অপালা আত্রেয়ী। ঋগ্বেদ-সংহিতার অষ্টম মণ্ডলের ৯১তম কবিতাটি অত্রির কন্যা অপালার। অপালার কবিতা একটি কিশোরী কন্যার কাহিনি। প্রাচীন কাহিনিসূত্রগুলি বলে চর্মরোগে আক্রান্ত অপালা তার বাবার কুটিরে থাকত, এক দিন জল আনতে গিয়ে সে কুড়িয়ে পায় এক টুকরো সোমলতা। সেটি হাতে নিয়ে সে ভাবে, ইন্দ্রের জন্যে আমি এটিকে পিষে রস নিষ্কাশন করব। বৈদিক আর্যদের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যজ্ঞ হল সোমযাগ, অনেক তার উপচার, অনেক নিয়মকানুন। একটি ছোট মেয়ে কেমন করে একা একা সোমরস দিয়ে ইন্দ্রের উদ্দেশে যাগ করবে— এই প্রশ্নের এক বিচিত্র উত্তর এই কবিতায় ধরা আছে। মেয়েটি তার কুড়িয়ে পাওয়া সোমলতা নিজেই মুখে পুরে চিবোতে শুরু করল। যজ্ঞে সোমলতা পেষা হয় দু’টি পাথরের মধ্যে, বেদের মন্ত্রে বার বার এসেছে পাথরে সোম পেষার তীব্র ঘর্ষণ-শব্দের কথা— এই শব্দ আকর্ষণ করে ইন্দ্রকে, টেনে আনে যজ্ঞভূমিতে। ইন্দ্র বাড়ি বাড়ি খুঁজে দেখছিলেন কোথাও সোম পেষা হচ্ছে কি না, অপালার দাঁতে সোম পেষার আওয়াজ শুনে ইন্দ্র এসে উপস্থিত হলেন। একাকী মেয়েটিকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন কোথায় সোমলতা পেষা হচ্ছে। অপালা জানাল তার মুখে, ইন্দ্র চাইলে তার মুখ থেকেই সোমপান করতে পারেন। ইন্দ্র অপালার আহ্বানে তার মুখ থেকে পান করেন সোমরস। অপালা উচ্চারণ করে এক আশ্চর্য কবিতা। যার বাংলা মানে, ‘আমরা জানতে চাই তোমাকে, (কিন্তু) বুঝতে পারি না তো পুরোপুরি। ধীরে, খুব ধীরে, ও সোম, তুমি ইন্দ্রের জন্যে বইতে থাকো।’ নানা সংশয় আর দ্বিধা পেরিয়ে বিবাহ-বিমুখ অপালা ইন্দ্রের সঙ্গে মিলিত হয়। শস্য, ছাতু, পিঠে আর স্তুতিগান সহযোগে অপালা আপ্যায়ন করে তার দেবতাকে। সন্তুষ্ট ইন্দ্রের কাছে সে তিনটি বর চায়— ইন্দ্র, তুমি তিনটি জায়গায় কেশ বা শস্য গজিয়ে দাও। আমার বাবার মস্তকে, বাবারই যবের খেতে এবং আমার উদরের নীচে, ঊরুসন্ধিতে। তৃতীয় প্রার্থনাটি আজকের সময়ে একটু অন্য রকম লাগতে পারে, কিন্তু শরীরের কথা বলতে কখনওই সঙ্কোচে ভোগেননি ঋগ্বেদের নারী-কবিরা।
কবিতার শেষ মন্ত্রে জানা যায় ইন্দ্র অপালাকে তিন বার, যথাক্রমে রথের চাকার, গরুর গাড়ির চাকার এবং জোয়ালের মধ্যবর্তী ছিদ্র দিয়ে টেনে বার করে তাকে সূর্যের মতো উজ্জ্বল ত্বক দেন।
ঋগ্বেদ-সংহিতার (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ শতক) দশটি অধ্যায় বা মণ্ডল, সেখানে ১০২৮টি কবিতার মধ্যে প্রায় একত্রিশটি সম্পূর্ণ অথবা আংশিক ভাবে নারীদের রচনা, এমনটাই পারম্পরিক মত। যদিও আধুনিক পণ্ডিতদের বিচারে এই একত্রিশ জনের মধ্যে বেশির ভাগই রক্তমাংসের নারী নয়, তারা স্ত্রীলিঙ্গ জড় পদার্থ অথবা বিমূর্ত ভাববাচক শব্দ। কারণ, মন্ত্রটি যাঁর মুখে উচ্চারিত বলে পরম্পরাক্রমে স্বীকৃত, তিনিই মন্ত্রের ঋষি বা কবি — ‘যস্য বাক্যং স ঋষিঃ’ — যাঁর বাক্য তিনিই ঋষি। তার ফলে বিপাশা ও শতদ্রু নদী, রাত্রি, মেধা, দক্ষিণা, এদেরকেও বিভিন্ন মন্ত্রের বক্তা হিসেবে পরম্পরা স্বীকার করে বলে এঁরা ঋগ্বেদের নারী-ঋষির মান্যতা পেয়েছেন। কিন্তু এঁদের বাদ দিলেও যে কয়েকজন সত্যিকারের মানুষীর দেখা সেখানে মেলে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অপালা আত্রেয়ী।
অপালার কবিতা আকারে বেশি বড় নয়, মাত্র সাতটি মন্ত্র বা স্তবক রয়েছে সেখানে, অথচ হাজার হাজার বছর ধরে ঋগ্বেদের গবেষকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে চলেছে সেটি। এই কবিতার দেবতা হলেন ইন্দ্র। এখানে বলে রাখা ভাল যে ঋগ্বেদের কবিতাগুলিকে বলে ‘সূক্ত’, সু উক্ত অর্থাৎ, যা সুন্দর ভাবে বলা হয়েছে।
একটি সূক্তে থাকতে পারে এক বা বহু মন্ত্র, যেমন একটি কবিতায় থাকতে পারে এক বা একাধিক স্তবক বা ‘ভার্স’। মন্ত্রগুলিতে যে বিষয়ের কথা বলা হয়, সেই বিষয়টিই সে মন্ত্রের দেবতা। মন্ত্রে ইন্দ্র বা বরুণের কথা থাকলে তাঁরা যেমন সেখানে দেবতা, তেমনই নদী, রাত্রি বা ব্যাঙের কথা যদি মন্ত্রে থাকে তবে তারাই সেখানে দেবতা।
অতি প্রাচীন কালেই এই কবিতাটি নিয়ে বিতর্কের শুরু। ঋগ্বেদের এই কবিতাটির একটি গদ্য বিবরণ, কিঞ্চিৎ রকমফের সমেত, পাওয়া যায় জৈমিনীয় ব্রাহ্মণে (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ শতক)। সেখানে বলা হয়েছে আত্রেয়ী অপালার ত্বক ছিল তিলের মতো ছিটছিট ফুসকুড়িতে ভরা, এর থেকে মুক্তি পেতে সে ঋগ্বেদের ওই কবিতাটি উচ্চারণ করে এবং তাতে সুর (সাম) দিয়ে গায়। এই অপালা ঘাটে স্নান করতে গিয়ে একটি সোমলতা কুড়িয়ে পায়, এর পরের ঘটনা ঋগ্বেদের কাহিনির মতোই, শুধু শেষটা একটু আলাদা, অপালাকে ইন্দ্র যখন তিন বার তিনটি ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে পরিস্রুত করেন তখন সে যথাক্রমে তিনটি প্রাণীতে পরিণত হয়, প্রথমে একটি গোধা বা গোসাপে, তার পরে একটি কৃকলাস বা গিরগিটিতে এবং শেষকালে একটি সংশ্লিষ্টিকাতে। এই শেষ প্রাণীটি ঠিক কী, তা নিয়ে সংশয় আছে। আনন্দ কুমারস্বামীর মতে এটি আসলে অপালারই বিশেষণ, এর মানে, যে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আদর করা যায়। এই ভাবে ইন্দ্র অপালাকে সূর্যের মতো ত্বক দিলেন, আর তার রূপ হল সব রূপের মধ্যে কল্যাণতম, বলছে জৈমিনীয় ব্রাহ্মণ। সেই সঙ্গে এও বলছে, অপালার এই সামটি আসলে ইচ্ছেপূরণের গান, যে ইচ্ছে নিয়ে এই গান যে গাইবে, সে ইচ্ছেই তার পূর্ণ হবে— যৎকাম এবৈতেন সাম্না স্তুতে সমস্মৈ স কাম ঋধ্যতে।
মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে শৌনক রচনা করেন ‘বৃহদ্দেবতা’। এই গ্রন্থে ঋগ্বেদের প্রতিটি সূক্তের সব দেবতাদের সম্পর্কে নানা পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। অপালার সূক্তের প্রেক্ষাপট হিসেবে জৈমিনীয় ব্রাহ্মণের গল্পটিই প্রায় হুবহু সেখানে বলা হয়েছে, শুধু শেষটা ছাড়া— ইন্দ্র অপালাকে তিন বার তিনটি ছিদ্রপথের মধ্য দিয়ে টেনে বার করলে সে তিনটি নির্মোক (ছাল বা খোলস) ত্যাগ করে, সে তিনটি প্রাণী, যথাক্রমে শল্যক (শজারু), গোধা আর কৃকলাসে পরিণত হয়।
বৃহদ্দেবতা এ-ও জানাচ্ছে যে যাস্ক ও ভাগুরি এই কবিতাটিকে ‘ইতিহাস’ (প্রাচীন কাহিনি) আখ্যা দিয়েছেন। এই ‘ইতিহাস’ কত প্রাচীন তা গবেষণার বিষয়, কারণ ইন্দো-ইউরোপীয় বহু জাতির প্রাচীন উপকথায় এ রকম অসুন্দর প্রাণীর খোলসের নীচে সুন্দর মানুষের প্রকাশ হওয়ার গল্প পাওয়া যায়। উদাহরণ ইউক্রেনের উপকথা ‘ব্যাঙ রাজকন্যা’, যার তুল্য গল্প ইটালীয়, জার্মান ও গ্রিক উপকথায় মেলে। গ্রিম ভাইদের ‘ব্যাঙ রাজপুত্র’ গল্পটি, বাঙালির চিরচেনা দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ‘বুদ্ধু-ভুতুম’ অথবা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘বানর রাজপুত্র’ গল্পও এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে।
দশম শতকের ঋগ্বেদভাষ্যকার বেঙ্কটমাধব এই সূক্তের চতুর্থ মন্ত্রের ব্যাখ্যা করার সময় মন্তব্য করেছেন, অপালা নাকি একটি বিবাহিত মেয়ে, চর্মরোগের জন্য যাকে তার স্বামী পরিত্যাগ করেছিল। বৃহদ্দেবতার দ্বাদশ শতকের ভাষ্যকার ষড়গুরুশিষ্যও প্রায় একই কথা বলেছেন। ঋগ্বেদের সর্বপ্রধান ভাষ্যকার সায়ণাচার্য চতুর্দশ শতকে লেখা তাঁর ভাষ্যে অধুনালুপ্ত শাট্যায়ন ব্রাহ্মণ থেকে এই কাহিনিটি উদ্ধৃত করেছেন। সেখানে সায়ণ সম্ভবত নিজের মন্তব্য যোগ করে বলেছেন, স্বামীপরিত্যক্তা অপালা ইন্দ্রকে নিজের মুখ থেকে সোমপান করান এবং গর্বিত হন এই ভেবে যে স্বামী পরিত্যাগ করলেও ইন্দ্র আমাকে গ্রহণ করেছেন। ভাষ্যকারদের অপালাকে স্বামীপরিত্যক্তা বলে ধরে নেওয়ার কারণ তার কবিতায় ‘পতিদ্বিষ’— এই শব্দটির ভুল ব্যাখ্যা— এখানে শব্দটির সঠিক মানে ‘পতি যাকে বিদ্বেষ করে’ নয়, বরং ‘যে (মেয়ে) পতিকে বিদ্বেষ করে’ অর্থাৎ এক কথায় বিবাহবিমুখ। অপালা বিয়ে করতেই চায়নি।
অপালার কবিতার শেষ মন্ত্রটি প্রাচীন কাল থেকেই বিয়ের কনেকে স্নান করানোর সময়ে উচ্চারণ করা হত। অথর্ববেদে বিবাহসূক্তে বধূর স্নানের প্রসঙ্গে এই মন্ত্রটির উল্লেখ আছে। বেদ-পরবর্তী গৃহ্যসূত্রে কনের স্নানপ্রসঙ্গে এই মন্ত্রের প্রয়োগ কী ভাবে করতে হত তার বিশদ উল্লেখ আছে। মানব-গৃহ্যসূত্র জানাচ্ছে কনেকে একটি গাড়ির জোয়ালের বাঁ দিকের ছিদ্রের নীচে বসিয়ে জোয়ালের ডান দিকের ছিদ্রের গজালটি খুলে ফেলে সেখানে একটুকরো সোনা রেখে সেই ছিদ্রটি দিয়ে কনের গায়ে জল ঢালতে হবে অপালা-সূক্তের শেষ মন্ত্রটি বলতে বলতে। এতে কনেকে পবিত্র করার সঙ্গে সঙ্গে তাকে সোনার মতো উজ্জ্বল ত্বক দেওয়া হয় বলে মনে করা হত।
আধুনিক পণ্ডিতদের মধ্যেও অপালা ও তার কবিতাটি নিয়ে আগ্রহ প্রবল। ১৮৮৫ সালে জার্মান ভারততত্ত্ববিদ হেরমান ওল্ডেনবার্গ থেকে শুরু করে ফন শ্রোয়েডার, কার্ল গেল্ডনার থেকে আনন্দ কুমারস্বামী, ক্ষেত্রেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৭৬), হান্স পিটার শ্মিড (১৯৮৭), অনেকেই অপালার কবিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত ও বর্তমানে সবচেয়ে মান্য ঋগ্বেদের ইংরেজি অনুবাদক স্টেফানি জেমিসন ও জোয়েল ব্রেরেটো অবধি অপালার কবিতাটি এড়িয়ে যেতে পারেননি। সমস্ত গবেষকের আলোচনা ঘুরেফিরে কিন্তু কয়েকটি বিষয়ের উপরেই কেন্দ্রীভূত হয়েছে। অপালা বিবাহিত না কি কুমারী কন্যা, তার ত্বকরোগটি আসলে ঠিক কী, তার এই কবিতায় কি কোনও বয়ঃসন্ধিকালীন ব্রতের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না কি এই কবিতাটি উর্বরতা-অর্চনার (ফার্টিলিটি কাল্ট) উদাহরণ।
ক্ষেত্রেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর আলোচনায় (স্টাডিজ় ইন বেদিক অ্যান্ড ইন্দো-ইরানিয়ান লিটারেচার, বারাণসী, ১৯৭৬) বেশ চিত্তাকর্ষক একটি মত উপস্থাপন করেছেন। তাঁর মতে অপালা প্রাচীন বৈদিকযুগের সেই নারীদের প্রতিনিধি যাঁরা বিয়ের পরিপন্থী ছিলেন এবং ইন্দ্রদেবকে নিজের স্বামী বলে মনে করতেন। অপালার এই কবিতাটি ভারতে পরবর্তী ভক্তিযুগের সেই মরমিয়া পদগুলির পূর্বসূরি বলে ক্ষেত্রেশচন্দ্র মনে করেন, যেখানে দেবতাকে, বিশেষ করে কৃষ্ণকে, প্রেমিক তথা স্বামীরূপে দেখেছেন ভক্ত নারী এবং স্বামী হিসেবে কোনও মানুষকে গ্রহণে থেকেছেন অনিচ্ছুক, যেমন মীরাবাই। অপালার কবিতায় বহুবচনের ব্যবহার (ইন্দ্রেণ সঙ্গমামহৈ— ইন্দ্রের সঙ্গে যেন আমরা মিলিত হতে পারি) শুধু ক্ষেত্রেশচন্দ্রকেই নয়, আরও অন্য আধুনিক গবেষককেও এ ভাবেই ভাবিয়েছে। হান্স পিটার শ্মিড তাঁর বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন, অপালা ছিল একটি বয়ঃসন্ধির কুমারী, বিয়ে সম্পর্কে সন্দিহান ও অনিচ্ছুক। তার ত্বকদোষ আসলে বয়ঃসন্ধিকালীন ব্রণ। শ্মিডের মতে অপালার এই কবিতায় ফুটে উঠেছে প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় সভ্যতার হারিয়ে যাওয়া ‘পিউবার্টি রাইট’ বা যৌবনাভিষেকের ব্রত। বিয়ে অথবা যৌনসম্পর্ক নিয়ে এই বয়সি মেয়েদের যে ভীতি-কাতরতা থাকে তা থেকে মুক্তি পেতেই অপালা ও তার বয়সি মেয়েরা ইন্দ্রকে আরাধনা করত। আর ইন্দ্রও যে এই বয়সের মেয়েদের খোঁজে বাড়িতে বাড়িতে উঁকিঝুঁকি দিতেন, তা অপালার কবিতার দ্বিতীয় মন্ত্রেই
বলা আছে (অসৌ য এষি বীরকো গৃহং-গৃহং বিচাকশৎ)। ঋগ্বেদের আধুনিকতম অনুবাদক স্টেফানি জেমিসন এই আলোচনাকে ‘দ্য গ্রাউন্ডব্রেকিং ডিসকাশন’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, অপালার চর্মরোগ কুষ্ঠজাতীয় রোগ নয়। অথচ ভারতীয় ভাষ্যকারেরা অনেকেই অপালাকে রোগাক্রান্ত দেখিয়েছেন। হরদত্তের মতে অপালা শ্বেতকুষ্ঠ রোগগ্রস্ত ছিলেন।
স্টেফানি অবশ্য কুষ্ঠ-টুষ্ঠ নয়, বরং অপালার রোগটিকে কৈশোরোচিত ব্রণ বলেছেন। জৈমিনীয় ব্রাহ্মণের বর্ণনাও সে দিকেই ইঙ্গিত করে। ইন্দ্রের কাছে অপালার চাওয়া বর তিনটি বুঝিয়ে দেয় যে সে ছিল কুমারী, তাই তার বাবার শস্যক্ষেত্রের উর্বরতা সে প্রার্থনা করেছে, স্বামীর নয়।
অপালার সূক্তের নাটকীয়তা এবং লিরিকময়তা এই কবিতাটিকে হাজার হাজার বছর ধরে জনপ্রিয় রেখেছে। আমাদের বাংলা সাহিত্যেও তার ছাপ রয়েছে। কল্যাণী দত্ত তাঁর অল্পবয়সে অপালা আর ইন্দ্রের প্রেম নিয়ে একটি সাহসী ডায়ালগ লেখেন ‘সোমলতা’ নাম দিয়ে। অগ্রন্থিত লেখাটি তাঁর মৃত্যুর পরে ‘খাড়া বড়ি থোড়’ গ্রন্থে সঙ্কলিত হয়েছে। একটি অসুন্দর মেয়ের রূপান্তরের কাহিনিতে কুৎসিত মেয়েটিকেই তাঁর ভাল লেগেছিল, তাঁর নিজের ভাষায় “তার বঞ্চনার সঙ্গে নিজেকে হয়তো বা অজান্তে এক করেই ফেলেছিলুম।” সতীনাথ ভাদুড়ির লেখাতেও জায়গা করে নিয়েছে অপালার কাহিনি। ইংরেজি ১৯৬১ সাল, অর্থাৎ ১৩৬৮ বঙ্গাব্দের পূজাবার্ষিকী আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘স্বর্গের স্বাদ’ গল্পটি অপালা আর ইন্দ্রকে নিয়ে লেখা। অপালার মুখ থেকে ইন্দ্র যে সোমপান করেছিলেন সেইটিই ছিল চর্মরোগাক্রান্ত, সক্কলের দুচ্ছাই মেয়েটির কাছে স্বর্গের স্বাদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy