Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
ছোটগল্প
Bengali Short Story

গুপ্তচর

হঠাৎ একটা ভাবনা মাথায় ঝিলিক দিয়ে যায় কুহেলীর। গত রাতের ব্যাপারটা কি কৃষ্ণেন্দু জেনে গেছে কোনও ভাবে? অদ্ভুত এক আশঙ্কার শিহরন বয়ে যায় শরীরে।

ছবি: রৌদ্র মিত্র।

ছবি: রৌদ্র মিত্র।

সৌরভকুমার ভূঞ্যা
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৪ ০৯:০০
Share: Save:

মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ধড়মড়িয়ে উঠে বসে কুহেলী। সারা রাত জেগে কাটিয়েছে। বসে থাকতে থাকতে কখন যে চোখের পাতা লেগে গিয়েছিল বুঝতে পারেনি। ব্যস্ত হাতে মোবাইলটা বার করে। স্ক্রিনের উপর নামটা দেখে থমকে যায়।

এখন কৃষ্ণেন্দুর ফোন!

মাথার ভিতর এক সঙ্গে অনেকগুলো ভাবনা এসে হাজির হয়। সঙ্গে চাপা উদ্বেগ।

সবে সকাল সাড়ে সাতটা বাজে। এত সকালে কৃষ্ণেন্দু ফোন করছে কেন! এখন তো ওর ফোন করার কথা নয়। কাজ শেষে ফোন করবে বলেছিল। হঠাৎ এমন মন বদল! একটু অস্বস্তিতে পড়ে যায় কুহেলী।

টেক-স্টার লিমিটেড নামে একটি বড় কোম্পানিতে কাজ করে কৃষ্ণেন্দু। অফিস কলকাতায়। কলকাতা ছাড়া আরও তিনটি রাজ্যে কোম্পানির শাখা রয়েছে। একটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে ডিল হওয়ার কথা তাদের কোম্পানির। কৃষ্ণেন্দু কোম্পানির সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে তাকে বেঙ্গালুরু পাঠানো হয়েছে। সেখানে কোম্পানির অন্য তিন শাখার প্রতিনিধিরাও এসেছে। আজ সকাল ন’টায় তাদের প্রেজ়েন্টেশন। যার মূল দায়িত্ব কৃষ্ণেন্দুর উপর।

গতকাল বিকেল পাঁচটায় বেঙ্গালুরু পৌঁছে ফোন করেছিল কৃষ্ণেন্দু। রাতে অন্য তিন শাখার প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিল। তাই আর ফোন করতে পারেনি। কৃষ্ণেন্দু জানিয়েই রেখেছিল, হয়তো ফোন করার সময় হবে না। সে ক্ষেত্রে একেবারে প্রেজ়েন্টেশন পর্ব মেটার পরই ফোন করবে বলেছিল। তা হলে এ সময় ফোন কেন!

হঠাৎ একটা ভাবনা মাথায় ঝিলিক দিয়ে যায় কুহেলীর। গত রাতের ব্যাপারটা কি কৃষ্ণেন্দু জেনে গেছে কোনও ভাবে? অদ্ভুত এক আশঙ্কার শিহরন বয়ে যায় শরীরে। পরমুহূর্তেই থমকে যায়। কৃষ্ণেন্দুর তো জানার কথা নয়! খুব সাবধানে কাজকর্ম সেরেছে সে। যাতে কোনও ভাবে কৃষ্ণেন্দু জানতে না পারে।

তা হলে কি ব্যাপারটা আর গোপন নেই? কেউ কি জেনে ফেলেছে? সে-ই কি কৃষ্ণেন্দুকে জানিয়ে দিয়েছে? ভাবনাগুলো তার মাথায় জট পাকাতে থাকে। ফোনটা ধরবে কি না স্থির করতে পারে না। কিন্তু না ধরেই বা উপায় কী!

জোর একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সুস্থির করে কুহেলী। মনে মনে বলে, এ সব ভাবছে কেন সে? তার ভাবনা ভুল। গত রাতের ব্যাপারটা কোনও ভাবেই কৃষ্ণেন্দুর জানা সম্ভব নয়। এমনিই হয়তো ফোন করেছে। রাতে ফোন করতে পারেনি। তাই প্রেজ়েন্টেশনের আগে ফোন করেছে। এই কাজের সাফল্যের উপর তার প্রোমোশনের সম্ভাবনা জড়িয়ে আছে। সেই কারণে এমনিতেই একটু নার্ভাস ছিল সে। টেনশন কাটাতে ফোন করেছে হয়তো।

অশান্ত মনটাকে শান্ত করার চেষ্টা করে কুহেলী। ঠিক করে, কোনও ভাবেই মনের অস্থিরতা বা উদ্বেগ প্রকাশ করে ফেলা যাবে না। মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করে কৃষ্ণেন্দুর কলটা রিসিভ করে।

*****

ভোরবেলা মোবাইলে ছবিগুলো দেখে মাথা গরম হয়ে যায় কৃষ্ণেন্দুর। তার এক পরিচিত ছবিটা পাঠিয়েছে গতকাল রাত এগারোটার সময়। সে তখন ওই রেস্তরাঁর সামনে দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। রেস্তরাঁটার থেকে কয়েক পা এগিয়েই ওর কমপ্লেক্স। ভাগ্যিস! না হলে কৃষ্ণেন্দু ঘুণাক্ষরেও কিছু জানতেও পারত না।

রাতে মিটিং শেষ হতে বেশ দেরি হয়েছিল। তার পর সবাই মিলে এক সঙ্গে ড্রিঙ্ক করেছিল। মোবাইল আর খোলা হয়নি।

প্রথমে কৃষ্ণেন্দু ভেবে রেখেছিল প্রেজ়েন্টেশন পর্ব মিটে যাওয়ার পর কুহেলীকে ফোন করবে। প্রেজ়েন্টেশনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে। কিন্তু ছবিটা দেখার পর মাথা এতটাই গরম হয়ে যায় যে, কিছুতেই নিজেকে সুস্থির করতে পারে না। বুঝতে পারে, একটা হেস্তনেস্ত না করলে মাথা কিছুতেই শান্ত হবে না। তাই তখনই ফোন করেছে কুহেলীকে।

দীপঙ্করকে চেনে কৃষ্ণেন্দু। কুহেলীর এক সময়ের সহকর্মী। কুহেলীর সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভাল ছিল। কৃষ্ণেন্দুর প্রায়ই মনে হত, কাজের বাইরেও তাদের সম্পর্কটা যেন একটু বেশি বাড়াবাড়ি রকমের। মনের মধ্যে সন্দেহটা ক্রমশ দানা বাঁধছিল। একটা চাপা রাগ কাজ করত। দাম্পত্যকলহের সময় পরোক্ষ ভাবে এই সম্পর্কের ইঙ্গিত দিত সে। তবে প্রমাণের অভাবে সরাসরি কিছু বলতে পারেনি। সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।

মাস চারেক আগে দীপঙ্কর ট্রান্সফার নিয়ে ওদের বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে চলে যায়। মনে মনে একটু স্বস্তি পেলেও পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারেনি কৃষ্ণেন্দু। তার স্থির বিশ্বাস ছিল, ভিতরে ভিতরে দীপঙ্কেরর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে কুহেলীর। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সে রকম কোনও প্রমাণ পায়নি।

বহুকাঙ্ক্ষিত সেই প্রমাণ এখন তার মোবাইলে। কুহেলী আর দীপঙ্কর। মুখোমুখি বসে একটা রেস্তরাঁয়। তাও দিনের বেলায় নয়। রাত প্রায় এগারোটার সময়। এত রাতে কুহেলী বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়া করছে! ভাবতেই মাথাটা জ্বলে ওঠে। সে এখন বাইরে। তার মানে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিল কুহেলী। সে টের পায়নি।

রাগের মাঝেও মনে মনে হেসে ওঠে কৃষ্ণেন্দু। ভাবে, তার ভাগ্যটা ভাল। চেনাজানার মধ্যে কেউ এক জন কুহেলীর রাতের অভিসারের সাক্ষী থেকে গেছে। সে-ই গোপনে ছবি তুলে পাঠিয়েছে। এত দিন মনে সন্দেহ ছিল। এখন হাতে জ্বলন্ত প্রমাণ। কৃষ্ণেন্দু স্থির করে, আজ কুহেলীকে কিছুতেই ছাড়বে না।

*****

“কাল রাতে কোথায় ছিলে?” কঠোর স্বরে বলে কৃষ্ণেন্দু।

চমকে ওঠে কুহেলী। কৃষ্ণেন্দুর গলার স্বরটা কেমন অন্য রকম। তা হলে কি ব্যাপারটা গোপন নেই? কৃষ্ণেন্দু জেনে গেছে? কী বলবে সে? এই নিয়ে কথা বলা কি ঠিক হবে? একটু পরে কৃষ্ণেন্দুর প্রেজ়েন্টেশন। স্থির করে, এই মুহূর্তে কিছু বলবে না। একটু আমতা আমতা করে বলে, “কাল রাতে বাড়িতেই ছিলাম।”

“মিথ্যে কথা!” গর্জে ওঠে কৃষ্ণেন্দু, “তোমার লজ্জা করছে না মিথ্যে বলতে? ছিঃ!”

কুহেলী বিভ্রান্ত। কৃষ্ণেন্দুর গলার স্বর অদ্ভুত। বুঝতে পারে না সে কেন এমন বলছে। বিভ্রান্তিমাখা সুরে বলে, “তুমি কী বলতে চাইছ?”

“কী বলতে চাইছি, বুঝতে পারছ না?” কৃষ্ণেন্দুর ক্রোধের মাত্রা আরও বেড়ে ওঠে।

“সত্যিই তোমার কথা বুঝতে পারছি না।”

“মাঝরাতে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে রেস্তরাঁয় পার্টি করছ, আর এমন ভান করছ যেন কিছুই জানো না।”

চমকে ওঠে কুহেলী। তার ভাবনা জোর ধাক্কা খায়। এমন পরিস্থিতির জন্য একদম প্রস্তুত ছিল না সে। ভাবে, দীপঙ্করের ব্যাপারটা কৃষ্ণেন্দু জানল কেমন করে? তার ভাবনাচিন্তা তালগোল পাকিয়ে যেতে থাকে। কী জবাব দেবে ভেবে পায় না।

কৃষ্ণেন্দু ক্রুদ্ধ স্বরে বলে চলে, “তোমার লজ্জা করে না! আমি বাড়ি থাকব না জেনে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছিলে! যেই আমি বেরিয়ে এসেছি, অমনি সে এসে হাজির! তার পর ডেটিং!”

কুহেলীর মাথার মধ্যে তীব্র আলোড়ন শুরু হয়।

কৃষ্ণেন্দু আগের সুরে বলে চলে, “দীপঙ্করের সঙ্গে তোমার মাখামাখির কথা আমি অনেক দিন থেকে জানতাম। কিন্তু কিছু বলিনি। আসলে আমার কাছে প্রমাণ ছিল না।”

“এ সব তুমি কী বলছ আবোল তাবোল!” কুহেলীর মাথা ঘুরে ওঠে।

প্রচণ্ড রাগে গরগরে গলায় কৃষ্ণেন্দু বলে, “মোটেও আবোল তাবোল নয়। যা সত্যি তা-ই বলছি। ভেবেছিলাম সে অন্য জায়গায় চলে গেছে, এ বার নিশ্চয়ই তোমাদের লটরপটর বন্ধ হবে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে যে তোমাদের যোগাযোগ ছিল, বুঝতে পারিনি। আমি গতকাল থাকব না, তুমি আগে থেকে জানতে। সেই মতো তার সঙ্গে সমস্ত প্ল্যানিং করেছিলে। আমি বেরিয়ে এসেছি আর সেও এসে হাজির!” একটু থেমে ক্ষুব্ধ সুরে বলে, “তোমার লজ্জা করল না? বাড়িতে আমার বয়স্কা মা আছে। তাকে একা রেখে রাতদুপুরে তুমি বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে গেছ পার্টি করতে! ছিঃ, আমার ভাবতেও ঘেন্না করছে! কী ভেবেছিলে? আমি জানতে পারব না?” তার পর ব্যাপারটা আরও জোরদার করতে কিছুটা মিথ্যে জুড়ে বলে, “তোমার পিছনে আমার গুপ্তচর লাগানো আছে। তারা ঠিক আমাকে খবর পৌঁছে দিয়েছে।”

“তোমার মাথার ঠিক আছে?” অবিশ্বাস আর বিরক্তির সুরে বলে ফেলে কুহেলী।

“আমার মাথা ঠিকই আছে!” কৃষ্ণেন্দু বিদ্রুপের হাসি হেসে বলে, “ভেবো না আমি এমনি এমনি কথাগুলো বলছি। তোমার হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছি। খুলে দেখো। তার পর দেখো, তোমার মাথার ঠিক থাকে কি না!” বলেই পট করে ফোনটা কেটে দেয় কৃষ্ণেন্দু।

কুহেলীর মাথা ঘুরছিল। এমন কথা শুনবে, কল্পনাও করতে পারেনি। ব্যস্ত হাতে হোয়াটসঅ্যাপ খোলে। গোটা চারেক ছবি। ছবিগুলো দেখে প্রচণ্ড চমকে ওঠে। এই ছবি কৃষ্ণেন্দুর কাছে গেল কেমন করে! মনে মধ্যে ভেসে ওঠে গত রাতের ছবি।

*****

সন্ধ্যা তখন সাড়ে সাতটা। হঠাৎই কুহেলীর শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বুকের যন্ত্রণা, শ্বাসকষ্ট। ঘরে একা কুহেলী। প্রথমটা ভেবে পায় না কী করবে। পরিচিত এক ডাক্তারকে ফোন করে। তিনি দেরি না করে তখনই তাঁর নার্সিংহোমে আনতে বলেন। কুহেলীর এক পরিচিতের গাড়ি ছিল। ছেলেটা কাছাকাছি থাকে। তাকে ফোন করে। সৌভাগ্যক্রমে তাকে পেয়েও যায়। তার গাড়িতে করে শাশুড়িকে নার্সিংহোমে নিয়ে যায়। ঘণ্টাদুয়েক পর বুঝতে পারে, অসুস্থতা সাধারণ নয়। কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়েছে। নার্সিংহোমে ভর্তি করতে হয়।

তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এসেছিল কুহেলী। রাতে থাকার জন্য বেশ কিছু জিনিসপত্র দরকার। তাই আবার বাড়ি ফিরে আসে। জিনিসপত্র নিয়ে একটা টোটো ধরে। নার্সিংহোমের সামনের স্ট্যান্ডে সবে নেমেছে, এমন সময় দীপঙ্করের সঙ্গে দেখা। এমন সময় ওখানে তাকে দেখে বেশ অবাক হয়েছিল কুহেলী। জিজ্ঞেস করেছিল, “কী ব্যাপার, তুমি এ সময়! এখানে!”

“স্কুলে একটা দরকার ছিল। আজ দুপুরে এসেছি।”

“কী দরকার?”

“আমার পিএফ এখনও ট্রান্সফার হয়নি। সেটার ব্যাপারে এসেছিলাম। এত দূর রাস্তা। বাড়ি ফেরা সম্ভব নয়। তাই এখানে একটা হোটেলে উঠেছি। সন্ধেয় বিমানদার বাড়ি গিয়েছিলাম। সেখানে আড্ডা দিয়ে ফিরছি। কিন্তু তুমি এ সময় এখানে কেন?”

কুহেলী সংক্ষেপে সব জানায়। শুনে দীপঙ্করও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তার সঙ্গে নার্সিংহোমে আসে। বেশ কিছুটা সময় কাটায়। কথায় কথায় জানতে পারে, কুহেলীর খাওয়া হয়নি।

“চলো কিছু খেয়ে আসবে।”

“আমার একদম খেতে ইচ্ছে করছে না।”

“তা বললে চলে? না খেলে তুমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়বে। তখন সামলাবে কী করে?” দীপঙ্কর জোর করে, বলে, “আমিও খাইনি। চলো, আমার সঙ্গে কিছু একটু খেয়ে নেবে।”

কুহেলীর যেতে ইচ্ছে করছিল না। দীপঙ্কর তাকে জোর করে কাছাকাছি একটা রেস্তরাঁয় নিয়ে যায়। তাদের সেই খাওয়ার ছবি কেউ গোপনে তুলেছে। কৃষ্ণেন্দুর কথায় গুপ্তচর। তার মানে কৃষ্ণেন্দুর লোক তাকে প্রতিনিয়ত অনুসরণ করছে! সে এই ছবিগুলো তুলে কৃষ্ণেন্দুকে পাঠিয়েছে? আর কৃষ্ণেন্দু এখন এত নোংরা নোংরা কথা বলছে। এই কৃষ্ণেন্দুর মানসিকতা? খুব রাগ হয় তার কৃষ্ণেন্দুর উপর। ঘেন্নাও হয়।

*****

“কী, ছবি দেখা হল?” ফোন ধরতেই তির্যক সুরে বলে কৃষ্ণেন্দু।

কুহেলীর মাথার মধ্যে আগুন জ্বলছিল। কিন্তু সে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে। তার পর শান্ত কঠিন সুরে বলে, “হ্যাঁ ছবি দেখলাম। তোমাকেও নতুন করে চিনলাম।”

“তাই নাকি! দোষ করে আবার বড় বড় কথা বলছ! তোমার লজ্জা করে না!” তীব্র বিদ্রুপে কৃষ্ণেন্দুর গলা বিকৃত হয়ে যায়।

সে কথায় একটুও পাত্তা না দিয়ে কুহেলী কঠিন সুরে বলে, “তোমাকেও একটা খবর দিই। কারণ তোমাকে যে খবর দিয়েছে, সে পুরো খবর দেয়নি। কাল রাত দশটা নয়, সন্ধে সাড়ে সাতটায় আমি বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। সারা রাত বাইরেই কাটিয়েছি।”

“বাঃ! দারুণ!” শ্লেষ ঝরে পড়ে কৃষ্ণেন্দুর স্বরে।

“দাঁড়াও। এখনই প্রশংসা করতে শুরু করো না। কথা এখনও বাকি আছে। কোথায় রাত কাটিয়েছি সেটা শুনবে না?”

“নিশ্চয়ই কোনও পাঁচতারা হোটেলে ঘর বুক করা ছিল!”

“কোন হোটেল? সেই খবরটা তোমার গুপ্তচর দেয়নি? সে কী! এ কেমন গুপ্তচর! তা হলে আমিই বলি শোনো, কাল সারা রাত আমি নার্সিংহোমে কাটিয়েছি। এখনও সেখানেই বসে আছি। আজ তোমার গুরুত্বপূর্ণ প্রেজ়েন্টেশন আছে। তাই ঠিক করেছিলাম ব্যাপারটা তোমাকে জানাব না, তুমি দুশ্চিন্তা করবে, তোমার প্রেজ়েন্টেশনে তার খারাপ প্রভাব পড়বে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, সেটা আর চেপে লাভ নেই...” একটু থেমে বলে, “শোনো, তোমার মোবাইলেও আমি কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছি। কথা বলা শেষ হলে দেখে নিয়ো একটু কষ্ট করে।”

“কী ছবি?”

“তোমার মায়ের নার্সিংহোমে ভর্তি থাকার ছবি। সেখানেই ঘটনাচক্রে দীপঙ্করের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। সন্ধে থেকে কিছু খাওয়া হয়নি বলে দীপঙ্কর এক রকম জোর করে আমাকে কিছু খেতে যেতে
রাজি করিয়েছিল।”

“হোয়াট!” চমকে ওঠে কৃষ্ণেন্দু। উদ্বেগমাখা সুরে বলে, “মায়ের কী হয়েছে? কোথায় ভর্তি?”

“স্যরি, যেটুকু বলেছি তার বেশি আর কিছু বলতে পারছি না। তোমার সঙ্গে কথা বলতে ঘেন্না করছে। জেনে রাখো, আজকের পর তোমার সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ থাকবে না। তোমার ভাড়া করা গুপ্তচর, যারা তোমাকে আমার রাতের অভিসারের ছবি দিয়েছে, তাদের কাছ থেকে তোমার মায়ের শরীর-স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়ে নিয়ো।”

“শোনো কুহেলী...”

তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে কলটা কেটে দেয় কুহেলী।

ছবি: রৌদ্র মিত্র

অন্য বিষয়গুলি:

Short story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy