Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প
Bengali Literature

শিউলি

আগামী বছর সে উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। এখন তারা স্বাধীন হতে চাইছে। বাইরে কোথায় যাচ্ছে? কার সঙ্গে মেলামেশা করছে? তিনি জানেন না। জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘‘কী হবে তোমার জেনে?’’ যেন তাঁর প্রশ্ন করার অধিকার নেই!

ছবি: তারকনাথ মুখোপাধ্যায়

ছবি: তারকনাথ মুখোপাধ্যায়

গৌতম দে
শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০৫
Share: Save:

খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছেন প্রাণগোপালবাবু। কাউকে তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। বিশ্বাস করতে পারছেন না গিন্নিকে। এমনকি ছেলেমেয়েকেও। ছেলের বয়স তেইশ। বি-টেকের ফাইনাল ইয়ার চলছে। মেয়ের বয়স মোটে সতেরো। আগামী বছর সে উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। এখন তারা স্বাধীন হতে চাইছে। বাইরে কোথায় যাচ্ছে? কার সঙ্গে মেলামেশা করছে? তিনি জানেন না। জিজ্ঞেস করলে বলে, ‘‘কী হবে তোমার জেনে?’’ যেন তাঁর প্রশ্ন করার অধিকার নেই!

প্রথমে রেগে যেতেন। চিৎকার করে বলতেন, ‘‘এই কথার মানে কী!’’

অমনি গিন্নি ছেলেমেয়ের পক্ষ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। বলতেন, ‘‘ছাড়োই না! ও কলেজে যাচ্ছে আর ও কোচিংয়ে। হল তো? জানলে তো?’’

তবুও রাগ পড়ত না প্রাণগোপালবাবুর। আগুনঝরা চোখে তাকিয়ে থাকতেন গিন্নির দিকে। তার পর নিজের মনেই বিড়বিড় করতেন, ‘আচ্ছা, ওই যে ছেলেটি বন্ধুদের সঙ্গে দিঘায় গিয়ে মারা গেল কিংবা ওই যে মেয়েটিকে পাঁচ জন ছেলে মিলে...’

না, আর ভাবতে পারেন না। তবুও নানা ভাবনা মাথায় ভিড় করে আসে। শিহরিত হয়ে ওঠেন ক্ষণে ক্ষণে। আজকাল কত ঘটনাই না ঘটছে নিত্য দিন। দেখছেন। পড়ছেন। পড়তে পড়তে শিউরে উঠছেন। কী হচ্ছে এ সব? নিজেকেই বার বার প্রশ্ন করেন।

ইদানীং এই সব ভাবতে ভাবতে প্রাণগোপালবাবু কেমন অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়ছেন। তিনি নিজেও জানেন না, এর কারণটা কী। একটা ভয় যেন ক্রমাগত দানা বাঁধতে বাঁধতে বিরাট আকার নিচ্ছে। কিংবা বিরাট আকার নিতে নিতে তাকে যেন টপ করে গিলে ফেলতে চাইছে। স্পষ্ট বুঝতে পারছেন তিনি। দিন দিন ফালতু হয়ে যাচ্ছেন এই সংসারে। একদম ফালতু।

এখন সব কিছু থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন। ছেলেমেয়ে এবং গিন্নিকেও আজকাল এড়িয়ে এড়িয়ে যাচ্ছেন। কেন যাচ্ছেন, হয়তো তিনি নিজেও জানেন না। দু’-একটা কথা ছাড়া সারা দিন কোনও কথা হয় না কারও সঙ্গে। যত ক্ষণ বাড়িতে থাকেন চুপচাপ থাকেন। চলতে-ফিরতে অনর্থক ঘরের কোনও এক দেয়ালের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়েন। কেন পড়েন? তিনি নিজেও জানেন না। অজান্তেই তার পা জোড়া দেয়ালের কাছে এসে থেমে যায়।

পরিষ্কার কংক্রিটের সাদা দেয়ালটাকে দেখতে দেখতে ভাবতে থাকেন এমনই একটা গোটা দেয়াল তার শরীরের ভিতর আপনা আপনি গড়ে উঠেছে। কী ভাবে গড়ে উঠল? তিনি বুঝতে পারেন না। অথচ গড়ে উঠেছে। সেই দেয়ালটাকে এখন যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন। এমন সাদা ফ্যাটফেটে নয়। মনে হয় অনেক পুরনো। বহু বছরের পুরনো। শ্যাওলায় ভরা। ভাঙাচোরা। পানদোক্তা খাওয়া দাঁতের মতো ইটগুলো। যেন তাঁর দিকেই দুঃখী- দুঃখী মুখে তাকিয়ে আছে।

তিনি যেন এমনই একটা আস্ত দেয়াল সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন এখন। আশ্চর্য লাগে তাঁর। এ কী করে সম্ভব! তিনি চলেছেন। সেই দেয়ালও চলেছে। গুটিগুটি পায়ে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন তিনি।
ঠোঁট জোড়া আজকাল অজান্তেই নড়ে। কী বলছেন? তিনি নিজেও বুঝতে পারেন না। রাস্তায় চেনা পরিচিত কাউকে দেখতে পেলে অমনি দেয়ালটা দুম করে তাঁর চোখের সামনে সটান দাঁড়িয়ে পড়ে। আড়াল করে। যাচ্চলে!

‘‘কী দাদা, চিনতে পারছেন না? আমি বটু... বটুকেশ্বর...!
প্রাণগোপালবাবু সেই দেয়ালের পাশ দিয়ে ভয়ে ভয়ে উঁকি মেরে বলেন, ‘‘আপনাকে তো আমি ঠিক চিনতে পারছি না!’’
‘‘সে কী! আমি আবার কবে থেকে আপনি হলাম!’’ বটুকেশ্বর দু’হাতে মাথার চুল দু’পাশে ঠেলে ফস করে শ্বাস ফেলে আবারও বলে, ‘‘আপনি তো চিরটাকাল আমাকে তুমি করে বলে এসেছেন। আমি কত ছোট আপনার থেকে! আমার যে ভীষণ লজ্জা করছে!’’
‘‘লজ্জা কেন ভাই! আমি তো আপনাকে চিনতেই পারলাম না।’’
‘‘আমি তো আপনাকে চিনতে পেরেছি দাদা।’’
‘‘তাতে কী হল?’’
‘‘আপনার নাম প্রাণগোপাল ঘড়ুই, তাই তো!’’
‘‘হ্যাঁ, লোকে তো তাই বলে।’’
‘‘আপনার শ্বশুরবাড়ি হচ্ছে সেই ইসলামপুর। তাই তো?’’
‘‘একদম ঠিক।’’
‘‘আপনার একটি ছেলে, একটিই মেয়ে।’’
‘‘এখনও পর্যন্ত সব ঠিক ঠিক বলছেন।’’
‘‘তাও চিনতে পারছেন না?’’
‘‘না, মোটেও না।’’
‘‘যাহ বাবা!’’

প্রাণগোপালবাবু সুট করে সরে পড়েন। আর প্রশ্নের সুযোগ দেন না। হনহন করে সামনের দিকে হেঁটে যান। সে দিকে থম মেরে তাকিয়ে থাকেন বটুকেশ্বর হাতি। ভুরুজোড়া কুঁচকে যায়। ব্যাপারটা কী হল! চেনাজানা মানুষ মুহূর্তে অচেনা হয়ে গেল!

বাঁ দিকের পথ ধরলে বাজার। প্রাণগোপালবাবু ভাবেন, বাজারের পথ ধরবেন কি না। নিশ্চয়ই অনেক পরিচিত মানুষজন থাকবে। এই সময় অনেকেই বাজারে যাচ্ছে। বেলা তো বিশেষ হয়নি। সকাল ন’টা-টটা হবে হয়তো। অনেকের হাতে বাজারের ব্যাগ লটপট করছে। কেউ আবার মোবাইল কানে চলেছে। আবার কেউ বাজার থেকে ফিরছে। তিনি কিসের জন্য বেরিয়েছেন, জানেন না। গিন্নি সকােল কোনও নোটিশ দেননি।

বাজারের ব্যাগে আলু-পটল-ঝিঙে-মুলো দু’হাতে নিয়ে বগলাচরণ হাটুই একেবারে প্রাণগোপালবাবুর মুখোমুখি। তিনি চিনতেই পারলেন না। কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন।
‘‘কী রে প্রাণ, এখন কোথায় চললি?’’
‘‘কে ডাকছে আমায়?’’ উল্টে প্রাণগোপালবাবু প্রশ্ন করেন।
‘‘আমি রে... আমি!’’
‘‘আমিটা কে?’’
‘‘আমি বগলাচরণ। তোর বাল্যবন্ধু। চিনতে পারছিস না?’’
‘‘এই নামে আমার কোনও বন্ধুই নেই।’’
‘‘সে কী রে! কী বলছিস তুই!’’
‘‘ঠিকই বলছি।’’
‘‘পাশাপাশি একই পাড়ায় এত কাল আছি! একই সঙ্গে স্কুল-কলেজে পড়েছি। আর তুই কি না আমায় চিনতে পারছিস না!’’ বগলাচরণ অবাক হয়ে এক নিঃশ্বাসে অতগুলো কথা একসঙ্গে বলে ফেলে।
‘না, পারছি না,’’ প্রাণগোপালবাবু পাশ কাটানোর চেষ্টা করেন।
‘‘তোর মাথা খারাপ হল না কি!’’
‘‘আপনার মাথা খারাপ হয়েছে।’’
‘‘যাহ বাবা! আমাকে আপনি বলছিস!’’ বগলাচরণ প্রাণগোপালের নীল জামার বাঁ হাতের হাতা চেপে ধরেন। তার পর বলেন, ‘‘আজ রাতে তোর বাড়ি যাব। থাকবি তো?’’
‘‘আমার কোনও বাড়ি নেই।’’
‘‘সে কী রে!’’ বগলাচরণের খুদে খুদে চোখ জোড়া আরও বড় হয়ে ওঠে মুহূর্তে। তার পর ফস করে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তা হলে কার বাড়িতে এত দিন আছিস, শুনি?’’
‘‘আপনার বাজে কথা শোনার মতো সময় নেই আমার। আমি চললাম,’’ বলেই প্রাণগোপালবাবু আর দাঁড়ান না। হনহন করে সামনের দিকে এগিয়ে যান। ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকেন বগলাচরণ। তার পর সাত-পাঁচ ভাবেন। বেচারার মাথা-টাথা খারাপ হল না কি! না কি গিন্নির সঙ্গে কোনও খটামটি! ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোনও প্রবলেম! এমন কী হল!

বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে পৌঁছন প্রাণগোপালবাবু। এটা সরকারি বাসস্ট্যান্ড। এই সময় সবাই অফিসযাত্রী। কেউ আবার স্কুল-কলেজের স্টুডেন্ট। এই বাসস্ট্যান্ড থেকেই তিনি অফিস যাওয়ার বাস ধরতেন রোজ।
অনায়াসে একটা ছোট্ট ভাতঘুম হয়ে যেত। জানালার ধারে বসার সিট না পেলে পরের বাসে যেতেন। তার পর ডালহৌসি পাড়ায় বাস ঢুকলেই ঘুম আপনা থেকেই ছুটে যেত।
কিছু ক্ষণের জন্য চেনা জায়গাটাকে অচেনা মনে হত। চোখের পাতা দ্রুত বেশ কয়েকবার পড়ার পর আবার চেনা জায়গায় ফিরে আসতে বেশি সময় নিত না। এ বার উঠতে হবে। বাস কচ্ছপের মতো এগোতে এগোতে শেষ বমিটুকু করবে রাস্তায়। তার পর বাবুঘাটের দিকে দৌড়বে।
লাইনের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে প্রাণগোপালবাবু এ দিক-সে দিক তাকান। আবার সেই অদৃশ্য দেয়ালটা ভেসে উঠছে। যে দিকে তাকাচ্ছেন সেই দিকেই ভাঙাচোরা পরিত্যক্ত দেয়াল। একেবারে খাড়াই উঠে গিয়েছে চোখের সামনে। গাড়িঘোড়া মানুষজনের আওয়াজ পাচ্ছেন অথচ দেখতে পাচ্ছেন না। রাস্তার ধারে রোজ যে বটগাছটাকে দেখতেন সেটাও বেমালুম উধাও। তা হলে কি কাটা পড়ল! না কি পরশুর ঝড়ে ভেঙে
পড়ে গেল!

অমনি পিছন থেকে কে এক জন জিজ্ঞেস করে, ‘‘কী দাদা, এই অসময়ে কোথায় চললেন? আপনি তো এগারোটার পাবলিক।’’
‘‘কে আপনি?’’ উল্টে প্রাণগোপালবাবু ছেলেটির দিকে কটমট করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন।
‘‘আমাকে চিনতে পারলেন না! আমি পলাশ, পাশের পাড়ায় থাকি! দীর্ঘ দিন আপনার সহযাত্রী ছিলাম!’’
‘‘দুঃখিত। আপনাকে চিনতে পারলাম না,’’ বলেই প্রাণগোপালবাবু মুখ ঘুরিয়ে নেন। তার পর একটা বড় রকমের শ্বাস ছাড়েন।
সামনের দিকে তাকান। তার সামনেই গা ঘেঁষে একটি ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে পিঠে একটা বিশাল ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাদা আর গোলাপি ফ্রক পরা। এটা বোধহয় স্কুল ইউনিফর্ম। মাথার পিছনে ছোট্ট দু’টো বিনুনি। বিনুনির ডগায় ছোট্ট দু’টো লাল ফুল ক্লিপ দিয়ে আঁটা। মাথা দোলাচ্ছে। বিনুনি দু’টোও দুলছে কাঠবেড়ালির লেজের মতো।

শৈশবের খেলার সঙ্গী বাবলিরও এমন দু’টো বিনুনি ছিল। টানটান করে বাঁধা থাকত। পিঠে সেফটিপিন আঁটা ফ্রক। একেবারে গেছো মেয়ে। সর্ব ক্ষণ মুখ চলছে। কাঠবেড়ালির মতো সুড়ুত-সুড়ুত করে এ-গাছে ও-গাছে উঠে যেত। তার পর কষটা পেয়ারা আর আম পেড়ে নিয়ে আসত। ছোট ছোট দাঁতে সেগুলো বেমালুম খেত। বাবলির দেওয়া কষটা পেয়ারা মুঠিতে ধরে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে প্রাণগোপাল বলতেন, ‘‘বেশি খাসনি, পেট ব্যথা করবে।’’

‘‘আমার করে না!’’ বলতে বলতে জামগাছে এক লাফে উঠে যেত বাবলি। তার পর চিৎকার করে জিজ্ঞেস করত, ‘‘তোর করে?’’
প্রাণগোপালবাবু কী বলবেন বুঝতে পারতেন না। হাঁ করে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকতেন সেই জামগাছের দিকে।

‘‘তা হলে খাস না। আমাকে দিয়ে দে,’’ বাবলির সুরেলা কণ্ঠ ভেসে আসত ওই জামগাছ থেকে। জামগাছের বলিষ্ঠ শরীরে বাবলিকে আঁতিপাঁতি করে খুঁজতেন প্রাণগোপাল। তার পর কোন ফাঁকে দৌড়ে এসে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে বাবলি বলত, ‘‘হাঁদার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চল খেলিগে...’’
ডাংগুলিতে এক সাঁট দুই সাঁট তিন সাঁট করে ধাঁই করে মারত। অনেক দূরে গিয়ে পড়ত পটলের মতো টুকরোটা। অঙ্কের হিসেব গুণিতকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ত। প্রত্যেক বার প্রাণগোপাল হেরে যেতেন। হেরেও আনন্দ পেতেন। সেই আনন্দের রেশ আজও কোথাও লুকিয়ে আছে তাঁর শরীরে। এখন টের পাচ্ছেন। এক বার তো হরিকাকার কপাল ফেটে গিয়েছিল। তার পর সে কী রক্তারক্তি কাণ্ড! বাবলি ভয়ে জড়সড়। তার পর হাউহাউ করে কান্না...

মেয়েটিও এ দিক-সে দিক ঘাড় ঘোরাচ্ছে। অনেকটা সেই কাঠবেড়ালির মতো। তার মানে বাবলির মতো খুব চঞ্চল। এই বয়সটা এমনই বুঝি! আবার সেই শৈশব। শৈশবের অদ্ভুত একটা গন্ধ নাকে এসে লাগছে। নারকেল তেলের গন্ধ কি! মায়ের গায়ে এমনই গন্ধ পেতেন। মা পুকুরঘাট থেকে যখন স্নান সেরে ভিজে কাপড়ে ঘরে আসতেন, তখন সারা ঘরময় এমন মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত। অনেক ক্ষণ থাকত। কী ভালই না লাগত! প্রাণ ভরে শ্বাস নিতেন।
প্রাণগোপালবাবু ছোট্ট মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার নাম কী?’’
‘‘শিউলি।’’
‘‘বাঃ! বেশ সুন্দর তো নামটা!’’
শিউলি ফিক করে হাসে। ওর কচি দাঁতগুলো যেন একরাশ শিউলি ফুল। তিনি দু’হাতের আঁজলায় ধরে আছেন। তার সুবাস পাচ্ছেন। ক্ষণিকের জন্য চোখ বন্ধ করেন। অমনি দেয়ালটা যেন ভাঙতে থাকে। স্পষ্ট বুঝতে পারছেন তিনি, কেউ যেন দুমদুম করে আঘাত করছে সেই দেয়ালে। ভাল লাগে তাঁর। যেন বিদ্যুতের ঝলক দেখতে পান ওইটুকু মুখে। তার পর আবারও জিজ্ঞেস করেন, ‘‘কোন ইশকুলে পড়ো?’’
‘‘জগদম্বা বালিকা বিদ্যালয়।’’
‘‘একা একা ইস্কুলে যাও?’’
‘‘হ্যাঁ।’’
‘‘তোমার ভয় করে না?’’
‘‘আমি তো ক্লাস ফাইভে পড়ি... ভয় কিসের!’’
‘‘হ্যাঁ, ঠিক কথা। ঠিক কথা। একদম খাঁটি কথা,’’ প্রাণগোপালবাবু প্রবল ভাবে মাথা নাড়ান। তার পর নিজের মনেই বিড়বিড় করেন, ‘‘তুমি আস্তে আস্তে দিদি হয়ে উঠছ... অনেক লেখাপড়া করবে, অনেক বড় হবে, চাকরি করবে... তাই না!’’
শিউলি মেয়েটি কী বুঝল কে জানে। সে প্রাণগোপালবাবুর দিকে তাকিয়ে আবারও ফিক করে হাসে। আবারও সেই সুবাস!

প্রাণগোপালবাবু ক্রমশ বেড়ে চলা লাইনের দিকে তাকান। কেন এই লাইনে দাঁড়িয়েছেন ভাবতে থাকেন। কোথায় যাবেন তিনি? তাঁর তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই! টপ করে লাইন থেকে বেরিয়ে পড়েন। আর তখনই আচমকা হোঁচট খান। পড়ে যেতে গিয়েও সামলে নেন নিজেকে। আশ্চর্য হন, নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে। অনেক ইট-ঝামার টুকরো-টাকরা গড়াগড়ি খাচ্ছে রাস্তায়। আশপাশে। শরীরের ভিতরের দেয়ালের অংশ কি! নিজের মনেই খানিক ক্ষণ বিড়বিড় করেন প্রাণগোপালবাবু। তার পর উৎফুল্ল মনে বাড়ির দিকে পা বাড়ান।

ছবি: তারকনাথ মুখোপাধ্যায়

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Literature Short Story Sheuli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy