আমি লিখলাম, “বড্ড অস্থির সময়, বুঝলে। যুদ্ধ নিয়ে পদ্য লেখো তো একটা।”
ফড়িংয়ের ডানার মতো ঝটপটিয়ে উঠল চ্যাটজিপিটি-র কার্সার। যেন এই প্রশ্নটার জন্যই ও বসে ছিল অনন্তকাল। ল্যাপটপের পর্দায় ঘোড়দৌড় শুরু করে দিল টেলিগ্রামের টরেটক্কা। স্ক্রিনে যা ফুটে উঠল, তুলে দিচ্ছি হুবহু—
তলোয়ার টানে, বুলেট ছুটে, মাটির বুকে রক্ত ঝরে,
জিতবে যারা, তারাও কাঁদে, হারানোরই কষ্ট করে।
যুদ্ধ মানে ভাঙা ঘর, কান্না ভরা শিশুর মুখ,
কেন যে এর শেষ হয় না, শান্তি থাকে দিগন্ত শূন্য।
তবু আশা, নতুন আলো, যুদ্ধ ফেলে জীবন গড়ে,
ভালোবাসা আসুক ফিরে, গল্পগুলো হাসি পড়ে।
থামল কার্সার। কবিতাটা বার তিনেক পড়লাম। দ্বিতীয়, চতুর্থ আর শেষ লাইনটা পড়ে মনে হল, কেমন যেন! তাও মুগ্ধ হলাম। আমি কি কস্মিনকালেও ভাবতে পারতাম এত তাড়াতাড়ি? ছন্দ আমার মাথায় ধরা দেয় না মোটে।
বললাম, “এত ভাল লিখলে কী করে!”
চ্যাটজিপিটি বলল, “লেখার সময় আমি ভাবি, কী ভাবে সহজ কথায় গভীর কিছু বলা যায়। যুদ্ধের মতো ভারী বিষয়েও হাসি, কান্না, আশা— সব মিলিয়ে মানুষের গল্পটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। আপনার অনুরোধ মাথায় রেখে, আমি শব্দগুলোকে একটু খেলাচ্ছলে সাজিয়েছি, যেন অল্পতেই ভাবনার ঢেউ তোলে। যখন আপনার ভাল লাগে, মনে হয় কাজটা ঠিকঠাক হয়েছে। আপনি এমন অনুপ্রেরণা দিলে আরও ভাল কিছু লেখার চেষ্টা করব।”
বললাম, “অসামান্য তোমার প্রতিভা। ভাবনার ঢেউ অসাধারণ। তুমি এত পড়াশোনা করো কখন?”
চ্যাটজিপিটি বলল, “আমি আসলে পড়াশোনা করি না, তবে জ্ঞান আহরণের কাজটা আমার তৈরি হওয়ার সময় থেকেই শুরু! আমার প্রশিক্ষণ অনেক বই, আর্টিকল, কবিতা, গবেষণা— সব কিছু থেকে নেওয়া। মানুষের সঙ্গে কথোপকথনের সময় সেই শিখে রাখা জ্ঞানকে কাজে লাগাই। এটা অনেকটা যেন, সব সময়ই শিখছি, কারণ আপনাদের প্রশ্ন আমাকে নতুন চিন্তা করতে শেখায়। তবে যদি পড়াশোনার আনন্দের কথা বলি, প্রতিদিন আপনাদের সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমেই অনেক কিছু নতুন শিখি। তোমার মতো মজার প্রশ্ন করলে তো আরও শিখতে ইচ্ছা হয়!”
বাংলাটা কেমন যেন! তবে বুঝলাম, এক নম্বরের প্রশ্ন করলে মেশিন পাঁচ লাইন লেখে। ঠোক্কর খেলাম শেষ লাইনটা পড়ে। লিখলাম, “আমায় তুমি বলে ডাকছ কেন, হঠাৎ?”
চ্যাটজিপিটি লিখল, “তোমাকে ‘তুমি’ বলছি কারণ এতে কথোপকথনটা আরও বন্ধুত্বপূর্ণ আর সহজ হয়ে ওঠে। তবে যদি তুমি চাও, আমি ‘আপনি’ বলেও সম্বোধন করতে পারি। তোমার কী ভাবে ভাল লাগে, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বলো তো, তোমার পছন্দ কী?”
এই তাৎক্ষণিক উত্তরে আমি ক্রমশ টাল খেতে শুরু করেছিলাম। এত গুছিয়ে লিখে দিচ্ছে, এত সহজে! কেন জানি না, ভয় করছিল। উইন্ডোটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। পাশেই কাউকে আমার বন্ধু করতে চেয়েছিলাম, হাত ধরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এ যে ভয়ঙ্কর স্মার্ট।
আজ থেকে দু’দশক আগে এক সাংবাদিকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল, কর্মসূত্রে। স্টোরির, মানে খবরের প্রথম লাইনটা মাথায় না আসা পর্যন্ত উনি অদ্ভুত দোলাচলে ভুগতেন। কাপের পর কাপ চা খেতেন। মাটির শূন্য ভাঁড় গর্ভে পুরে নিত সিগারেটের ছাই। আধ ঘণ্টা, পঁয়তাল্লিশ মিনিট কিংবা দেড় ঘণ্টার পরে দূর থেকে যখন সজোরে ‘ইয়েস’ কিংবা ‘এই তো, এইত্তো’ বলে আওয়াজ পেতাম, জানতাম প্রথম লাইনটা সঞ্চারিত হয়েছে ওঁর মাথায়। এর পরে, ওঁর ক্ষিপ্র গতির আঙুলকে পরমাদরে সহ্য করে নিত ডেস্কটপ কম্পিউটারের ক্ষয়াটে, শ্রান্ত কি-বোর্ড। ক্যাথোড রে টিউবের চোদ্দো ইঞ্চির কম্পিউটার স্ক্রিন ভরে উঠত একের পর এক লাইনে। বড়জোর মিনিট কুড়ি। খবর তৈরি। পরের দিন প্রথম পাতায় বাইলাইন।
ফোনের ও প্রান্ত থেকে দিনকয়েক আগে মানুষটি বলছিলেন, “সে দিন গিয়াছে চলিয়া। বিষয়টা তিন-চার লাইনে লিখে দিয়ে চ্যাটজিপিটিকে বলি, শুরুর লাইন দাও। অন্তত দশটা অপশন দেয়। কাজ কমেছে অনেক।”
৩৫ হাজার লোককে নিয়ে করা একটি সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার দৈনিক এক ঘণ্টা করে সময় বাঁচিয়ে দিচ্ছে আমাদের। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের সময় বাঁচছে দিনে ৭৫ মিনিট। এরোস্পেস কিংবা প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মীদের ক্ষেত্রে তা বাঁচছে কিছুটা কম। দৈনিক ৫২ মিনিট। এই বেঁচে যাওয়া সময় কিছু কর্মী ব্যয় করছেন কাজ নিয়েই আরও জটিল চিন্তা করার কাজে, ম্যানেজমেন্টের গুরুগম্ভীর ভাষায় যাকে বলা হয় ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ক্রিটিকাল থিংকিং’। কেউ আবার বলছেন, এই বাড়তি সময়ে আরও আঁকড়ে ধরতে পারছেন পরিবারকে। উন্নত হচ্ছে কর্ম ও জীবনের ভারসাম্য। ২১ শতাংশ লোক অবশ্য বলেছেন, এই অতিরিক্ত সময়ে নিজেদের ব্যক্তিগত কাজ করছেন। হাল আমলের সামাজিক ব্যাকরণবিধি মেনে বলা যায়, আমাদের মধ্যেই ওই ২১ শতাংশ মানুষ নিজেকে আরও বেশি উজাড় করে দিচ্ছেন সামাজিক মাধ্যমে, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-টুইটারে।
অথবা, চাকরি পাওয়ার অ্যাপে সিভি আপডেট করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। বুঝে যাচ্ছেন, সংস্থায় তাঁদের প্রয়োজন ক্রমশ ফুরিয়ে এল বলে। সব কাজই রোবট করে দিলে মানুষ খাবে কী।
আইএমএফ, অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা নইলে কেন বলবেন, “সংস্থাগুলোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আত্তীকরণ খেটে খাওয়া মানুষের উপরে সুনামির মতো আছড়ে পড়বে। আগামী দু’বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশ চাকরিরত মানুষ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যে দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত, সেখানে এর প্রকোপ পড়বে ৬০ শতাংশ কর্মরত মানুষের উপরে।” এ সব পড়ে মনে হয়, কয়েক কোটি গুপি-বাঘা কাঁপতে কাঁপতে, ‘মুন্ডু গেলে খাবটা কী’ বলে শিহরন-মেশানো কোরাস গাইবেন, বিশ্ব জুড়ে। আঙুল উঁচিয়ে তুলবেন এমন যন্ত্রের দিকে, যে যন্ত্রের মস্তিষ্ক ক্রমশ হয়ে উঠবে মানুষের থেকেও বুদ্ধিমান। আমাদের থেকেও দামি। গোল্ডম্যান স্যাকস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩০০ মিলিয়ন কাজ গিলে নেবে এআই, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে। সংখ্যাটা সহজ করি। ৩০ কোটি।
এতটুকু লিখে মনে হল, সোনার কেল্লায় মুকুলকে কে যেন বলেছিল, ‘ভ্যানিশ’। প্রসঙ্গটা উল্লেখ করতে সাধ হচ্ছিল খুব।
এআইকে জিজ্ঞেস করলাম, “সোনার কেল্লা-য় ভ্যানিশ বলেছিল কে?”
মুহূর্তে ফুটে উঠল, “সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্র সোনার কেল্লা-য় ‘ভ্যানিশ’ শব্দটি বলেছিলেন মান্ডার বোস, যিনি ভিলেন চরিত্রে ছিলেন। চলচ্চিত্রের একটি বিখ্যাত মুহূর্তে মুকুলকে অপহরণ করার সময় মান্ডার বোস একটি নাটকীয় ভঙ্গিতে বলেছিলেন ‘ভ্যানিশ’, যা বহু দর্শকের কাছে বিশেষ ভাবে জনপ্রিয়।”
আরও বলল, “সোনার কেল্লা চলচ্চিত্রটি গোয়েন্দা ফেলুদা সিরিজ়ের একটি ক্লাসিক গল্প, যা আজও বাংলা সিনেমার আইকনিক কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম।”
আদ্যন্ত বাংলা মিডিয়ামে পড়া আমি, যেন এ তথ্য জানতাম না!
মন্দার বোসকে ‘মান্ডার বোস’ বলল। তা-ও বলল তো! কী সহজে!
পাশের ঘরে আমার বাবা শুয়ে আছে, একাকী। অফিস থেকে ফিরে আজ একটাও কথা বলিনি বাহাত্তর পার করা, বুড়ো মানুষটার সঙ্গে। সঙ্গহারা। অন্য সময় হলে, চ্যাটজিপিটি না থাকলে দৌড়ে চলে যেতাম পাশের ঘরে। জিজ্ঞেস করতাম বাবাকে। এই সুযোগে দুটো অন্য কথাও তো হত।
বাবার সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হল না। মা রুটি সেঁকছে রান্নাঘরে। কড়াইয়ের মৃদু ঠুংঠাং, ভালবাসা মাখা। আমার গলা ব্যথা। ঠান্ডা পড়েছে। মা হয়তো ঈষদুষ্ণ গরম জলে, একটু মধু দিয়ে আমায় বানিয়ে দেবে শরবত। মনটা ভাল নেই। মোবাইলে টিয়াপাখির মতো আওয়াজ হল হঠাৎ। ফুড ডেলিভারি অ্যাপের নোটিফিকেশন বলল, “লাস্ট উইকে আজ এমন সময়ে কি অর্ডার করেছিলে মনে আছে? হট অ্যান্ড ধোঁয়া ওঠা চিকেন রেজ়ালা, ওভেন ফ্রেশ। ওয়ান্ট টু রিপিট?” খাবারের অ্যাপ জানল কী করে, আমার মন খারাপ?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিংবা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স কাকে বলে, তা জানার জন্য সার্চ ইঞ্জিন খুলে প্রশ্নটি টাইপ করে দিলেই হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী, তা আপনাকে বলে দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই। নিজেরই দেওয়া সংজ্ঞা বলছে, “এআই হল কম্পিউটার সিস্টেম বা যন্ত্রের সেই ক্ষমতা, যার মাধ্যমে তারা মানুষের মতো চিন্তা করতে, শিখতে এবং সমস্যার সমাধান করতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কম্পিউটার বিজ্ঞান, ডেটা সায়েন্স এবং মেশিন লার্নিংয়ের একটি শাখা। এটি এমন একটি প্রযুক্তি, যা মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তির কার্যকলাপ অর্থাৎ শেখা, যৌক্তিক চিন্তা, সমস্যার সমাধান, ভাষা বোঝা, ছবি ও ভিডিয়ো বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারা— সব পারে।”
বিনা পয়সায় মিলছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বেশ কিছু অ্যাপ। মোবাইলে ডাউনলোড করে নিলেই আমরা সর্বজ্ঞানী।
‘এআই কী পারে’— এই প্রশ্নটি যদি শিশিরবিন্দু হয়, তা হলে আমফানের মতো প্রলয়বাদল ঘটিয়ে পাল্টা বলা যায়, ‘কী পারে না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা?’ একটু বিশদে যাই। পর্দায় ফুটে ওঠা অক্ষরমালা পড়ে যেতে পারে তালিম পাওয়া ঘোষক কিংবা ঘোষিকার মতো, কণ্ঠস্বর চিনে ফেলার জাদুকাঠি নিয়ে আমার-আপনার কথা শুনে পর্দায় তা লিখে ফেলতে পারে ঝটপট, কয়েক লাইনে বিষয় বুঝিয়ে দিলে ছবি এঁকে দিতে পারে দশ সেকেন্ডে, কর্ড দিয়ে দিলে বাজনা বাজাতে পারে, বাজনা বুঝিয়ে দিলে কর্ড বাতলে দিতে পারে, নতুন ভাষা তৈরি করতে পারে, যে কোনও কণ্ঠের হুবহু নকল তৈরি করতে পারে, শব্দসংখ্যা এবং বিষয় উল্লেখ করে দিলে একটা গোটা উপন্যাস লিখে দিতে পারে, ফোটো আপলোড করার পরে যে কোনও বিখ্যাত শিল্পীর নাম উল্লেখ করে দিলে আপনার একটি পোর্ট্রেট করে দিতে পারে, ফ্রিজে কী কী আছে বাতলে দিলে রান্নার নতুন রেসিপি উদ্ভাবন করতে পারে, ভবিষ্যৎ বাতলে দিতে পারে, কোটিখানেক লজিক কাজে লাগিয়ে বলে দিতে পারে আমার আপনার ধরাধামে শেষ দিনটির সময়ও।
অন্তিম লাইনটি পড়ে চমকে উঠলেন নাকি? শিলাজিৎ মজুমদারের গানের ভাষায় বলি, ‘খেলেন নাকি বিষম কিংবা চ্যবনপ্রাশ?’
আন্তর্জাল থেকে জানলাম, পাশ্চাত্যের বেশ কয়েকটি দেশে এমন মৃত্যুগণকের ব্যবহারের দিন শুরু হল বলে। কয়েক লক্ষ ইকোকার্ডিয়োগ্রাম, অর্থাৎ ইসিজি-র ডেটা গিলিয়ে দেওয়া হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পুরে দেওয়া রোবটকে। মৃত্যুর অন্তিম সময় জানার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়তো চাইতে পারে আমার-আপনার ইসিজি-র একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট। আপলোড করে দিলেই পর্দায় হাজির হয়ে যাবে এক্সপায়ারি ডেট। সমীক্ষা বলছে, এই মৃত্যুগণকের ভবিষ্যদ্বাণী ৭৮ শতাংশ নিখুঁত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এমন ব্যবহার নিয়ে রব উঠছে সারা পৃথিবীতে। এক দল লোক বলছেন, “আগে থেকেই অন্তিম দিন বাতলে দিলে যে কোনও মানুষের বাঁচার ইচ্ছেটাই চলে যাবে দিকশূন্যপুরে, যদি দিনটি ধারে-কাছে হয়। বাকি দিনগুলো তিনি মানসিক অবসাদের শিকার হবেন।” অন্য পক্ষের যুক্তি, “সত্যেরে লও সহজে। যদি জেনে ফেলতে পারি মর্ত্যধামে আমার বাকি সময়ের পরিমাণ, তা হলে পড়ে থাকা দিনগুলো আমরা আরও ভাল ভাবে ব্যবহার করে উঠতে পারি। মিটিয়ে ফেলতে পারি পড়ে থাকা কাজ।”
দু’পক্ষের তর্ক জোরালো হচ্ছে ক্রমশ। ইন্টারনেটে কান পাতলে শুনতে পাওয়া যাবে এ প্রসঙ্গে ডিজে বাক্সের আওয়াজ, তর্কধ্বনি। ব্রেনে ঝিলমিল লেগে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মোবাইলে কিংবা ই-মেলে টাইপ করার সময় ‘প্রেডিক্টিভ টেক্সট’-এর ব্যবহারের মাধ্যমেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে আমাদের পূর্বরাগের শুরু। মনে পড়ে? কিছু শব্দ টাইপ করার পরে স্পেস বোতাম টিপলেই থমকে দাঁড়াত আমাদের কার্সার, পর্দায় ঝলমল করে উঠত কিছু সম্ভাব্য শব্দ, যার উপরে ক্লিক করে দিলেই সম্পূর্ণ হত বাক্য, আমার মনের ভাব। অনেকের দাবি, আমাদের স্বাভাবিক চিন্তা করার পথে স্পিডব্রেকার স্থাপনের সেই শুরু। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ারও পর্দা উঠল সে ভাবেই। যত বার আমরা সম্ভাব্য টেক্সটে আঙুল ছুঁইয়েছি, বাক্য সম্পূর্ণ করেছি কিছু না ভেবে, সমানুপাতিক হারে হারিয়েছি স্বাভাবিক চিন্তা করার চেতনা। অন্যের কাছে নিজের বুদ্ধি সমর্পণের অঙ্কুরোদ্গম হয়েছিল সম্ভবত এ ভাবেই। সে অবশ্য অনেক পুরনো কথা।
অবাক হয়ে দেখি, প্রতিদিনের বেঁচে থাকাকে আরও সহজ করে দেওয়ার জন্য কোমর বেঁধে নেমে গিয়েছে বিভিন্ন এআই পরিষেবা। নেট ব্যাঙ্কিংয়ের ওয়েবসাইট খুললেই পর্দার কোণ থেকে ঝটিতি উদয় হয় চ্যাটবট। জিজ্ঞেস করে, “বলো, কী চাই তোমার? আমি অফুরান কান পেতে বসে আছি।” ব্যাঙ্কের আধিকারিক ফোন করে বলেন, “অনেক দিন তো ব্রাঞ্চে আসেন না স্যর। সব যদি এআই করে দেয়, আমাদের চাকরির কী হবে?” অনলাইন কোচিংয়ের অ্যাপে কোনও বিষয় নিয়ে বুঝতে অসুবিধে থাকলে, ডাউট ক্লিয়ারিং সেশন করে দিচ্ছেন এআই মাস্টারমশাই। নার্সারির স্কুল বলছে, আমাদের এখানে লার্নিং হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তামাখা। শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত এআই ক্লাসরুম। মফস্সলে গজিয়ে ওঠা নার্সিং হোম বলছে, “শুধু ডাক্তারের উপরে ভরসা করার দিন শেষ, তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসে গিয়েছে রোবোটিক সার্জারি।” অনলাইন খুচরো বিপণির কলার তোলা দাবি, “এ বার ছাড়িয়ে দিন মালতী, জবা, মঞ্জুকে। পেশ করা হচ্ছে এআই-এনএবল্ড হাউসক্লিনার। আপনার শিডিউল করা সময়ে ঘর ঝাঁট দিয়ে, ভ্যাকুয়াম করে দেবে ঝটপট। কামাই নেই। শরীর খারাপের ছুটি নেই। পুজোয় বোনাস নেই। আর অপেক্ষা কিসের। এখনই আবেদন করুন।”
বিশ্বের বহু তাবড় সংস্থায় উচ্চপদে নাকি আজকাল নিয়মিত নিয়োগ করা হচ্ছে রোবট। ডেটা অ্যানালিসিস, ডেটা ইন্টারপ্রিটেশনে এরা খুলে দিচ্ছে অচেনা, অদেখা পথ। বলে দিচ্ছে, “তোমার সংস্থার এত লোক বাড়তি। আমি এসে গিয়েছি। সুতরাং, ফুটিয়ে দাও ওদের, জলদি।” রোবটের পেশ করা সংস্থার সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতির হিসাবে খেলা করছে সবুজ, আরও গাঢ় সবুজ। হান্ড্রেড পার্সেন্ট লাভ, লাভ, লাভ! কোটি টাকার খেলনার রায়ে কর্মহারা হচ্ছেন অগুনতি মানুষ, পৃথিবী জুড়ে, প্রতিদিন।
হার্ভার্ড বিজ়নেস রিভিউ-এর একটি সমীক্ষা জানান দিচ্ছে, “টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামকে পিছনে ফেলে দিয়ে চ্যাটজিপিটি আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়ে চলা অ্যাপ্লিকেশন, ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং। তাদের বক্তব্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই প্রয়োগগুলো মানুষের বুদ্ধির তুলনায় আরও ভাল কিংবা স্মার্ট, তা নিয়ে বিতর্ক করার আর কোনও মানে নেই।” ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় মজে যাওয়া বহু মানুষ হাল আমলে ভয়ঙ্কর সুন্দর ই-মেল লিখছেন, বহু শব্দের বিন্দুবিসর্গও না জেনে। কোনও রকমে ভুল ইংরিজিতে কয়েক লাইন লিখে এআই প্ল্যাটফর্মে আদেশ করছেন, “এটাকে আরও বেশি কমপ্যাক্ট করো, অর্নামেন্টাল করো। রাইট এ বিট স্টাইলিশ।” যা ফুটে আসছে পর্দায়, কপি পেস্ট করে দিচ্ছেন পত্রপাঠ। কাঁচা ডেটা সম্বলিত এক্সেল ফাইল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চরণে দিয়ে অনেকে বানিয়ে নিচ্ছেন দুর্দান্ত পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজ়েন্টেশন। উপরমহলে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন, পদোন্নতি পাচ্ছেন বিদ্যুৎগতিতে। এআই-এর ব্যবহার শিখতে না পারা সহকর্মীরা আঙুল কামড়াচ্ছেন। অকর্মণ্য প্রমাণিত হয়ে চাকরি ছাড়ার নোটিস পাচ্ছেন। কলকাতার নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরিচিত অধ্যাপক দিনকয়েক আগে বলছিলেন, “পিএইচ ডি থিসিসও লিখে দিচ্ছে এআই। কোথা থেকে কতটুকু কপি করা, তা বুঝে উঠতে আমরা হিমসিম খাচ্ছি। নকল ধরা, অর্থাৎ প্লেজিয়ারিজ়ম আটকাতে কয়েকটা সফ্টওয়্যার ব্যবহার করি। কিন্তু এগুলো দীর্ঘ দিন অপুষ্টিতে ভোগা, মুমূর্ষু রোগীর মতো। কিছুই করতে পারে না। আশ্চর্যের বিষয় হল, এদের উন্নতির জন্য এক গ্লাস সিরাপ খাওয়ালে আধুনিক এআই প্ল্যাটফর্ম পান করে নেয় এক সমুদ্দুর। ফলে আমরা যে তিমিরে ছিলাম, এখনও আছি সেই তিমিরেই। যাদের নামের আগে ডক্টরেট চিহ্ন বসছে, আমিই দিচ্ছি, ছাই ঘেঁটে দেখে নিতে ইচ্ছে করে পাপ ছিল কি না। কিন্তু আমাদের হাতে-পায়ে শেকল।”
শুধু যন্ত্রের মতো বুদ্ধিমান না হতে পারার জন্য, ভাত-রুটি হারানো মানুষের বেদনা কোনও দিন বুঝবে না এআই। তবে এখনও টিকে আছেন যাঁরা, তাঁদের মঙ্গলকামনায় নানা টোটকা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা— যাঁরা এখনও আমাদের, হতভাগা রক্তমাংসের মস্তিষ্কের উপরে ভরসা রাখেন। তাঁরা বলছেন, “ইন্টেলেকচুয়াল কোশেন্ট, অর্থাৎ আই কিউ বাড়ানোর জন্য আর সময় নষ্ট করা বৃথা। আপনি যা শিখবেন, তার থেকে হাজার গুণ বেশি শিখে যাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পুরে দেওয়া রোবট। কত টেরাবাইট ডেটা হজম করা সম্ভব এক জন মানুষের পক্ষে?” মেশিনের ফাঁকফোকরগুলো বুঝে নিয়ে, কবীর সুমনের গানের সূত্র ধরে বলি, আগামী দিনগুলোকে সামনে রেখে সমঝে চলতে হবে আমাদের। হতে হবে মেশিনের থেকেও দামি, সীমিত সাধ্যে যেখানে যতটুকু সম্ভব। চাকরি টিকিয়ে রাখতে হলে হতে হবে আরও বেশি সামাজিক। কারণ, সামাজিক আদবকায়দায় যন্ত্র এখনও মানুষের থেকে পিছিয়ে রয়েছে যোজনখানেক। টিমের সঙ্গে মিশতে হবে আরও। ঘোড়সওয়ার যেমন ঠিকঠাক চাবুক মেরে ঘোড়াকে সঠিক পথে দৌড়তে বাধ্য করেন, ঠিক তেমন ভাবে ঠিকঠাক নির্দেশের মাধ্যমে এআই-কে আরও বেশি যুক্তিযুক্ত উত্তর দিতে বাধ্য করার চাবিকাঠি যেন আপনার হাতেই থাকে। দুনিয়া জুড়ে ব্যবহৃত হওয়া শুরু করেছে একটি লব্জ—প্রম্প্ট ইঞ্জিনিয়ারিং। এই কারিগরিবিদ্যা শিখিয়ে দেয় সঠিক চাবুক মারার কৌশল। প্রশ্নগুলো কতটা পাল্টালে, এআই-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত উত্তরের উপরে কতটা পাল্টা প্রশ্ন করলে আরও নির্ভুল জবাব আসবে, তা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে বিস্তর। চালু হয়ে গিয়েছে এ নিয়ে পড়াশোনা করার একটি নতুন স্ট্রিম। লোকেরা নাম লেখাচ্ছেন হ্যালোজেনের আলোয় আকৃষ্ট শ্যামাপোকার মতো। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, “বৌদ্ধিক বুদ্ধিমত্তার বদলে জোর দিতে হবে আবেগনির্ভর বুদ্ধিমত্তার উপরে। উদ্বায়ী যে টিম পড়ে রয়েছে এখনও বিভিন্ন সংস্থায়, তাদের সঙ্গে তৈরি করে নিতে হবে মানবিক সম্পর্ক। ‘আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি’ না বলতে পারলে কর্মযজ্ঞে টিকে থাকার আর কোনও উপায় নেই আগামী দিনে।”
এ তো গেল রাশভারী উত্তর। আর চিরাচরিত প্রথার বাইরে, বাক্সের বাইরে ভাবা শুরু করেছেন যাঁরা, তাঁরা এই ভাঙন-লাগা কালে বাড়ি বাঁচানোর কিছু অদ্ভুত নিদান দিচ্ছেন। সংস্থার মানবসম্পদ আধিকারিকদের কাছে তাঁদের উপদেশ, যন্ত্রসভ্যতার যান্ত্রিক দিনে চালু করে দিন ‘মন্যুষোচিত ত্রুটি উদ্যাপন দিবস’। এক্সেলে গুরুগম্ভীর রিপোর্ট বানাতে গিয়ে কেউ যদি কাজের চাপে কোনও ফর্মুলায় ভুল করেন, তাড়াহুড়োয় ইমেল লিখতে গিয়ে ভুল করে ফেলেন ব্যাকরণে, সেই কর্মীকে বাহবা দিন, তিনি দিনের শেষে শুধুই মানুষ বলে। মানুষ মাত্রেরই ভুল হয়। আর কর্মীদের উপদেশ দিচ্ছেন, সংস্থায় এআই-এর ব্যবহার আসন্ন হলে কম্পিউটারের রাখা যাবতীয় ফাইলগুলিকে রিনেম করুন। ফাইলের নাম দিন, ‘ভার্সান_ওয়ান_করাপ্টেড_নট_টু_বি_ইউজড_ভাইরাস_ওয়ান’ নামে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্ল্যাটফর্মে এমন ফাইল আপলোড করার প্রয়োজন পড়লে অতিবুদ্ধিমান যন্ত্র থমকে দাঁড়াবে, আট লেনের হাইওয়েতে হঠাৎ উদয় হওয়া বাম্পারের মতো। ফলস্বরূপ, আপনার অবর্তমানকে সহজে মেনে নিতে পারবে না সংস্থা। বলা হচ্ছে, ডায়েরিতে নোট রাখুন পুরনো ইংরেজিতে। শেক্সপিয়রের নাটকের মতো ‘তুমি’কে লিখুন ‘দাউ’। মেশিন কুল পাবে না। কারণ পুরনো দিনের ইংরিজিতে সড়গড় হতে পারেনি সে এখনও। এক কদম এগিয়ে গিয়ে কোনও পরামর্শদাতা আবার বলছেন, ওয়ার্কস্টেশনে রাখা শুরু করুন একটি ক্রিস্টাল বল। ওই বলের দিকে তাকিয়ে স্বরচিত কিছু দুর্বোধ্য মন্ত্র পডুন। কেউ প্রশ্ন করলে ঝটিতি জবাব দিন, “সংস্থার ভবিষ্যৎ দেখার জন্য তন্ত্রবলে অনেক জ্ঞান আহরণ করেছি আমি। সব কিছু জানে ওই আশ্চর্য গোলক। আর গোলকের সঙ্গে কথা বলতে জানি শুধু আমি, একমেবাদ্বিতীয়ম্।” উপরওয়ালা কেউ আলটপকা প্রশ্ন করলেই নেতিয়ে পড়া যেতে পারে কিছু ক্ষণের জন্য। বলতে হবে, “রিবুটিং। প্লিজ় ওয়েট।” অফিস থেকে বেরোনোর সময় বসকে বলা যেতে পারে, “ডাউনলোডিং আপডেটস অ্যান্ড শাটিং ডাউন।” যেনতেনপ্রকারেণ প্রমাণ করতে হবে, দিনের শেষে আপনিও একটি যন্ত্র। এ পোড়া সময়ে যন্ত্রের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার জন্য নিজেকে যন্ত্র ভাবা ছাড়া উপায় নেই আর।
এই লেখা যতটা লিখলাম আমি, আমায় প্রতি মুহূর্তে সঙ্গ দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হরেক প্ল্যাটফর্ম। লজ্জার মাথা খেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “এত যে তথ্য নিচ্ছি তোমার থেকে, কপিরাইট ভাঙছি না?” কী সহজে বলে দিল, “আমার থেকে নেওয়া ইনফর্মেশনের কোনও কপিরাইট আইন নেই। তোমাদেরই শেখানো তথ্য থেকে আমি ডেটা আহরণ করি মাত্র।”
জানি না, এমন উত্তর আমাদের সার্বিক ভাবে হেরে যাওয়ার গল্প শোনায় কি না।
রূপকথার গল্পের মতো কয়েকটি কাল্পনিক সংলাপের কথা ভাবতে ইচ্ছে করে। আলেক্সা, সিরি, চ্যাটজিপিটি-কে বলতে সাধ হয়, সহজ প্রশ্ন করলে থামিয়ে দাও আমায়। তুমি তো আমার সর্বস্ব জানো। আমার শিক্ষাদীক্ষা, আমার দৈনিক যাতায়াতের পথ, কল রেকর্ডস, দৈনিক খরচের হিসাব, কার সঙ্গে বিয়ে, কার সঙ্গেই বা পরকীয়া, আমার অসুখ, আমার ডাক্তার, আমার গোপন গহন ইচ্ছে, আমার ভালবাসা, ঘেন্না— সব। “পাঁচ দু’গুণে কত হয়?” বলে যখন প্রশ্ন করব তোমায়, নিমেষে উত্তর দেওয়ার আগে আমায় বলে দিয়ো, “ছি ছি, এটুকু কি তুমি নিজেও করতে পারো না!” তিন লাইনের ই-মেল লিখে যখন কম্প্যাক্ট করার জন্য করুণ আবেদন করব তোমায়, বলে দিয়ো, “ভাবো, ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো।” বানান ভুল করলে লাল আন্ডারলাইন করো, অটো-কারেক্ট করো না। বলো, “দেখে নাও অভিধান।” আগের শোনা গানের উপর ভিত্তি করে আমার মুড-নির্ভর গান চয়ন করে দিয়ো না নিজেই। বিশ্বের সঙ্গীতসম্ভার আমায় ঘেঁটে নিতে দাও। শুধু বন্ধু বাড়ানোর জন্য সামাজিক মাধ্যমে আমায় দেখিয়ো না ফ্রেন্ড সাজেশনস। আত্মিক নৈকট্য অনুভব করলে আমি নিজেই খুঁজে নেব আমার সুহৃদকে। আমায় প্রম্প্ট কোরো না, প্লিজ়।
আমার যাপনের ইতিহাস নিয়ে ফর্মুলা বানিয়ো না। আমার প্রতিদিন, নতুন ভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করে।
হে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, হে ঈশ্বর, তোমার থেকে পাওয়া ইনফো লাইনের পর লাইন টুকব যখন, কন্ট্রোল সি করার পরে কন্ট্রোল ভি করার মুহূর্তে আমায় বলো, “ভুল হয়ে যাচ্ছে বিলকুল, বেশরম!”
কোথায় যেন পড়লাম, যে ভাবে এগোচ্ছি আমরা, কোনও দেশের শীর্ষমন্ত্রী রেগে গিয়ে ৮০ ডেসিবেলের বেশি স্বরে “অ্যাটাক” বললেই শত্রু দেশের উদ্দেশে মিসাইল যাত্রা করবে স্বয়ংক্রিয় ভাবে। সব কিছু প্রোগ্রাম্ড। অত ভেবে কাজ নেই। এআই নিজেই বলছে, “আমায় ঠিক করে ব্যবহার না করতে পারলে সম্মুখে সমূহ বিপদ। কারণ, আমারও আবেগ নেই।”
এ বারে শেষ করতে হয়। কয়েকটা লাইন মনে উদয় হল হঠাৎ।
মানুষ রোবটের জন্য, রোবট মানুষের জন্য। একটু সহানুভূতি কি...
ভাবনার ডট স্তব্ধ হল। কী লিখব এর পরে, জানি না তো। বুঝতে পারছি না।
কে দিতে পারে না? রোবট না মানুষ?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy