Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
ধারাবাবিক উপন্যাস পর্ব ১২
Bengali Serial Novel

খরস্রোত

ঠিক এই সময়ে নিবারণ ঘরে ঢুকল। এক সঙ্গে তিন মালিককে দেখে কপালে একটু চিন্তার ভাঁজ পড়লেও, সামলে নিল। কারণ, আজকের পরিস্থিতি আলাদা।

ছবি কুনাল বর্মণ।

ছবি কুনাল বর্মণ।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ০৮:৫৩
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি: ঈশানের কাছ থেকে শশিকান্ত জানতে পারে, গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে বিপ্লবের কাগজ সাঁটা ঈশানেরই কীর্তি। সে বন্ধুকে বিপ্লবী দলে নাম লেখানোর পরামর্শ দেয়। তার পর বাবার শরীরস্বাস্থ্যের খবর দেওয়ার জন্য ঈশান রওনা দেয় অবিনাশ কবিরাজের বাড়ির দিকে। সেখানে কবিরাজ মশাইয়ের কথায় স্পষ্ট অসন্তোষ প্রকাশ পায়। তিনি বলেন, গ্রামে বিপ্লবী ঢুকিয়ে পরিস্থিতি অশান্ত করে তোলার জন্য শশীর জেঠামশাই নীলমণি বাঁড়ুজ্যেই দায়ী। তিনি শশীকে সতর্ক করেন, যাতে সে ও সবে জড়িয়ে না পড়ে। বাড়ির ফেরার পথে বিশু এসে তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে যায় একটি চিঠি। সেটি দিতে হবে জেঠামশাইকে। শশী বাড়ির ফেরার একটু পরে এক মুসলমান ভদ্রলোক এসে শশীর কাছ থেকে চিঠিটি নিয়ে যান। বাড়িতে মুসলমান ভদ্রলোকের আগমনে মুখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন নিভাননী, কিন্তু তাঁর আচরণে বোঝা যায় যে, ঘটনাপ্রবাহ তাঁর অজানা নয়।

ঘনশ্যামজি পকেট থেকে একটা কৌটো বার করলেন। কৌটোর ঢাকনা খুলে একটা পান বার করে মুখে চালান করে দিয়ে বললেন, কাছাকাছি অফিসপাড়ায় ভ্যান্সিটার্ট রো-তে যে বন্দুকের দোকান আছে, ওইখান থেকে অনেক বন্দুক বিপ্লবীরা ডাকাতি করে নিয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে পরে। তার পরই ধরপাকড় শুরু করেছে। সব বাড়ি, দোকান সার্চ করছে। ধরাও পড়েছে নাকি দু’জন।

“ওই জন্য রাস্তায় এত পুলিশ!” উমানাথ বলল।

“হবে না? এ তো সামান্য ডাকাতি নয়, পিস্তল ডাকাতি। ভাবতে পারছেন উমাবাবু, এ বার কী হবে? সাহেবরা কি ছেড়ে দেবে? কিছু মনে করবেন না উমাবাবু, রমাবাবু, বাঙালি ছেলেরা বড় বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। আর কী বলব আপনাদের, আমাদের কমিউনিটির লোকেরাও এর মধ্যে আছে শুনছি। দু’-এক জনের বাড়ি রেডও হয়েছে।”

রমানাথ এত ক্ষণ কোনও কথা বলেননি। আসলে এই সব কথার মধ্যে তিনি বড়দা নীলমণির কথা ভাবছিলেন। বড়দা কোনও ভাবে জড়িত নয় তো এর সঙ্গে? অনেক দিন ধরেই বড়দা পুলিশের চোখের আড়ালে আছেন। পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কোথায় যে আছেন, কে জানে!

উমানাথ মেজদাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল, “মেজদা, তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?”

রমানাথ বললেন, “না, না, আমি ঠিক আছি...” তার পর হঠাৎই ঘনশ্যামজির উদ্দেশে বললেন, “কারা ধরা পড়ল, কিছু জানেন, ঘনশ্যামজি?”

“আমার জানার কী দরকার বাবু? আমরা এখানে বেওসা করতে এসেছি, বিপ্লব করতে নয়। কী হবে বলুন তো রমাবাবু? কয়েক জন ইংরেজকে মারলে কি দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে? যত সব বেকুব আদমি।”

ঠিক এই সময়ে নিবারণ ঘরে ঢুকল। এক সঙ্গে তিন মালিককে দেখে কপালে একটু চিন্তার ভাঁজ পড়লেও, সামলে নিল। কারণ, আজকের পরিস্থিতি আলাদা। তার কাছে অনেক খবর আছে, যা সে বাবুদের বলে ঘাবড়ে দিতে চায়।

নিবারণ বুঝে নিয়েছে, বাবুদের আলোচনার বিষয়ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। তবু সে নিজে থেকে না বলে সময় নেয়। গদির এক পাশে রাখা কুঁজো থেকে গড়িয়ে এক গেলাস জল খায়। তার পর হিসাবের খাতা নিয়ে বসে।

“তুমি কিছু শুনলে, নিবারণ?” উমানাথ প্রশ্ন করে নিবারণকে।

“অনেক কিছুই তো শুনলুম, বাবু। কোনটা বলছেন বলুন তো?” নিবারণ এমন ভাব দেখায় যেন সে অনেক জানে, অথচ বলার কোনও তাড়া নেই।

উমানাথ খেঁকিয়ে ওঠে, “তুমি বুঝতে পারছ না? বিপ্লবীরা সাহেবদের বন্দুক ডাকাতি করেছে, সেটা জানো তো?”

“আরও অনেক কিছুই জানি বাবু,” বলেই চুপ করে যায় নিবারণ।

“কী হল, কী জানো?” ঘনশ্যামজির গলায় ভয়।

নিবারণ বলার আগে একটু কেশে নেয়। দেখে, রমানাথ ও উমানাথ দু’জনেই তার কথা শোনার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। নিবারণ শুরু করে। বলে, “বাবু, এ মামুলি ডাকাতি নয়। বিপ্লবীরা ডাকাতি করে। এই যে সে দিন রাতে বৌবাজারে একটা মোটরগাড়ি আটকে এক সওয়ারির থেকে একগাদা টাকা ডাকাতি করা হল, তা তো ওই বিপ্লবীদেরই কাজ। পুলিশের আঙুল ওদের দিকে। খবরের কাগজও সেই কথা লিখেছে। কিন্তু এটা সে রকম ডাকাতি নয়। দিনের বেলায়, জেটি ঘাট থেক রডা কোম্পানির আপিসে নিয়ে আসার পথেই পিস্তল হাপিস।”

“বলো কী নিবারণ! দিনের বেলায়?” উমানাথ বলল। বিস্ময়ে তার চোখ দুটো গোল হয়ে গেছে।

“তা হলে আর বলছি কী?” নিবারণ বলে, “এ ডাকাতি যেমন তেমন ডাকাতি নয়।”

“সে তো বোঝাই যাচ্ছে,” ঘনশ্যামজি বলেন, “তা নিবারণ, আর কী শুনলে?”

“শুনলাম তো অনেক কিছুই। তবে সত্যি-মিথ্যে জানি না...” নিবারণ বলে।

“যা শুনলে, সেটাই বলো,” উমানাথ বলে।

নিবারণ একটু সময় নেয়। তার পর বলে, “পুলিশ খেপা কুকুরের মতো নেমে পড়েছে। বাড়ি বাড়ি খানাতল্লাশি করছে। বৌবাজার, মলঙ্গা লেন, জেলেপাড়া লেনের অনেক বাড়িতেই তল্লাশি করেছে পুলিশ। ধরাও পড়েছে কেউ কেউ...” একটু চুপ করে যায় নিবারণ। তার পর ঘনশ্যামজির দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলে, “শিবঠাকুর লেনের একটা বাড়ি থেকে এক জন ধরা পড়েছে।”

ঘনশ্যামজি বসে ছিলেন। দাঁড়িয়ে উঠলেন এ কথা শুনে। উত্তেজিত ভাবে বললেন, “তুমি ঠিক শুনেছ নিবারণ? শিবঠাকুর লেন?”

“আপনার বাড়ি না ওখানে?” অনেক ক্ষণ পর কথা বললেন রমানাথ।

“হ্যাঁ, রমাবাবু, আমি তো ওখানেই থাকি। বাড়িতে মা, বাবা আছে। বাড়ি সার্চ হলে ওরা ভয় পেয়ে যাবে!”

রমানাথ বললেন, “তা তো যাবেনই। আপনি বরং বাড়ি চলে যান। কাছেই তো।”

“খবরদার, এখন বাড়ি যাবেন না। পুলিশ একটু সন্দেহ করলেই ধরে নিয়ে জেলে পুরে দিচ্ছে,” নিবারণ বলল, “তা ছাড়া, আমি খবর পেয়েছি, ওরা গদিও তল্লাশি করবে। কারণ ওরা সন্দেহ করছে, আপনাদের মারোয়াড়ি সম্প্রদায়ের কয়েক জন এই ডাকাতির সঙ্গে যু্ক্ত।”

“রাম রাম, তা হলে আমি ঠিকই শুনেছিলাম। একটু আগে আমি এ কথাই তো বলছিলাম!” ঘনশ্যামজি বললেন।

বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। খোলা জানালা দিয়ে সে দিকে তাকিয়ে রমানাথ ঘাড় নাড়লেন।

নিবারণ কী একটা বলতে যাচ্ছিল, চুপ করে গেল। তার চোখ রাস্তায়। একটা দল ঢুকছে গদিতে। তাদের ভারী বুটের শব্দ শোনা যাচ্ছে। নিবারণের মুখ থেকে একটি অস্ফুট শব্দ বেরিয়ে এল— “পুলিশ।”

অন্যরা কিছু বোঝার আগেই ঘরে ঢুকে পড়ল পুলিশের দল। দীর্ঘকায় এক পুলিশ অফিসার এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, “হু ইজ় দ্য ওনার অব দিস ফার্ম?”

রমানাথ উত্তর দিলেন, “ঘনশ্যাম আগরওয়াল অ্যান্ড রমানাথ ব্যানার্জি।”

“নেম অব দিজ ফার্ম?” একটি ডায়েরিতে লিখতে লিখতে বলল অফিসারটি।

রমানাথই উত্তর দিলেন, “ঘনশ্যাম অ্যান্ড রমানাথ জুট ব্রোকার কোম্পানি লিমিটেড।”

“ইউ আর সাপোজ়ড টু বি অ্যান এমপ্লয়ি অব দিজ় ফার্ম, আই থিঙ্ক, টেল ইয়োর নেমস...” দু’জন পুলিশকে তল্লাশি করার ইঙ্গিত দিয়ে বলল অফিসারটি।

রমানাথ বললেন, “নো স্যর, আই অ্যাম দ্য পার্টনার অব দিজ় ফার্ম। মাইসেল্ফ রমানাথ ব্যানার্জি। দ্য আদার পার্টনার ইজ় ঘনশ্যাম আগরওয়াল, হিয়ার হি ইজ়,” বলে ঘনশ্যামজিকে দেখালেন।

উমানাথ ও নিবারণের নামও অফিসারটিকে জানালেন রমানাথ।

কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই গদির অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠল। জিনিসপত্র ওলটপালট করে মুহূর্তেই ঘরটাকে নরক করে দিল কয়েকটি উর্দিধারী লোক।

এক জন বাঙালি অফিসারের নেতৃত্বে তল্লাশি চলছিল। তল্লাশি হয়ে গেলে, রমানাথের কাছে সেই অফিসার এসে দাঁড়ালেন। একটা কাগজে চোখ রেখে বললেন, “অনুকূল মুখার্জি, হরিদাস দত্ত, শ্রীশচন্দ্র পাল, শ্রীশ মিত্র, খগেন দাস— এদের কাউকে চেনেন?”

রমানাথ স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, তিনি কাউকেই চেনেন না। নামও শোনেননি।

নিবারণ ও উমানাথকে জিজ্ঞেস করা হলে, তারাও ওই এক কথা জানায়।

এ বার বাঙালি অফিসারটি ঘনশ্যামজিকে বলেন, “আপনি নিশ্চয়ই প্রভুদয়ালকে চেনেন?”

নামটা শুনে একটু চমকে যান ঘনশ্যামজি। চুপ করে থাকেন একটু ক্ষণ। তার পর বলেন, “প্রভুদয়াল হিম্মতসিংকা?”

“হ্যাঁ। কী জানেন, ওর সম্পর্কে, বলুন আমাকে।”

অফিসারটির কণ্ঠস্বরে উত্তেজনা ধরা পড়ে।

ঘনশ্যামজি বলেন, “হ্যাঁ, আমি জানি ওকে। খুব ভাল ছেলে। পড়াশোনা জানা ছেলে।”

“আর কিছু?” অফিসারটি বলেন। তার চোখেমুখে বিরক্তি ধরা পড়ে। বোধহয় ভেবেছিলেন, অনেক কিছুই জানা যাবে এই ছেলেটির সম্পর্কে।

“না স্যর, এর বেশি আমি জানি না...” উত্তর দেন ঘনশ্যামজি।

“ঠিক আছে, পরে আপনাকে প্রয়োজন হবে,” বলে অফিসারটি ইংরেজ পুলিশ অফিসারটিকে কিছু বলেন। অফিসারটি চেয়ারে বসেছিলেন এত ক্ষণ। এ বার উঠে দাঁড়ান এবং দরজার দিকে অগ্রসর হন। পুরো দলটা তাকে অনুসরণ করে। দরজা দিয়ে শেষ পুলিশটি বেরিয়ে যাওয়ার পর ঘরে একটা অদ্ভুত নীরবতা ফিরে আসে।

প্রথম কথা বলে নিবারণ। ঘনশ্যামজির উদ্দেশে বলে, “এটা আপনি ঠিক কাজ করলেন না বাবুজি।”

ঘনশ্যাম বিরক্তমুখে তার দিকে তাকালেন। রমানাথ বললেন, “আপনি ওকে চেনেন না বললেই তো পারতেন।”

“কী করে বলি রমাবাবু? আমাদের স্মল কমিউনিটি। সবাই সবাইকে চিনি, জানি। মিথ্যে বললে, পুলিশের লোক ধরে ফেলবে না? তার চেয়ে যা জানি, তাই বললাম। পুলিশ ডাকলে এই এক কথাই বলব।” ঘনশ্যামজির চোখেমুখে একটা প্রত্যয়ী ভাব ধরা পড়ে।

রমানাথ বলেন, “যান, আপনি এক বার বাড়ি ঘুরে আসুন।”

“হ্যাঁ, যাই,” বলে বেরিয়ে যান ঘনশ্যাম।

নিবারণ ঘর পরিষ্কারের কাজে লেগে যায়। উমানাথ চোখে চশমা লাগিয়ে অর্ডার কপিতে মনোনিবেশ করে।

রমানাথ জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়ান। জানালার বাইরে প্রশস্ত রাজপথে কাজের ব্যস্ততা। আজ বৃষ্টির দিনেও কাজের ছুটি নেই মানুষের। অদূরে একটা গরুর গাড়ি দাঁড়িয়ে। বৃষ্টির জল গরুর গা বেয়ে নেমে আসছে। মাঝে মাঝে দু’-একটা হাতে টানা রিকশা টুংটাং শব্দে চলে যাচ্ছে। রমানাথের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নামগুলো। একটা নাম। বড়দার কাছে শোনা। অব্যর্থ হাতের নিশানা। দু’হাত সমানে চলে। সব্যসাচী। ছেলেটির নাম শ্রীশ পাল। মনে মনে কল্পনা করতে চেষ্টা করলেন ছেলেটিকে। কপালে হাত ঠেকালেন রমানাথ। প্রার্থনা করলেন, ছেলেটি যেন নিরাপদে থাকে।

হঠাৎ জোরে বৃষ্টি এল। জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট ঢুকে রমানাথকে খানিকটা ভিজিয়ে দিল। জানালা বন্ধ করে রমানাথ ব্যবসার কাজে মন দিলেন।

১৪

বৈশাখ মাস হলেও কালবৈশাখীর দেখা নেই। যথেষ্ট গরম। একটা গুমোট ভাব। হয়তো দু’-এক দিনের মধ্যেই বৃষ্টি নামবে। উত্তরপাড়ার গঙ্গাতীরের এই জায়গাটি অবশ্য শীতল। মনোরম। স্নিগ্ধ হাওয়া এসে ঝাপটা মারছে মুখে। অমরেন্দ্রনাথ নদীর জলের দিকে তাকিয়ে। তিরতির করে বয়ে চলেছে গঙ্গার জল। এখন জোয়ারের সময়। জল এসে পা স্পর্শ করে যাচ্ছে অমরেন্দ্রনাথের। আর একটু কম বয়সে, এই জলে কত সাঁতার কেটেছেন। ও পারে এঁড়েদা, দক্ষিণেশ্বরে সাঁতরেই চলে গেছেন সেই সময়। এখনও প্রয়োজন পড়লে সাঁতার কেটে ও-পারে যাওয়ার প্রত্যয় রাখেন। একটু নিচু হয়ে নদীর জল মাথায় ছেটান অমরেন্দ্রনাথ। তার পর ধীরে ধীরে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে আসেন।

এই ঘাটটির নাম রামঘাট। সাধারণত ভদ্রঘরের ছেলেরা এই ঘাটে আসে না। এলেও দিনের বেলায় আসে। সন্ধের পর এখানে আসা তাদের কল্পনার বাইরে। গঞ্জিকার গন্ধে জায়গাটা তখন ম-ম করে। অমরেন্দ্রনাথ জানেন, এই জায়গাটাই তাঁদের সভার জন্য আদর্শ। গঞ্জিকাসেবীদের মধ্যে দু’জন অমরেন্দ্রনাথের খুব ভক্ত। এদের অমরেন্দ্রনাথ মহাদেব ও নন্দী বলে ডাকেন। বিপ্লবের ছোটখাটো প্রয়োজনে এদের কাজে লাগান তিনি। বিনা বাক্যব্যয়ে ওরা সেই কাজ করে দেয়। কেউ ওদের সন্দেহ করে না। এমনকি পুলিশও নয়। কারণ, ওরা গাঁজাখোর বলেই সকলের কাছে পরিচিত।

যতীন্দ্রনাথ সকলের আগেই এসেছিলেন। হাওড়া থেকে ট্রেনে উত্তরপাড়া স্টেশনে নেমে পায়ে হেঁটে চলে এসেছেন গঙ্গার ঘাটের এই জায়গায়। জায়গাটা পছন্দ হয়নি তার। বলেছেন, “এত খোলা জায়গায় তুমি সভা করবে, অমরদা? কেউ এক জন খবর দিলেই পুলিশ চলে আসবে।”

অমরেন্দ্রনাথ হেসেছেন। বলেছেন, “চিন্তা কোরো না যতীন, অমরেন্দ্রনাথ নির্বোধের মতো কাজ করে না। তুমি এখানে যাদের দেখছ, তারা সবাই আমার লোক। তুমি হয়তো খেয়াল করোনি, রাস্তার উপর কিছু দূরে দুটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের কাজ বাইরের দিকে নজর রাখা। তেমন কিছু দেখলেই ওদের মারফত খবর চলে আসবে।”

“শাবাশ অমরদা! তোমার বুদ্ধির জবাব নেই,” যতীন্দ্রনাথ বলেন।

অমরেন্দ্রনাথ হাসেন। তার পর আবার বলেন, “আর এই গঙ্গার ঘাটে যারা গান গাইছে, হাসি-মশকরা করছে, তারাও আমার লোক। আমি ওদের নিয়ে এসে ভিড় বাড়িয়েছি জায়গাটায়। না হলে, রাত্রি দশটার সময় এই অন্ধকার নির্জন জায়গায় কে-ই বা শুধু শুধু গঙ্গার হাওয়া খেতে আসবে!”

“বুঝলাম, কিন্তু আমাদের সভাটা হবে কোথায়? সেটাও কি ওই ঘাটের সিঁড়িতে বসে?”

“ওই ঘরে,” বলে অমরেন্দ্রনাথ একটি পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা ঘরের দিকে আঙুল নির্দেশ করলেন।

যতীন্দ্রনাথ কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তার নজরে এল, একটি নৌকো যেন তাদের ঘাটেই ভিড়ছে। যতীন্দ্রনাথ অমরেন্দ্রনাথের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। অমরেন্দ্রনাথ বললেন, “দাঁড়াও, দেখছি।”

ক্রমশ

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Novel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy