ছবি: পিয়ালী বালা
পূর্বানুবৃত্তি: মিশুকদের বাড়িতে খবরের কাগজে রাধিয়া শ্রীবাস্তবের আত্মহত্যার খবর পায় কস্তুরী। তাকে অন্যমনস্ক দেখে প্রশ্ন করে মিশুক, কিন্তু কস্তুরী এড়িয়ে যায়। পাড়ার ক্লাবের পলাশকে ফোন করে সে আকিঞ্চনের গ্রেফতারির খবর পায়। উদ্বিগ্ন কস্তুরী মেয়ে মেহুলিকে ফোন করে। সে তখন প্রিন্সেপ ঘাটের দিকে যাচ্ছে। কেন যাচ্ছে, কার সঙ্গে যাচ্ছে কিছুই সে তার মাকে বলে না। কস্তুরী যে কিছু একটা লুকোচ্ছে, তা বুঝতে পেরে অভিমান করে মিশুক। অন্য দিকে, গঙ্গায় নৌকো চেপে বেড়াতে বেরোয় স্বর্ণেন্দু আর মেহুলি। মেহুলির বারবার মনে হয়, তার বাবা স্বর্ণেন্দুর মতো হলে কত ভাল হত। স্বর্ণেন্দুও মেহুলিকে আশ্রয় করে খুঁজে পায় তার নিজের মেয়ে পৌষালীকে।
নাছোড়বান্দা মেহুলি বলে, “বাপিকে ম্যানেজ করে নেব। আর মা? বাদ দাও।”
“পৌষালী।”
“বল।”
“মাকে নিয়ে তুই এত নীরব কেন? দুঃখ আছে। ঠিক কি না? আমাকে বলিস না। নদীকে বল। সব কষ্ট চলে যাবে, দেখিস।”
এর পর অনেক কথা, অনেক চোখের জল। নদী সব শোনে, নদী কষ্ট পায়। নদী সব কষ্ট শুষে নেয়। নদী মানুষ বোঝে। মানুষ নদীকে বোঝে না।
বেশ কিছু ক্ষণ পরে মেহুলি বলল, “আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।”
“আর কষ্ট কিসের? সবটাই তো বলে দিলি। তবে মা-কে নিয়ে তোর যত দুঃখ, যন্ত্রণার জায়গা, আজ সেই নিয়ে কিছু বলব না। কারণ ঘা খুঁটলে বাড়ে। আর এক দিন তোকে কিছু কথা বলব মা। যে কথা হয়তো কাউকে বলিনি।”
“আজ নয় কেন আঙ্কল?”
“আগে তোর এই আঙ্কল বলাটা ছাড় তো। বিচ্ছিরি লাগে। কেমন পর পর লাগে।”
“তা হলে?”
“তুই আমাকে ডাকবি বাবি বলে। পারবি না?”
“তোমার মেয়ে ডাকত?”
স্বর্ণেন্দু চুপ করে থাকল। বড় কষ্টের জায়গাটা শনাক্ত করে ফেলেছে মেয়েটা। প্রসঙ্গ ঘোরাতে বলল, “তোর কষ্ট হচ্ছে কেন বললি না তো?”
“বলব? কিছু মাইন্ড করবে না বল।”
“আরে দূর। তোর কথায় আবার মাইন্ড!”
“অন্য কিছু না, কী করে তোমার মতো মানুষকে ছেড়ে ওরা চলে গেল?”
“ও এই কথা? বাদ দে মা।”
“বাবি।”
“উঁ?”
পুরো এক মিনিট চুপ করে থেকে মেহুলি বলল, “তুমি যদি আমার বাবা হতে... তা হলে সত্যি বলছি... আমার জীবনটা...”
স্বর্ণেন্দু পরিষ্কার আকাশের দিকে তাকালেন পূর্ণ দৃষ্টিতে। মনে মনে বললেন, ‘হে ঈশ্বর, সমগ্র তারামণ্ডলীকে সাক্ষী রেখে এই একটা ঘণ্টা আমার সারাজীবনের পাথেয় করে দাও। ভিক্ষে দাও। দাও হে ঈশ্বর। বিশ্বাস করো, আর কিছু চাইছি না, আর কিছু চাইব না।’
“বাবি, জবাব দিলে না যে?”
স্বর্ণেন্দু কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলেন মেহুলিকে।
“জানো বাবি, আমার টাকাপয়সা, বাড়ি, গাড়ি কিচ্ছু দরকার নেই। ওই যে ওসমানের ঘরটার মতো একটা ঘর। সামনে ফুলকপির খেত, বহু দূরে হাইওয়ে, চার দিকে ফাঁকা ফাঁকা। আর মাথার উপরে বিশাল আকাশ। আকাশে অজস্র তারার মেলা আর তোমার মতো এক জন মানুষ। আর কিছু কি সত্যি দরকার আছে?”
“খুব ফ্যান্টাসি মুভি দেখিস?”
“কেন?”
“তাই কল্পনার রাজত্বে আছিস। আসল কথা কী জানিস? ওই ওসমানের ঘরটার মতো একটা ঘর, সামনে ফুলকপি, চার দিকে ফাঁকা আর মাথার উপরে আকাশ আর তারার মেলা দু’-এক দিন ভাল লাগে। তার পরে পালাই পালাই করবি।”
“তাই?”
“হ্যাঁ রে। আমার মাথার চুল দেখ, অনেকগুলো পেকেছে। এমনি এমনি নয়। আমি যাই নীরবতা খুঁজতে। আর কিছু না। আসল কথা হচ্ছে মানুষ। মানুষ বাঁচে মানুষের জন্য। সেই মানুষের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে সভ্যতাটাই হারিয়ে যাবে। দেখছিস না এখন কেমন নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। আগেকার কাকা, দাদা, মামা নিয়ে একান্নবর্তী ফ্যামিলিগুলোকে খুঁজে দেখিস। এই কলকাতা শহরেই আছে। খুঁজে পেলে এক দিন কাটিয়ে আসিস। তার পর বলিস আমাকে কেমন লাগল।”
“তোমাকে এত বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে কেন বাবি? অথচ বাড়িতে...”
“প্রেম করিস?”
“অ্যাঁ?”
“বলছি ভালবাসিস কাউকে?”
“নাঃ।”
“ওই যার কাছে থেকে পালিয়ে আমার কাছে এসেছিলি সেই সন্ধেবেলা। তাকে?”
“হা হা হা... ময়ঙ্ক? ওর হয়তো এত দিনে বিয়েও হয়ে গেছে।”
“এই জেনারেশনের ছেলে-মেয়েদের আমি বুঝতে পারি না। কে যে বন্ধু, কে যে প্রেমিক ভগবানই জানেন।”
“তোমাদের সময়ে কী হত?”
“আমাদের সময়ে মেয়ে দেখলে খারাপ লাগত বলব না। তবে প্রাথমিক কথাবার্তা বলে কিছুটা এগোলে সামনে একটাই রাস্তা। বিয়ে। তার পর সংসার। আর এখন? এই ধরছি, এই ছাড়ছি। বিয়েও ধুমধাম করে, সেপারেশনও ধুমধাম করে। কোনও মানে হয়? যাক গে, বাদ দে। তুই সত্যি কাউকে ভালবাসিস না পৌষালী?”
“এখনও না। তুমি ছেলে জোগাড় করে দাও। আমি প্রেম করি।”
“দূর বোকা মেয়ে। এই ভাবে জোগাড় করে দেওয়া যায় নাকি? ভালবাসা আসে। যেমন তোর জন্য আমার আর আমার জন্য তোর।”
“তোমার মতো কাউকে পেলে নিশ্চয়ই প্রেম করব। আর প্রমিস বাবি, তাকেই বিয়ে করব।”
মাঝির গলার আওয়াজ পাওয়া গেল, “এক ঘণ্টা হয়ে গেছে। আরও থাকবেন?”
স্বর্ণেন্দু বললেন, “নাঃ। ঘাটে চল।”
প্রিন্সেপ ঘাটে একটা আইসক্রিম পার্লার আছে। সেখান থেকে দুটো আইসক্রিম কোন কিনে একটা মেহুলির হাতে দিয়ে স্বর্ণেন্দু বললেন, “বাড়ি যাবি তো? তোকে নামিয়ে দিয়ে যাই।”
“তোমার বাড়িতে আমাকে নিয়ে যাবে না?”
“কেন যাব না? কিন্তু আজ নয় মা। আজ সারারাত আমাকে নভেলটা রিভিশন দিতে হবে। তোর সঙ্গে বকবক করলে চলবে না। হাতে কাল একটা দিন, রবিবার। কালকের রাতের মধ্যে প্রুফ দেখা শেষ করতে হবে।”
“তুমি পাবলিশার পেয়ে গেছ?”
“আরে না। আগে নভেলটা রেডি করি, তার পর পাবলিশার খুঁজে খুঁজে কপি দিয়ে আসব। দেখি কার পছন্দ হয়।”
মেহুলি আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বুজে কী সব বলল। তার পর চোখের পাতা ছুঁয়ে স্বর্ণেন্দুর দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার বই এ বার বড় নিশ্চয়ই কোনও পাবলিশার ছাপবে। আমার সবটা ওয়েল উইশ তোমায় দিলাম। ফলিং স্টারের কাছে প্রে করলাম।”
“জীবনে কুসংস্কারকে প্রায়োরিটি দিস না মা। মানুষ এগোয় নিজের যোগ্যতায়। মনে রাখিস। ঈশ্বর কিছু করে দিতে পারেন না।”
“মনে রাখব বাবি।”
“চল তোকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যাই। বাবা মা বাড়িতেই আছেন তো?”
“সকালে দেখেছিলাম বাপিকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আর মা? জানি না।”
“পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে মানে?”
“আমি ঠিক জানি না। সকালে দেখলাম ঘরে ঘোষালকাকু দলবল নিয়ে এসেছেন। তার ঘণ্টা দুই পরেই আমি বেরিয়ে আসি। আর জানি না।”
“সে কী রে!”
“ওদের কথা বাদ দাও না বাবি। এ বার বলো তো আমায় কোথায় নিয়ে যাবে?”
“কোথায় আবার, বাড়ি।”
“আরে দূর। ওই যে বললাম আমাকে সমুদ্র দেখাতে নিয়ে যাবে।”
“তোর বাবা-মা মানবে কেন?”
“সে আমি ম্যানেজ করে নেব।”
“আগে কর। তাদের পারমিশন না পেলে তো তোকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।”
“কোথায় যাবে সেটা তো বল।”
“পুরী যাবি? নয়তো দূরে হলে গোয়া?”
“এত ক্ষণ পরে তোমার পুরী দিঘা মনে হল? কপাল আমার। আয়ারল্যান্ড যাবে?”
“আয়ারল্যান্ড! আচমকা?”
“আয়ারল্যান্ড আর গ্রেট ব্রিটেনের মাঝখানে আছে আইরিশ সমুদ্র। দেখাবে আমাকে?”
হাতের আইসক্রিম গলে যাচ্ছিল। সে দিকে খেয়াল না করে স্বর্ণেন্দু তাকিয়েছিলেন অন্ধকার হয়ে আসা গঙ্গাটার দিকে। বাঁ দিকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু তখন আলোকোজ্জ্বল। গঙ্গার উপর দিয়ে উজানে বয়ে চলা নৌকোগুলোর দিকে তাকিয়ে স্বর্ণেন্দু অস্ফুটে বললেন, “যাব। নিয়ে যাব। আমিও দেখব, তুইও দেখবি। আর যে দিন আমি থাকব না, ধর সে দিন তুই বাল্টিক সাগরে গেলি, অথবা আল্পস, তখনও তোর চোখ দিয়ে আমিও দেখব। দেখাবি আমাকে মা?”
সাউথ সিটির ফুডকোর্টে একটা টেবিলে বসেছিল মিশুক আর কস্তুরী। মিশুক একটু আগেই কিছু খাবার নিয়ে চলে এসেছে।
“এ বার বলো।”
“উফফ! ভবি ভোলবার নয়।”
“একদম নয়। তেমন ভবি আমি নই।”
মিশুককে যতটা সম্ভব বলল কস্তুরী। সবটা খুব মন দিয়ে শুনে স্যান্ডউইচ চিবোতে লাগল মিশুক। ভাল লাগল কস্তুরীর। কিছু মানুষ আছে যারা মুখে এমন ভাব দেখায় যে চিন্তায় তিন রাত্তির ঘুমোতে পারবে না। তার তিতি এমন নয়। স্যান্ডউইচ শেষ করে কোল্ড কফিতে মন দিল মিশুক। সবটা খেয়ে বলল, “তা হলে তুমি এখন কী করবে বিবি?”
“আমি বুঝতে পারছি না।”
“বিবি, কোর্টে কেস না উঠলে বলা মুশকিল, আঙ্কল আদৌ ভিকটিম না ক্রিমিনাল।”
“আমি কী করব তিতি?”
নিজের মোবাইল ঘাঁটতে লাগল মিশুক। তার পর কস্তুরীর চোখে চোখ রেখে বলল, “একটা কথা জেনো বিবি, যে মানুষ সুইসাইড করে, সে লায়ার হয় না। এক্সসেপশন এক্সেম্পটেড। বিবি, নিজের জীবন কী ভাবে কাটাবে, কার সঙ্গে কাটাবে এটা তোমার নিজস্ব চিন্তাভাবনা অথবা ইচ্ছে। আপাতত বেশি ভেবো না। শুধু ভেবে কিন্তু কোনও দিন কোনও প্রবলেম সলভ হয় না। টেনশনের সঙ্গে সঙ্গে উপায়টাও ভেবে বের করতে হয়।”
অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল কস্তুরী। এইটুকু বয়সের একটা মেয়ে এতটা দর্শন পেল কোথা থেকে? কস্তুরীর একটাই ভাবনা মেয়েকে নিয়ে। বাপের কীর্তির কথা জানলে তার মেয়েটার মনের অবস্থা কী হবে? যাক গে। ভেবে তো আর কিছু হবে না। তিতি ওই বয়সে যা বিশ্বাস করে তার এত বছর বয়সেও হয়তো সেই ম্যাচুরিটি আসেনি। সে প্রসঙ্গ ঘোরাতে বলল, “তিতি, তোর পুজোর জন্য কী লাগবে বললি না?”
মিশুক একদম বাচ্চা মেয়ের মত কলকল করে উঠল, “উরিব্বাস! রাইট টাইমে মনে করিয়েছ তো।”
কস্তুরী আর এক বার অবাক হল। এখনকার মেয়ে-ছেলেদের কত অল্পবয়সে ম্যাচুরিটি আসে। হয়তো মেহুলিরও তাই এসেছে। সে তাকে বিচার করছে নিজের সময়স্তর থেকে। কস্তুরী মনে মনে ঠিক করল, এখন থেকে সে এই সময়ের মতো করে বাঁচবে। দেখা যাক মেহুলিকে সে কতটা চিনতে পারে। মেয়েটার অভিমানের কারণটা খুঁজতে হবে। মেয়ে কথা বলে না বলে কি মা হিসেবে সে-ও মুখ ফিরিয়ে থাকবে? ইস! বড্ড ভুল হয়ে গেছে।
চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়ে চোখ আটকে গেল একটা দৃশ্যে। একটি মেয়ে, এই বছর তিরিশেক বয়স হবে, সামনে থেকে হেঁটে আসছে। ভীষণ চেনা চেনা লাগলেও কোথায় দেখেছে ধরতে পারল না কস্তুরী। মেয়েটি পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে মিশুককে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছে। মিশুকও তাকিয়েছে এবং উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে, “চন্দ্রাণীদি, তুমি এখানে?”
“পুজোর জন্য সামান্য কিছু কেনাকাটা করতে হবে রে। এর পরে তো আর ঢোকা যাবে না।”
“তা ঠিক। ভাল আছ?”
“আছি রে। এক দিন আসিস আমার বাড়ি। মৈনাকের নতুন কাস্টিং। কিছু বলেনি তোকে?”
“হ্যাঁ। মৈনাকদা বলেছে। আমি আসব গো।”
মেয়েটি বেরিয়ে যেতে মিশুক ঠোঁট বেকাল। লক্ষ্য করে কস্তুরী বলল, “কে রে?”
“ও মা! চিনতে পারোনি? চন্দ্রাণী মুখার্জি। ‘কালী কৃপালিনী’তে...”
“ও মা! সত্যি চিনতে পারিনি।”
দুষ্টুমিভরা হাসি মিশুকের মুখে, “আজ মেকআপ করেনি। হি হি হি।”
কস্তুরীর ডান হাতের তলা দিয়ে নিজের বাঁ হাতটা গলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মিশুক বলল, “চন্দ্রাণীদি ভাল, কিন্তু ওর হাজব্যান্ডটা কেমন যেন।”
“কিছু হয়েছে?”
“ক্যারেক্টারলেস। নিজে কাস্টিং ডিরেক্টার বলে নিজেকে কী যে ভাবে।”
“কী বলে গেল তোর চন্দ্রাণীদি?”
“হুম। যাব না। মেয়ে দেখলেই হয়েছে আর কী। এক দিন পার্পল মুভিটাউন থেকে বেরোচ্ছি, ওরই আশপাশে কোথাও বাড়ি চন্দ্রাণীদি আর মৈনাকদার, গেটের সামনে ধরেছে। বলছে, ‘নতুন ছবি আছে মিশুক। তোকে ভাবছি সেকেন্ড লিডে নেব। আমার বাড়ি চলে আয় আজ সন্ধ্যের দিকে।’”
“তার পর?”
“পাগল! কেউ যায়? গেলে একটা চান্স হয়ে যেত বিগস্ক্রিনে। কিন্তু...”
“আর বলতে হবে না...” মেয়েরা মেয়েদের সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি ধরতে পারে।
ক্রমশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy