ফাটাকেষ্টর কালী
অত বড় হিরে বসানো সোনার নাকছাবিটা মায়ের গা থেকে চোরে খুলে নিয়ে গেল! বছর চল্লিশ আগে যার দাম ছিল কমবেশি ৭৫ হাজার। ‘দো আনজানে’-র শুটিং করতে সে বার কলকাতায় এসেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। ডিরেক্টর দুলাল গুহর আমহার্স্ট স্ট্রিট পাড়ার কোনও জর্দার দোকানে যাতায়াত ছিল। সেই সূত্র কাজে লাগিয়েই সটান গ্র্যান্ড হোটেলে হাজির কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত, বাঙালি যাঁকে ‘ফাটাকেষ্ট’ বলে চেনে। বসন্তের দাগে খোবলানো মুখ, বেঁটেখাটো পেটানো শরীরে সাদা সাফারি স্যুট। ঘরে ঢুকতেই হাতকাটা কালো গেঞ্জি পরা ছ’ফুট তিন সসম্ভ্রমে উঠে দাঁড়ালেন। দুলালবাবু চিনিয়ে দিলেন, ইনিই কেষ্টদা!
ফাটাকেষ্ট হেসে বললেন, ‘‘বলুন কবে যাবেন?’’ কলকাতায় বসে খর্বাকৃতি সেই মানুষটির কথা অমান্য করে, এমন সাহস কার! রাত দশটায় বচ্চন গাড়ি পাঠানোর অনুরোধ করলেন। ফাটাকেষ্টর ছায়াসঙ্গী সুকৃতি দত্ত ওরফে ঢেঁপুদার মনে আছে, সে বার মিস শেফালির একটা নাচের সিনের শুটিং দেখতে ওঁদের নেমন্তন্ন করেন দুলালবাবুরা। তার আগে পুজোর গলির বাইরে বড় স্টেজে ‘নমকহারাম’ বইয়ের ডায়ালগ শুনিয়েছিলেন বচ্চন। মণ্ডপে মায়ের সামনেও অমিতাভ দাঁড়িয়ে ছিলেন কিছু ক্ষণ। শ্মশানের পরিবেশ মণ্ডপে, ডাকিনী-যোগিনী, চোখ জ্বলছে শেয়ালের। ঘন নীল রঙের কালীপ্রতিমা। কোঁকড়া চুলের গোছখোলা মায়ের মুখখানি যেন নিষ্পাপ কিশোরীর।
কী মনে হয়েছিল অমিতাভের, একটা হিরে-বসানো নাকছাবি মায়ের জন্য পাঠিয়ে দেন। যা পরে চুরি হয়ে যাওয়াটা এখনও ঢেঁপুদাদের বুকে বাজে! ভোর রাতে ফাংশন শেষে মণ্ডপ তখন ফাঁকা। মা কালীর পিছনে লুকিয়ে খোলা চুলের ফাঁক দিয়েই নাকছাবি হাতিয়ে নেয় পাড়ারই এক ছেলে। পুলিশের চাপে পরে স্বীকার করেছিল। বিবেকানন্দ রোডের কাছে এক সোনার দোকানে বোকার মতো সে বেচেও দেয় নাকছাবি, পুলিশ পৌঁছতে পৌঁছতে ওরা তা গলিয়ে ফেলেছে। পরে সোনা দিয়ে দোকান পুষিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু নাকছাবি ফেরেনি।
নিছক বারোয়ারি পুজো, কিন্তু শুরুর এক-দে়ড় দশকেই অন্য উচ্চতায়। আজকের তাবড় দাদাদের পুজোও তার পাশে পানসে! ভক্তিতে গদগদ চেনা-অচেনা লোকে এসে মানত করছে, ভারী সোনার গয়না, সোনার জিভ-টিপ-থালা মায়ের সামনে উপচে পড়ছে। কত মহিলার উপরে মা কালীর ভর পর্যন্ত হয়। নিন্দুকেরা বলত, এ সবই কেষ্টার টাকার খেলা। সব মিলিয়ে জাঁকজমক, সৌন্দর্য, অলৌকিকতার অব্যর্থ ককটেল।
ওই ১৯৭৪-৭৫ সালেই দেখার মতো সাজ ফাটাকেষ্টর পুজোর! কলেজ স্ট্রিট বাটার মোড় থেকে আমহার্স্ট স্ট্রিট অবধি গোটা কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিট আলোয় মুড়ে ফেলা হয়। যেন কোনও প্রকাণ্ড দালানবাড়ি। মাথার ওপর ঝাড়বাতি, পাখা। সেটা এমন ঢালাও কর্পোরেট স্পনসরশিপের যুগ নয়। এক আনকোরা ফ্যান কোম্পানি ফাটাকেষ্টর পুজোয় শামিল হতে পেরে বর্তে গিয়েছিল।
অখ্যাত সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের একটা পুজো কী ভাবে ‘ব্র্যান্ড ফাটাকেষ্ট’ হয়ে উঠল? বুঝতে হলে সেই সময়টাকে বুঝতে হবে! ১৯৭০-’৭১-এর আগুনঝরা নকশাল আমলের আতঙ্ক আর বউ-মেয়ে নিয়ে সংসার করা মধ্যবিত্ত গেরস্তপাড়ার নিরাপত্তাহীনতা জন্ম দিয়েছিল এক অতিমানবের। তার কতটা মিথ আর কতটা মিথ্যে, মাপা মুশকিল। কিন্তু ফাটাকেষ্টর হাড়হিমকরা-কাম-রক্ষাকর্তা ইমেজ, দু’টোই জনমানসে চারিয়ে গিয়েছে। তিনি মাঠে-ময়দানে বোমা-গুলি, কবজির জোরে লড়বেন। আবার তিনিই নাইট শো-ফেরত পাড়ার মেয়েদের নিশ্চিন্তে বাড়ি ফেরার খেয়াল রাখবেন।
আরও পড়ুন:মোহিনী গুপ্তচর না কি যুদ্ধের বলি
১৯৫০-এর দশকের শেষে ওই তল্লাটে তিন জন কেষ্ট। ড্রাইভার কেষ্ট, বিড়ি বাঁধায় দড় ‘বিড়ি কেষ্ট’ আর কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত। শেষোক্ত জন বাবার পানের দোকান সামলাতেন। মাঝেমধ্যে শীতের সকালে মঙ্গলারতির সময়ে ঠনঠনিয়ার কালীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। তিনি ক’অক্ষর গোমাংস। আজীবন কষ্ট করে চেকে বাংলায় সই করতেন ফাটাকেষ্ট। এটুকু খামতি ছাপিয়েই তাঁর উচ্চকোটিতে প্রতিষ্ঠালাভ। শরীরচর্চায় আগ্রহ ছিল খুব। মনোহর আইচের আখড়ায় ঘুরে পাঁউরুটি আর পাঁঠার গুরদা কিনে ফিরতেন। আমহার্স্ট স্ট্রিটের নীলকণ্ঠ কেবিনে তা সেদ্ধ করে গোগ্রাসে খেতেন গরিবের ছেলে। কিংবা পাড়ায় ডাম্বেল ভেঁজে দুধে কাঁচা ডিম গুলে চুমুক দিতেন।
সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট লাগোয়া নরসিংহ লেনে তাঁর বাড়ির কাছেই বরাহনগরের নীলুকে নিয়ে চড়াও হয়েছিল পাড়াতুতো দুশমন নকুল। ছুরিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েও সদ্য-যুবা কেষ্টা বাঘের মতো লড়েন। মেডিক্যাল কলেজ থেকে বেরনোর পর থেকেই তিনি ‘ফাটাকেষ্ট’। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। নিলামের কারবার সামলানো, নকশাল-দমন, মুকুটে পর পর সাফল্যের পালক। নকশাল আমলে ওই তল্লাটেই মির্জাপুর স্ট্রিটের ছেলে জনৈক ‘গন্ডার’ ফাটাকেষ্টকে বোমা মেরেছিলেন। ফাটেনি। ফাটা সেই বোমা হাতে তুলে নিয়ে পালটা ছুড়ে মারেন।
বৃষস্কন্ধ: ঠাকুর সীতারামদাস ওঙ্কারনাথকে ঘাড়ে নিয়ে কৃষ্ণচন্দ্র ওরফে ফাটাকেষ্ট।
নরেন সেন স্কোয়্যারের মাঠের কাছে ওই জায়গাতেই ফাটাকেষ্টর ক্লাব নবযুবক সংঘের ঘর। উত্তম-সুচিত্রা, লেভ ইয়াসিন, অমিতাভ, রাজেশ খন্না, বিনোদ খন্না, জিতেন্দ্র, মালা সিন্হা, আর ডি-আশা... কে না এসেছেন সেখানে। মণ্ডপের অনেক পিছনে হ্যারিসন রোডের গলতা ধরে কোন ফিল্মস্টার বা নেতা ঢুকলেন, শেষ মুহূর্ত অবধি গোপন থাকত। ক্লাবঘর থেকে ল্যান্ডফোনে খবর যেত কেশব সেন স্ট্রিটের অফিসে। তার পরই জনতাকে চমকে মাইকে ঘোষণা! নাটকটা এতটাই ভাল বুঝতেন ফাটাকেষ্ট। কাশী থেকে সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ ঠাকুর আসার সময়ে তাঁকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন নিজে। জটাজুটধারী সাধুকে ঘাড়ে নিয়ে জনসমুদ্র ঠেলে ঢুকছেন ফাটাকেষ্ট, দেখে পাবলিক পাগল হয়ে গিয়েছিল!
নাটকের সেন্স, সঙ্গে প্রখর বুদ্ধির মিশেল। কালীপুজোয় ফাটার ডাকসাইটে প্রতিদ্বন্দ্বী সোমেন মিত্রের শিবিরও তা স্বীকার করে। নকশাল আমলের কথা। সোমেন-ফাটাকেষ্টরা হাত মেলাতে বহু নকশালই তখন পাড়াছাড়া। তাদের রাগ গিয়ে পড়ল কালীপুজোর উপরে। কুমোরটুলি-বি কে পাল অ্যাভিনিউ জুড়ে নকশালদের প্রতিরোধে প্রতিমা নিয়ে আমহার্স্ট স্ট্রিটে ঢোকাই দায়। ফাটাকেষ্ট কিন্তু তাদের ঘোল খাইয়ে ছাড়লেন। ঠাকুর পাড়ায় ঢুকল অসম্পূর্ণ অবস্থায়। মণ্ডপেই কাজ শেষ করলেন শিল্পী। এর পরে সোমেনের ঠাকুর আনতে নাজেহাল দশা। গোটা লালবাজার কুমোরটুলিতে পাঠিয়েও পুলিশের কালঘাম ছুটেছিল। ভাসানেও সোমেনরা রীতিমাফিক নিমতলার ঘাটে যেতে পারেননি, প্রতিমা নিরঞ্জন হয় আউট্রাম ঘাটে। তবে ফাটাকে নকশালেরা ঠেকাতে পারেনি। ভোর রাতে কখন নিমতলায় ঠাকুর ভাসান হল, কাকপক্ষীটিও টের পায়নি।
ভাসানের জাঁকজমকেই আসল পরীক্ষা হত সোমেন ও ফাটাকেষ্টর। তখন কমসে কম পনেরো দিন আমহার্স্ট স্ট্রিটে থাকতেন মা কালী। আর সোমেনের থেকে একটি দিন বেশি প্রতিমা রাখাতেই ফাটাকেষ্টর সার্থকতা। কেষ্টদার আজকের উত্তরাধিকারী প্রবন্ধ রায় ওরফে ফান্টা সগর্বে বলেন, ভাসানে গেটের সংখ্যায় সোমেনদারা কোনও দিন আমাদের টেক্কা দিতে পারেননি। গেট মানে ঠেলাগাড়িবাহী আলোর তোরণ! ৬০-৬৫টা তোরণও ফাটাকেষ্টর পুজোয় দেখা গিয়েছে। সঙ্গে ব্যান্ড পার্টির জৌলুস। কারও কারও ব্যাখ্যা, ক্রমশ কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ মুখ হয়ে ওঠা সোমেনকে চাপে রাখতে কংগ্রেসের বহু নেতাও অলক্ষে ফাটার পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন।
তখন ওই তল্লাটের সব পুজোর পাড়া-প্রদক্ষিণের রেওয়াজ ছিল। সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে কলেজ স্ট্রিট বাটা হয়ে সূর্য সেন স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট ঘুরে শোভাযাত্রা কলেজ স্ট্রিট ধরে উত্তরে পাড়ি দিত। মানিকতলা বাজারে পাক খেয়ে বিডন স্ট্রিট ধরে নিমতলা ঘাট। পারস্পরিক সৌজন্যের পরম্পরাও ছিল। শোভাযাত্রা যখন আমহার্স্ট স্ট্রিটে, সোমেন মিত্র নিজে বেরিয়ে মা’কে মালা পরিয়ে ফাটাকে জড়িয়ে ধরতেন। মা কালীর উদ্দেশে শ’য়ে শ’য়ে মালা পড়ত, সঙ্গে যোগ হত নানা রোমাঞ্চকর উপাদান।
এক বার এক মহিলার উপর কালীর ভর হয়। মা নাকি বললেন, আমায় লালপাড় শাড়ি পরিয়ে কাঁধে করে ভাসান দিবি! সে-বার মাকে বইতে হাজার লোকের কাড়াকাড়ি! এক বার এক বিহারি মহিলা নাকি ভরের চোটে স্পষ্ট বাংলা বলেছিলেন! আর এক বার মা কালী কাউকে ভর করে বলেন, ‘‘আমায় একটা বড় গেলাসে জল দিতে পারিস না!’’ সত্যিই জলের গ্লাসটা নাকি ছোট ছিল।
পুজোর জাঁকজমকে সোমেন মিত্তিরের পুজোও কম যেত না! কিন্তু বাস্তব-অতিবাস্তবের মিশেলে ফাটার আলাদা মেজাজ। তাঁর পুজোয় কালীর ভরের কথা শুনলে সোমেন বলেন, ও সবে একটু ইয়ে আছে! ফাটার দু’টো টেক্কা— ভাসানের জাঁকজমক আর উত্তমকুমার! কিন্তু বছর-বছর কেন মহানায়ক শুধু ফাটাকেষ্টর পুজোতেই যেতেন? কেউ কেউ বলেন, উত্তমের এই ফাটা-প্রীতির মধ্যেও আদতে ভয়! নকশাল-আমল পরবর্তী আতঙ্ক। মাথার উপরে ডাকাবুকো ফাটার বরাভয় সম্ভবত মহানায়কও জরুরি মনে করতেন। এ নিয়ে জটিলতাও কম হয়নি। শোনা যায়, ফাটার প্রতিপক্ষ-শিবির এক বার কৈফিয়ত চায়, আমাদের পুজোয় যাবেন না তো ফাটাকেষ্টর পুজোয় কেন যান? উত্তম বলেছিলেন, ‘‘ও তো আমার নিজের পুজো!’’ এই ঘটনার পরেই বিবেকানন্দ রোডে উত্তম-পুত্র গৌতমের ওষুধের দোকানের কাছে মস্ত বোমা পড়ে। এক মহিলা মারা গিয়েছিলেন। উত্তমকুমারের সঙ্গে ফাটাকেষ্টর সম্পর্ক কিন্তু আমৃত্যু টাল খায়নি। উত্তমের মৃত্যুর পর ফাটার মঞ্চে তারকাখচিত স্মরণসভা বসে।
অতিথি: ফাটাকেষ্টর পুজোয় অমিতাভ বচ্চন ও বিনোদ খন্না
ফাটাকেষ্টর বিয়ের গল্পেও উত্তমকুমার। পাড়ার একটি মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন কেষ্ট। চালু মিথ, শ্বশুরমশাই বাগড়া দিতে পারেন ভেবে জামাই বাবাজীবন তাঁকেও তুলে নেন। তবে ফাটা-শিবির এর সত্যতা মানে না। ফাটাকেষ্টর এক বন্ধুর থিয়েটার রোডের ডেরায় নাকি বিয়ে হয়েছিল। খাবার এসেছিল চাংওয়া থেকে। পরে বড় করে অনুষ্ঠান হয়। উত্তমকুমার এসে সোনার দুল দিয়ে বউমাকে আশীর্বাদ করেছিলেন।
নিজের হবু স্ত্রীকে নিয়ে ইলোপের ঘটনাটি বই ফাটাকেষ্টর নারী সংক্রান্ত দুর্নাম শোনা যায় না। পাড়ার তখনকার তরুণীদের চোখে, উনি মুখচোরা যুবক, মেয়েদের চোখ তুলেও দেখেন না! ঢেঁপুদারা বলেন, কেষ্টদার কড়া নির্দেশ ছিল, বীণা-জহর-পূরবী-অরুণায় নাইট শো ভাঙা অবধি তাঁর ছেলেরা রাস্তায় পাহারা দিত। পাড়ার এক তবলাশিল্পীর বিরুদ্ধে কাজের মেয়েকে গর্ভবতী করানোর অভিযোগ উঠেছিল। ঠনঠনিয়া মন্দিরে সিঁদুর পরিয়ে মেয়েটিকে ঘরে তুলতে তাকে বাধ্য করেন ফাটাকেষ্ট। মদ খেতেন টুকটাক, কিন্তু মাতলামো করে নিজেকে কখনও খেলো করেননি।
শত্রুদমন এবং জনসংযোগ— দু’টোই রক্ষা করেছেন নিপুণ দক্ষতায়। মান্যগণ্যদের কাছে যেতে হলে, পাড়ার ভাল ছেলে, কলেজ-পাশ ঢেঁপুকে সঙ্গে নিতেন। ‘‘কত জায়গায় গেছি! উত্তমকুমারের কাছে, রাজভবনে জ্যোতিবাবুর মুখোমুখি। বিড়লাদের নেমন্তন্নে রবিশঙ্কর শুনতে গিয়ে যা পেঁড়া খেয়েছিলুম!’’ স্মৃতিতে বুঁদ হন ঢেঁপুবাবু। কড়া অপারেশনে আবার ফাটার অন্য টিম। জানতেন, কী ভাবে ঘুঁটি সাজাতে হবে। রামা, বাসু, চন্দনরাই তখন ডান হাত। নকশাল আমলের সাফল্যের পুঁজি ফাটাকেষ্টকে জীবনভর চড়া সুদ দিয়েছে। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলে সরকারি ডেয়ারির রিজার্ভ ড্রাইভারের চাকরি পেয়েছিলেন। অফিস না-গিয়ে বসে বসে মাইনে নিতেন। বাম আমলেও তা সসম্মানে বহাল ছিল। বাড়ি বসেই নাকি নিলামের বখরার তিন পার্সেন্ট তাঁর কাছে চলে আসত।
ফাটাকেষ্টর পুজোর মধ্যগগনে ওঠাও নকশাল আমলের পরেই। পুজোর আজকের কাপ্তেন ফান্টাদা বলেন, ‘‘এখনও সবাইকে বলি, ফাটাকেষ্টর পুজো থেকে বলছি।’’ তাঁর জীবনের শেষ কালীপুজোতেও অতিথি হিসেবে আমহার্স্ট স্ট্রিট কাঁপিয়ে গিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন, বিনোদ খন্না। ফাটাকেষ্টর জীবন স্বল্পায়ু। বোমা-গুলির লড়াইয়ে তাঁর কিছু হয়নি। কিন্তু ৫২ পেরিয়ে হৃদরোগের ধাক্কাতেই শেষ।
বর্ণময় জীবনের সাক্ষী এখন নবযুবক সংঘের হলদেটে অ্যালবাম। সেখানে তাবড় তারকাদের সঙ্গে ফ্রেমবন্দি ফাটাকেষ্ট। তাতেও বোঝা যায়, আজকের বহু মাতব্বর দাদার থেকে তিনি কতটা আলাদা। হাত-কচলানো বা উদ্ধত ভঙ্গির ফাটাকেষ্ট কোথাও নেই। বরং খানিক বিনয়ী এক পার্শ্বচরিত্র। অথচ তাঁকে দেখেও লোকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে! নিচুতলা থেকে উঠে আসা বেপরোয়া ছেলেটিকে ক্ষমতা বদলাতে পারেনি। ফাটাকেষ্ট জানতেন, ব্যক্তি নয়, পুজোটাই আসল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy