ইউনেস্কোর ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’, যার বাংলা করা যেতে পারে অস্থাবর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, তার তালিকায় ঢুকে পড়েছে কলকাতার দুর্গাপুজো। বাঙালির শ্লাঘায় বড়সড় সংযোজন। এ নিয়ে খানিক হইচই এবং চর্চা তাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সঙ্গে ঠিক কতটা ওজনদার এই সম্মান, কতটা এর ব্যাপ্তি, আর এর অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্ভাবনাও ঠিক কেমন, তা ঠিকমতো জানতে হবে বইকি।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে পুরনো প্রাসাদ, ভাঙা স্মৃতিস্তম্ভ এ সব মূর্ত বস্তুর সঙ্গে দুনিয়া জুড়ে ‘অধরা’ ঐতিহ্যের মতো বিমূর্তকে দু’হাতে আঁকড়ে ধরতে চাওয়ার গল্পটাও বেশ টানটান এবং তা অর্ধশতকের পুরনো। ১৯৭৩ এর ২৪ এপ্রিল বলিভিয়ার বিদেশ এবং ধর্মীয় দফতরের মন্ত্রী একটি চিঠি লেখেন ইউনেস্কোর ডিরেক্টর-জেনারেলকে— “মানবজাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আন্তর্জাতিক সুরক্ষার উপর এ যাবৎ হওয়া দলিলগুলির এক যত্নশীল জরিপ করেছে আমার মন্ত্রক...” চিঠিটি শুরু হয়েছে এই ভাবে। চিঠিতে অভিযোগ করা হয় যে, সমস্ত প্রচলিত পদ্ধতি মূর্ত বস্তুর সুরক্ষার লক্ষ্য নিয়েই তৈরি। সঙ্গীত এবং নৃত্যের মতো প্রকাশ-রূপ, যার বাণিজ্যিকীকরণ এবং রপ্তানির ফলে বাণিজ্যভিত্তিক সংস্কৃতির প্রবাহে ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির ধ্বংসসাধন ঘটছে, তাদের কথা ভেবে নয়।
বলিভিয়ার মন্ত্রীর এই চিঠির কারণ কী? অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রভাব ছাড়াও এই চিঠির সবচেয়ে বড় কারণ সম্ভবত ছিল মার্কিন লোক-রক-সঙ্গীত যুগল পল সাইমন আর আর্ট গারফাঙ্কেলের ১৯৭০-এর অ্যালবাম ‘ব্রিজ ওভার ট্রাবলড ওয়াটার’। এর একটি ট্র্যাকে সাইমন এবং গারফাঙ্কেল পেরুর গ্রুপ ‘লস ইনকাস’-এর সঙ্গে একযোগে পরিবেশন করেন ‘এল কনডর পাসা’। ‘কনডর’ হল উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার এক শ্রেণির খুব বড় জাতের শকুন। আর ‘এল কনডর পাসা’ আন্দিজ় পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী লোককথাভিত্তিক ক্লাসিক লোকসঙ্গীত, যা স্মরণ করায় শ্বেতাঙ্গ অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে আদিবাসী বিদ্রোহের কাহিনি। অ্যালবামটি জিতে নেয় গ্র্যামি, পুরো ছ’সপ্তাহ থাকে বিলবোর্ডের পপ অ্যালবাম চার্টের এক নম্বরে। এখনও এটি সর্বকালের সর্বাধিক বিক্রীত অ্যালবামগুলির মধ্যে একটি।
‘এল কনডর পাসা’ গানটির প্রবল বাণিজ্যিক সাফল্য কিন্তু উসকে দেয় তীব্র বিতর্ক। আমেরিকান শিল্পীরা হয়তো গানটির মাধ্যমে দরিদ্র, নিপীড়িত মানুষের প্রতি সংহতিই দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে একে দেখা হল, যেন ধনী আমেরিকানরা আন্দিজ়ের দরিদ্র মানুষদের সঙ্গীত-ঐতিহ্যকে লুণ্ঠন করেছে এবং মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছে, যার একটি পয়সাও ফেরত দেওয়া হয়নি আসল ‘মালিক’দের। এও যেন ঔপনিবেশিক দখলদারি। এবং ইউনেস্কোর মহাপরিচালককে লেখা বলিভিয়ার ১৯৭৩-এর চিঠিটি এ সবেরই এক রাজনৈতিক অভিব্যক্তি।
দেশ-বিদেশের লোকসংস্কৃতির সংরক্ষণ, প্রচার এবং বিস্তারের দিকগুলি নিয়ন্ত্রণ করা এই ঐতিহাসিক চিঠির একটা লক্ষ্য ছিল অবশ্যই। কিন্তু কোনও দেশের লোকসংস্কৃতিকে নিয়ে যাতে বিদেশিরা যথেচ্ছ ব্যবসা করে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা ছিল এর প্রধান উদ্দেশ্য। ইউনেস্কোর প্ল্যাটফর্মে অস্থাবর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা যদিও শুরু হয়েছিল এরও অর্ধশতাব্দী আগে, সেই ১৯২২ সালে। তবু, এ বার যেন নড়েচড়ে বসল ইউনেস্কো। আন্দিজ় অঞ্চলের বড় জাতের শকুন, এক লোকগানের আমেরিকান পুনর্নির্মাণের সুবিশাল বাণিজ্যিক সাফল্য এবং সে পটভূমিতে বলিভিয়ার ১৯৭৩-এর এক চিঠির কারণেই। মঞ্চটা প্রস্তুত হয়ে রইল এরও তিন দশক পরে ২০০৩-এ ইউনেস্কোর ‘কনভেনশন ফর সেফগার্ডিং দি ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’-এর জন্য। আর ২০০৮ থেকে শুরু হল এ-হেন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য-তালিকা তৈরি।
তালিকা আসলে দুটো। বড় তালিকাটি প্রতিনিধিত্বমূলক, এই সব ঐতিহ্যের বৈচিত্র প্রদর্শন করতে এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে এমন সাংস্কৃতিক চর্চা আর অভিব্যক্তির জন্য। আর ছোট তালিকাটা হল জরুরি সুরক্ষার প্রয়োজনে— যে সব সাংস্কৃতিক উপাদান বাঁচিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় এবং দেশগুলির জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজন, তাদের সমন্বয়ে গঠিত। ইউনেস্কোর তালিকায় সব মিলিয়ে এখন রয়েছে দুনিয়ার ৬০০টির কাছাকাছি অস্থাবর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। নানাবিধ আকর্ষণীয় সংস্কৃতির ঝলক এর মধ্যে। যেমন, ইন্দোনেশিয়ার ‘ওয়াইয়াং’ পুতুলনাচের থিয়েটার; বেলজিয়ামের ঘোড়ার পিঠে চড়ে চিংড়ি শিকার; কম্বোডিয়ার রয়্যাল ব্যালে; সিঙ্গাপুরের হকার সংস্কৃতি; বাংলাদেশের বাউল গান, জামদানি কাপড় বোনা, সিলেটের শীতলপাটি বোনা ইত্যাদি। তালিকায় এখনও পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ভারতের ১৪টি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ২০০৮ সালে কেরলের সংস্কৃত থিয়েটার ‘কুটিয়াট্টম’, বৈদিক স্তোত্রপাঠের ঐতিহ্য এবং ‘রামলীলা’— এই তিনটিকে দিয়ে যার যাত্রা শুরু। তার পর তালিকাভুক্ত হয় ২০০৯-এ গঢ়বাল হিমালয়ের ধর্মীয় আচারপূর্ণ থিয়েটার ‘রাম্মান’; ২০১০-এ পুরুলিয়ার ‘ছৌ’ নাচ, রাজস্থানের লোকসঙ্গীত-লোকনৃত্য ‘কালবেলিয়া’ আর কেরলের নৃত্যনাট্য ‘মুদিয়েট্টু’; ২০১২-তে লাদাখের বৌদ্ধ স্তোত্রপাঠ; ২০১৩-তে মণিপুরের ‘সঙ্কীর্তন’; ২০১৪-তে পঞ্জাবের জান্দিয়ালার থাথেরাদের ঐতিহ্যবাহী পিতল ও তামার পাত্র তৈরির কারুকাজ; ২০১৬-তে ইরানি নববর্ষ ‘নওরোজ়’ এবং ‘যোগা’; ২০১৭-তে ‘কুম্ভমেলা’ এবং ২০২১-এ ‘কলকাতার দুর্গাপুজো’। তাই এই তালিকাতে এক দিকে যেমন কুম্ভমেলা কিংবা দুর্গাপুজোর মতো মহোৎসব রয়েছে,তেমনই স্থান পেয়েছে বেশ কিছু কম-পরিচিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও। এ বছর অন্তর্ভুক্তির জন্য গুজরাতের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ‘গরবা’কে মনোনীত করেছে ভারত সরকার।
ইউনেস্কোর মতে, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অভিব্যক্তি, যা প্রবাহিত হয় আমাদের বংশধরদের কাছে। যেমন, মৌখিক ঐতিহ্য, পারফর্মিং আর্টস, সামাজিক অনুশীলন, আচার-অনুষ্ঠান, উৎসব অনুষ্ঠান, প্রকৃতি ও মহাবিশ্ব সম্পর্কিত জ্ঞানচর্চা, ঐতিহ্যগত কারুশিল্প উৎপাদন করার দক্ষতা।
বোঝাই যাচ্ছে, বিশ্বজনীন উত্তরাধিকারের তালিকায় ইউনেস্কোর অস্থাবর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া নিঃসন্দেহে এক বিশেষ সম্মান। এ এমন এক অনুমোদন যা জাতীয় সীমানা অতিক্রম করে প্রবাহিত হয় আন্তর্জাতিক দুনিয়ায়। মনোনয়ন, কাগজপত্র তৈরি এবং পক্ষ সমর্থনের একটি কঠোর প্রক্রিয়ায় বিচার করা হয় গুণাগুণ, এবং তারই সঙ্গে আধুনিকীকরণ এবং বিশ্বায়নের ঝাপটায় সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়গুলি যে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে, মূল্যায়ন করা হয় তারও।
কলকাতার দুর্গাপুজোর সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রভাব এমনিতেই প্রবল। এই পুজোর কালচার, যা আজকের রূপ নিয়েছে যুগসঞ্চিত প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে, তাকে অন্য কোনও পটভূমিতে অনুকরণ করা কঠিন শুধু নয়, অসম্ভবও। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি কতটা প্রভাব ফেলবে কলকাতার দুর্গাপুজোয়, তার উদ্দীপনায়, তার অর্থনৈতিক সম্ভাবনায়? আসলে দুর্গাপুজোকে নিয়ে সামাজিক উদ্দীপনা এতটাই যে তাতে চট করে নতুন কোনও বিশিষ্ট সংযোজন ঘটানো সম্ভব নয়। কোভিডের কালবেলা ছাপিয়ে, অর্থনৈতিক ধাক্কাকে যথাসম্ভব অতিক্রম করে নতুন উদ্যমে যে আবার জনগণেশের ঢল নামবে রাস্তায়, সে এক রকম নিশ্চিত।
পুজোর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও বাঁধন-ছাড়া। ব্রাজিলের ‘রিয়ো কার্নিভাল’, জার্মানির মিউনিখের বিয়ার উৎসব ‘অক্টোবরফেস্ট’, স্পেনের পাম্পলোনার ষাঁড়ের দৌড়ের ‘সান ফারমিন’ কিংবা জাপানের বাৎসরিক চেরিফুল ফোটার উৎসব ‘হানামি’র মতো যে কোনও বচ্ছরকার উচ্ছ্বাস সমৃদ্ধ করে সেই নির্দিষ্ট স্থানের অর্থনীতিকে। ‘কলকাতায় দুর্গাপুজো’ও তার ব্যতিক্রম নয়।
ইউনেস্কোর নয়াদিল্লির পরিচালক আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, এই স্বীকৃতি উৎসাহিত করবে সংশ্লিষ্ট কারিগর, ডিজ়াইনার, শিল্পী এবং বৃহৎ মাপের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সংগঠক, পর্যটক এবং দর্শনার্থী... সবাইকে। ঐতিহ্যগত ভাবে দুর্গাপুজো অনেককেই তাঁদের প্রায় সারা বছরের জীবিকা উপার্জনের সুযোগ করে দেয়। প্রতিমানির্মাতা, আলোকশিল্পী, প্যান্ডেল ডেকরেটর্স, থিম শিল্পী, ঢাকী, অজস্র পণ্যবিক্রেতা, এমনকি রাস্তার বেলুনওয়ালাকেও। বিভিন্ন রাস্তায় রঙিন ও বিষয়ভিত্তিক অর্থাৎ ‘থিম’সমৃদ্ধ প্যান্ডেল, আলোয় মোড়া রাস্তাগুলিতে লক্ষ লক্ষ লোকের পদযাত্রা— এই সব ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বা সামাজিক উদ্দীপনা বিকাশের খুব একটা অবকাশ নেই। পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে দুর্গাপুজোর অপরিসীম গুরুত্ব সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব না হলেও অ্যাসোচ্যাম-এর একটি বহু-উদ্ধৃত ২০১৩-র সমীক্ষার রিপোর্ট অবশ্যই উল্লেখ্য, যেখানে দুর্গাপুজোর অর্থনীতির পরিমাণ সে সময়ে অনুমান করা হয়েছিল প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা, যার আনুমানিক বার্ষিক বৃদ্ধির হার প্রায় ৩৫ শতাংশ। বৃদ্ধির এই বিপুল হার অবশ্যই দীর্ঘকালীন মেয়াদে ধ্রুবক নয়। এর মাঝে ভয়ঙ্কর অতিমারি ওলট-পালট করে দিয়েছে জীবনযাপনের স্পন্দন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাম্প্রতিক গবেষণা-রিপোর্টে দুর্গাপুজোকে চালিত করে এমন দশটি সৃজনশীল শিল্পের উপর গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, কোভিড-পূর্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গে ২০১৯-এ পুজোর সময় তৈরি হয়েছিল প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকার ‘সৃজনশীল অর্থনীতি’। পুজোর সম্পূর্ণ অর্থনীতি অবশ্য অজানা, এবং তা এর চেয়ে অনেক বড়। আসলে পুজোর অর্থনীতি ব্যাপ্ত সারা বছর ধরে। সব মিলিয়ে যার আনুমানিক আকার কয়েক লক্ষ কোটি টাকা হওয়াও হয়তো সম্ভব।
অনাবাসী বাঙালির পুজোয় ঘরে ফেরা কিংবা বাঙালির পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার অভ্যাসও আজকের নয়। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি বাঙালির পুজো-ভ্রমণকে বিশেষ প্রভাবিত করবে না। দুর্গাপুজোয় সত্যিকারের যদি অভাব কোনও কিছুর থাকে তা হল, অবাঙালি এবং বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকদের। আসলে পুজোর যে রূপ, তার যে শোভা আর চাকচিক্য, তাতে অতি সহজেই হয়তো এর হয়ে ওঠা উচিত ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাৎসরিক পথ-উৎসব বা স্ট্রিট ফেস্টিভ্যাল। তা হলে সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিতে সহজেই জুটত আরও বেশি অক্সিজেন। উদাহরণস্বরূপ বলা চলে, মিউনিখের অক্টোবরফেস্ট প্রতি বছর আকর্ষণ করে ৭০ লাখের বেশি পর্যটককে। ২০১৮-র কার্নিভালে রিয়ো ডি জেনেইরোতে হাজির হয়েছেন ১৫ লক্ষেরও বেশি পর্যটক, যাঁদের প্রায় অর্ধেকই বিদেশি। এই পর্যটকরা তাঁদের ভ্রমণকালে হোটেল, বেড়ানো এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিপুল খরচ করে সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করে তোলেন। প্রতি বসন্তেই যেমন ইয়েন হয়ে ওঠে গোলাপি, যেন চেরির রঙে রাঙা। আনুমানিক প্রায় ৬ কোটি ৩০ লাখ লোক প্রতি বছর হানামির সময় চেরি ফুলের রংমিলান্তি দেখতে হাজির হন জাপানে। নিজস্ব শৈলীতে অনন্য কলকাতার দুর্গাপুজোও এক কার্নিভাল, রঙে রূপে অনবদ্য। বহু দিন ধরেই। এতে সম্পৃক্ত অমিত সম্ভাবনা। তার সুর আর সৌরভ আবিশ্ব শুধু ছড়িয়ে দেওয়ার অপেক্ষা। ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক স্বীকৃতি এই সম্ভাবনার দুয়ারকে আর একটু প্রশস্ত করেছে। তবে সেটাই যথেষ্ট নয়। দুর্গাপুজোর আড়ম্বরকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে তাকে রৌপ্যচক্রে পরিণত করতে চাই পরিকাঠামোর সার্বিক উন্নয়ন ও সদিচ্ছা।
ইউনেস্কোর অস্থাবর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্তি প্রসঙ্গে বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটি অব ইকনমিক স্টাডিজ়-এর তুদরাখ পেত্রোনালা-র ২০১৬ সালের একটি গবেষণাপত্রের কথা উল্লেখ করতেই হবে। অস্থাবর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করা অর্থনীতির এক মূল্যবান উৎস, বলেছেন পেত্রোনালা। কারণ তারা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে সেতু তৈরি করে, জোগান দেয় ধারাবাহিকতার। পরিবর্তন ও অতিক্রম করার মতো অভিজ্ঞতা দিয়ে বদলায় সমাজের কাঠামো।
ইউনেস্কোর তালিকায় অন্তর্ভুক্তি কি দুর্গাপুজোর অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করবে, আকর্ষণ করবে আরও বেশি পর্যটক? উৎসাহিত করবে আরও পর্যটক-বান্ধব পরিকাঠামো তৈরি করতে? এমনটা হতেই পারে। কিন্তু সেটা এক দিনের কাজ নয়। অদূর ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি কলকাতার পুজোতেও কোনও অতিরিক্ত অর্থনৈতিক অক্সিজেন এনে দিতে পারলেই এর সার্থকতা। বাকিটুকু তো দুর্গাপুজোয় বরাবরই ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy