৃহ, সুমঙ্গল হল। মূল দ্বিতল স্থাপত্য দু’সারিতে মোট ১৪টি গোলাকার স্তম্ভের ওপর স্থাপিত। স্তম্ভশীর্ষ ঘণ্টাকৃতি। উপাসনাকক্ষে স্তূপই প্রধান আরাধ্য। স্তূপের গায়ে খোদাইয়ের কাজ ও উজ্জ্বল পালিশ। স্তূপের ভিতরে শ্রীলঙ্কার ডাগবার (স্তূপ) আকারবিশিষ্ট ধাতুপাত্রে রাখা আছে গৌতম বুদ্ধের পবিত্র অস্থি। বুদ্ধাস্থির গরিমায় এটি একটি ‘শারীরিক স্তূপ’, অর্থাৎ স্তূপের শ্রেণিবিভাগে সর্বোত্তম। স্তূপকে প্রদক্ষিণ করার জন্য কক্ষের দু’পাশে পথ। মাঝের অংশ উপাসনাস্থল। সমগ্র দেওয়াল ও সিলিং জুড়ে অজন্তার ফ্রেসকোর অনুকরণে গৌতম বুদ্ধের জীবনের নানা ঘটনার চিত্ররূপ।

কলকাতার বিহারের কাজ যখন শেষের মুখে, তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ভট্টিপ্রলুতে পাওয়া গৌতম বুদ্ধের অস্থি মাদ্রাজ থেকে কলকাতার লাটভবনে (বর্তমান রাজভবন) নিয়ে আসা হয়। ১৮৯১ সালে ভট্টিপ্রলুতে ধ্বংসপ্রাপ্ত স্তূপে খনন করে তিনটি আধার পাওয়া গিয়েছিল। এই আধারগুলির ভেতরে ছিল নানা আকারের কালো পাথর ও স্ফটিকের তৈরি কয়েকটি পাত্র। যার ভিতরে ছিল অনেক মূল্যবান পাথর, মুক্তো, সোনার ফুল, পাতা এবং গৌতম বুদ্ধের অস্থি। আধারের গায়ের লিপি পাঠোদ্ধার করে জানা যায় ওই দেহাবশেষ গৌতম বুদ্ধের আর লিপির অক্ষর, লিখন-রীতি জানান দেয় এগুলি তার বহু পরের মৌর্য যুগের। অস্থিটি সেই থেকে মাদ্রাজ মিউজ়িয়ামে সংরক্ষিত ছিল।

তার পর এল বহু প্রতীক্ষিত শ্রীধর্মরাজিকা চৈত্য বিহারের উদ্বোধনের শুভ দিন, ২৬ নভেম্বর ১৯২০। ভোর থেকে চার দিকে সাজো-সাজো রব। সকালেই অস্থিপ্রদান অনুষ্ঠান। লর্ড রোনাল্ডসে-র আমন্ত্রণে সোসাইটির সভাপতি স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ও সাধারণ সম্পাদক অনাগারিক ধর্মপাল, থিয়োসফিকাল সোসাইটির অ্যানি বেসান্ত, অন্যান্য উপাসক-সহ বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুদের আধ মাইল লম্বা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সকাল আটটায় আজকের রাজভবনে পৌঁছয়। সিল্কের ধুতি ও চাদর পরে খালি পায়ে স্যর আশুতোষ এবং সিল্কের পোশাক ও চাদর গায়ে অনাগারিক ধর্মপাল গৌতম বুদ্ধের অস্থিপূর্ণ সুন্দর স্ফটিকপাত্রটি পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করেন। এর পর আধারটি ছয় ঘোড়ায় টানা গাড়ির ওপর সাজানো সিংহাসনে স্থাপন করা হয়। সেই ঘোড়ার গাড়িসহ শোভাযাত্রা বিহারের দিকে যাত্রা করে। বিহারে পৌঁছলে দোতলায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সমবেত সুত্তপাঠের সঙ্গে উপাসনাকক্ষে পাথরের স্তূপে পবিত্র অস্থি প্রতিস্থাপন করা হয়।

সন্ধ্যায় লর্ড রোনাল্ডসে স্বয়ং এই সুমহান বৌদ্ধমন্দির, শ্রীধর্মরাজিকা চৈত্য বিহার সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন। দ্বারোদ্ঘাটনের পর ছিল স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের স্বাগত ভাষণ ও অনাগারিক ধর্মপালের বক্তৃতা।

বিহারের উপাসনাকক্ষে রয়েছে নানা বুদ্ধমূর্তি ও ঐতিহাসিক সামগ্রী। কক্ষের পূর্ব প্রান্তে স্তূপকে ঘিরে ও সামনের বেদীতে সাজানো রয়েছে শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, চিন, জাপান, থাইল্যান্ড থেকে উপহার হিসেবে আসা নানা বুদ্ধমূর্তি।

উপাসনাকক্ষের দেওয়াল জুড়ে দেরাজে রয়েছে ছোট-বড় নানা ঐতিহাসিক জিনিস, রয়েছে দেশ বিদেশের শিল্পকর্ম। এখানে বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনাসভা ও উপযুক্ত গুরুর নির্দেশনায় বিপাসনা ধ্যানের আয়োজন হয়ে থাকে।

কালে কালে এই বৌদ্ধ বিহারে এসেছেন বহু মানুষ। এসেছেন কৃপাশরণ মহাস্থবির, তিব্বতি ধর্মগুরু চতুর্দশ দলাই লামা। এসেছেন নোবেলজয়ী মাদার টেরেসা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ এখানেই ১৮ মে ১৯৩৫ সালে বৈশাখী পূর্ণিমার ভাষণে বলেছিলেন— “আমি যাঁকে অন্তরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলে উপলব্ধি করি আজ এই বৈশাখী পূর্ণিমায় তাঁর জন্মোৎসবে আমার প্রণাম নিবেদন করতে এসেছি।”

আজও যে কোনও ধর্মীয় স্থানের মতো এখানেও শ্রদ্ধাভক্তির সঙ্গে বৌদ্ধ রীতি মেনে নানা অনুষ্ঠান পালিত হয়ে থাকে, যার মধ্যে বৈশাখী পূর্ণিমা ও চীবর (বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র) দান অন্যতম। শাক্যমুনি বুদ্ধের জীবনের তিনটি প্রধান ঘটনা, অর্থাৎ তাঁর জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ-এর সঙ্গে যুক্ত তিথি বৈশাখী পূর্ণিমা— এই অসীম মাহাত্ম্যপূর্ণ দিনে এখানে বহু মানুষের সমাগম হয়। সকাল থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ছন্দোবদ্ধ সুত্তপাঠে চার দিক মুখরিত হয়ে ওঠে। উপাসনাকক্ষে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ধর্মদেশনা ও ভক্তদের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে কেটে যায় দিনের বড়

অংশ। আষাঢ় সংক্রান্তির পুণ্য দিনে চীবর দানের অনুষ্ঠানও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। অনাগারিক ধর্মপালের জন্মদিন, ১৭ সেপ্টেম্বর, এখানে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয়। শহরের সেই জীবন্ত ঐতিহ্যই এ বার শতবর্ষে।

অন্য বিষয়গুলি:

Buddhist temple Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy