Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প
bengali literature

ভ্রম সংশোধন

এই বর্ষার দিনে শখ করে কি কেউ লাস্ট ট্রেনে বাড়ি ফেরে! কিন্তু অফিস কামাই করার জো নেই। পান থেকে চুন খসলেই কর্তাদের গোঁসা। চাকরি যাওয়ার ভয়। এই বাজারে চাকরি গেলে বিষম বিপদ।

প্রসেনজিৎ সিংহ
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

বিভ্রাট বলে বিভ্রাট! একে বৃষ্টি বাদলা, তায় মাঝরাস্তায় ওভারহেডের তার ছিঁড়ে বিপত্তি। আর দু’টো স্টেশন পরেই নামব। কিন্তু ট্রেন চললে তো!

এই বর্ষার দিনে শখ করে কি কেউ লাস্ট ট্রেনে বাড়ি ফেরে! কিন্তু অফিস কামাই করার জো নেই। পান থেকে চুন খসলেই কর্তাদের গোঁসা। চাকরি যাওয়ার ভয়। এই বাজারে চাকরি গেলে বিষম বিপদ। অতএব চাক্কি পিসিং অ্যান্ড পিসিং। অফিসের কাজ মিটতে সাড়ে দশটা-এগারোটা। তার পর ল্যাজ তুলে দৌড়তে দৌড়তে লাস্ট ট্রেন।

তবে এই জার্নিটা মন্দ নয়। আমি, সোমনাথ ছাড়াও কয়েক জন ডেলি প্যাসেঞ্জার মিলে জম্পেশ আড্ডা হয়। আজ অবশ্য সোমনাথের পাত্তা নেই।

বিভিন্ন স্টেশনে একটু একটু করে ট্রেনটা খালি হচ্ছিল। কামরার এ দিকে আমি তখন একা। ও দিকের অংশটায় কেউ আছে কি না, দেখা যাচ্ছে না। কারণ মাঝখানে মেশিনরুম। ভাবছি ও দিকটায় গিয়ে এক বার দেখব কি না, হঠাৎ ট্রেনের বাইরে থেকে পরিচিত কণ্ঠস্বর। একটু নাটুকেই...

‘‘এই যে রজতবাবু! নেমে আসুন। আর ভূতের মতো বসে থেকে লাভ নেই। ওভারহেড ইন মাদার্স ভোগ। বসে থাকলে এ রাতে আর বাড়ি পৌঁছতে হবে না।’’
ব্যাটা সোমনাথ! এত রাতেও ঠাট্টাতামাশার মেজাজটা যায়নি। আমি হাঁক পাড়ি, ‘‘তুই কোথা থেকে উদয় হলি?’’

‘‘আগে নেমে আয়। বলছি।’’

ভাবলাম, ভালই হল। বৃষ্টিটাও ধরে গিয়েছে। দুই বন্ধু গপ্পো করতে করতে বাকিটা চলে যাব। যদিও রাস্তা অনেকটাই। ওর গন্তব্য সামনের স্টেশন। আমার তার পরেরটা।
দু’জনে হাঁটছি। সামনে আমাদের বয়সি এক যুবক। মনে হল, সে গতি কিছুটা কমিয়ে আমাদের সঙ্গ নিতে চাইছে। তা মন্দ কী! রাতবিরেতে একা মানুষ অমন একটু সঙ্গ চায়।

‘‘দাদা, কদ্দূর?’’
মনে হল, প্রশ্নটা আমাকেই করল। বললাম, ‘‘হরিরামপুর। আপনি?’’
‘‘আমিও।’’
সোমনাথের পিঠটা চাপড়ে বলি, ‘‘আমার এই বন্ধু অবশ্য বাসুদেবপুর যাবেন। ভালই হল। আপনি-আমি বাকি রাস্তা চলে যাব। তা এই ট্রেনেই কি ফেরা হয়?’’
‘‘না। আমি ফিরি বিকেল বিকেল।’’ বলল লোকটি।
‘‘কী করেন?’’
‘‘টিচারি। অনুভবপুর হাই স্কুল। এই বছরখানেক হল জয়েন করেছি।’’
‘‘আপনি?’’
‘‘আমি ‘খবর দৈনিক’ কাগজে কাজ করি।’’
‘‘অ। খবর দৈনিক! আপনাদের কাগজ খুব ভুলভাল খবর দেয়। আজই তো একটা…’’
‘‘কোনটা?’’ একটু বিরক্ত হই।
‘‘ওই যে বাসুদেবপুরের খবরটা। ‘রেললাইনে আত্মঘাতী’। ওটা আত্মহত্যা নয়। খুন।’’
‘‘দাঁড়ান, দাঁড়ান। মনে পড়েছে। অম্লান মজুমদার না কী যেন নাম...’’
‘‘হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন।’’
‘‘ভুল হতেই পারে। তবে এই ধরনের খবর সাধারণত পুলিশ যেমন জানায় সেই রকম ভাবেই...’’
‘‘পুলিশের আর কী! যা হোক একটা কিছু বলে দিলেই হল। ট্রেনের চাকায় মাথা কাটা গেলেই কি সেটা আত্মহত্যা হয়ে যায়? ওটা খুন। খুনটা করাও হয়েছে বিচিত্র উপায়ে।’’
‘‘বলেন কী! কী রকম?’’
‘‘ব্যাপারটা প্রেমঘটিত। বলতে কী, বাসুদেবপুরেরই ছেলেমেয়ে।’’
আমি সোমনাথকে মৃদু ঠেলা দিই। কিন্তু ওর কোনও তাপউত্তাপ নেই। ভাবখানা, কে কোথায় প্রেম করেছে তাতে ওর কী!
সকলের সব কিছুতে আগ্রহ থাকে না। তবে সোমনাথের নিস্পৃহ ভাবটা হজম হল না। নিজেও প্রেমটেম করে জানি। ট্রেনে আলোচনায় ও কোনও প্রসঙ্গ বাদ দেয় না। প্রতি কথায় যার ফোড়ন কাটা অভ্যেস সে চুপ থাকলে কি ভাল লাগে? যাই হোক ও যখন চুপচাপ, আমিই কথাবার্তা চালাই।
‘‘তার পর?’’
‘‘তার পর যা হয়। আজ ক্লাস কেটে সিনেমা, কাল বাড়িতে না বলে কোথাও ঘুরে আসা, রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়া, গঙ্গার ধারে একটু ঘনিষ্ঠতা। ভালই চলছিল বুঝলেন। কিন্তু সব ভালতেই আজকাল টাকা লাগে মশায়।’’
‘‘তা তো বটেই। তা ছাড়া আজকাল চাকরিবাকরির যা অবস্থা…’’
‘‘ঠিক ওখানেই আটকাল। শুধু প্রেম এক জিনিস। কিন্তু বিয়ে-থা দায়দায়িত্বের ব্যাপার। তার জন্য লাগে টাকা। সেটা আসবে কোথা থেকে? এ দিকে মেয়েরা পাশটাশ করলেই বাবারা উঠে পড়ে লাগে বিয়ে দিতে।’’
‘‘মেয়েটা তা হলে কী করল?’’
‘‘করার তো অনেক কিছুই ছিল। কিন্তু করল না। কারণ, সে সময় একটা ঘটনা ঘটল। ওদের পাশের পাড়ায় আর-একটি ছেলে ছিল। বেশ করিতকর্মা। বয়সে মেয়েটির চেয়ে বছর পাঁচেকের বড়ই হবে। একটা স্কুলে গেম্স টিচার। তার আবার মেয়েটিকে মনে ধরেছিল। চাকরি পেয়েই সে সরাসরি মেয়েটির বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিল।’’
লক্ষ করলাম, ওই অন্ধকারেও একটু ঝুঁকে সোমনাথের দিকে তাকিয়ে নিল ছেলেটা। কিন্তু সোমনাথ নিরুত্তাপ। তখন আমিই বলি, ‘‘শেষে ত্রিকোণ প্রেমের গল্প! তা শেষ পর্যন্ত কে জিতল? ডুয়েলে রফা হল না কি!’’
‘‘ডুয়েলের উপযোগী জোড়া বন্দুক পাওয়া গেল না যে। নইলে তা-ই হত।’’
চমৎকার একটা ভিজে ভিজে হাওয়া বইছে। চারিদিক শুনশান। শুধু সেই নৈঃশব্দ্যের ছন্দে তাল ঠুকছে আমাদের পায়ের শব্দ। আমাদের পায়ে পায়ে এগোয় গল্পও। লোকটা বলে, ‘‘মেয়েটার বাড়ি থেকে চাপ দিচ্ছিল বিয়ের জন্য। দু’-একটা পাত্রপক্ষ দেখেও গিয়েছিল। এরই মধ্যে সেই গেম্স টিচারের প্রস্তাবে মেয়েটির বাপ-মা হাতে চাঁদ পেলেন। এই বিয়েতে নিমরাজি অথচ নিরুপায় মেয়েটির সঙ্গে ছেলেটির মেলামেশা বাড়তে থাকল।’’
‘‘তার পর?’’
‘‘ব্যাপারটা প্রেমিকেরও কানে গেল। সে-ও সম্পর্কটাকে বাঁচানোর জন্য প্রথমে মেয়েটাকে চাপ দেয়। কাজ না হওয়ায় এক দিন দুম করে তাকেই খুনের হুমকি দিয়ে বসে। মেয়েটা প্রথমে বুঝিয়েসুজিয়ে প্রেমিককে নিরস্ত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু হুমকিতে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল। পুরো ঘটনাটাই হড়হড় করে বলে দিল।’’
‘‘কাকে? সেই গেম্স টিচারকে?’’
‘‘হ্যাঁ। হবু স্বামী মুগুরভাঁজা লোক। কারও হুমকির সামনে মাথা নোয়াবে কেন! তা ছাড়া মেয়েটির বাড়িতে বিয়ের ব্যাপারটা মেনে নেওয়ার পর থেকে একটা বাড়তি অধিকারবোধও জন্মাচ্ছিল। তা, সেটা অবশ্য অন্যায় কিছু নয়।’’
‘‘আর তাই মনে হল প্রেমিককে একটু কড়কে দেওয়া দরকার?’’ সোমনাথের মুখে এ বার বুলি ফুটেছে।

আশ্বস্ত হলাম। এত ক্ষণ মনে হচ্ছিল, সোমনাথ যেন অন্যমনস্ক। গল্পে মন নেই। আমি ওর কথার খেই ধরে লোকটাকে জিজ্ঞেস করি, ‘‘কোনও দিন মুখোমুখি হয়নি ওরা?’’
‘‘হবু স্বামীকে এক দিন প্রেমিকের ছবি দেখিয়েছিল মেয়েটা। টিচার দেখেই বুঝেছিল, ছেলেটা মুখচেনা। একই এলাকার। খোঁজ খবর শুরু করেছিল। তবে তার আগেই সুযোগ মিলে গেল।’’
‘‘আর আলাপের দিনই একেবারে মুখোমুখি মোকাবিলা!’’ ঠাট্টার সুরে সোমনাথ বলে।
লোকটি গলা খাঁকারি দিয়ে বলে, ‘‘হ্যাঁ। গত পরশু সেই মাস্টার হঠাৎ বাগে পায় প্রেমিককে। রাতে ট্রেন থেকে নেমে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল। মাস্টারও তার পিছু নেয়। লোকজন একটু পাতলা হতেই টিচার আচমকা গলা টিপে ধরে প্রেমিকের।’’

‘‘তার পর?’’ আমি উত্তেজিত।
‘‘দু’জনের প্রবল ধস্তাধস্তি। কিন্তু সে পারবে কেন?’’
‘‘খুব স্বাভাবিক। সে তো প্রেমিক পেটানোর জন্য জিমে গিয়ে মাসল বাগায়নি!’’ সোমনাথের টিপ্পনি।

‘‘‘হুঁ! তার হাতে পড়লে মেয়েটার হাল যা হত, তা তো বোঝাই যাচ্ছে! স্ত্রী-কে অন্য পুরুষের কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা করা প্রতিটি স্বামীর কর্তব্য। তাই না? আপনি কী বলেন?’’
প্রশ্নটা আমাকে। তবে আমার আগেই সোমনাথ ঝেঁঝে উঠে বলে, ‘‘তা হলে তো সব মেয়েকেই গুন্ডা বিয়ে করতে হয়।’’
‘‘তা মুরোদহীন প্রেমিকের চেয়ে সুউপায়ী গুন্ডা অনেক ভাল। আর স্কুলের টিচার গুন্ডা হবেন কেন?’’

আমার একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। সোমনাথ একটা অপরিচিত ছেলের সঙ্গে রাতদুপুরে তর্কে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ুক আমি চাই না। তাই ছেলেটাকে বলি, ‘‘এর পর কী হল তাই বলুন...’’
‘‘আর বলেন কেন? রেল লাইনের ধারে রীতিমতো মারপিট। সেই মাস্টারমশাইয়ের প্যাঁচে শেষ পর্যন্ত প্রেমিক কাত। গলাটা এমন জোরে টিপে ধরেছিল যে, শেষ অবধি আর ছাড়ানোর সময় পায়নি।’’
‘‘মানে? প্রেমিক মরে গেল!’’
‘‘হ্যাঁ।’’
‘‘মানে আপনি বলতে চান, এই প্রেমিকই হচ্ছেন অম্লান মজুমদার, যিনি খুন হয়েছেন। যার নাম ছাপা হয়েছে। তবে আসলে তিনি ট্রেনে কাটা পড়েননি। সেটাই খবরের কাগজে ভুল ছেপেছে, তাই তো?’’
‘‘না। কাটাই পড়েছেন অম্লান। তবে তিনি প্রেমিক নন। টিচার। মানে হবু স্বামী।’’
‘‘কে করল খুনটা? প্রেমিক তো মরেই গেল!’’
‘‘ওইখানেই তো টুইস্ট, মশাই!’’
‘‘মানে? খুন হল প্রেমিক, আর বডি উদ্ধার হল হবু স্বামীর? আপনি তো সব গুলিয়ে দিলেন দেখছি। ঠিক কী বলতে চাইছেন বলুন তো?’’

‘‘শুনুন তবে। মাস্টারের হাতের চাপে কিছু ক্ষণ ছটফট করে এক সময় প্রেমিকের শরীরটা স্থির হয়ে যায়। তাতে মাস্টার একটু ঘাবড়ে যান। থানাপুলিশ আছে তো! তাই বিভ্রান্ত করার জন্য প্রেমিকের মৃতদেহটা রেললাইনে শুইয়ে দেন তিনি। আর তার দু’-এক মিনিটের মধ্যেই দেখতে পান উল্টো দিক থেকে একটা ট্রেন আসছে ওই লাইনে। দেহটা কাটা পড়ল কি না, সেটা না দেখে নিশ্চিন্ত হতে পারছিলেন না। তাই সেই টিচার দাঁড়িয়েই থাকেন।’’
‘‘তার পর?’’
‘‘এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন। রেলের ইঞ্জিন মৃতদেহটার কাছাকাছি আসার ঠিক কয়েক মুহূর্ত আগে তিনি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেন। আর সেই সময়ই ঘটে যায় আশ্চর্য ঘটনা।’’
‘‘কী রকম?’’
‘‘আমি বলছি...’’ বলে সোমনাথ।
বুঝলাম ব্যাটা ক্লাইম্যাক্সেও ফক্কুড়ির তালে আছে। কিন্তু আমার উত্তেজনা তখন তুঙ্গে। আমি বলি, ‘‘তুই থাম না। বলতে দে ওঁকে।’’
‘‘আহা, আমি বলছি শোন না।’’
আমাকে আর ওই লোকটিকে এক রকম চুপ করিয়ে রেখেই সোমনাথ শুরু করে, ‘‘মৃতদেহটা হঠাৎ উঠে গিয়ে এক ঝটকায় সেই মাস্টারের শরীরটাকে দলাপাকানো কাগজের মতো ছুড়ে দেয় রেললাইনে। সেই গুন্ডামাস্টার কোনও কিছু ঠাহর করার আগেই আগে এক মুহূর্তের জন্য বুঝতে পারেন তিনি ট্রেনের চাকার তলায়। সেই অনুভূতি অবশ্য ওই সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্যই। আর তার পরেই তাঁর শরীর ছিন্নভিন্ন করে চলে যায় ট্রেনটা।’’
‘‘তার মানে, প্রেমিক কি আসলে মরেনি?’’ আমি অবাক হয়ে বলি। ভিতরটা ছটফট করতে থাকে আমার।
‘‘মরেনি মানে? নিশ্চয় মরেছে! আলবাত মরেছে! আর মরেছে বলেই তো অমন একটা কাণ্ড ঘটাতে পারল। নইলে প্যাংলা প্রেমিকের সাধ্য কী, ভীম পালোয়ান মাস্টারকে পরাস্ত করে!’’ বলে ওঠে লোকটি।
‘‘যাব্বাবা! এ তো দেখছি, লাভ স্টোরি থেকে ক্রাইম থ্রিলারের বুড়ি ছুঁয়ে ভূতের গল্পে এসে থামল! কিন্তু প্রেমিকের বডিটা তা হলে
গেল কোথায়?’’
‘‘ওটা গড়িয়ে যায় রেল লাইনের পাশে ঢালু পথে। ঢুকে যায় ঝোপের ভিতর। সেটা পুলিশ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি। কারণ পুলিশ জানেই না পরশু দিন দু’টো খুন হয়েছে। বাই দ্য ওয়ে, একটা পচা গন্ধ পাচ্ছেন?’’
‘‘হ্যাঁ!’’
‘‘ওখান থেকেই আসছে।’’
‘‘তার মানে? পরশু দিন এখানেই... দু’-দু’টো খুন! প্রেমিক আর শিক্ষক! বডি থেকে গন্ধ আসছে... কী বলছেন আপনি?’’
‘‘বিশ্বাস না হয় প্রেমিককেই জিজ্ঞেস করুন!’’ লোকটা কথাটা বলে সোমনাথের দিকে তাকিয়ে। তার মুখে একটা রহস্যময় হাসি।
আমি ঘামতে শুরু করেছি। গলাটা শুকিয়ে কাঠ। কোনও ক্রমে জিজ্ঞেস করি, ‘‘ওই মেয়েটির প্রেমিক তা হলে সোমনাথ?’’
‘‘হ্যাঁ, আপনার সহযাত্রী বন্ধু।’’

মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। তার মানে সেই গল্পের প্রেমিকই সোমনাথ? তারই পচা মৃতদেহের গন্ধ আসছে? কিন্তু তা কী করে হয়? ভয়ে ভয়ে আমার এ পাশে তাকাই।
কোথায় সোমনাথ? এ বার আমি চিৎকার করার চেষ্টা করি। আওয়াজ বেরয় না।
লোকটা বলে, ‘‘কী হল? এতেই ভয় পেয়ে গেলেন?’’ আবার সেই রহস্যের হাসি ওর মুখে।
আর ঠিক তখনই একটা অন্য সন্দেহ আমাকে তাড়া করতে শুরু করল। আমি চাই না সেই অনুমানটাও সত্যি হয়ে যাক। তীব্র কৌতূহলে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করি, ‘‘আপনি এত কথা জানলেন

কী করে?’’

‘‘ভেরি সিম্পল। আমি অম্লান মজুমদার। গেম্স টিচার।’’
আতঙ্কে আমার মুখ দিয়ে একটা অদ্ভুত শব্দ বেরিয়ে এল, যেটা নিজের কছেই অপরিচিত। রেললাইনের পাশ দিয়ে আমি দৌড়তে শুরু করি। যে ভাবেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে। পচা গন্ধে আমার বমি হয়ে যাবে এ বার। পিছন থেকে অম্লানের হাসি শুনতে পাই। ও বলছে, ‘‘খবরটা কিন্তু ভুল। মনে করে একটা ভ্রম সংশোধন দিয়ে দেবেন প্লিজ়…’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Literature Bengali Short Story Prasenjit Sinha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy